সোমবার ● ২৩ জানুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » চিত্রবিচিত্র » বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম: সনাতন ধর্ম কি বিবর্তনবাদকে সমর্থন করে?
বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম: সনাতন ধর্ম কি বিবর্তনবাদকে সমর্থন করে?
বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম: সনাতন ধর্ম কি বিবর্তনবাদকে সমর্থন করে? এই পৃথিবী কবে সৃষ্টি হয়েছে,কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে, কি করে এল এই মস্ত মহাজগত। কোথা থেকে এলাম আমরা। এত এত বিচিত্র সব প্রাণী,রাশি রাশি উদ্ভিদকূল।
কিভাবে আমরা মানুষরা এই পৃথিবীতে এলাম, বেদ ই বা কখন এসেছে। এমন অসংখ্য প্রশ্নের সম্মুখীন হই আমরা সবসময়। বেদে মানুষ সৃষ্টি সম্বন্ধে কি বলা আছে এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের আগে জানতে হবে মানুষ সৃষ্টির ইতিহাস, জানতে হবে বেদের বিষয়বস্তু। তাহলেই কেবল এই ধুম্রজালের অবসান আমরা ঘটাতে সক্ষম হব।
আজ আমি যদি আপনাকে বলি বিল গেটসের অর্থ সম্পত্তির পরিমাণ ১২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আপনি হেসেই উড়িয়ে দেবেন। বলবেন তো তাতে কি হয়েছে? জেফ বেজোসের তো ১৮৬ বিলিয়ন ডলার, এমনকি এলন মাস্কের ই তো ১৫৩ বিলিয়ন ডলার। মুখে সহজে বলে ফেলা গেলেও বাস্তবে ভেবে দেখুন বিলিয়ন সংখ্যাটা কত বড়! কিন্তু এত বড় সংখ্যাটিকেই ২০২০ সালে এসে আপনার আমার কাছে অনেক সাধারণ বা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।
কিন্তু আজ থেকে বেশী না, মাত্র তিন হতে চার হাজার বছর আগের কথাই ধরুন,তখনকার অধিকাংশ মানুষের এত বড় সংখ্যা চিন্তা করার ক্ষমতাই ছিলনা। সাধারণ মানুষের চিন্তার,কল্পনার সীমানা ছিল অনেক ছোট। এইযে আমাদের পৃথিবী, ২০২০ সালে একটা প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চাকেও যদি জিজ্ঞেস করেন যে পৃথিবীর বয়স কত সে একদম না জানলেও অন্তত অনুমান করে হলেও কয়েক লাখ অথবা নিদেনপক্ষে অনেক হাজার বছর বলবে।সে আসলে হয়তো জানেইনা বৈজ্ঞানিকভাবে পৃথিবীর বয়স কত,কিন্তু বর্তমানে মানব সভ্যতার অসামান্য অগ্রগতির ফলশ্রুতিতে আমাদের চিন্তা করার,কল্পনা করার ক্ষমতা এতই বৃদ্ধি পেয়েছে যে এই সময়ের একটি শিশুর চিন্তা করার ক্ষমতাও তখনকার সময়ের সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের চেয়েও বেশী।
খেয়াল করে দেখবেন,পাশ্চাত্যের,মধ্যপ্রাচ্যের,আরবের,ইরাক,ইরান,মিশর হতে উৎপন্ন ধর্মমতগুলো অনুযায়ী পৃথিবীর বয়স বড়জোর ৬-৭ হাজার বছর। এটা এমন নয় যে তাদের দোষ,তখনকার সময়ের এইসব ধর্মের প্রণেতাদেরও ধারণা ছিল পৃথিবী নিশ্চয়ই অনেক পুরনো, আর তখন তাদের কল্পনার পরিধির সর্বোচ্চ সীমানা ই ছিল ৬-৭ হাজার বছর। আজকের একটা সাধারণ মানুষের কাছে কোটি কোটি বছর চিন্তা করা যে কথা, তখনকার সময়ের মানুষের কাছে মাত্র ৬-৭ হাজার বছর চিন্তা করাও ঠিক তাই।
কিন্তু অদ্ভুৎভাবে হলেও এমন একটি সভ্যতা ছিল পৃথিবীতে যারা কল্পনার এই সীমাবদ্ধতাকে আশ্চর্যভাবে উড়িয়ে দিয়েছিল। তারা কি আশ্চর্য ক্ষমতায় জগতের সৃষ্টিকালের তথা ব্রহ্মার ১ দিনের (১ কল্প বা Aeon) সময়কাল নির্ধারণ করেছিলেন ৪.৩২ বিলিয়ন বছর!
সূর্যস্বিদ্ধান্তসহ প্রাচীন সংস্কৃত শাস্ত্রসমূহতে সৃষ্টিকাল তথা একটি কল্পের বয়সের গণনা আমরা পাই এভাবে-
১৪ মন্বন্তর+১৫ সন্ধিকাল এর সমপরিমাণ
১ মন্বন্তর=৭১ চতুর্যুগ
১ চতুর্যুগ=৪৩,২০,০০০ বছর
১ সন্ধিকাল=১৭,২৮,০০০ বছর
তাই সৃষ্টিকাল তথা ১ ব্রহ্মদিবস বা ১ কল্প(Aeon) =(১৪×৭১×৪৩,২০,০০০)+(১৫×১৭,২৮,০০০)=৪.৩২ বিলিয়ন বছর!
আবার গীতার ৮.১৭ এর ব্যাখ্যায় আমরা পাই সৃষ্টিকাল তথা ১ কল্প হল সহস্র চতুর্যুগের সমান।আবার আমরা জানি,
সত্যযুগ=১৭,২৮,০০০ বছর
ত্রেতাযুগ=১২,৯৬,০০০ বছর
দ্বাপর যুগ=৮,৬৪,০০০ বছর
কলি যুগ=৪,৩২,০০০ বছর
অর্থাৎ ১ চতুর্যুগ= ১৭,২৮,০০০+১২,৯৬,০০০+৮,৬৪,০০০+৪,৩২,০০০ বছর, মোট ৪৩,২০,০০০ বছর
তাহলে সহস্র চতুর্যুগ বা সৃষ্টির সময়কাল হল ১০০০×৪৩,২০,০০০ বছর বা ৪.৩২ বিলিয়ন বছর!
একবার ভেবে দেখুন, যে সময়ে মানুষ সর্বোচ্চ ৬-৭ হাজার বছরের বেশী কল্পনা করতে পারতনা আর সেই সভ্যতাটির সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষগুলো ৪.৩২ বিলিয়ন বছর তথা ৪৩২ কোটি বছর ভেবে ফেলল পৃথিবীর বয়স! অথচ এমনকি উনবিংশ শতকেও ব্যারন কেলভিন,উইলিয়াম থমসনরা গণনা করে বের করেছিলেন পৃথিবীর বয়স ২০-৪০ মিলিয়ন বছর।থমাস হেনলি হাক্সলি,চার্লস রবার্ট ডারউইনরা এই গণনার যদিও তীব্র প্রতিবাদ করেন।
অথচ প্রায় ৫-৭ হাজার বছর আগে সরস্বতী নদীর পারে,আরব সাগরের পূর্বতীরের ঘন সবুজ বনছায়ায় ঘেরা-তুষার শুভ্র পর্বতমালায় সাজানো,শুষ্ক মরুভূমির বিস্তীর্ণ ঢালে বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠা অদম্য মেধাবীদের আশ্রয় ভারতভূমি নামের এই অঞ্চলটির গভীর অরণ্যের পর্ণকুটিরে ত্যাগের জীবন কাটানো কিছু শুশ্রুমণ্ডিত সন্ন্যাসী ঠিক ই বলেছিলেন পৃথিবীর বয়স ৪.৩২ বিলিয়ন বছর! আর একবিংশ শতকের রেডিওমেট্রিক ডেটিং এর যুগে আমরা আজ জেনেছি পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪.৫৪ বিলিয়ন বছর! তাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াত বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ কার্ল স্যাগান তার জগৎবিখ্যাত বিজ্ঞানভিত্তিক টেলিভিশন সিরিজ কসমস এ বলেছিলেন,
“হিন্দুধর্ম পৃথিবীর একমাত্র ধর্ম যা এই আদর্শের সাথে সম্পৃক্ত যে এই মহাবিশ্ব একটা প্রচণ্ড,অসীম ধ্বংস ও পুনঃনির্মাণের মধ্যে দিয়ে যায়। এটিই একমাত্র ধর্ম কাকতালীয়ভাবে যার জগৎ বিষয়ক সময়কালের ধারণা আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।”
আজ থেকে ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে আবির্ভাব হয়েছিল এমন একটি ক্ষণের। এক পুঞ্জীভূত তাপীয় জীবনকেন্দ্রের বিশাল বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে কোটি কোটি উত্তপ্ত, গলিত ও গ্যাসীয় ধোঁয়াশা তথা মেঘের পুঞ্জ ছড়িয়ে পড়েছিল চারদিকে।সেই অসংখ্য বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যাসীয় মেঘের পুঞ্জের একটি ছিল আমাদের আজকের এই সৌরজগতের উৎস।
“তম অসিৎ তমস… তপসস্তন্মহিনাজায়াতৈকম”
(ঋগবেদ ১০/১২৯/৩)
“সমস্ত ছিল কেবল অন্ধকার।সমস্ত কিছু ছিল জানার অতীত ধোঁয়াশাময়।সেই রহস্য অস্তিত্ব তার চেয়েও রহস্যময়তায় ছিল আবৃত আর তা স্বতস্ফুর্তভাবে প্রচন্ড তাপ ও ক্ষমতা নিয়ে বিদ্যমান হল।”
ভেবে দেখুন, বেদের হিরণ্যগর্ভ হতে বিস্ফোরণের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিলিয়ন বিলিয়ন উত্তপ্ত গ্যাসীয় তরল বিন্দুকণা তথা মেঘপুঞ্জের মাত্র একটির অংশ থেকে তৈরী হয়েছে আমাদের এই সম্পূর্ণ সৌরজগত।প্রিসোলার নেবুলা নামের সেই মেঘপুঞ্জ হতে তৈরী হল সোলার নেবুলা নামের এক অতিকায় অতি উত্তপ্ত চাকতি যার পরিধিতে থাকা ছোট ছোট গ্যাসীয় মেঘের দানাগুলোই ক্রমশ হৃষ্টপুষ্ট হচ্ছিল ধাতব মৌলসমূহের মিলনে। আস্তে আস্তে এভাবে কেটে গেল ৮.৪ টি বিলিয়ন বছর,সোজা কথা নয় কিন্তু প্রায় ৮৪০ কোটি বছর। ক্রমে ক্রমে তাপ বিকরণের মাধ্যমে শীতল হয়ে আসতে লাগল সবকিছু,সেই উত্তপ্ত গ্যাস,ধোঁয়ায় ডুবে থাকা বিন্দুকণাসমূহ শীতল হতে হতে গঠন করল অনেক গ্রহ,উপগ্রহ,গ্রহাণু,ছড়িয়ে পড়ল ধীরে ধীরে নিজ কক্ষপথে।
