শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
রবিবার ● ১৭ জুলাই ২০২২
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » ডুমুর ভেষজ গুণসম্পন্ন ফল
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » ডুমুর ভেষজ গুণসম্পন্ন ফল
৬৭২ বার পঠিত
রবিবার ● ১৭ জুলাই ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ডুমুর ভেষজ গুণসম্পন্ন ফল

প্রকাশ ঘোষ বিধান,পাইকগাছ; ডুমুর বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ।এক সময় বাংলার প্রাকৃতিক পরিবেশে পাওয়া গেলেও বর্তমানে এই উদ্ভিদটি বিপন্ন। ডুমুর ফল প্রায় সকলেরই চেনা। ডুমুর নরম ও মিষ্টিজাতীয় ফল। ফলের আবরণ ভাগ খুবই পাতলা এবং এর অভ্যন্তরে অনেক ছোট ছোট বীজ রয়েছে। এর ফল শুকনো ও পাকা অবস্থায় খাওয়া যায়। ডুমুর উচ্চমানের ভেষজ গুণসম্পন্ন ফল। কাঁচা ডুমুর ফল অতি উন্নত সবজি। শুধু ডুমুর বা অন্যান্য সবজির সঙ্গে মিলিয়ে ডুমুরভাজি অথবা এর ভর্তা ভীষণ উপাদেয় খাদ্য।

বাংলাদেশে সচরাচর যে ডুমুর পাওয়া যায় তার ফল ছোট এবং খাওয়ার প্রায় অনুপযুক্ত।দেশে যেটি পাওয়া যায় সেটি গোলডুমুর নামে পরিচিত।এর আরেক নাম কাকডুমুর। ফল আকারে বেশ ছোট এবং খাওয়ার অযোগ্য। এগুলো মূলত পাখিরাই খেয়ে থাকে। বেশ কিছু অঞ্চলে এ ফল তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়।তবে ডুমুর খুবই উপকারী। মূলত জগডুমুর তরকারি করে খাওয়া হয়। ডুমুর হাটবাজারে কিনতে পাওয়া যায় খুব কম।এ ছাড়া ডুমুরের ফল সবজি হিসেবে এবং পাতা গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ডুমুরগাছের পাতা শিং ও মাগুর মাছ পরিষ্কার করতে ব্যবহার করা হয়।

শহর-নগর সর্বত্র ডুমুর পাওয়া যায় না। গ্রামগঞ্জে যেখানে-সেখানে ডুমুর গাছ দেখতে পাওয়া যায়। ডুমুর গাছ কেউ লাগায় না। প্রাকৃতিকভাবে আপনাআপনি হয়।দেশে দুই ধরনের ডুমুর দেখা যায় - গোল ডুমুর বা কাকডুমুর ও যজ্ঞডুমুর বা জগডুমুর।কাকডুমুরের পাতা বড়, লম্বা ও খসখসে হয়। এই ডুমুরের পাতা শিরিশ কাগজের মত খসখসে।আর যজ্ঞডুমুরের পাতা ছোট ও গোল। এই ফলের আকার কাকডুমুর-এর চাইতে বড়; এটি একটি জনপ্রিয় মিষ্টি ও রসালো ফল। ডুমুরের আরো অনেক প্রজাতি রয়েছে। ডুমুর মোরাসিয়া গোত্রভূক্ত ৮৫০টিরও অধিক কাঠজাতীয় গাছের প্রজাতিবিশেষ।

উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে এ প্রজাতির গাছ জন্মে।আমাদের দেশের রাজশাহী অঞ্চল, খুলনা, ফরিদপুর, পার্বত্য এলাকার খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি, সিলেটের মৌলভীবাজার ও টাঙ্গাইলে ডুমুর তুলনামূলক বেশি জন্মে। দেশের অন্যত্রও বিক্ষিপ্তভাবে ডুমুরের গাছ দেখা যায়। গ্রামের বন-বাদাড়ে  এই গাছ অযত্নে-অবহেলায় এখানে সেখানে ব্যাপক সংখ্যায় গজিয়ে ওঠে। গাছ তুলনামূলকভাবে ছোট। এটি এশিয়ার অনেক অঞ্চলে এবং অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়।  পাখিরাই প্রধানত এই ডুমুর খেয়ে থাকে এবং পাখির বিষ্ঠার মাধ্যমে বীজের বিস্তার হয়ে থাকে। এর আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মালয়েশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া। এর ফল গাছের কান্ডে থোকায় থোকায় হয়।

‘ডুমুরের ফুল’ না দেখলেও ডুমুর ফল  সবাই দেখেছে। ডুমুরের ফুল দেখা যায় না।তাই ডুমুরের ফুল নিয়ে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। ফলের ভিতরে ফুল হওয়া বৃক্ষের নাম ডুমুর। ফুলটি তাই দেখা যায় না। কিন্তু ফলের অন্তঃপুরে তার প্রকাশ ঘটে।

ডুমুর খুবই উচ্চমানের ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। তাছাড়াও পাকা ডুমুর দিয়ে জ্যাম, জ্যালি, চাটনি ইত্যাদি তৈরি করে খাওয়া যায়। পাকা ডুমুর শুকিয়ে বিভিন্ন রকমের খাবারের উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা যায় । কার্বোহাইড্রেট, সুগার, ফ্যাট, প্রোটিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ছাড়াও বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ডুমুর। পুষ্টিগুণের পাশাপাশি ডুমুরের অনেক ঔষধী গুণও রয়েছে । বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় স্মরণাতীতকাল থেকে ডুমুরের পাতা, কাঁচা ও পাকা ফল, নির্যাস, বাকল, মূল প্রভৃতি কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ডুমুরে খাদ্যশক্তি ৩৭ কিলোক্যালরি, ১২৬ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিনসহ ভিটামিন এ, বি, সি ও অন্যান্য উপাদান রয়েছে। গুটিবসন্ত, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, কিডনি ও মূত্রসংক্রান্ত সমস্যা, স্নায়বিক দুর্বলতা, মস্তিষ্কের শক্তিবৃদ্ধি, সর্দি-কাশি, ফোড়া বা গ্রন্থস্ফীতি (টিউমার) ও স্ত্রীর হাড়ের গঠন মজবুত করা, উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করাও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ডুমুরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

মধ্যপ্রাচ্যে যে ডুমুর (আঞ্জির) পাওয়া যায়  তার ফল বড় আকারের; এটি জনপ্রিয় ফল হিসেবে খাওয়া হয়। বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হয়ে থাকে আফগানিস্তান থেকে পর্তুগাল পর্যন্ত। হিন্দি, উর্দু, ফার্সি ও মারাঠি ভাষায় একে ‘আঞ্জির’ বলা হয়। এর আরবি নাম ‘ত্বীন’;  এই গাছ ৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর আদি নিবাস মধ্যপ্রাচ্য। আঞ্জির হচ্ছে ডুমুর জাতীয় এক ধরনের ফল।  বর্তমানে এটি বাংলাদেশ সহ  বিভিন্ন দেশে অত্যন্ত লাভজনকভাবে চাষ করা হচ্ছে । খুলনার পাইকগাছায় প্রচুর পরিমানে ডুমুর গাছ গন্মে।তবে অবহেলা অনাদরে কিছু গাছ বেচে যায় আর বাগান বলে গাছ কেটে ফেলা হয় গরুর খাদ্য হিসাবে।

---কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাইকগাছা কার্যালয়ের  কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো:জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ডুমুরের রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা।তরকারি হিসাবে এলাকায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ এলাকার কৃষকদের উচ্চমানের ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ ডুমুর গাছ সংরক্ষণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)