মঙ্গলবার ● ২২ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » অপরাধ » কয়রায় ইউপি সচিবকে বেধড়ক পেটালেন চেয়ারম্যান, প্রতিবাদে ৪ দিনের ধর্মঘট
কয়রায় ইউপি সচিবকে বেধড়ক পেটালেন চেয়ারম্যান, প্রতিবাদে ৪ দিনের ধর্মঘট
এস ডব্লিউ; রাতে অফিস করতে অস্বীকৃতি জানানোয় ইউপি সচিব ইকবাল হোসেনকে বেধড়ক মারপিট করেছেন কয়রা মহারাজপুরের ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের ত্রাণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। মারপিটের ঘটনা ধামাচাপা দিতে সচিবকে দিয়ে মুচলেকাও লিখে নেয়া হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করেছেন কয়রার সব সচিব ও হিসাব রক্ষকগণ।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিশেষ বিশ্বাস বলেন, সচিব ইকবাল হোসেন যদি অভিযোগ করেন তাহলে আমরা আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।গত সোমবার রাতে বাড়ি থেকে লোক পাঠিয়ে সচিবকে তুলে নিয়ে মারপিট করা হয়। আহত সচিবকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইউপি সচিব ইকবাল হোসেন বলেন, মহারাজপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই বিকালে অফিসে আসেন। আর গভীর রাত পর্যন্ত অফিস করেন। এতে করে সেবা প্রত্যাশীরা ভোগান্তির সম্মুখিন হন। সোমবার যথারীতি বিকালে ইউপি কার্যালয়ে আসেন চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। কিন্তু বিকাল ৫টা বেজে যাওয়ায় সচিব অফিস ত্যাগ করেন। চেয়ারম্যান তাকে অফিসে আসতে বললে তিনি ৫টার পর অফিস করতে পারবেন না বলে জানালে চেয়ারম্যানের লোকজন তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান। সেখানে তাকে ৪ ঘন্টা আটকে রেখে বেদম মারপিট করা হয়।
সচিবের মারপিটের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাস ও থানার ওসি রবিউল হোসেন ঘটনা স্থানে পৌছান। চেয়ারম্যান কৌশলে ইউএনও’র মাধ্যমে সচিব এর মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়।এলাকাবাসী এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
আহত সচিব ইকবাল আরও বলেন, আমাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে ইউপি কার্যালয়ের কক্ষে এনে আটকে রেখে মারপিট শুরু কওে চেয়ারম্যান ও আরও তিনজ। এমন মার আমি কখনও খাইনি। দীর্ঘ ৪ ঘন্টা আমাকে মারপিট করে ওরা। জীবনে এতো মার আমি কখনো খয়নি। ওদের পা ধরলেও আমাকে ছাড়েনি। এক সময় ইউএনও এসে আমার মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়।
ভুক্তভোগী সচিবের ডান হাত রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। বাম হাত ভেঙে গেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। তাকে দেওয়া হয়নি কোনো চিকিৎসা। একপর্যায়ে সচিবের মায়ের কাকুতি-মিনতির পর তাকে ছেড়ে দেয়া হলেও চাকরি যাওয়ার ভয় দেখিয়ে আইনের আশ্রয় নেয়া থেকে সচিবকে বিরত রেখেছে তারা।
তবে মারপিটের ঘটনা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। তিনি বলেন, সচিবকে মারপিটের কোন ঘটনা ঘটেনি। মারপিট করা হলে সে ইউএনও এবং ওসির কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতো। সচিব গত মাসের ৭ তারিখে এখানে যোগদান করেছে। সে কোন দিন রাতে অফিস করেনি। আমার বিরুদ্ধে একটা মহল মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এবিষয়ে কয়রা উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম বাহারুল ইসলাম বলেন, এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি জানাই। তিনি বলেন, এমন ঘটনায় কয়রার চেয়ারম্যানদের জন্য খুবই বিব্রতকর। একজন চেয়ারম্যানের ভুলের কারণে আজ খুলনা জেলার প্রত্যেকটা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব এবং হিসাবরক্ষকের তিনদিনের কর্মবিরতি দিয়েছে।
উপজেলা আ’লীগের সভাপতি এসএম মহসিন রেজা বলেন, আমি ঘটনা শুনে সেখানে গিয়েছি। সচিব ইকবালকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাটা আমি জেলা আ’লীগের নেতৃবৃন্দকেও জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, সচিব গতদিন আমাদেরকে লিখিত দিয়েছে যে তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে সে যদি অভিযোগ করে যে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন তাকে মারপিট করেছে, তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।