“তারপর সেখানে বিস্ফোরন হল ,ব্রহ্ম বিন্দু থেকে যেন সবকিছুকে গতিময় প্রসারিত করলেন ,অব্যক্ত হতে সব হতে লাগল ব্যক্ত।”(ঋগ্বেদ ১০.৭২.২)
আজ হতে ৪.৫৪ বিলিয়ন বছর আগে এমন একটি ছড়িয়ে পড়া বিন্দুকণা হয়ে উঠল আমাদের আজকের এই পৃথিবী। চার অগ্রজ ভ্রাতা বৃহস্পতি,শনি,ইউরেনাস,নেপচুন যখন ৯৯% খাবার(আসলে ধাতব মৌল)দখল করে যখন তরতাজা হয়ে উঠছিল তখন পিতা সূর্যের হতে পাওয়া অবশিষ্ট ১% মাত্র খাদ্যকণা নিয়ে গড়ে উঠল বুধ,শুক্র,পৃথিবী মঙ্গল। এভাবেই মহাজগতের কাছে যা স্রেফ একটি অপুষ্টিতে ভোগা বিন্দুমাত্র, আমাদের ৭০০ কোটি মানুষের কাছে, ১ ট্রিলিয়ন বেঁচে থাকা প্রজাতির কাছে তা হয়ে উঠল সকল পুষ্টির ধারাস্বরূপ মাতা বসুমতি,আমাদের জীবনের আশ্রয়।
তবে সেই বসুমতি কিন্তু তখনও হয়ে উঠতে পারেনি শস্য শ্যামলা সবুজ সুফলা বসুন্ধরা। সে পৃথিবী ছিল অতি উত্তাপ হতে ক্রমশ শীতল হতে থাকা, বিক্রিয়ারত মৌলের টগবগরত এক জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের ম্রিয়মান হয়ে আসা প্রাণহীন এক বিরাট প্রাণের পূর্বজ।
আজও তাই আমরা দেখি পৃথিবীসহ সকল গ্রহের একদম অভ্যন্তরে, কেন্দ্রে রয়ে গেছে সেই উত্তপ্ত,গলিত সকল ধাতব মৌল যা গড়ে তুলেছে আমাদের পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র। আর এজন্যেই হিরণ্যময় এই জগতের ধারক হিসেবে পবিত্র ঋগ্বেদে,ঐতরেয় আরণ্যক ও কৌশিতকী ব্রাহ্মণে বারবার উপমা রূপে ব্যবহৃত হয়েছে লৌহ ও ধাতুসমূহ কেননা ঋষিরা সবসময় ই জানতেন পৃথিবীর মূল একটি উপাদান এই ধাতুসমূহের মৌলিক ও যৌগিক যৌগসমূহ।
পৃথিবী তৈরী হয়ে গেল ঠিক ই, আজ থেকে ৪.৫৪ বিলিয়ন বছর আগের কথা। তখন সে সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুমাত্র। কিন্তু পৃথিবীর শৈশবটা ছিল বড়ই সংঘাত,সংঘর্ষে ভরপুর। সোনার চামচ মুখে নিয়ে তার শৈশব কাটেনি। জন্ম হতে না হতেই শিশুকালে এলো একটি বড় আঘাত।
যখন ছোট্ট শিশু পৃথিবীর বয়স মাত্র ১৪০ মিলিয়ন বছর তখন থিয়া নামের এক প্রোটোপ্ল্যানেট এসে ঢাক্কা খেল শিশু পৃথিবীর গায়ে,এই ঢাক্কার আঘাতে একটি অংশ পৃথিবী থেকে হয়ে গেল আলাদা। ছোটবেলাতেই হারিয়ে গেল নিজের শরীরের একটি অংশ,যেন হারিয়ে যাওয়া জমজ বোনটি। সেই বোনটিকে আজকে আমরা আদর করে চাঁদমামা নামে ডাকি।গ্রীক দেবী থিয়া যেমন চাঁদের জননী, তেমনি অতর্কিত হামলা করা প্রোটোপ্ল্যানেট থিয়ার আঘাতে পৃথিবী থেকে জন্ম হয়েছিল চাঁদের। পৃথিবী তখন মাত্র ১৪০ মিলিয়ন বছর বয়সের ছোট্ট শিশুটি!
আর তাই যখন অন্যান্য ধর্মগুলো মাত্র ৬ দিনে জগৎ সৃষ্টির কাল্পনিক গল্প বলে,তখন বিজ্ঞান হাসে অন্তরালে। অথচ আপ্তজ্ঞানী আর্য ঋষিগণ তৃতীয় নেত্রের অপার দৃষ্টিতে এই মুচকি হাসিতে জগতের রহস্য জেনেছিলেন বেদাঙ্গ জ্যোতিষ নাম শাস্ত্রে ৩৫০০ বছর আগেই, তারও ১৫০০ বছর আগে অর্থাৎ ৫০০০ বছর আগের মহাভারতেও আমরা নিখুঁত নানা বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তের উল্লেখ দেখি । অতএব আমাদের জ্যোতিষ চর্চা যে তারও আগে থেকে ছিলো বলাই বাহুল্য ।
এখন আমরা দেখব কিভাবে পৃথিবী নামক এই ছোট্ট শিশুটি ঝড়-ঝঞ্ঝা পাড়ি দিয়ে মাতৃসম হয়ে উঠল,কিভাবে এলো মানুষ সহ সকল প্রাণী। ঈশ্বর কি বিচিত্র লীলায় রচনা করলেন এক অভূতপূর্ব প্রাণের চক্রব্যূহ,কিভাবে একটি অলৌকিক রাসায়নিক দূর্ঘটনায় তৈরী হয়েছিল একটি মাত্র কোষ যার থেকে আজ আমরা পরিণত হয়েছি ৭০০ কোটি মানুষের এই বিরাট পরিবারে। সেই পর্যন্ত বিদায়!
পৃথিবী নামক সবুজ গ্রহটির শ্রেষ্ঠ সম্পদ তার জীববৈচিত্র্য। গতপর্বে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের উত্তপ্ত গ্যাসীয় পরিধি হতে পৃথিবীর উত্থান দেখলেও আমরা এখনো তাতে দেখিনি প্রাণময়তার কোন ছাপ।ভ্রমর ব্যাতিত পুষ্পের বর্ণালী যেমন বিবর্ণ, তেমনি প্রাণের কল্লোল ব্যাতিত বসুন্ধরার স্পন্দন অনুপস্থিত।আজ থেকে ৪.৫৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী ছিল এমন ই অসংখ্য উত্তপ্ত রাসায়নিক পদার্থে পরিপূর্ণ প্রাণহীন নিষ্পন্দ এক মরুভূমি। ধীরে ধীরে তাপ বিকীর্ণ হতে হতে শীতলতর ধরণী ক্রমশ প্রস্তুত হচ্ছিল প্রাণের ধারণ হেতু।এমনই একসময় ঘটল আপাতদৃষ্টিতে এক রাসায়নিক দূর্ঘটনা।
দুটি রাসায়নিক পদার্থ উত্তপ্ত পরিবেশে পাশাপাশি থাকলে বিক্রিয়ার সংঘটন করে,আর সে সময় অসংখ্যা সক্রিয় রাসায়নিক মৌল ছিল যারা পারস্পরিক অসংখ্য বিক্রিয়ায় রত ছিল।ছিল পানি(H2O),মিথেন গ্যাস(CH4),এমোনিয়া(NH3),হাইড্রোজেন গ্যাস(H2)।
এভাবে চলতে লাগল সময়,পেরিয়ে গেল প্রায় ৫০-৭০ কোটি বছর।বিক্ষিপ্তভাবে চলতে থাকা কোটি কোটি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হতে লাগল অসংখ্য নতুন নতুন জটিলতর যৌগ।এমন ই কোটি কোটি বিক্রিয়ার উৎপন্ন হতে থাকা জটিলতর যৌগ পদার্থের মধ্যেই হঠাৎ উৎপন্ন হয়ে গেল বিশেষ একটি যৌগ যার নাম নিউক্লিয়িক এসিড।আজ আমরা যত প্রাণ দেখি সারা পৃথিবীতে এই সব প্রাণ ই হল আসলে নিউক্লিয়িক এসিড।
আপনার মেয়ের চোখদুটো দেখলে তার মায়ের কথা মনে পড়ে,আপনার ভাইটা দেখতে অবিকল যেন আপনার মত,আপনার আর আপনার বাবার পায়ের আঙ্গুলগুলো দেখতে একই লাগে; এইসব কিছুর একদম মূলে হল এই নিউক্লিয়িক এসিড নামক জীবন্ত রাসায়নিক পদার্থটি যা প্রাণের মূল ধারক। সকল প্রাণীর জীবনের কোড হল এই কার্বন-ফসফরাস-নাইট্রোজেনঘটিত যৌগটি।
আর আজ থেকে প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর আগে এরকম ই এক স্বতস্ফুর্ত দূর্ঘটনার রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়েছিল নিউক্লিয়িক এসিড নামক যৌগযুক্ত পৃথিবীর প্রথম জীবন্ত কোষটি। এমন এক আপাত দৃষ্টিতে একটি অকস্মাৎ রাসায়নিক বিক্রিয়া যাতে সাধারণ কোন রাসায়নিক যৌগ নয় বরং তৈরী হয়ে গেল জীবন্ত কোষ তাকে আপনি রাসায়নিক দূর্ঘটনা বা কাকতাল বলবেন নাকি অলৌকিক বা ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ বলবেন তা ব্যাক্তিবিশেষের উপর নির্ভরশীল। পবিত্র বেদ একেই বলছে ঈক্ষণ বা ঈশ্বরীয় মহত্ব।
জীবন্ত কোষের বৈশিষ্ট্য ই হল সে সন্তানের জন্ম দিতে পারে,কথাটি স্থুল অর্থে ব্যবহৃত হলেও এর অর্থ হল তার থেকেই হুবহু এরকম অন্য কোষ উৎপন্ন হতে পারে যাতে পূর্বকোষের সকল রাসায়নিক তথ্য সরবরাহকৃত হয়,পিতার চুলের রঙ বা মায়ের চোখের বর্ণালী এভাবেই পিতামাতা হতে সন্তানে স্থানান্তরিত হয়।
এভাবে সেই একটি জীবন্ত কোষ থেকেই চেইন বিক্রিয়ার মত ক্রমে উৎপন্ন হতে লাগল অসংখ্য কোষ যাতে রয়ে গেল আদি সেই কোষটির ছাপ। মনে রাখতে হবে সেগুলো ছিল কেবল একটিমাত্র কোষ।আপনার আমার মত প্রাণীদের শরীরে কোটি কোটি কোষ রয়েছে, কিন্তু তখনের সেই নতুন প্রাণগুলোর কোষ ছিল শুধু একটি,আসলে এদেরকে প্রাণী বলাও দুরূহ,বলা যেতে পারে কেবল সজিব একটি কোষ।
এরা এতই ক্ষুদ্র যে খুব শক্তিশালী মাইক্রেস্কোপ ছাড়া দেখাও সম্ভব নয় এমন। আজ পৃথিবীতে আপনি যে এত কোটি কোটি মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদ দেখছেন সবাই ই আজ থেকে প্রায় ৩.৮ থেকে ৪ বিলিয়ন বছর আগে জন্ম নেয়া সেই একটি কোষ থেকেই বিভিন্ন ধাপে উৎপন্ন হয়েছে। অর্থাৎ আপনার বাসার রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া কুকুরটি বা আপনার বেলকনিতে বসে থাকা পায়রাটিও আপনার আত্মীয়ই! উপনিষদ যখন বলে বসুধৈব কুটুম্বকম্ অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বই আপনার আত্মীয় তখন এমনিতেই তা বলেনা এটাই তার প্রমাণ।
বিজ্ঞানীরা একে বলেন Abiogenesis,অর্থাৎ প্রাণহীন রাসায়নিক পদার্থ থেকেই পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের উদ্ভব আর তার থেকেই অসংখ্য ধাপে ক্রমান্বয়ে সকল জীবজগতের উৎপত্তি। এ কারণেই দেখবেন আপনার বাসার ইঁদুরটির সাথেও আপনার DNA এর মিল ৮৫% কেননা সমগ্র প্রাণীজগতের আগমন যে সেই একটি কোষ থেকেই! আমাদের সকলের আদি উৎপত্তি তো সেই এক! এজন্যেই মহর্ষি কণাদ বৈশেষিক দর্শনে বলেছেন-
দ্রব্যগুণয়ো সজাতীয়ারম্ভকম্ সাধর্মম্
(বৈশেষিক দর্শন ১.১.৯)
অনুবাদ-বস্তুসমূহের ধর্ম ও গুণ সজাতীয়(একইরকম) হওয়া তাদের একই উৎপত্তির(আরম্ভ) নির্দেশক।
আর এভাবেই ধীরে ধীরে প্রথমে জগতের সৃষ্টি এবং তারপরে বিবর্তনের মাধ্যমে ক্রমে ক্রমে অন্য সকল কিছুর সৃষ্টিকে নিয়ে সনাতন ধর্মের যে দর্শনটি কাজ করে তাকে আমরা মহর্ষি কপিলের সাংখ্য দর্শন নামে চিনি। সাংখ্যদর্শনে এই বিবর্তনবাদের অপর নাম পরিণামবাদ। পরিণামবাদ ব্যাখ্যা করে জগতের বিবর্তনের মূল কাঠামো-
সত্ত্বরজস্তমসাংসাম্যবস্থা প্রকৃতিঃ
প্রকৃতের্মহানমহতোহহংকারঃ
অহংকারাৎ পঞ্চতন্মাত্রাণ্যুভয়মিন্দ্রিয়ং
তন্মাত্রেভ্যঃস্থূলভূতানিপুরুষঃ ইতি পঞ্চবিংশতির্গণঃ
(সাংখ্যদর্শন,অধ্যায় ১,শ্লোক ৬১)
এই শ্লোকটির এবং সাংখ্যদর্শনের প্রথম অধ্যায়ের তাৎপর্য অনেক ব্যাপক। কারণ সনাতনধর্মই একমাত্র মেজর রিলিজিয়ন হিসেবে পরিচিত যা বিবর্তনবাদকে সমর্থন করে। Pew Research এর একটি সমীক্ষা অনুযায়ী শতকরা ৮৫ শতাংশ সনাতন ধর্মালম্বী ই বিশ্বাস করেন বিবর্তনবাদে। অপরদিকে অন্যান্য রিলিজিয়নসমূহ খুব তীব্রভাবে বিবর্তনবাদের বিরোধিতা করে এবং কাল্পনিক এডাম-ইভ নামক দুইজন মানুষ থেকে সমগ্র মানবপ্রজাতির আবির্ভূত হবার অবৈজ্ঞানিক তত্ত্বের প্রচার করে।
শ্লোকটির এবং সাংখ্যদর্শনে বিবর্তনবাদ তথা পরিণামবাদের সারাংশ হল-
১)যখন সত্ত্ব,রজঃ ও তম গুণের সম্পূর্ণ সাম্যবস্থা বিদ্যমান থাকে তখন সৃষ্টি অপ্রকাশিত অবস্থায় থাকে।
২)ঈশ্বর কর্তৃক যখন এই সাম্যবস্থার অসাম্য ঘটে তখন ই সৃষ্টি শুরু হয়,জগতের সৃজন ঘটে,প্রকাশিত হয় মূল প্রকৃতি।
৩)প্রকৃতির পরমাণু থেকে প্রথম সৃষ্টি হয় মহত্তত্ত্ব,অর্থাৎ এই সকল কিছুর প্রকাশ হয়।
৪)মহত্তত্বের পর আসে অহংকারের,অর্থাৎ অস্তিত্বের। প্রথম কোন কিছুর তৈরী হয় জড় প্রকৃতি থেকে যার নিজস্ব অস্তিত্ব(অহংকার) আছে,সে জড় নয়।পুরুষ এবং প্রকৃতির যখন মিলন হয় তখন ই জড় প্রকৃতি থেকে প্রাণময় অহংকারের সৃজন হয়।সাংখ্য দর্শনে পরিণামবাদের এই মহত্তত্ব থেকে অহংকার বা অস্তিত্বের প্রথম সৃজন ই বিবর্তনবাদের জড় রাসায়নিক পদার্থ থেকে নিউক্লিয়িক এসিড নামক প্রাণময় প্রথম প্রাণের সৃজন তথা Abiogenesis. বিজ্ঞান যাকে বলছে Abiogenesis,সাংখ্যদর্শন তাকে বলছে মহত্তত্ব থেকে অস্তিত্বের(অহংকার) সৃষ্টি।
এই প্রথম চারটি ধাপ বিজ্ঞানের সাথে মিলে গেল,এরপরের ধাপগুলো এখানেই বলে রাখি।পরে ঘটনাপ্রবাহে দেখব বিজ্ঞানের সুত্রে কিভাবে অপূর্ব নিয়মে সেগুলোও মিলে যাবে।
৫) অহংকারের পর সৃষ্টি হবে বুদ্ধি, মানে Brain বা মস্তিস্ক। একইসাথে সৃজন হয় তন্মাত্রা (চক্ষু,স্পর্শ ইত্যাদি)
৬) বুদ্ধির পর সৃজন হয় চিত্তের এবং মানসের(Mind&Consciousness)
আবার বিজ্ঞানে ফিরে যাই। এককোষী প্রাণের সৃষ্টি তো হল,সময়ও বয়ে চলল। সেই একটি কোষ থেকে শত শত কোটি কোষ সৃষ্টি হতে লাগল।মহর্ষি কপিল বলছেন-
পারস্পর্য্যত অণ্বেষণা বীজাংকুরবৎ।।
(সাংখ্যদর্শন ১.১২২)
অর্থাৎ পরম্পরা হিসেবে বীজ হইতে অঙ্কুর হয় আবার সেই অঙ্কুর হইতেই বীজের উৎপত্তি,এই প্রবাহরূপ অনাদি।
আর এই প্রবাহরূপেই চলতে লাগল সৃষ্টির ধারা, পেরিয়ে গেল আরও প্রায় ২ বিলিয়ন বছর। আজ থেকে দুই বিলিয়ন বছর আগে এরূপ দুইটি কোষের স্বতস্ফুর্ত, অকস্মাৎ মিলন ঘটল। এই একটি ঘটনা মোড় ঘুরিয়ে দিল সৃষ্টির ইতিহাসের। এতদিন ছিল একক কোষ। হঠাৎ দুইটি কোষের মিলনে নতুন যে কোষ তৈরী হল তা এখন আর একক কোন সত্ত্বা নয়,তা বহন করছে দুইটি আলাদা কোষের সত্ত্বা,তার পিতামাতার সত্ত্বা।এখন মিউটেশন তথা জীনের বিন্যাসের সম্ভাবনা বেড়ে গেল কয়েককোটি গুণ।
নতুন নতুন বহুকোষী প্রাণের সৃষ্টি হতে থাকল স্বতস্ফূর্তভাবে।জলজ পরিবেশে জন্ম হতে থাকা এইসব প্রাণের তখনো কিন্তু নিবাস ছিল জলাশয় তথা সমুদ্র। স্থলে তখনও প্রাণের আগমন ঘটেনি। এজন্যেই এখনো ৪ বিলিয়ন বছর আগের LUCA(Last Universal Common Ancestor),LECA(Last Eukaryotic Common Ancestor) ইত্যাদি প্রাণের আদিপুরুষদের অস্তিত্বসমূহ এখনো পাওয়া যায় গভীর সমুদ্রের ফাটলে(Deep Sea Vent)। এভাবেই বিবর্তনের মাধ্যমে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পেতে সমুদ্রে সৃষ্টি হল বিলিয়ন বিলিয়ন প্রজাতির,ছড়িয়ে পড়তে লাগল জীবনবৃক্ষের শাখাপ্রশাখা।কিন্তু এত বিলিয়ন প্রজাতির মধ্যে কেবল একটি প্রজাতিই শেষপর্যন্ত পরিণত হবে মানুষে। বাকীদের ভাগ্য হবে আলাদা।
এভাবে ক্রমে ক্রমে জটিল হতে লাগল প্রাণীদের গঠন,বাড়তে লাগল তাদের দেহে কোষের সংখ্যা।আজ থেকে ৫৫০ মিলিয়ন বছর আগে সেই অসংখ্য প্রজাতির মধ্যে একটি ছিল Xenoturbella Churro,একটি মাত্র ৩ ইঞ্চি লম্বা জলজ পোকা।বিজ্ঞান বলছে এই পোকাটিই হল সকল Bilateran(যাদের মুখ এবং পায়ুপথ আছে এবং এই দুটি ছিদ্র সমগ্র পরিপাকতন্ত্র দিয়ে যুক্ত) প্রাণীর আদিপুরুষ। যখন ই পুকুরে মাছ ধরতে যাবেন মনে রাখবেন আপনার পূর্বপুরুষও একসময় ছিল জলজ মাছ!
আশ্চর্য হলেও সত্যি যে তখনকার সময়ে জগতে যে বিলিয়ন বিলিয়ন প্রজাতির আবির্ভাব ঘটছিল তার ৯৯ শতাংশ ই এখন বিলুপ্ত। পারবে কি মানবজাতির আদিপুরুষ সেই জলজ পোকা প্রজাতিটি টিকে থাকতে প্রকৃতির বাঁধাবিপত্তি পেরিয়ে? নির্ভর করবে অনেকগুলো বিষয়ের উপর।আজ থেকে ৫৪০ মিলিয়ন বছর আগে সেই প্রজাতিটির শরীরে মিউটেশনের মাধ্যমে কিছু বিশেষ কোষের উৎপত্তি ঘটল,সেই কোষসমূহের বিশেষত্ব কি? বিশেষত্ব হল সেগুলো দিয়ে আশেপাশে কে আছে,আলো নাকি অন্ধকার,কোন শিকারি আসছে কিনা তা বুঝতে পারা যায়।
পরবর্তী ২০ মিলিয়ন বছর ধরে সেই কোষগুলো আরও উন্নত হতে লাগল,আজ সেই কোষগুলোকে আমরা বলি চোখ! আমরা দেখতে পারতে লাগলাম আমাদের আশেপাশের পরিবেশকে,শত্রুদের,আলাদা করতে পারলাম আলো অন্ধকারকে।প্রকৃতির এই দানের ফলে আমাদের প্রজাতির টিকে থাকার সম্ভাবনা অনেক গুন বেড়ে গেল অন্য প্রজাতির চেয়ে।ততদিনে আমরা পরিণত হয়েছি এক মৎস্য প্রজাতিতে,আমাদের সেই মৎস্য পূর্বপুরুষের নাম Myllokunmingia,আমরা শ্বাস নিই ফুলকার সাহায্যে অর্থাৎ আমরা বাতাস থেকে শ্বাস নিইনা,আমরা জলেতে দ্রবীভূত অক্সিজেন এই ফুলকা নামক জিনিসের সাহায্যে গ্রহণ করি।আর এই Myllokunmingia এর এখন আছে অসামান্য একটি অস্ত্র।কি তা?
