সোমবার ● ৯ মে ২০২২
প্রথম পাতা » উপকূল » ঘূর্ণিঝড় অশনি বেড়িবাঁধ ভাঙন আতঙ্কে উপকূলের মানুষ
ঘূর্ণিঝড় অশনি বেড়িবাঁধ ভাঙন আতঙ্কে উপকূলের মানুষ
প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছাঃ ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র চোখ রাঙানীতে আতঙ্কিত উপকূলের মানুষ। ইয়াস, আম্পান এর ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই ফের ‘অশনি’র অশান্তি শুরু হয়েছে। প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে দুর্বল বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলবাসীর ভরসারস্থল বেড়িবাঁধ। সেই বেড়িবাঁধ দূর্বল থাকায় উপকূলবাসীর মনে শঙ্কা বাড়ছে। সোমবার সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ও হালকা বাসাত বয়ে চলেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১২ মে নাগাদ ভারতের উপকূলে আঘাত হানতে পারে সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় অশনি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘোষনা অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র শঙ্কা মুক্ত বাংলাদেশ। তবে প্রচুর বৃস্টি হবে। প্রবাদে বলে, ঘর পুড়া গরু সিদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র আঘাতের শঙ্কায় তাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপকূলীয় নদী ভাঙন এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা ৩ জেলায় মোট ১ হাজার ৯১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। তার মধ্যে বর্তমানে ২৪০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। খুলনা জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৫টি পোল্ডার আছে। ৫১০কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে, এর মধ্যে ৯০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পাইকগাছা উপজেলায় ২৫০কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে এর মধ্যে ৩৮ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ।
জানা গেছে, ষাটের দশকে মাটি দিয়ে তৈরি ওই ভেড়িবাঁধ ছিল ১৪ ফুট উঁচু ও ১৪ ফুট চওড়া। কিন্তু এখন ২৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের উচ্চতা ও চওড়ার অর্ধেকও অবশিষ্ট নেই। অর্থাভাবে দীর্ঘদিনেও প্রয়োজন অনুযায়ী সংস্কার করতে না পারায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ষাটের দশকে তৈরি ওই ভেড়িবাঁধের বেশিরভাগই দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা হারিয়েছে। ফলে বাঁধগুলো ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস এবং নিম্নচাপ, লঘুচাপ, আমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারে লোকালয়ে পানি ঢোকা ঠেকাতে পারছে না। দুর্বল এসব ভেড়িবাঁধের কারণে বিভিন্ন সময় ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। তাছাড়া নিম্নচাপ এবং অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারেও বাঁধ উপচিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। ফলে উপকূলীয় এলাকার কয়েক লাখ মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সূত্র আরো জানা গেছে, দেশের উপকূলীয় তিন জেলার বেড়িবাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা কম এবং সেগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। তাছাড়া ওই বাঁধ দীর্ঘদিনেও ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। লবণাক্ত মাটি দিয়ে উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলো তৈরি। উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ নদ-নদীর পানিও লবণাক্ত। লবণাক্ত পানি বেড়িবাঁধের মাটির বন্ডিং দুর্বল করে ফেলে। ফলে অতিরিক্ত জোয়ারের পানির চাপে বাঁধের মাটি ধসে যায়। তাছাড়া ভেড়িবাঁধ ছিদ্র করে চিংড়ি ঘেরে লবণ পানি তোলার কারণেও বেড়িবাঁধ দুর্বল হয়ে গেছে। যে কারনে যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে দুর্বল বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। বাস্তহারা হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। ফলে সম্প্রতি সব চেয়ে বড় দুর্যোগ বলে মনে করা হয় নদী ভাঙন। এ নদী ভাঙন যেন উপকূলের মানুষের পিছু ছাড়ছে না। গত বছর আম্পান ঘূর্ণিঝড়ের পরে উপকূলের মানুষের যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়ে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে পারিনি এখনো। তারপর আবারও অশনি নিয়ে উপকূলবাসী শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। উপকূলের মানুষের এ ধারনের দুর্যোগ থেকে পরিত্রান পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো টেকসই বেড়িবাঁধ নিমাণ করা। ইয়াসের পরে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে কাজ করলেও শুভংকরের ফাঁকি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সঠিক তদারকির অভাবে পাউবো’র কোন কাজই ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশের বেশি হয় না। ফলে বার বার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়। এ বিষয়ে পাইকগাছা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাব-এসিস্ট্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার মোঃ রাজু হাওলাদার জানান, পাইকগাছায় প্রায় ৩৮ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধ রয়েছে। অশনি থেকে পাইকগাছাবাসীকে নিরাপদ রাখতে আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি এখনো প্রায় ৮শ কিলোমিটার দুরে রয়েছে। ঝড়ের গতিবিধি যে কোন সময় পরিবর্তন হতে পারে। পরিস্থির উপর নির্ভর করে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে নিজেদের সুরক্ষায় রাখতে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রস্তুতি গ্রহণ করার আবহান জানান উপকূলবাসীদের।