শুক্রবার ● ১৫ জুলাই ২০২২
প্রথম পাতা » জাতীয় » মহাসড়কে ৭২টি নতুন থানা হচ্ছে, খুলনা বিভাগে ১১
মহাসড়কে ৭২টি নতুন থানা হচ্ছে, খুলনা বিভাগে ১১
দেশের সকল মহাসড়কে ৩৬ কিলোমিটার দূরে দূরে একটি করে থানা করার প্রস্তাব করেছে হাইওয়ে পুলিশ। ইতিমধ্যে প্রস্তাবটি পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর ৭২টি নতুন থানার কার্যক্রম শুরু হবে। এ ছাড়া উন্নতমানের যানবাহন কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দু’টি হেলিকপ্টার কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন থানা করা এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা ও যান চলাচল নির্বিঘœ করার পাশাপাশি দুর্ঘটনা রোধ, অপরাধীদের গতিবিধি ও পুলিশের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করতে প্রতিটি মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্লোজ সার্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরা স্থাপন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকা-চটগ্রাম মহাসড়কে কাজ শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তারা বলছেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে মহাসড়কে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গণমাধ্যমকে বলেন, সড়ক-মহাসড়ক কঠোর নিরাপত্তার বলয়ে আনা হচ্ছে। মহাসড়কে নতুন থানা করার প্রস্তাব এসেছে। এগুলো কীভাবে করা যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে। হাইওয়ে পুলিশ যেন ভালোভাবে কাজ করতে পারে সেজন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে মহাসড়ক।
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত মহা-পরিদর্শক মলিক ফখরুল ইসলাম জানান, যাত্রীদের নিরাপত্তা ও অপরাধ, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭২টি থানা করার প্রস্তাব অন্যতম। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়া যাবে।’
তিনি বলেন, দেশের সব মহাসড়কের নিরাপত্তায় হাইওয়ে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বসানো হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। ইতিমধ্যে একটি কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু স্থানে ক্যামেরা স্থাপন হয়েছে। অন্য মহাসড়কেও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। মহাসড়কে যানবাহনের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ রাখতে চালকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক কথা বলছে পুলিশ। সিসি ক্যামেরাগুলো স্থাপন হয়ে গেলে যেকোনো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
পুলিশ সূত্র জানায়, যেসব স্থানে থানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, ভাটিয়াপাড়া; শরীয়তপুরের জাজিরা; বাগেরহাটের মোল্লাহাট, খানজাহান আলী, মোংলা; সাতক্ষীরা সদর; ঝিনাইদহের আরাপপুর; নড়াইলের লোহাগড়া; কুষ্টিয়ার গড়াই; চুয়াডাঙ্গা সদর, দর্শনা; মেহেরপুর সদর; মাদারীপুরের মোস্তফাপুর; যশোরের খাজুরা; কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়ক, সাবরাং, মহেশপুর; রাঙামাটি সদর, কাপ্তাই; খাগড়াছড়ির দীঘিনালা; বান্দরবানের চিম্বুক, নীলাচল; নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ; চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ; রাজশাহীর গোদাগাড়ী; নওগাঁর মান্দা, পত্লীতলা, নওহাটা; বগুড়ার মহাস্থানগড়, শেরপুর; চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট; জয়পুরহাটের কালাই; সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর; রংপুরের কাউনিয়া; কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী; লালমনিরহাট সদর; দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, দিনাজপুর সদর, ঘোড়াঘাট; ঠাকুরগাঁও সদর; নীলফামারীর জলঢাকা; ঢাকার কেরানীগঞ্জ; নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চন; মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী; টাঈাইলের নাগরপুর, এলেঙ্গা; গাজীপুরের চন্দ্রা; নরসিংদীর ঘোড়াশাল; ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ, মুক্তাগাছা; জামালপুরের সরিষাবাড়ী; শেরপুরের গৌড়দ্বার; ফরিদপুরের মুন্সিবাজার; পিরোজপুর সদর; ঝালকাঠির গাবখান, দপদপিয়া; ভোলার বাংলাবাজার, চরফ্যাশন; পটুয়াখালীর পায়রা, লেবুখালী, কুয়াকাটা; বরগুনার আমতলী; কিশোরগঞ্জের মিঠামাইন; সিলেটের চারখাই, ফেঞ্চুগঞ্জ, ভোলাগঞ্জ; হবিগঞ্জের মাধবপুর; মৌলভীবাজারের কুলাউড়া; সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সৈয়দাবাদ।
বর্তমানে জাতীয় মহাসড়ক ৯৬ ও আঞ্চলিক মহাসড়ক আছে ১২৬টি। গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, শেরপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, ভোলা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে স্থাপনা তৈরি করার কথা রয়েছে। আমিনবাজার থেকে হাটিকুমরুল, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ, সিলেট, পোস্তগোলা থেকে মোংলা ও ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ডিজিটাল মনিটরিংয়ের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে হাইওয়ে সদর দপ্তর।
সূত্র জানায়, হাইওয়ে পুলিশের জন্য যানবাহন কেনার আরেকটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ওই প্রস্তাবে রয়েছে জিপ ২১টি, কমান্ড ভেহিক্যাল ১টি, অপারেশন ভেহিক্যাল জিপ ১টি, পেট্রোলকার ৪৮২টি, এম্বুলেন্স ১৪৩টি, মোটরসাইকেল (৭৫০ সিসি) ৫৮০টি, রেকার ১০৯টি, ট্রাক (৫ টন) ১০টি, ক্রেন ২টি, মাইক্রোবাস ২২টি, মিনিবাস ১১টি ও হেলিকপ্টার ২টি। তাছাড়া ১৩০৮ জন সাধারণ নাগরিক নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাজ্য মহাসড়কগুলোতে ৩০০০ সিসির ৫ কোটি টাকার মূল্যের জিপ ব্যবহার করেন কর্মকর্তারা। কাতারের হাইওয়ে পুলিশ ৫৫০০ সিসির নিশান পেট্রোল, মালয়েশিয়ায় ২৫০০ সিসির নিশান এক্সট্রিল, পাকিস্তানে ২৭৫৫ সিসির টয়োটা প্রাডো, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩২০০ সিসির ফ্রড ইভারস, ভারতে ১৪০০ সিসির টাটা ইন্ডিগো, সিঙ্গাপুরে ২০০০ সিসির বিএমডব্লিউ, জাপানে ২৫০০ সিসির টয়োটা ক্রাউন, কানাডায় ৪৬০০ সিসির ফ্রড ক্রাউন ভিক্টোরিয়া, সুইজারল্যান্ডে ৩৯৪২ সিসির মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি ব্যবহার করে। এই রকম গাড়ি আনারও পরিকল্পনা আছে হাইওয়ে পুলিশের। তিনি আরও বলেন, কিছু মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। ওইসব স্থানে জমা দেওয়া হয়েছে ১১৪টি লাইটপোলের প্রতিবেদন। পাশাপাশি ডাটা সংযোগের জন্য বিটিসিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়েছে। মেঘনাঘাট হাইওয়ে কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার মনিটরিং ও ডাটা সেন্টার স্থাপন করার কাজ শেষ হয়েছে। ক্যামেরাগুলো স্থাপন হলে অন্ধকার ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়াতেও স্পষ্ট ছবি পাওয়া যাবে। এ ছাড়া রাস্তায় চলাচলরত যানবাহনের নম্বর প্লেটের ছবি ধারণ ও সংরক্ষণ করা যাবে।