আজ থেকে ৫২১ মিলিয়ন বছর আগে চোখের কোষগুলোর রিলে স্টেশন হিসেবে চোখের পিছনে তৈরী হল অল্প কিছু কোষ, একদম সুচাগ্র পরিমাণ। সেই কোষগুলো একসময় কালের বিবর্তনে হয়ে উঠল আধুনিক পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি,তার নাম মস্তিস্ক। Myllokunmingia এখন একদম প্রাথমিক জিনিস বুঝতে পারে, প্রসেস করতে পারে তার সেই ছোট্ট মস্তিস্ক দিয়ে।তাহলে দেখলেন তো,অহংকারের পর তৈরী হল চক্ষু(তন্মাত্রা) এবং বুদ্ধি বা ব্রেইন,ঠিক যেমনটা সাংখ্য দর্শন বলছে।
কিন্তু বিপদের তো আর কখনোই শেষ নেই।আমাদের মৎস্য পূর্বপুরুষও সম্মুখীন হল এক মহাবিপদের,Anomalocaris নামক এক শিকারি জলজ প্রজাতির চোখ পড়ল আমাদের উপর।কিন্তু জিনের পাশাখেলায় আমরা পেলাম আরেকটি সুযোগ।
আমাদের চোয়াল বড় হতে লাগল,যত বড় চোয়াল তত বেশী খাবার,যত বেশী খাবার তত বেশী শক্তি।এতে শিকারি প্রজাতি থেকে আমাদের পালানোর ক্ষমতা বাড়তে থাকল। আর আমাদের পূর্বপুরুষরা বেশী বেশী করে থাকতে লাগল একদম গভীর সমুদ্রে যাতে শিকারি সহজে খুঁজে না পায়। কিন্তু গভীর সমুদ্রে অক্সিজেনের পরিমাণ তো কম। এভাবে চলতে চলতে ৩ বিলিয়ন বছর পেরিয়ে আজ থেকে প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন বছর আগে আমরা তখন ১ ফুট দৈর্ঘ্যের মৎস প্রজাতি।
আর গভীর সমুদ্রে শিকারির ভয়ে লুকিয়ে থাকতে থাকতে আমাদের অবস্থা দিনদিন খারাপ হতে লাগল,শরীরে অক্সিজেনের অভাব প্রকট হল। আস্তে আস্তে ৩৭০ মিলিয়ন বছর আগে অতিরিক্ত অক্সিজেন গ্রহণের উদ্দেশ্যে আমাদের দেহে একটি নতুন অঙ্গের সৃষ্টি হল যার নাম ফুসফুস।আজকেও যখন প্রতিদিন বুকভরে শ্বাস নেবেন মনে রাখবেন আজ থেকে ৩৭০ মিলিয়ন বছর আগে এক শিকারির থাবার কাছে জীবনরক্ষার সার্বক্ষণিক তাড়া থেকে বাঁচার জন্যেই আমাদের এই বাতাস থেকে শ্বাস নেবার ফুসফুসের আবির্ভাব হয়েছিল।
আমাদের পূর্বপুরুষের নাম তখন হল Ichthyostega,তাদের ফুলকা হতে থাকল বিলুপ্ত,সৃষ্টি হল ফুসফুস,তারা কিছুক্ষণের জন্য পানির উপরে ভেসে উঠে,বাতাস থেকে শ্বাস নেয় আবার ডুব দিয়ে নিচে চলে যায়।এই Ichthyostega হল এমন এক মৎসের ন্যায় প্রজাতি যারা একধরনের মাছও আবার যাদের চারটি প্রত্যঙ্গ এবং ফুসফুসও ছিল(Tetrapodomorph)।মাছ এবং চতুর্পদী প্রাণীর মধ্যেকার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আন্তঃপ্রজাতি এই Ichthyostega এবং ছবিতে থাকা Tiktaalik । তার পূর্বপুরুষের চারটি ডানা হয়ে উঠল তার চারটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ,আজ তা হয়ে উঠেছে আমাদের হাত পা।তারও কিন্তু ছিল আমাদের হাতের মতই বাহুর হাড়(Humerus),আংগুলের হাড়(Phallanx)।
আজ আমরা যখন হেঁচকি(Hiccup) দিই কেন দিই?
কারণ আমাদের আদিপুরুষ Myllokunmingia(ফুলকাযুক্ত)থেকে যখন Icthyostega হল তখন তার ফুসফুস তৈরী হল(এই পর্যায়ে আমরা মাছের মত পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনও নিতে পারি আবার পানির উপরে ভেসে উঠে বাতাস থেকেও অক্সিজেন নিতে পারি)। যখন পানির উপর থেকে সরাসরি বাতাস ফুসফুসে নেয়ার পর পানির গভীরে গিয়ে আবার ফুলকা দিয়ে শ্বাস নিতে হত তখন সেই প্রক্রিয়ায় আমাদের কণ্ঠনালীটা বন্ধ করে ফেলতে হত যাতে ভেতরে জল না ঢুকতে পারে ফুসফুসে আর হঠাৎ কণ্ঠনালী বন্ধ করার সেই ঢাক্কাটা আমাদের বক্ষপিঞ্জরের মধ্যে একধরনের কাঁপুনি সৃষ্টি করত। আজও সেই কাঁপুনিটা আমাদের মধ্যে রয়ে গেছে অতীতের চিহ্ন হিসেবে যার নাম Hiccup বা হেঁচকি!
আমরা জানি Hindu Mythology তে দশাবতারের প্রথম ৩ টি হল মৎস,কূর্ম,বরাহ। ঠিক তেমনি মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসেও আমরা দেখি প্রথমে ছিল জলজ প্রাণী>মৎস্য,এরপর Ichthyostega যা জলের একদম গভীরে থেকেও শ্বাস নিতে পারে আবার জলের উপরে ভেসে উঠে বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। ঠিক যেন কূর্ম বা কচ্ছপের মতন।কচ্ছপও জলের গভীরে Cloacal Respiration এর সাহায্যে শ্বাস নিতে পারে আবার জলের উপরেও বাতাস থেকে ফুসফুসের মাধ্যমে শ্বাস নিতে পারে।এ যেন মৎস থেকে কূর্ম অবতারে রূপান্তর।
এই প্রথম,প্রায় ৩৬৭.৫ মিলিয়ন আমাদের আদিপুরুষ Ichthyostega জলের উপরিভাগের দুনিয়াটা দেখতে পেল,তার সামনে খুলে গেল বিশাল এক নতুন জগতের দ্বার। সে বেরিয়ে পড়ল জল ছেড়ে স্থলের পথে। আজ থেকে প্রায় ৩৬৮ মিলিয়ন বছর পূর্বে প্রথম মৎস থেকে উদ্ভূত এই কুমিরের মত দেখতে চার বাহু আর ফুসফুস যুক্ত Ichthyostega জল ছেড়ে চলে এসেছিল মাটিতে,জলচর থেকে স্থলচর প্রাণীর জীবন বেছে নিয়েছিল।
জলের ভিতরের মৎস অবতার থেকে জল ও জলের উপর উভয়খানেই থাকা কূর্ম অবতারের জীবন পাড়ি দিয়ে এখন যেন সম্পূর্ণ স্থল জীবনের বরাহ অবতারের যাত্রা শুরু। দশাবতারের মিথের সাথে মানব বিবর্তনের এই অদ্ভূত মিলকে আপনারা কাকতালীয় ভাববেন নাকি রহস্যের গন্ধ পাবেন তা আপনাদের উপরেই ছেড়ে দিলাম। কিভাবেই বা সেই অলৌকিক রাসায়নিক বিক্রিয়ায় জড় রাসায়নিক পদার্থ থেকে জীবন্ত কোষের উদ্ভব হল! নাকি এটাই ঈশ্বরীয় প্রেরণা? জলে থাকা শিকারি মাছের হাত থেকে আপাতত বাঁচা গেল,কিন্তু স্থল কি সম্পূর্ণ নিরাপদ? দেখা যাক স্থলে আমাদের পূর্বপুরুষ Ichthyostega এর নতুন জীবন কেমন হয়।
সেদিন ১৯৩৮ সালের ২৩ শে ডিসেম্বর। দক্ষিণ আফ্রিকার চালুমনা নদীতে ট্রলার চালিয়ে মাছ ধরছেন Hendrik Goosen। মাছ ধরতে গিয়ে খুব অদ্ভুৎ এক মাছ জালে ধরা পড়ল। চারটি মাংসল ধরনের অস্থিযুক্ত পাখার ন্যায় রয়েছে মাছটির,যেন হাত পায়ের মতন! সাধারণত দেখবেন মাছের পাখনায় কিন্তু কোন হাড্ডি বা অস্থি থাকেনা,যা এই মাছটির রয়েছে! এই Goosen সাহেবের বন্ধু আবার দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্ট লণ্ডন জাদুঘরের একজন কিউরেটর, তার নাম Marjorie Letimer.অদ্ভুৎদর্শন মাছটি দেখে সাথে সাথে Marjorie কে নিয়ে এসে দেখালেন মাছটি।
কিন্তু মাছটিকে দেখে অবাক হলেও পরিচিত কোন মাছের সাথে মিল খুঁজে পেলেন না Marjorie। তাই নিরুপায় হয়ে জীবতত্ত্ববিদ বন্ধুবর প্রফেসর স্মিথের শরণাপন্ন হলেন।দেখামাত্রই প্রফেসর স্মিথ চিনে ফেললেন মাছটির পরিচয় এবং বিস্মিত হলেন।কেন বিস্মিত হলেন? এই মাছটি কি ছিল তা কি জানেন? জানলে আপনিও বিস্মিত হবেন।
উপরে আলোচনা আমরা দেখেছি কিভাবে Ichthyostega নামক Tetrapod (চতুষ্পদী) মাছ তথা জলজ প্রাণীটি ডাঙ্গায় উঠে এল প্রথমবারের মত। আর কেই বা জানত এই চারপেয়ে মাছের মত প্রজাতি Ichthyostega এর কোটি কোটি প্রজন্মের পরবর্তী প্রজন্ম হবে মানুষ নামক প্রজাতিটি! মাছের একসময়ের পরিণতি হবে মানুষ এ তো ভাবাও অসাধ্য!
Ichthyostega হল মাংসল,অস্থিযুুুুক্তক্ক(অনেকটা হাত পায়ের মত) চারটি পাখনাযুক্ত মাছের ন্যায় প্রজাতি,সেই চারটি মাংসল পাখনার বিবর্তনগতরূপ ই আজকের আমাদের এই হাত পা। ১৯৩৮ সালে প্রফেসর স্মিথ যে মাছটি দেখে অবাক হয়েছিলেন সেই মাছটি ছিল ওই Ichthyostega এর ই এক বংশধর! অবাক না হয়ে উপায় আছে বলুন! প্রায় ৩৭ কোটি বছর আগের ডেভোনিয়ান যুগের একটি প্রজাতির বংশধর খুঁজে বের করে ফেলেছেন এক জেলে আর এক কিউরেটর মিলে এই বিংশ শতাব্দীতে! চালুমনায় ঘটে যাওয়া Marjarie Letimer এর স্মরণে এই মাছের নাম রাখা হল Latimeria Chalumnae!
