শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
বৃহস্পতিবার ● ১৬ জুন ২০২২
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বাবা আমার বাবা
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বাবা আমার বাবা
৩৭৬ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ১৬ জুন ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বাবা আমার বাবা

---প্রকাশ ঘোষ বিধান=

বাবা শব্দটি খুব ছোট। তবে বাবা শব্দটি শোনার পরেই আমাদের হৃদয়ে চলে আসে একটা কোমলতা। বাবা নামে শক্তি অপরিসীম। সূর্য যেমন নিজের তেজ আর আলো দিয়ে পুরো পৃথিবী কে আলোকিত করে রাখে, ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের নিজের পৃথিবীর আলো হিসেবে বাবার অবদান অপরিসীম। তাই আমাদের সবার উচিত নিজের জন্মদাতা পিতাকে যথেষ্ট পরিমান সম্মান ও শ্রদ্ধা করা।

প্রায় বিংশ শতাব্দী থেকে বাবা দিবস পালিত হয়ে আসছে। একজন মা তার সন্তানদের প্রতি যে ভালবাসার প্রকাশ করে, সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে দায়িত্বশীলতার দিক থেকে বাবার অংশও কোন ভাবেই কম নয়। আর সেটি বোঝানোর জন্যই মূলত মা দিবস এর পাশাপাশি গোটা বিশ্ব জুড়ে বাবা দিবস পালিত হয়ে আসছে। যার মাধ্যমে পৃথিবীর প্রত্যেকটি বাবাকে শ্রদ্ধা এবং সম্মান জানানো হয়।

বাবা মানে বটবৃক্ষের ছায়া। বাবা মানে নির্ভরতা। শাস্ত্রে বলা হয়, ‘পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাহী পরমং তপঃ, পিতরী প্রিতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতা’ এর অর্থ হচ্ছে- পিতা স্বর্গ, পিতাই ধর্ম, পিতাই পরম তপস্যা। পিতাকে খুশি করলে সকল দেবতা খুশি হন। সন্তানের প্রতি পিতা বা বাবার ভালোবাসা চিরকালের। বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের একটি অন্যতম দিন বাবা দিবস।

প্রায় সব বাবারাই তাদের সন্তানের কাছে বটবৃক্ষসম। হাজারো ব্যস্ততার মধ্যেও সন্তানের জীবনকে আরও উন্নত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যান বাবা। যদিও কয়েকটি শব্দে বাবাদের সংজ্ঞা দেওয়া মুশকিল। নিখাদ ভালোবাসা এবং স্নেহের সঠিক সংজ্ঞা বাবা বলা চলে। বাবা নেই যার একমাত্র সে-ই জানে বাবা না থাকার বেদনা। বাবা শব্দটি পৃথিবীর সর্বত্র নিখাঁদ ভালবাসার সাথে উচ্চারিত হয়। ভাষা অনুযায়ী নানাদেশে বাবাকে নিজস্ব ভাষায় ডেকে থাকে সন্তানেরা।

জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাবা দিবস পালিত হয়। তৃতীয় রোববার হিসেবে এ বছর ১৯ জুন পালিত হচ্ছে বাবা দিবস। বাবার প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা, জানানোর জন্যই বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিক থেকে বাবা দিবস পালন শুরু হয়। মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল - এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকে যার শুরু।

১৯০৮ সালে পশ্চিম ভারজিনিয়ার এক গীর্জায় একটি স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। এর আগের বছর একটি কয়লা খনিতে বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিল ৩৬২ জন কয়লা শ্রমিক। তাদেরকে সম্মান জানাতে সন্তানরা মিলে এই প্রার্থনা সভার আয়োজন করে। ধারণা করা হয় ১৯০৮ সালের ৫ই জুলাই, আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমণ্টের এক গির্জায় এই দিনটি প্রথম পালিত হয়। এটি ছিল বাবাকে সম্মান জানাতে ইতিহাসের প্রথম আয়োজন। যদিও বাবা দিবসের সঙ্গে এর তেমন কোন সম্পর্কে নেই।

এর পরের বছর ১৯০৯ সালে সনোরা স্মার্ট ডড নামের এক নারী বাবা দিবসের স্বীকৃতির জন্য সোচ্চার হয়ে ওঠেন। সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এই ভদ্রমহিলার মাথায় বাবা দিবসের ধারনা আসে। ডড এই আইডিয়াটা পান গির্জার এক পুরোহিতের বক্তব্য থেকে, সেই পুরোহিত মা’কে নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলছিলেন। তার মনে হয়, তাহলে বাবাদের নিয়েও তো কিছু করা দরকার। ডড তার বাবাকে খুব ভালবাসতেন। মা ছিলনা তাদের। তাদের সাত ভাইবোনকে বড় করে তুলেছিলেন তাদের সিঙ্গেল বাবা। বাবার এই ত্যাগ দেখে ডডের মনে হলো মা দিবসের এত আয়োজন হলে বাবা দিবস কেন বাদ থাকবে। বাবাকে সম্মান জানানোর জন্যও একটা দিন থাকা দরকার।

তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর, অর্থ্যাৎ ১৯শে জুন, ১৯১০ সালের থেকে বাবা দিবস পালন করা শুরু করেন। অনেক চেষ্টা করে দীর্ঘ এক বছরের সাধনায় স্থানীয় কমিউনিটি গুলোতে বাবা দিবস পালন করতে পারেন ডড। ১৯১০ সালের ১৯ জুন বিশ্বে প্রথম বারের মতো পালিত হয় বাবা দিবস। শুরুটা ওয়াশিংটনে হলেও ধীরে ধীরে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আস্তে আস্তে মা দিবসের পাশাপাশি বাবা দিবসের প্রতিও সচেতন হতে থাকেন সন্তানরা।

বাবা দিবস বেশ টানাপোড়ার মধ্য দিয়েই পালিত হতো। আসলে মা দিবস নিয়ে মানুষ যতটা উৎসাহ দেখাতো, বাবা দিবসে মোটেও তেমনটা দেখাতো না, বরং বাবা দিবসের বিষয়টি তাদের কাছে বেশ হাস্যকরই ছিল। ধীরে ধীরে অবস্থা পাল্টায়, ১৯১৩ সালে আমেরিকান সংসদে বাবা দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করার জন্য একটা বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯২৪ সালে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। অবশেষে ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি, জনসন বাবা দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। দীর্ঘ ছয় দশক পর মিলে বাবা দিবসের স্বীকৃতি। ১৯৭২ সালে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিক্সন একটি আইনে স্বাক্ষর করে বাবা দিবসকে জাতীয় মর্যাদা দেন। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার পিতৃ দিবস হিসেবে পালিত হয়।

মা দিবস প্রথম পালিত হয়েছিল ১৮৬০ সালে। সেই তুলনায় বাবা দিবসের বয়স কমই বলা যায়। মা দিবস যতটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পেরেছে বাবা দিবসের এক্ষেত্রে একটু সময়ই লেগেছে বলা চলে। আপাত দৃষ্টিতে অনেকের কাছেই মা দিবস বাবা দিবস পালনের বিষয়টি খুব একটা গুরুত্ব পায় না। তাই বলে এ ধরনের দিবসগুলো একেবারেই যে অপ্রয়োজনীয়, তেমনটা কিন্তু মোটেও বলা যাবে না।

সন্তানের জন্য বাবার ভালোবাসা অসীম। বাবাকে সব সন্তান ভালবাসে। বাবা সব সন্তানের কাছেই পরম পুজণীয়। বাবা সন্তানের মাথার ওপর বটবৃক্ষের মতো। যার স্নেহ অবারিত ধারায় শুধুই সন্তানের জন্য। বাবা মানে নির্ভরতা। বাবা নিখাঁদ আশ্রয়। উত্তপ্ত সূর্যের তলে সন্তানের শীতল ছায়া। বাবা মানে ভরসা। আবার বাবা শাশ্বত, বাবা চির আপন। সন্তানের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় তার বাবা। সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসার অনেক অনন্য উদাহরণ আছে। বাবা এক স্বার্থহীন ভালোবাসা, সেই বাবাকে সন্তানের খুশির জন্য জীবনের অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়।

বাবা দিবসে সন্তানদের সামনে সুযোগ আসে বাবাকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানানোর। তাছাড়া বাবা দিবস পালনের ফলে সমাজে এবং পরিবারে বাবাদের যে অবদান তা যে সমাজ এবং নিজের সন্তানরা মূল্যায়ন করছে, এ বিষয়টিও বাবাদের বেশ আনন্দ দেয়। তাছাড়া অনেক সন্তানই আছে, যারা পিতা-মাতার দেখাশোনার প্রতি খুব একটা মনোযোগী নয়। মা দিবস বা বাবা দিবস তাদের চোখের সামনের পর্দাটি খুলে ফেলে পিতা-মাতার প্রতি তার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাই এ ক্ষেত্রে বলা যায়, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে মা দিবস বা বাবা দিবসের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।  পরিবার তথা সমাজে পিতার যে গুরুত্ব তা আলাদাভাবে তুলে ধরাই বাবা দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য।বাবাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটিতে পৃথিবীর সকল বাবাদের জন্য সন্তানের শুভেচ্ছা জানানো হয়

লেখকঃ সাংবাদিক





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)