শনিবার ● ২ জুলাই ২০২২
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » নার্সারীতে গুটি কলমে ব্যস্ত শ্রমিক
নার্সারীতে গুটি কলমে ব্যস্ত শ্রমিক
প্রকাশ ঘোষ বিধান: বর্ষাকাল গুটি কলম তৈরী করার উপযুক্ত সময়। পাইকগাছার নার্সারী গুলিতে গুটি কলম তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছে মালিক ও শ্রমিকরা। গুটি কলম তৈরীর উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। সাধারনত বৈশাখ-আষাঢ় গুটি কলম তৈরীর উপযুক্ত সময়। মাতৃগুণ বজায় রাখা, দ্রুত ফলন, রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা বাড়ানো এবং অধিক ফলন পেতে গুটিকলম ব্যবহার করা হয়। সম্পূর্ণ মাতৃগাছে গুণাগুন সমৃদ্ধ চারা করার জন্য গুটিকলম জনপ্রিয়। কাগজি লেবু, পেয়ারা, লিচু, জলপাই, ডালিম, করম চা, গোলাপ জামসহ বিভিন্ন গাছে গুটি কলম করা হয়।
উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ছোট-বড় প্রায় ৫ শতাধিত নার্সারী গড়ে উঠেছে। যার উল্লেখযোগ্য সংখ্যা রয়েছে গদাইপুর গ্রামে। বর্ষা মৌসুম শুরুতে চারা তৈরীর জন্য নার্সারী মালিক ও কর্মচারীরা গুটিকলম তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেছে। যে গাছের ডালে গুটি করা হবে সে ডালের বয়স কমপক্ষে ৬ মাস থেকে ২ বছর হতে হবে। গুটি কলম তৈরী করতে গাছের ডালের দুই ইঞ্চি মত ছাল পুরাটা গোল করে কেঁটে ফেলে জৈব সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে কাঁটা অংশ ভাল করে বেঁধে গুটি করতে হবে। মাটির গুটি সবসময় ভিজা রাখতে হবে। মাটিতে পলিথিন দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে। ১ মাসের মধ্যেই মাটির ভিতর থেকে শিকড় বেড় হয়।হিতামপুর গ্রামে অবস্থিত রজনীগন্ধা নার্সারীর মালিক সুকনাথ পাল জানান, এ বছর তার নার্সারীতে ৫২ হাজার গুটি কলমের চারা তৈরী করা হচ্ছে।এর মধ্যে মিস্টি জলপাই ২০ হাজার,মাল্টা ২০ হাজার,পেয়ারা ১০ হাজার ও লিচু ২ হাজার।
গুটি কলম তৈরীতে অভিজ্ঞ নার্সারী কারিগরের দরকার হয়। গদাইপুর গ্রামের গুটি কলমের অভিজ্ঞ কারিগর হামিদ মোড়ল জানান, প্রতিটি গুটি দুই টাকা দরে তৈরী করছি।গোপালপুর গ্রামের গুটি কলমের অভিজ্ঞ কারিগর মোক্তার ও সালাম বলেন, লেবু গুটি ২টাকা ও অন্য জাতের গুটি কলম ১ টাকা ৭০ পয়সা দরে তৈরী করছি। তাছাড়া দৈনিক মুজুরী হিসাবে নার্সারীতে কাজ করে থাকে। গদাইপুর গ্রামের অবস্থিত সততা নার্সারীর মালিক অঞ্জনা রানী পাল জানান, তার নার্সারীতে বিভিন্ন জাতের প্রায় ১ লাখ গুটি কলম তৈরী করছেন। শ্রমিকের অভাবে কলম তৈরী করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে কলম তৈরীর সময় পার হয়ে গেলে এ মৌসুমের আর গুটি কলম তৈরী করা যাবে না। সে কারনে কলম তৈরীতে অধিক পয়সা খরচ হচ্ছে।
পাইকগাছা উপজেলা নার্সারী মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অশোক কুমার পাল জানান, কলম তৈরীর শ্রমিক ঠিকমত না পাওয়ায় কারণে উচ্চ মূল্যে শ্রমিক নিয়ে কলম তৈরী করতে হচ্ছে। গদাইপুর এলাকার তৈরী কলম বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, রাজশাহী সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। তবে ঠিকমত বাজার দর না পাওয়ায় নার্সারী মালিকরা আশানারুপ ব্যবসা করতে পারছে না। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, পাইকগাছার নার্সারী শিল্প খুলনা জেলার শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। নার্সারী ব্যবসায়ীরা চারা বিক্রি করার জন্য আশানারুপ বাজার ধরতে না পারায় তারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নার্সারীতে উৎপাদিত চারা সবুজ বননায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে তেমনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।