এই মাংসল ও অস্থিযুক্ত পাখনাওয়ালা মাছের পরিবারসমগ্রকে বলা হয় Sarcopterygii বা Lobe Finned Fish যার মাত্র দুইটি প্রজাতি আজ জগতে অবশিষ্ট আছে।
তারা হল-
Latimeria Chalumnae যাকে বলা হয়, African Coelacanth,যার গল্প এতক্ষণ আপনাদের বললাম।
আর আরেকটি হল Indonesian Coelacanth,এটি আবিস্কারের ঘটনাটিও মজার। ১৯৯৭ সালে ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রে হানিমুনে বেড়াতে যাওয়া এক দম্পতি আবিস্কার করেন এই প্রজাতিটি।
অপরদিকে Ichthyostega প্রজাতির মধ্যে জলের মৎস্যপ্রজাতি ও ডাঙ্গার চতুর্পদী উভয়ের বৈশিষ্ট্য ছিল বলে এদের বলা হত Crossopterygii(দুই বৈশিষ্ট্যের ই ক্রস বা মিশ্রণ আছে তাই)।
বাকী সকল মাছ,অর্থাৎ ৯৯% মাছ ই এসেছে Ray Finned Fish বা পাতলা পাখনাওয়ালা,অস্থিহীন আদি মৎস্য প্রজাতি থেকে যাদের বলা হয় Actinopterygii.
আবার আগের গল্পে ফিরে আসি। Ichthyostega উঠে এল ডাঙ্গায়,রোদের তাপে তার গায়ের চামড়া শক্ত ও পুরু হতে লাগল,আঙ্গুলের চামড়া মাটির ঘর্ষণে আর তাপে শক্ত হয়ে হতে সৃষ্টি হতে লাগল শক্ত থাবার।Ichthyostega এভাবে ক্রমে ক্রমে পরিণত হল এক নতুন প্রজাতিতে,তার নাম Casineria.
কিন্তু ভেজালটা হল অন্যখানে।আগে তারা থাকত পানিতে,পাড়ত ডিম,বাইরে চলে আসা সেই ডিমকে নিষিক্ত করত পুরুষরা।কিন্তু এখন তো নিবাস ডাঙ্গায়,সূর্যের তাপে আগের মত শক্ত আবরণহীন ডিম বাইরে থাকলে হয়ে যাচ্ছে শুষ্ক,নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অংকুরেই।এখন কি করণীয়?তাই সেই ডিমের চারপাশে তৈরী হল কঠিন আবরণ।আজও মানুষের বাচ্চা জন্ম দেয়ার প্রক্রিয়া যারা দেখেছেন তারা দেখবেন সদ্যোজাত শিশুটি মায়ের পেটে একটি কয়েকস্তরবিশিষ্ট আবরণে আচ্ছাদিত হয়ে আছে যার নাম Amnion যার উল্লেখ প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থ গর্ভোপনিষদ ও ভগবদগীতায়(৩.৩৮) পাওয়া যায়।আমরা দেখতে পাচ্ছি আজ থেকে ৩৪ কোটি বছর পূর্বে Casineria নামক প্রজাতিটিতে নিজেদের ডিমের ভিতরের তরল অংশকে সূর্যের তাপ থেকে শুকিয়ে যাওয়া হতে রক্ষা করার জন্যেই সৃষ্টি হয়েছিল এই Amnion নামক আবরণের।
কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল করেছেন কি? পূর্বের জলজ জীবনে Casineria এর পূর্বপুরুষ Ichthyostega পানিতে ডিম পাড়ার পর আবরণহীন সেই ডিমকে পুরুষ Ichthyostega নিষিক্ত করত। (মহাভারতে কোরাবদের জন্ম এই পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে)
কিন্তু এখন তো ডিম পাড়ার পর ডিমের চারপাশে শক্ত আবরণ আর এই শক্ত আবরণকে ভেদ করে তো আর নিষিক্তকরণ সম্ভব নয়! তখন প্রজাতির সংরক্ষণে,বেঁচে থাকার তাগিদে তারা ডিমকে শরীরের ভেতরেই নিষিক্ত করার এক পদ্ধতি খুঁজে বের করল। সেই পদ্ধতির নাম কি বলুন তো? Sex বা যৌনমিলন!
এখন আর বাইরে নয়,স্ত্রী প্রাণীর শরীরের ভিতরেই পুরুষ প্রাণীটি ডিমকে শক্ত আবরণে আবৃত্ত হয়ে যাবার আগেই নিষিক্ত করতে সক্ষম। এভাবেই আবিস্কৃত হয়েছিল যৌনমিলন পদ্ধতির। আর এভাবেই স্ত্রী ও পুরুষ বীজের মিলনে লক্ষ লক্ষ গুণে বেড়ে গেল জীনের আদান প্রদান ও মিউটেশনের হার,সৃষ্টি হতে লাগল অসংখ্য নতুন নতুন প্রজাতি।আর প্রথম এই Amnion নামক পর্দার কারণেই Casineria কে বলা হয় Earliest Aminotes.এই Aminote দের থেকেই একসময় স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ ও পাখিদের সৃষ্টি হয়।
এদের মোটাদাগে দুইটি ভাগ-
১)Synapsids-বাচ্চা দেয় যারা,মাথার খুলির দুইপাশে,কানের উপরে দুইটি ছিদ্র আছে এদের যাকে বলে Bilateral Temporal Opening।এই শাখা থেকেই উৎপত্তি হয়েছে স্তন্যপায়ীদের।উদাহরণ -মানুষ।
২)Sauropsids-ডিম পারে যারা, এদের মূলত দুইটি ভাগ-পাখি ও সরীসৃপ।
Casineria(Amniote) কিন্তু একা নয়,কোটি কোটি বছর পেরিয়ে গেছে,এতদিনে ডাঙ্গায় সৃষ্টি হয়ে গেছে অনেক নতুন নতুন প্রজাতি।খাদ্যের জন্যে চলছে অবিরত প্রতিযোগিতা।চাবানোর জন্য চাই শক্ত চোয়াল।দীর্ঘ কোটি বছর পারি দিতে দিতে Casineria একসময় রূপান্তরিত হতে হতে হল Varanops নামক মজবুত চোয়ালের মাংসপেশীযুক্ত প্রজাতিতে,আজ হতে প্রায় ২৭ কোটি বছর আগের কথা তা।
Museum Of Natural History,USA তে সংরক্ষিত Varanops এর কংকাল,২৭.২৯ কোটি বছরের প্রাচীন
এভাবে চলতে চলতে সময় এল মহাপ্রলয়ের। আজ হতে প্রায় ২৫ কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম ভয়ংকর প্রাকৃতিক দূর্যোগ সংগঠিত হল যা পারমিয়ান গণবিলুপ্তি(The Great Permian Extinction) নামে খ্যাত, পৃথিবীতে নেমে এল যেন নরক। সাইবেরিয়ায় শুরু হওয়া মারাত্মক অগ্ন্যুৎপাত গরম লাভা ছড়িয়ে দেয় পশ্চিম ইউরোপের আয়তনের সমান অঞ্চলে। লক্ষ লক্ষ জায়গায় অগ্নিসংযোগ চলতে থাকে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে।
বায়ু হয়ে উঠে অত্যন্ত উত্তপ্ত,দূষিত গ্যাসে পরিপূর্ণ,ব্যাহত হয় মহাসাগরের স্রোত,ক্ষতিকারক জীবাণুতে ভরে উঠে জলরাশি।সারা পৃথিবীতে জলরাশিির ৯৬% প্রজাতির ও স্থলের ৭০% প্রজাতির ই মৃত্যু হয়।একটাবার ভেবে দেখুন, যথাক্রমে ৯৬ শতাংশ ও ৭০ শতাংংশ প্রাণীই মারা গেল,কি বিশাল ছিল তাহলে সেই অগ্ন্যুৎপাত! দ্যা গ্রেট ডায়িং বা মহামৃত্যু নামে পরিচিত এই গণবিলুপ্তিতে যে অল্প কিছু প্রজাতি টিকে গিয়েছিল তাদের মধ্যে মূলত দুটি প্রজাতির বংশধররাই পরবর্তী ১৮ কোটি বছর(Mesozoic Era) ধরে দাপিয়ে চলেছিল বিশ্ব।
সেই দুইটি প্রজাতি যাদের একদম সহজ ভাষায় আজ আমরা বলি ডায়নোসর(যার শাখা প্রশাখা থেকে পরবর্তীতে পাখি,কুমির,সরীসৃপ ইত্যাদির তৈরী) এবং স্তন্যপায়ী(যাদের শাখাপ্রশাখা থেকে সৃষ্টি হয়েছে মানুষের)।তাহলে পরবর্তী ১৮ কোটি বছর ধরে আমরা দেখব ডায়নোসরের দাপট আর দেখব কিভাবে ডায়নোসরের রাজত্বে টিকে থেকেছিল আমাদের পূর্বপুরুষরা।
গণবিলুপ্তির পর শুরু হয়েছে নতুন যুগের,জীবন থেমে থাকেনা। দূর্যোগের পর নতুনভাবে সবকিছুকে গুছিয়ে নিতে লাগল প্রকৃতি।বেঁচে যাওয়া মাত্র ভাগ্যবান প্রজাতিগুলোর একটি আমাদের পূর্বপুরুষ,আর আরেকটি ডায়নোসর। গত কয়েক লক্ষ বছর ধরে চলেছে মহাদূর্যোগ। খাদ্যের খুব অভাব।
তার উপরে জুটেছে সর্বভূক বিকটাকার ডায়নোসরদের জ্বালা।খাবারের অভাবে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে শরীর হয়ে পড়ল একদম ছোট্ট,দূর্বল। কিন্তু এটাই ন্যাচারাল সিলেকশন বা প্রাকৃতিক নির্বাচনের জাদু।খাবারের অভাবে আমরা ছোট হয়ে পড়লাম ঠিকই,তখন আমাদের আকার একটি লোমযুক্ত ছোট বেড়ালের মত,তার নাম Actinion.কিন্তু এই ছোট হয়ে পড়াটা আমাদের একটা সুবিধা করে দিল,তা হল ডায়নোসররা আমাদেরকে আমাদের ছোট আকৃতির জন্য সহজে দেখতে পেতনা,তাই আমরা শিকারে পরিণত হতে লাগলাম অনেক কম।
অর্থাৎ বিপদে পড়ে আমরা আকারে ছোট হলেও সেই ছোট আকার ই উল্টো আমাদের প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য নির্বাচিত করল,এটাই ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব (Natural Selection Theory)।
অধিকতর নিরাপত্তার জন্য আমরা নিশাচর প্রাণীতে পরিণত হলাম,রাতের শীতল পরিবেশে আমাদের লোমকূপের মাংসপেশীগুলো সংকুচিত হত,এতে আমাদের লোমকূপ দাঁড়িয়ে যেত এবং আমাদের বদ্ধ লোমকূপের গোড়ার মাধ্যমে শরীরে তাপ সংরক্ষিত থাকত,এই সামান্য জিনিসটি আজ থেকে প্রায় ২০ কোটি বছর আগে আমাদের আদিপুরুষ সেই ছোট বেড়ালের মত প্রজাতিটিকে শীতের কবল থেকে বেঁচে থাকার এক বিশাল সহায়তা প্রদান করেছিল আর আমাদের পূর্বপুরুষ সেই প্রাণীগুলোর এই বৈশিষ্ট্য আজও আমাদের শরীরে রয়ে গেছে।শীত এলে বা ভয় অথবা উত্তেজনায় যখন আমাদের শরীরে শক্তির দরকার হয় তখন লোমকূপের এই সংকোচন বা গায়ের লোম খাড়া হবার (Pilorection) মাধ্যমেই আমরা আমাদের ২০ কোটি বছর আগের ছোট্ট বেড়াল আকৃতির পূর্বপুরুষদের মত তাপশক্তি সংরক্ষণ করি।
শিকারী কখন আসছে,কখন, কোথায়, কিভাবে বের হতে হবে সন্তর্পণে, বিপদ আসলে কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে এইসব পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতে আমাদের মস্তিস্কে নতুন একটি অংশের সৃষ্টি হল যা জটিল চিন্তা,পরিস্থিতির অনুধাবন ও বিশ্লেষণ করে,তার নাম Neocortex.বর্তমানে মানুুষের মস্তিস্কের সবচেয়ে বড় অংশ এই Neocortex.
