সোমবার ● ১১ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » কৃষি » প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও ইট ভাটার দূষনে বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারের বরোর আবাদ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত
প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও ইট ভাটার দূষনে বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারের বরোর আবাদ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত
এস ডব্রিউ; ইট ভাটার দূষণে বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারের বরো ধান মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। লক্ষমাত্রার অর্ধেক পুরন হতে পারে বলে ধারনা করছেন খামার কর্তৃপক্ষ। ইট ভাটার কালো ধোয়া, ছাই, বালি ও তাপের কারণে খামারের ধান ঝলসে গেছে। নিয়মিত ধানের পরিচর্যার পরও ভাটার দূষণের কারণে বরো বীজ ধান উৎপাদনে ব্যপক প্রভাব পড়েছে।
খামার সূত্রে জানা গেছে, চলতি বরো মৌসুমে খামারের ৫৫ একর জমিতে বরোর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ একর জমিতে ব্রিধান-৭৪, ১৩ একর জমিতে ব্রিধান-৬৭, ৫ একর জমিতে বিনা-২৪ ও ২১ একর জমিতে বিনা- ৫০। খামার সংলগ্ন ইট ভাটা এফএফবি ও এমএমবি ব্রিকস অবস্থিত। ইট ভাটা সংলগ্ন খামারের ২৯ একর জমির আবাদ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপকুলের লবনাক্ততা ভাটার কালো ধোয়া, ছাই, বালি ও তাপের কারণে খামারের ধান ঝলসে গেছে। দুর থেকে দেখলে মনে হয় ধান সব পেঁকে গেছে। তবে ক্ষেতে গিয়ে ধানের শীষ ধরলে দেখা যায় ধান সব চিটা হয়ে গেছে বা অপুষ্ট রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিধান-৬৭ জাতের বীজ উৎপাদনের লক্ষমাত্র ছিল ১৭ টন ৯৬০ কেজি। সেখানে বীজ উৎপাদন হতে পারে ৮-১০ টন আর ব্রিধান-৭৪ জাতের বীজ উৎপাদনের লক্ষমাত্র ছিল ২২ টন ৪৮০ কেজি। সেখানে বীজ উৎপাদন হতে পারে ১০-১২ টন। যা খামার কর্তৃপক্ষ ধারনা করছেন। ভাটার কালো ধোয়ায় ধান ও গাছের পাতায় কালো রঙের আবরণ পড়েছে, তাপে পাতা ও ধান ঝলসে গেছে। এমনকি খামারে অবস্থিত নারকেল গাছের পাতাগুলি কালো আবরণে ঢাকা পড়ছে। উপকুলের লবনাক্ত এলাকায় বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামার অবস্থিত। প্রাকৃতিক দূর্যোগ, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসকে প্রতিরোধ করে খামারের ফসল উৎপাদন করতে হয়। তার উপর ভাটা সংলগ্ন দুটি ভাটার দূষনের কারণে খামারের ফসল উৎপাদনে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ ব্যাপারে এফএফবি ব্রিকস এর পরিচালক আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস বলেন, ফার্মের ম্যানেজার সাহেবের সাথে আমার কথা হয়েছে। ধান কাটা পর্যন্ত ধুলো বালি উড়ে যাতে ক্ষেতে না পড়ে তার জন্য একটা করার দাবী করেছেন। ইতি মধ্যে ফার্মের পাশ দিয়ে উঁচু করে নেট টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ধুলোবালি যাতে উড়ে না যায় জন্য প্রতিদিন পানি স্প্রে করা হচ্ছে। তাছাড়া চলতি মৌসুমে ১৫ দিনের মধ্যে ভাটার ইট পোড়ানো শেষ হয়ে যাবে। এ বিষয়ে বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ হারুন জানান, বরো মৌসুম শুরুতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেয়া যায়। অতিরিক্ত পরিচর্যা করায় বরোর আবাদে পরাগয়ন পর্যন্ত খুব ভালো ছিল। ধানে অর্ধেক দুধ আসার পর চাউল পুষ্ট হওয়ার আগেই ভাটার দূষণ কালো ধোয়া, অতিরিক্ত তাপ ও বালিতে ধান কুকড়ে যায় ও চিতায় পরিনত হয়। ধান পাকার আগেই দূষণে ধান পেকে গেছে। ক্ষেতে নেমে শীষ ধরে দেখলে বুঝা যায় অধিকাংশ ধান চিটা ও অপুষ্ট। বিগত বরো মৌসুমেও ইট ভাটার দূষণের কারণে শতভাগ সফল উৎপাদন হয়নি। খামারে বরোতে লক্ষ্যমাত্রার ৮৪শতাংশ বীজ উৎপাদন হয়েছে। এ বছর প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও ভাটার দূষনের কারণে লক্ষমাত্রার চেয়ে অনেক কম বীজ উৎপাদন হবে বলে তিনি ধারনা করছেন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি মানব সৃষ্ট ইট ভাটার দূষণ থেকে খামারকে সুরক্ষা রাখতে তিনি ইতিমধ্যে খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেছেন।