রবিবার ● ২৫ ডিসেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » বিশেষ সংবাদ » আজানের আওয়াজ নিয়ে আপত্তি চট্টগ্রামের শিল্পপতির, কমাতে দিলেন লিফলেট
আজানের আওয়াজ নিয়ে আপত্তি চট্টগ্রামের শিল্পপতির, কমাতে দিলেন লিফলেট
চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার একটি জামে মসজিদে উচ্চস্বরে আজানের আওয়াজ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি লিখিত আপত্তি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ক্লাবের সভাপতি, শিল্পপতি নাদের খাঁন ও তার স্ত্রী হাসিনা খাঁন।
জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে তিনি ওই এলাকার প্রধান শাহী জামে মসজিদে আজানের সময় উচ্চস্বরে মাইক ব্যবহার নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। তাতেও কাজ না হওয়ায় গত ১৪ ডিসেম্বর পূর্ব নাসিরাবাদ শাহী জামে মসজিদের সেক্রেটারী বরাবরে লিখিত একটি চিঠি পাঠান তিনি ও তার স্ত্রী। সেই চিঠি লিফলেট আকারে বিভিন্ন জায়গায় বিতরণও করা হয়।
মসজিদের আজানের আওয়াজ মসজিদের ভেতরেই সীমাবদ্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়ে লেখা সেই চিঠিতে তারা মসজিদ কমিটিকে সতর্ক করে দিয়ে লিখেছেন ‘আপনারা যদি আমাদের অনুরোধ অগ্রাহ্য করেন, তবে সব ধরনের সহযোগিতা থেকে আমরা বিরত থাকবো।’
শিল্পপতি নাদের খাঁন ও তার স্ত্রী হাসিনা খাঁন চিঠিতে লিখেছেন ‘আপনার নিকট এবং কমিটির অন্যান্য সম্মানিত সদস্যের নিকট বারবার অনুরোধ করেও এই পর্যন্ত শোনার ও বোঝার চেষ্টা করছেন না-আমাদের এই এলাকায় একই সাথে ৮-৯টি মসজিদ হতে আজান শোনা যায়। অথচ আপনারা কেউ কেউ এ কথাও বলেছেন যে, আপনারা যেহেতু দূরে থাকেন, শোনার সুবিধার জন্য মাইকের আওয়াজ বাড়িয়ে রাখেন। এই বিষয়টি আলাহতায়ালা নিশ্চয়ই পছন্দ করবেন না।’
চিঠিতে লেখা হয়, ‘শুক্রবারে মসজিদে মাইকের মাধ্যমে ওয়াজ প্রচার করা হয়। আপনাদের অনুরোধ করেছি-এই আওয়াজ আপনারা মসজিদের ভেতরে রাখেন। কিন্তু এই পর্যন্ত তাও হলো না! অনেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। শিশুর ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার অসুবিধা হতে পারে, অসুস্থ লোকের অসুবিধা হতে পারে অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিরক্তির কারণ হতে পারে-সবচেয়ে বড় কথা বিকট আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই বোঝা যায় না।’
নাদের খাঁন ও তার স্ত্রী হাসিনা খাঁন মসজিদ কমিটির কাছে অনুরোধের সুরে লিখেছেন-‘মসজিদুল হারাম, মসজিদুল নববী-এই সকল মসজিদে এই ধরনের মাইক ব্যবহার হচ্ছে কিনা খবর নেন। আপনারা যদি আমাদের অনুরোধ অগ্রাহ্য করেন, তবে সব ধরনের সহযোগিতা থেকে আমরা বিরত থাকবো। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়রা।
তারা এই দু’জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে থানায় জিডি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পূর্ব নাসিরাবাদ মহল্লা কমিটির সভাপতি আমির হোসেন খাঁন সাংবাদিকদের বলেন, এই পরিবারটি ধর্মকর্ম মানেন না। আর সেটা একান্ত তাদের বিষয়। কিন্তু তারা তো এভাবে আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারেন না। উনারা এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি বিনষ্ট করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছেন। এখন উদ্ভট একটা চিঠি লিখে সবাইকে বিলি করছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী তাদের উপর প্রচন্ড পরিমাণে বিরক্ত।
তবে এই বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্পপতি নাদের খাঁন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বলেছিলাম মাইকের আওয়াজ একটু কমাতে। আর তারা বিষয়টিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছেন। তারা কেন এমন করছেন আমি এটা বুঝতে পারছি না। ইতোমধ্যে সিএমপি কর্মকর্তাদের থেকে শুরু করে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে আমার এখানে এসেছেন। সবাইকে আমি বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়েছি।
প্রসঙ্গত, শিল্পপতি নাদের খাঁনের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায়। তবে তার পরিবার চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকায় বসবাস করেন। তিনি চিটাগং ক্লাবের সভাপতি ও পেডরোলো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ফটিকছড়ির হালদা ভ্যালি চা বাগানের কর্ণধারও এই শিল্পপতি।