ডায়নোসরের ভয়ে আকারে ছোট হয়ে হয়েও এভাবে আমরা টিকে থাকতে লাগলাম। Juramaia Sinensis(Eutheria শাখা) নামক প্রজাতিতে রূপান্তরিত আমরা আজ থেকে ১৫ কোটি বছর আগে Jurassic Age যুগে ডায়নোসরদের থেকে নিজেদের প্রজাতিকে রক্ষা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।আজকের যে Jurassic নামটা আমাদের কাছে হলিউডের চলচিত্র মাত্র আজ থেকে ১৫ কোটি বছর আগে Jurassic যুগের Dinosaur রা পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছিল ত্রাসের।এই Juramaia Sinensis প্রজাতিটির অনেক ধাপ পর হতেই পরবর্তীতে সৃষ্টি হয়েছে সকল Placental Mammals দের(যেমন আমরা)যাদের জীবনধারণ হত পোকামাকড় খেয়ে(Insectivores,চাইনিজদের আর কি দোষ বলুন,আমাদের আদি প্রজাতির একটি একসময় পোকামাকড় খেতই!)
৬.৬ কোটি বছর আগে আমরা হয়ে উঠলাম Megazostrodon নামের এক শুকনা পাতলা ইঁদুরের মত প্রাণী, যারা ডায়নোসর থেকে বাঁচার জন্য এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছে যে তারা এখন আর ডিম পারেনা,সরাসরি বাচ্চা দেয়,বাচ্চাদেরকে যেন বাইরে খেতে যেতে না হয় তাই তাদের ঘর্মগ্রন্থিগুলো খাবার সঞ্চয় করে রাখতে রাখতে অনেক বড় হয়ে উঠল,সেই ঘর্মগ্রন্থিই হল মায়ের স্তন।আর তখন তাদের নাম হল স্তন্যপায়ী। এই স্তন্যপায়ীদের ই বংশধর আজ আমরা মানুষ থেকে শুরু করে তিমি মাছ,কুকুর,বিড়াল,ইঁদুর সবাই।
একদিকে বিশাল বিশাল সব ডায়নোসরের ছড়াছড়ি,কেউ অন্য সব প্রাণীকে গিলে খাচ্ছে,মারাত্মক আক্রমণাত্মক,মাংসাশী(Spinosaurs,T-Rex),কোন ডায়নোসর আবার সাধু সন্ন্যাসী,কেবল গাছ লতাপাতা খেয়ে বেঁচে থাকে(Triceratop)।কোনটা আবার আকাশে উড়ছে আর ধরে ধরে খেয়ে ফেলছে খোদ মাটিতে চড়া ডায়নোসরদেরকেই(Pterosaur) !ভেবে দেখুন তো হলিউডের Jurassic Park চলচিত্রটি,আপনার চারপাশে দানবীয় শিকারি সব বিশালাকার প্রাণী, বিশাল বিশাল চোয়াল আর হিংস্র দাঁত নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর এদিকে আপনি পুঁচকে ইঁদুর আকৃতির Megazostrodon,ভবিষ্যৎ মানবজাতির অতীত নিদর্শন আপনি,একমাত্র আশা।বাঁচার লড়াইয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অহর্নিশ! এভাবেই চলতে লাগল ১৮ কোটি বছর! এই সময়ের একটি অংশকে বলা হয় Jurassic যুগ যে নামটি শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে উঠে ডায়নোসরের ছবি।
প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত ক্রমে ক্রমে পাঠকগণ দেখতেই পাচ্ছেন কিভাবে আমরা আস্তে আস্তে প্রথমে জলজ মৎস্য Myllokunmingia ,তারপর স্থলজ চারপেয়ে প্রাণী Ichthyostega(Tetrapod), তারপর যৌনমিলনের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করা Casineria(Amniote) , তারপর পারমিয়ান গণবিলুপ্তিকে পাশ কাটিয়ে বেড়াল আকৃতির ছোট Actinion থেকে আরও ক্ষুদ্র ইঁদুর আকৃতির Juramaia Sinensis(Eutheria) হলাম,আর এরপর জুরাসিক যুগ পেরিয়ে আজ থেকে ৬.৬ কোটি বছর আগে সবশেষে হলাম জগতের প্রথম পূর্ণাঙ্গ স্তন্যপায়ী প্রাণী Megazostrodon. আমরা এখন জীবন সংগ্রামের লড়াইয়ে রত পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বিশাল রাজত্বের অধিকারী ডায়নোসরদের সাথে যারা গোটা পৃথিবী শাসন করেছিল প্রায় ১৮ কোটি বছর। কিন্তু কোথায় গেল এই ডায়নোসররা তাদের বিশাল সাম্রাজ্য ছেড়ে হারিয়ে?
তার উত্তর, পৌঁছে যাব আমাদের আসল পরিচিত পর্যায়ে,আমরা দেখতে পাব ডায়নোসরদের হারিয়ে কিভাবে আমরা দুই হাত, দুই পা, দাড়িয়ে হেঁটে চলা চিরচেনা মানুষ রূপে পরিণত হতে লাগলাম। বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম
যোৎযং সন্দৃশ্যতে নিত্যং লোকে ভূতক্ষয়
প্রতিনিয়তই এই লোকে বয়ে চলেছে ধ্বংসলীলা
আজ থেকে প্রায় ৬.৬ কোটি বছর আগের কথা। তখন পৃথিবীতে চলছে ডাইনোসরদের রাজত্ব। সে যেমন তেমন কথা নয় কিন্তু,এক প্রকাণ্ড ব্যাপার! সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের নতুন একটি প্রজাতি তালিকাভুক্ত করেছেন। কুইন্সল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রথম এই প্রজাতির কঙ্কাল পাওয়া যায়।ডাইনোসরের নতুন এই প্রজাতির নাম দেওয়া হয়েছে অস্ট্রালোটাইটান কুপারেনসিস বা দ্য সাউদার্ন টাইটান।এতদিন শুধুই দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া যেত এমন ডাইনোসর, যাদের Titanosaurs বলা হয়, তাদের গোত্রেই পড়ল এই নতুন আবিষ্কৃত ডাইনোসর।
Titan শব্দের অর্থ বৃহৎ,শক্তিশালী।গ্রীক মিথোলজিতে শক্তিশালী ১২ জন টাইটান দেবতার নাম হতে এই টাইটান নামের উৎপত্তি। শনিগ্রহের উপগ্রহ অন্যান্য সকল উপগ্রহের চেয়ে বড় বলে এর নাম Titan. অত্যন্ত শক্তিশালী ও বৃহৎ বলেই Titanic জাহাজের এই নামকরণ।
তাহলে বুঝতেই পারছেন যে ডাইনোসরের নাম Titanosaur তা কত বড় আর শক্তিশালীই না হবে! এদের আকার ছিল একটি বাস্কেটবল কোর্টের সমান। ব্যাখ্যা করলে এর উচ্চতা দাঁড়ায় সাড়ে ৬ মিটার (প্রায় ২১ ফুট) ও দৈর্ঘ্য ৩০ মিটার (প্রায় ৯৮ ফুট)! এদের ওজন কত হতো গড়ে জানেন? প্রায় ১০০-১১০ টন আর ১ টন কিন্তু প্রায় ১০০০ কেজির সমান! একবার ভেবে দেখুন কত বিশাল ছিল এই প্রাণীগুলো আর আজ থেকে ৬.৬ কোটি বছর ধরে এরাই দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল পৃথিবী।
তখন মানুষ তো দূরে থাক মানুষের কাছাকাছি দেখতেও কোনকিছুর ই অস্তিত্ব ছিলনা। শুধু একদম প্রাচীন কিছু Mammal বা ইঁদুরের মতো দেখতে কয়েক প্রজাতির ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল যার একটি হলো Megazostrodon. আর ডাইনোসররা বেঁচে থাকলে এই প্রজাতি বা কোন প্রজাতিই পৃথিবীতে তেমন টিকতে বা প্রভাব বিস্তার করতে পারতনা।কারণ ডাইনোসরের মতো এতবড় বিশাল খাদক প্রাণীরা থাকতে অন্য প্রজাতির কোন সুযোগ ই নেই! তাহলে মানুষ নামক প্রজাতিটি কী করে এই পৃথিবীতে এলো? এখানেই উলটে গেল এক পাশার দান।
বিশালাকার সব প্রভাব বিস্তারকারী ডাইনোসর,আর তাদের কাছ থেকে অনেক কষ্টে প্রাণ টিকিয়ে চলা ছোট ছোট ইঁদুর আকৃতির Mammal বা স্তন্যপায়ী প্রাণী Megazostrodon, কী ঘটবে Megazostrodon এর ভাগ্যে? শেষ পর্যন্ত প্রকাণ্ড খাদক ডাইনোসরের পেটের খাবার হতে হতে হয়তো একসময় বিলুপ্তই হয়ে যাবে তারা।আর একবার সেই ইঁদুরের মতো দেখতে প্রাচীন স্তন্যপায়ী প্রজাতিগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেলে সব শেষ,আজকের দিনের আমাদের পরিচিত প্রায় সব প্রাণী গরু,ছাগল,হাঁস,মুরগী,বানর,হনুমান,গরিলা,
শিম্পাঞ্জি, কুকুর,বিড়াল,আমরা সবাই ই তো স্তন্যপায়ী বা Mammal, সেই প্রাচীন ও একমাত্র স্তন্যপায়ীগুলো যদি ডাইনোসরের প্রবল প্রতাপে বিলুপ্ত হয়ে যায় তাহলে আমাদের এই জগতে আসার আর কোন উপায় ই থাকবেনা! আর হয়তোবা হতোও তাই,কিন্তু প্রকৃতি বড় বিচিত্র!
