বুধবার ● ২০ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » সুন্দরবন » সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধ করা যাচ্ছে না, হুমকির মুখে জলজ প্রাণী
সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধ করা যাচ্ছে না, হুমকির মুখে জলজ প্রাণী
সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধ করা যাচ্ছে না । মাছের সঙ্গে মরছে অন্যান্য জলজ প্রাণীও। প্রভাবশালী চক্রের সহযোগিতায় অসাধু জেলেরা বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করার ফলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বনাঞ্চলের মৎস্য সম্পদের প্রজনন ও উৎপাদন।আইনশৃংখলা বাহিনির অভিযান অব্যহত থাকার পরও সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের এই অপতত্পরতা থেমে নেই।
র্যাব-৬ এর একটি দল গত ৮ এপ্রিল অভিযান চালিয়ে সুন্দরবন থেকে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার চক্রের মূল হোতাসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন, চক্রের প্রধান সাদ্দাম বৈদ্য, শফিকুল ইসলাম বৈদ্য, জাকির হোসেন, খায়রুল মোড়ল, আব্দুস সালাম গাজী, বাচ্চু সানা, আবু সাইদ সরদার, নাজমুল সরদার, আবুল হোসেন গাজী, শাহজাহান শেখ, সালাম সানা ও ইকরামুল সরদার। এদের বাড়ি খুলনার দাকোপ উপজেলার কালাবগী ও রূপসা উপজেলায়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার কাজে ব্যবহৃত মাছ মেরে ফেলার ১০ বোতল বিষ, চারটি জাল, চারটি ইঞ্জিনবিহীন কাঠের নৌকা, বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে শিকার করা ৪০০ কেজি মাছ ও পাঁচটি টর্চলাইট জব্দ করা হয়।সুন্দরবনসংলগ্ন লোকজন জানায়, স্থানীয় ঢাংমারী, মরাপশুর, জোংড়া, ঝাপসি, ভদ্রা, নীল কমল, হরিণটানা, কোকিলমুনী, হারবাড়িয়াসহ আশপাশ এলাকায় বনসংলগ্ন কিছু লোক বিষ দিয়ে মাছ ধরছে। বেশি মুনাফার আশায় সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রবেশ নিষিদ্ধ খালেও বিষ দিয়ে মাছ শিকার করা হয়। বিষাক্ত পানি সুন্দরবনের বিভিন্ন খাল থেকে ভাটার সময় নদীতে নেমে আসে। এ কারণে মাছ মরে যাওয়ায় এখন নদীতে আর ছোট-বড় মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। বিষ প্রয়োগের ফলে জীববৈচিত্র্যসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
র্যাব-৬ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ বলেন, গত ৮ এপ্রিল ভোরে সুন্দরবনের জাপসি নদীর গোলের খালের মুখে র্যাবের অভিযানের সময় দেখা যায়, খালের পানিতে অসংখ্য মাছ মরে ভেসে আছে। এসব মাছ কয়েকটি নৌকায় তোলা হচ্ছে। এসময় র্যাব সদস্যরা ঐ নৌকাগুলোর কাছে যেতেই তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে নৌকাসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরায় শুধু এক প্রকারের মাছের ক্ষতি হচ্ছে না, অন্য সব প্রজাতির মাছও ধ্বংস হচ্ছে। পাশাপাশি এর সঙ্গে বন ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। বিষ দিয়ে মাছ শিকারের প্রবণতা শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে কঠোর অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে যেসব মহাজন অধিক লাভের আশায় জেলেদের কাছে বিষ দিয়ে সুন্দরবনের নদী-খালে পাঠাচ্ছে ঐ সব প্রভাবশালী চক্রদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান তিনি।বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, বিষ দিয়ে মারা মাছ খেলে মানুষের পেটের পীড়াসহ কিডনি ও লিভারে জটিলতা দেখা দেয়। এটি স্বাস্থ্যের জন্যও চরম হুমকি স্বরূপ। বিষ দিয়ে মারা মাছ না খাওয়ার জন্য জনসাধারণকে সজাগ থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে সুন্দরবনের জলাভূমি। জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে ৪৫০টি নদ-নদী। আর এই নদ-নদীতে রয়েছে ৪৭৫টি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার মাছ বিষপ্রয়োগে মারা হচ্ছে। এতে শত শত মাছের প্রজাতি ধ্বংসের পাশাপাশি মৎস্য প্রজনন চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া বিষ প্রয়োগকৃত পানি পান করে বাঘ, হরিণসহ বনের প্রাণিও বিভিন্নভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে।