রবিবার ● ১৬ অক্টোবর ২০২২
প্রথম পাতা » স্বাস্থ্যকথা » চোখ ওঠা রোগে চশমা কেনার হিড়িক; মিলছেনা চোখের ড্রপ
চোখ ওঠা রোগে চশমা কেনার হিড়িক; মিলছেনা চোখের ড্রপ
প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছাঃ পাইকগাছায় হঠাৎ করে চোখ ওঠা রোগী রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। ছোঁয়াচে হওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে রোগটি। ফলে দৈনন্দিন কাজের সময় সংক্রমণজনিত ছোঁয়াচে এই রোগ থেকে বাঁচতে চশমার দোকানে ভিড় বেড়েছে। তবে মিলছে না চোখের ড্রপ।
শিশু শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষ সম্প্রতি এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ছোঁয়াচে রোগ হওয়ায় মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ছে রোগী থেকে সুস্থদের মাঝে। কোনো কোনো পরিবারের এক বা একাধিক ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
পাইকগাছা ও কপিলমুনির চশমার দোকানগুলোতে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ক্রেতার চাপকে পুঁজি করে বেড়ে গেছে দামও। অন্যান্য সময় যেখানে ৫০ থেকে ১০০ টাকায় চশমা মিলতো এখন সেখানে গুনতে হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। পাইকগাছা সুমা অপটিক্যালের মালিক মোঃ জাহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, চোখ ওঠার কারণে কালো রঙ্গের চশমার চাহিদা বেড়েছে। চোখ ওঠা চশমা ক্রেতা মনোহর সানা বলেন, বাড়ীতে ৪/৫ জনের চোখ ওঠেছে। দুই নাতির জন্য কালো চশমা কিনতে এসেছি। তবে এখন চশমার দাম একটু বেশি নিচ্ছে। চোখ ওঠায় আক্রান্ত কারও চোখের দিকে তাকালে চোখ ওঠে সাধারণ মানুষের এমন ভ্রান্ত ধারণা থেকে ভিড় জমিয়েছে চশমার দোকানে।
যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্ত রোগীর চোখের দিকে তাকালে চোখ উঠে না। ওই রোগীর চোখের পানিতে ভাইরাস ভেসে বেড়ায়। যখন এই পানি মুছতে যায়, তখনই এটি রোগীর হাতে এসে যায়। এরপর থেকেই সেই হাত দিয়েই যা কিছুই ছুঁক না কেন, সেখানে ভাইরাস চলে আসে। এতে করে চশমা ব্যবহারের ফলে চোখে স্পর্শ করা কমবে এবং ধুলাবালু, ধোঁয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
চিকিৎসকের কাছ থেকে জানা যায়, কনজাংটিভাইটিস, সাধারণভাবে যাকে আমরা বলে ‘চোখ ওঠা’। চোখের পাতার নিচে ঝিল্লির মতো পাতলা পর্দা যা চোখের সাদা অংশকে ও চক্ষুপল্লবের ভেতরভাগকে ঢেকে রাখে। মূলত গরম আবহাওয়া এবং হঠাৎ ঝিরি বৃষ্টির কারণে চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস রোগটি বেশি দেখা যাচ্ছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কিছু পরামর্শ মেনে চললে এ রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। কনজাংটিভাইটিসের লক্ষণ হলো, চোখের নিচের অংশ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ ব্যথা, খচখচ করা বা অস্বস্তি। লক্ষণগুলো দেখা গেলেই যেহেতু এটি ছোঁয়াচে রোগ তাই বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। কোনো কারণে চোখ ভেজা থাকলে চোখ টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে নিতে হবে। এছাড়া চোখ উঠলে চশমার ব্যবহার করা প্রয়োজন। চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করা যায়। তবে চোখ ঘষে চুলকানো যাবে না। অন্য কারও আই ড্রপ ব্যবহার করা উচিত হবে না, এতে কনজাংটিভাইটিস ছড়াতে পারে। একইসঙ্গে এলার্জিজনিত খাবার পরিহার করতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠবেন। তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের আরও বেশি সময় লাগতে পারে।
বিভিন্ন কমক্ষেত্রে বাড়ছে চোখ ওঠা রোগীর ভিড়। চোখ ওঠা রোগীর মধ্যে বেশিরভাগই স্কুল, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। সকালবেলা, স্কুল, কলেজ পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থীকে চশমা পড়ে গন্তব্য যেতে দেখা যায়। গদাইপুর গ্রামের আফসার আলী জানান, বাড়ীতে ৩ জনের চোখ ওঠেছে। কিন্তু চোখের জন্য আই ড্রাপ পাচ্ছি না। পাইকগাছার ফাতেমা ফার্মেসীর মালিক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরবরাহের তুলনায় চাহিদা অনেক বেশি। আমরা চাহিদা পাঠিয়েও ড্রপ পাচ্ছি না।
পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: নীতিশ চন্দ্র গোলদার বলেন, চোখ ওঠা রোগ নিয়ে মূলত উদ্বেগের কিছু নেই। কিছুদিন ঘরে থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেই ঠিক হয়ে যায়। তবে রোগটি ছোঁয়াচে, তাই যথাসম্ভব আইসোলেশনে থাকা ভালো। আর এ রোগে আক্রান্তদের থেকে দূরে থাকতে বলা হচ্ছে। এছাড়া সানগ্লাস পরতে বলা হচ্ছে।
চোখ উঠা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ বড় ভ্রান্ত ধারণা আছে। রোগীর চোখে তাকালে এই রোগ কখনো ছড়ায় না। উল্টো সংক্রমিত রোগীর চশমা, টিস্যু বা কাপড় ব্যবহার করলে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও কালো চশমা পরলে রোদের কারণে চুলকানি, অস্বস্তি, ব্যথা থেকে কিছু উপশম পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, আক্রান্ত রোগীদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। চোখে পানি দিতে হবে বারবার। এছাড়াও ব্যথা থাকলে প্যারাসিটামল খেতে হবে। অবশ্যই ডাক্তার দেখিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করতে হবে। তবে কোনোভাবে রাস্তাঘাট বা বাড়ির পাশের ফার্মেসি থেকে এক্সট্রা ড্রপ কিনে ব্যবহার করা উচিত নয়।