আজ থেকে ৬.৬ কোটি বছর আগে হঠাৎ একদিন,মেক্সিকো উপসাগর তীরবর্তী ইউকাটান উপদ্বীপ এলাকা,সব শান্তশিষ্টভাবে চলছিল। অকস্মাৎ এক প্রকাণ্ড দূর্যোগ এসে উপস্থিত হলো। মহাশূন্যে ঘুরতে থাকা বিশালাকৃতির একটি গ্রহাণু পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তির সীমানায় চলে এলো,আর ব্যস! প্রবল গতি নিয়ে তা ছুটে আসতে লাগল পৃথিবীর দিকে! বিশালাকৃতি সেই উল্কার ব্যাস ছিল প্রায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার। প্রচণ্ড গতিতে ছুটে আসার ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে এটি পরিণত হলো জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ডে।ভেবে দেখুন প্রায় ১৫ কিলোমিটার আকৃতির হাজার হাজার কিলোমিটার গতিতে ছুটে আসা এক জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড পৃথিবীর গায়ে আঁছড়ে পড়ল!গবেষকরা বলছেন, এত জোরে এটি পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়েছিল যে তাতে ২০০ কিলোমিটার চওড়া এবং ২০ কিলোমিটার গভীর একটি গর্ত বা জ্বালামুখ তৈরি হয়েছিল।
খোলা জায়গায় থাকা হাজার হাজার ডাইনোসর এবং অন্যান্য প্রাণী এই আগুনে সে সময় জ্বলেপুড়ে ছাই
হয়ে গিয়েছিল। ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল বৃক্ষরাজি। গ্রহাণুর আঘাতের ফলে সৃষ্টি হয় বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা হ্রাস পায়। দেখা দেয় সুনামি। বৃক্ষ হারিয়ে যায়, পৃথিবী হয়ে পড়ে প্রায় প্রাণশূন্য। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়,পরিবেশে বাড়তে থাকে আগুনের দহন থেকে উৎপন্ন বিশাক্ত গ্যাস,অক্সিজেন কমতে থাকে, দেখা দেয় চরম খাদ্যাভাব। জীবন হয়ে পড়ে দুঃসহ। বিশাল এই প্রাণীগুলোর জন্য বিপুল পরিমাণ খাদ্য দরকার, সেটা সেই সময়ে ছিল না।
এই অসহনীয় পরিবেশে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে গেল অতিকায় এই প্রাণীটি,শুধু তারাই নয়,তৎকালীন সময়ে পৃথিবীতে থাকা প্রায় ৮০ শতাংশ প্রজাতি ই ওই এক বিশাল গণবিলুপ্তিতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল আর এই গণবিলুপ্তি কিন্তু ১-২ দিনে হয়নি,লেগেছিল সহস্র সহস্র বছর!এই গণবিলুপ্তি Cretaceous যুগের সমাপ্তি ঘটায় আর শুরু করে Mesozoic যুগের যার প্রথম ভাগের নাম Paleozene,আর তাই এই গণবিলুপ্তিকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় Cretaceous-Paleogene Extinction Event. বড় ঝড়ে সবসময় বড় গাছ উপরে পড়ে,ছোট গুল্ম টিকে যায়,এখানেও তাই হলো।প্রায় ১০৭৮ টি ভিন্ন প্রজাতির ডাইনোসর সহ ৮০ শতাংশ প্রজাতিই বিলুপ্ত হয়ে গেল পৃথিবীর বুক থেকে। তম আসীত্তমসা,নেমে এলো যেন ঘন অন্ধকার।
কিন্তু অনন্ত প্রকৃতি কখনো থেমে থাকেনা। আকৃতি ছোট হবার কারণে টিকে গেল কিছু প্রজাতি, আর তাদের একটিই এই নতুন Paleogene যুগের নতুন রাজা হিসেবে আবির্ভূত হলো। কোন সেই প্রজাতি? হ্যাঁ, একটু আগেই যাদের কথা বলছিলাম, Mammal বা স্তন্যপায়ীরা!যারা এতদিন ডাইনোসরের দাপটে ছিল ভীত,সন্ত্রস্ত,দূর্বল,ছোট এবার তাদের রাজত্বের পালা। এবার শুরু হবে আসল কাহিনী।
Early Mammals যেমন Morganucodontids, Megazostrodon, সেই ২১ কোটি বছর আগে থেকে যারা ডাইনোসরের ভয়ে, প্রবল রাজত্বে ছোট ইঁদুরের আকারে ঘুরে বেড়াত অগোচরে প্রাণভয়ে, ডাইনোসরদের বিলুপ্তিতে তারা এখন সুযোগ পেয়ে গেল।আস্তে আস্তে বাড়তে থাকল Mammals বা স্তন্যপায়ীদের সংখ্যা।
একদম স্থুলভাবে বললে Mammals বা স্তন্যপায়ীদের ৩ টি গ্রুপ, Eutheria,Metatheria এবং Monotreme যা গতপর্বেও আপনাদের বলেছি।আমরা হলাম Eutheria গোত্রের যাদের মায়ের গর্ভে তথা জরায়ুতে অমরা বা Placenta নামক রক্ষাকবচ থাকে।মহর্ষি কপিলের সাংখ্যদর্শনেও(৫.১১১) প্রজাতিসমূহের এই শ্রেণীবিন্যাস পাওয়া যায়- উষ্ণজাণ্ডজজরায়ুজ… যেখানে অণ্ডজ হলো Monotreme এবং জরায়ুজ হলো Eutheria&Metatheria.
যাই হোক সেই যে ডাইনোসরদের সাথে ছিল স্তন্যপায়ীরা কোনরকমে টিকে, ডাইনোসরের বিলুপ্তির পর দ্রুত বংশবৃদ্ধি কালে এরা অনেকগুলো শাখা প্রশাখায় ভাগ হলো,পাল্টে যেতে লাগল এদের বিভিন্ন শাখার একেকটি প্রজাতির দেহবৈশিষ্ঠ্য থেকে শুরু করে অনেক কিছুই।সবগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করবনা কারণ আমাদের উদ্দেশ্য মানুষ।এই অনেকগুলো শাখা প্রশাখার মধ্যে Eutheria গোত্রের Mammal দের একটি উপশাখা হলো Plesiadapiforms,৬.৬ কোটি বছর আগে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গেলে পরবর্তী ১ কোটি বছর ধরে অনুকূল পরিবেশ পেয়ে দ্রুত সংখ্যা বাড়তে লাগল এদের।৫.৫ কোটি বছর আগের ফসিল রেকর্ডে দেখা গেল ধীরে ধীরে Mammals দের থেকে বিবর্তিত Proto Primate প্রজাতিদের দেখা পাওয়া শুরু হলো।Mammal আর Primate,এই দুটোর মধ্যবর্তী একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রজাতি বলা যেতে পারে Proto-Mammal দেরকে।এই পর্যায়ে জানতে হবে Mammal আর Primate এই দুইটির মধ্যে পার্থক্য কী।
আমরা সাধারণভাবে মনে করি Mammal আর Primate শব্দদুটো এক,দুটোর অর্থই স্তন্যপায়ী।আসলে ব্যপারটা তা নয়।অনেক শাখা প্রশাখার মধ্যে Eutheria গোত্রের স্তন্যপায়ী বা Mammal যারা তাদের মধ্যে Primate একটি উপশাখা। কিন্তু Eutheria গোত্রের স্তন্যপায়ীদের দের মধ্যে আরও অনেক শাখা আছে যারা Primate না যেমন Rodents(ইঁদুর, বেজি,প্রেইরি ডগ,গিনিপিগ ইত্যাদি) এরাও Eutheria শাখার Mammal কিন্তু এরা Primate নয়,আলাদা একটি শাখা।
Primate রা কোন কোন শারীরিক দিক থেকে অন্য Mammal দের চেয়ে আলাদা?
- তাদের পায়ের বুড়ো আঙ্গুল অন্য সব আঙ্গুল থেকে আলাদা এবং বড়।তাদের হাতের বুড়ো আঙ্গুলও অন্য সব আঙ্গুল থেকে বড় এবং বাঁকানো যায় যার ফলে হাত ব্যবহার করেই তারা এক গাছের শাখা থেকে অন্য গাছের শাখাতে লাফ দেবার সময় গাছের শাখা হাত দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরা যায়।
- Brachiation Movement.এর মাধ্যমে Primate রা Arm Swinging বা হাত কাঁধের জয়েন্টের মধ্যে সহজেই ওঠানামা করতে পারত,ফলে গাছে চড়া সহজ হতো।
- Stereoscopic Vision, এর ফলে চোখের দৃষ্টির দ্বারা গভীরতা,দূরত্ব নির্ণয় এসব অনেক বেড়ে গেল। প্রাইমেটদের দুটো ভিজুয়াল ফিল্ড থাকে,এটি মূলত বায়োলজি ও মেডিকেল সায়েন্সর বিষয় তাই হয়তো ব্যপারটা বুঝা কঠিন।তবে সহজ ভাষায় বলতে গেলে এর দ্বারা কোন বস্তুর দূরত্ব,ভর,গভীরতা,গতি ইত্যাদি আমরা দৃষ্টির মাধ্যমে অনেক প্রশস্ত রেঞ্জে পরিমাপ করতে পারি এবং 3D ছবি তৈরী করতে পারি মস্তিস্কে। Primate দের Post-Orbital Bar থাকে যা মুখমণ্ডলের Frontal এবং Zygomatic Bone এর বিশেষ যোগাযোগের মাধ্যমে তৈরী হয় এবং এতে চোখের পজিশনটা সামনের দিকে থাকে যা Stereoscopic Vision এ সহায়তা করে।ডান চোখ ও বাম চোখ একে অপরের ভিজুয়াল ফিল্ডের আলাদা মোট চারটি ক্ষেত্র কভার করে,কিন্তু দেখে কে? চোখ? না।দেখে চোখ হতে পৃথক আমাদের মস্তিস্কের অক্সিপিটাল লোব নামক অংশটি।ন্যায়সূত্রে দার্শনিক অর্থে বলা হলেও খুব অদ্ভূতভাবে একটি শ্লোকের বক্তব্য এই ঘটনাটির সাথে মিলে যায়।সব্যদৃষ্টস্যেতরেণ প্রত্যভিজ্ঞানাৎ,বাম চোখ যা দেখে তা ডান চোখ প্রত্যাভিজ্ঞ করে,আর দৃষ্টির জ্ঞান অনুভূত ও গৃহীত হয় দুইচোখ হতে পৃথক স্থানে,আত্মায়! (ন্যায়সূত্র ৩.১.৭)
- নখের সৃষ্টি।এর আগে Mammal দের থাকত থাবা, Proto Primate দের উপরোক্ত ৩ টা বৈশিষ্ট্য থাকলে তখনো নখ গজায়নি,থাবা রয়ে গিয়েছিল। Proto Primate থেকে যখন True Primate তৈরী হলো তখন তাদের থাবা নখ দিয়ে স্থানান্তরিত হয়ে গেল। সবচেয়ে আদিম একটি Proto-Primate প্রজাতির নাম হলো Purgatorius,এদের তখনও নখের বদলে থাবা ছিল।
অর্থাৎ ক্রমান্বয়ে ডাইনোসর যুগের Eutheria Mammal দের একটি শাখা সৃষ্টি হলো যার নাম Plesiadapiformis, সেই Plesiadapiformis এর অনেকগুলো শাখার একটি হলো Proto-Primate বা Primate এর পূর্ববর্তী ধাপটি। এরপর True Primates দেখা দেয়া শুরু করল প্রায় ৫.৩ কোটি বছর আগে।
এই True Primate রা আবার মূলত ২ শাখায় ভাগ হলো-
Strepsirrhines এবং Haplorhines.
এরমধ্যে Strepsirrhines কারা? এদেরকে প্রচলিত ভাষায় বলা হয় Wet Nose. কারণ এদের নাকের সামনের দিকের অংশটায় কোন লোম থাকেনা বলে সেটা ভেজা ভেজা থাকে,এই ভেজা অংশকে বলে Rhinarium. নাকের সামনে লোমহীন এই ভেজা অংশ অবশ্য অন্য কিছু প্রাণীতে থাকে,যেমন বিড়াল।বর্তমানে মাদাগাস্কার দ্বীপে বসবাসকারী লেমুর নামক প্রজাতিটি এই Strepsirrhines এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
বাকী রইল, Haplorrhines,এরাও আবার দুইভাগে ভাগ হয়ে গেল। একভাগ Simian, একভাগ Tarsiers.
