বুধবার ● ২৩ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » অপরাধ » পাইকগাছায় স্কুলের জমিতে চেয়ারম্যানের দোকান ও অফিস
পাইকগাছায় স্কুলের জমিতে চেয়ারম্যানের দোকান ও অফিস
পাইকগাছা প্রতিনিধিঃ চুক্তি অমান্য করে বিদ্যালয়ের জমিতে নির্মিত দোকান বিনা ভাড়ায় জোর করে নিজের দখলে রাখার অভিযোগ উঠেছে পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ জিয়াদুল ইসলাম জিয়া’র বিরুদ্ধে। ইউনিয়নের শহীদ জিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দোকান ভাড়া চুক্তি থাকলেও গত ৬ বছরে সবমিলে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ভাড়া তিনি দেননি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাধিকবার নোটিশ দিলেও তিনি তা মানছেন না। উপরন্তু কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই দোকানের মাঝখানে পার্টিশান দিয়ে একপাশে নিজের অফিসঘর নির্মাণ করেছেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালেও কোনো সুরাহা হয়নি।
শহীদ জিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাইকগাছার মেইন সড়কের পাশেই গদাইপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের বোয়ারিয়া মোড়ের পাশে ১৯৯১ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিদ্যালয়ে প্রায় ৪০০ ছাত্রী বিনা বেতনে পড়ছেন। বিদ্যালয়ের আয় বাড়াতে সড়কের পাশে বিদ্যালয়ের ২ শতক জমিতে দোকান নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালে শেখ জিয়াদুল ইসলামের সঙ্গে ৫ বছরের জন্য দোকান নির্মাণের চুক্তি হয়। তখন তিনি চেয়ারম্যান হননি। চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দোকান নির্মাণ করে দেবে। নির্মাণে যে টাকা খরচ হবে জিয়াদুল সেই টাকা জামানত হিসেবে বিদ্যালয় কৃর্তপক্ষকে দেবেন। জিয়াদুল দোকান ছেড়ে দেওয়ার সময় ওই টাকা ফেরত পাবেন। কিন্তু সেই চুক্তি অমান্য করে তিনি নিজেই দোকান নির্মাণ করেন। নির্মাণ ব্যয়ের ভাউচারগুলো তিনি বিদ্যালয়কে দিয়েছেন। এসব ভাউচার নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর চুক্তির ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে। প্রতি মাসে ২ হাজার ১০০ টাকা করে মোট ১ লাখ ৫৫ হাজার চারশত টাকা ভাড়া বকেয়া রয়েছে। মেয়াদ শেষেও তিনি দোকান নিজের দখলে রেখেছেন। প্রধান শিক্ষক অঞ্জলী রাণী শীল বলেন, গত ৫ বছরে তিনি একটি টাকাও ভাড়া দেননি। এ পর্যন্ত তিনবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে, কোনো নোটিশের উত্তর দেননি। তাছাড়া বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিষেধ উপেক্ষা করে ঘরের মধ্যে পার্টিশান দিয়ে নিজের অফিস করেছেন। অথচ আমাদের শিক্ষার্থীরা রুমের অভাবে ভালোভাবে ক্লাস করতে পারছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ জিয়াদুল ইসলাম জিয়া বলেন, কথা ছিল এই জায়গায় ব্যক্তিগতভাবে কেউ দোকান নির্মাণ করলে তাকে আজীবনের জন্য ঘরটি ভাড়া দেওয়া হবে। খরচের টাকা জামানত হিসাবে থাকবে। আমি কয়েক দফায় প্রায় ১২ লাখ টাকার মতো খরচ করেছি। এরমধ্যে ২ দফার খরচের ভাউচার তারা নিয়েছেন, বাকি ভাউচার নেননি। তারা খরচের ভাউচার নিচ্ছেন না। তাই আমিও ঘরভাড়া দিচ্ছি না।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাজী সাখাওয়াৎ হোসেন পাপ্পু বলেন, জামানতের সঙ্গে তো ভাড়ার কোনো সম্পর্ক নেই। দু’দফার ভাউচারে খরচ দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা। এসব ভাউচারে ত্রুটি রয়েছে। ভাউচার সত্য প্রমাণের জন্য যে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সে রড কিনেছে তাকে প্রধান করে নিরীক্ষণ কমিটি করে সত্য প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে বিগত দুটি কমিটি এসব ভাউচারের অনুমোদন দেয়নি। এসবের পরেও তিনি বলছেন ১০/১২ লাখ টাকা খরচ করেছেন। আমাদের নিষেধ উপেক্ষা করে চুক্তির মেয়াদ শেষের মাত্র ১৫ দিন আগে ঘরের মধ্যে পার্টিশান দিয়েছেন। চেয়ারম্যান হওয়ার পর এখন স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে স্কুলের জায়গা নিজের দখলে নিতে চাচ্ছেন।
পাইকগাছা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জয়নাল আবদীন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জায়গা তিনি (চেয়ারম্যান শেখ জিয়াদুল) দখল করে রাখতে পারেন না। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের জন্য জমি দরকার। ওই জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাকে একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি কথা কানে তুলছেন না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, ওই সময় দুই পক্ষকে নিয়ে বসে একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম। এখন সমস্যা হলে আবার বসতে হবে।