Tarsier গোত্রের প্রাণীদের এখন কেবল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেই পাওয়া যায়।একদম ছোট আকারের বৃক্ষচারী প্রাণী এরা।
অন্য গোত্রটি Simian, আর এরাই আমাদের আসল গন্তব্য,আমরা আমাদের পরিচয়ের কাছাকাছি চলে এসেছি অনেকটা।
আজ থেকে প্রায় ৪ কোটি বছর আগে Simian রা দুইভাগ হয়ে একভাগ হলো Catarrhini, আরেকভাগ হলো Platyrrhiny.
Platyrrhiny শব্দটার অর্থ হলো Flat Nose বা চাপা নাক।এদের নাকের ছিদ্র দুটো দুপাশে তাক করা।এদেরকে প্রচলিত ভাষায় New World Monkey ও বলা হয় কারণ এরা আফ্রিকা থেকে একটা সময় সরু জলপথ পার হয়ে মেক্সিকো,সেন্ট্রাল ও সাউথ আমেরিকার নতুন পৃথিবীতে চলে আসে। সাউথ আমেরিকান Marmoset,Capuchin, Squirrel Monkey,Night Monkey,Wooly Monkey এরা Platyrrhiny গোত্রের বর্তমানে টিকে থাকা বংশধর।এদের Trichromatic Vision বা মৌলিক ৩ রং এর দৃষ্টিচ্ছবি নেই,দাঁতের পাটিতে Premolar দাঁত আছে ১২ টি।
বাকী আরেক গ্রুপ Catarrhini,এখানেই আমাদের পূর্বজদের গোত্র।এদের নাক সরু,নাকের ছিদ্র নিচের দিকে, আছে আজকের আমাদের মতো Trichromatic Vision, আছে আজকের আমাদের মতো ৮ টি Premolar দাঁত।এরা তাদের পূর্বের পুরনো আবাসভূমি আফ্রিকাতেই রয়ে গেল,এজন্য আগের গ্রুপের সাথে তুলনা করে এদের ডাকা হতো Old World Monkey.সবচেয়ে প্রাচীন একটি Catarrhini প্রজাতি হলো Aegyptopethicus.
এভাবে আরও অনেক জটিল শাখা প্রশাখা তৈরী হলো লক্ষ লক্ষ বছর ধরে।চলে গেল আরও ১.৫ কোটি বছর।আজ হতে প্রায় ২.৫ কোটি বছর আগে Catarrhini এর Old World Monkey ছাড়াও আরেকটি পৃথক শাখার তৈরী হলো যাদেরকে বলা হয় Ape.তবে তা সরাসরি নয় বরং মধ্যবর্তী Proconsul নামক একটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে। আর এই Ape থেকেই আমাদের সৃষ্টি।খুব জনপ্রিয় একটি অপপ্রচার হলো বানর থেকে নাকি মানুষের সৃষ্টি।আসলে বানরের সাথে মানুষের কোন সম্পর্কই নেই।আমরা একটু আগেই দেখেছি বানর হলো Platyrrhini গোত্রের অংশ,আর আমরা হলাম Catarrhini গোত্রের Ape এর প্রশাখা।
Ape দের থেকে মোট ৪ টি আলাদা গোত্রের সৃষ্টি হলো। ১.৩ কোটি বছর আগে ওরাং ওটাংদের পূর্বজ গোত্র আলাদা হয়ে গেল Ape হতে যার নাম Ponginae, ১.২ কোটি বছর আগে গরিলাদের পূর্বজ গোত্র আলাদা হয়ে গেল আরেকটি শাখা হয়ে যার নাম Gorillae,৭০ লক্ষ বছর আগে শিম্পাঞ্জি ও বোনোবোদের পূর্বজ গোত্ররা আলাদা হয়ে গেল আরও একটি শাখা হয়ে যার নাম Pan। সবেধন নীলমনি হয়ে আরেকটি শাখা অর্থাৎ ৪র্থ শাখা বাকী রইল Ape দের। নামটা শুনে একটু কাছের কাছের লাগবে,মনে হবে যেন পরিচিত নামটা হলো Hominin,আমাদের পূর্বজ এরাই! আর ৭০ লক্ষ বছর আগের সেই সময়কার একটি Hominin প্রজাতি বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন যার নাম Sahelanthropus Tchadensis.
আর এই এক Ape দের থেকেই আমাদের সবার সৃষ্টি বলে ওরাং ওটাংদের সাথে ৯৭ শতাংশ,গরিলাদের সাথে ৯৮.৪ শতাংশ ও শিম্পাঞ্জি-বোনোবোদের সাথে ৯৮.৮ শতাংশ DNA আমাদের একই! আর এজন্যেই ভ্যাক্সিন সহ বিভিন্ন ওষুধ আবিস্কারে এই Ape সহ আমাদের নিকটস্থ প্রাইমেটদের গুরুত্ব অসীম। আমাদের উৎস এক অভিন্ন উৎস হতে বলেই ভ্যাক্সিনসহ বিভিন্ন ওষুধ ট্রায়ালের প্রথম পর্যায়ে এদের উপর প্রয়োগ করা হয় কারণ এদের জিনসহ শারীরবৃত্তীয় প্রায় সবকিছুই আমাদের সাথে হুবহু এক হওয়ায় এদের শরীরের রেসপন্স দেখে আমাদের শরীরে সেই ভ্যাক্সিন বা ওষুধের রেসপন্স এক প্রকার হবে।
এবার একটু পেছনে ফিরে যাব আবার। Cretaceous-Paleogene Extinction এর সময় ডাইনোসরসহ অধিকাংশ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, Plesiadipiformes, এর পর Proto-Primate Purgatorius এর মত অতি অল্প কিছু, দেখতে ছোট ইঁদুরের মত স্তন্যপায়ী প্রাণী টিকে গেল, তাদের ই অসংখ্য শাখা প্রশাখার একটি হলো Catarrhini. আগে ইঁদুর আকৃতির সেই Purgatorius রা ছোট ছোট পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকলেও বিশাল সেই গণবিলুপ্তির কারণে প্রাণীজ খাবার একদম কমে যায়, আর তখন ত্রাতারূপে আবির্ভূত হয় উদ্ভিজ্জ ফল।
আস্তে আস্তে সেই ইঁদুরের আকারের প্রাণীরা গাছে উঠে পাকা ফল খাবার প্রচেষ্টা করতে থাকে,এভাবে পেরিয়ে গেল লক্ষ কোটি বছর, একটা সময়ে চতুষ্পদের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর ইঁদুর সদৃশ প্রজতিটি আস্তে আস্তে আমাদের Catarrhini হতে নরবানর তথা Ape এ পরিণত হলো গাছে উঠার,এক গাছ থেকে আরেক গাছে লাফানোর সুবিধার্থে।
বিভিন্ন প্রাচীন ফসিলে পাওয়া আমাদের মস্তিস্কের খুলিতে অবস্থিত বিশালাকার ছিদ্র তথা Foramen Magnum এর অবস্থানের ক্রমশ পরিবর্তন তার একটি প্রমাণ,এটি প্রমাণ করে ক্রমশ আমাদের স্পাইনাল কর্ড বা সুষুম্নাকাণ্ডের Angle বা কোণের অবস্থানের পরিবর্তন (সোজা হয়ে বসা বা গাছে উঠার জন্য) যার ফলে মাথার খুলির সেই ছিদ্রটিরও অবস্থান পরিবর্তন করতে হচ্ছিল।
এখন আর কোন ডাইনোসর নেই,তাই প্রবল প্রতাপশালী আমাদের সেরকম বড় কোন শত্রুও আর তেমন নেই।ছোট ইঁদুরের মত প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়ে আমাদের আকার হয়েছে অনেক বড়,আমরা গাছে চড়তে শিখেছি,ফল খেতে শিখেছি। ৭০ লক্ষ বছর আগে শিম্পাঞ্জি ও বোনোবোদের পূর্বপুরুষরা আলাদা হয়ে যাবার সময় আমরা এই গাছে চড়া,ফল খাওয়া Arboreal জীবনে একদম অভ্যস্ত ছিলাম।কিন্তু না, প্রকৃতির পরিকল্পনা ছিল অন্য কিছু।
যে বৈশ্বিক উষ্ণতার কথা আজ আমরা প্রতিদিন বলছি,আতংকগ্রস্ত হচ্ছি তা এবার ই প্রথম ঘটবেনা,ঘটছেনা।তবে সমস্যাটি কীভাবে ঘটেছিল তা বুঝতে হলে আপনাদেরকে জানতে হবে কিছু অন্য গল্প।আমাদের আজকের এই পৃথিবীতে আছে ৭ টি মহাদেশ যারা একে অপরের হতে মহাসাগর দিয়ে আলাদা আলাদা হয়ে আছে।
এশিয়া থেকে এন্টার্কটিক,দুইয়ের মাঝখানে কি বিশাল প্রশান্ত মহাসাগর,আফ্রিকা থেকে আমেরিকা মহাদেশ আলাদা হয়ে আছে প্রকাণ্ড আটলান্টিক মহাসাগরের দ্বারা।
ইউরোপ থেকে আমেরিকা আলাদা হয়ে আছে আর্কটিক সাগরের মাধ্যমে।এইসব ই আমরা আমরা সবাই জানি।কিন্তু খুব অল্প মানুষ ই জানে আগে আসলে এই ৭ টি মহাদেশ বলতে কিছু ছিলনা,সারা দুনিয়ার সব মহাদেশ,সব দেশ,সব ভুখণ্ড ছিল একইসাথে যুক্ত,গোটা বিশাল একটা মহাদেশ যার নাম প্যানজিয়া(Pangea),সাগরও ছিল শুধু একটি, যার নাম প্যানথেসিয়া(কেবল চীন ব্যাতিত,চীন আলাদা ভুখণ্ড ছিল যার নাম ছিল Cathysia)
এ কারণ হল পৃথিবীর ভুপৃষ্ঠের নিচের স্তর (অশ্বমণ্ডল) আসলে অনেকগুলো বিশাল বিশাল প্লেট দ্বারা নির্মিত,এদেরকে টেকটোনিক প্লেট বলে এবং এরা গতিশীল, খুব খুব ধীরে ধীরে চলমান যা খালিচোখে হয়তো আমরা বুঝতে পারিনা। এই প্লেটগুলোর উপরেই সব মহাদেশগুলো অবস্থিত।
এই প্লেটগুলো গুরুমণ্ডলের আংশিক তরল অংশের ওপরে ভাসমান অবস্থায় আছে। ভূত্বকীয় প্লেটগুলোকে মূলত ৭ ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেমন—আফ্রিকান প্লেট, এন্টার্কটিক প্লেট, ইউরেশিয়ান প্লেট, ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেট, উত্তর আমেরিকান প্লেট, প্যাসিফিক প্লেট, দক্ষিণ আমেরিকান প্লেট। এই প্লেটগুলো প্রতিবছর কয়েক সেন্টিমিটার কোনো এক দিকে সরে যায়।
কখনো একে অন্যের দিকে আসে, কখনো আবার কয়েক মিলিমিটার ওপরে ওঠে বা নিচে নামে। যখন একটি প্লেটের সঙ্গে আরেকটি প্লেট ঘষা বা ধাক্কা খায় তখন ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির উদগিরণের ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হয়, প্লেটগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে ঘষা বা ধাক্কা খেলে সেখানে প্রচুর তাপ সৃষ্টি হয়। তাপে ভূ-অভ্যন্তরের পদার্থ গলে যায়। এ গলিত পদার্থ চাপের ফলে নিচ থেকে ভূ-পৃষ্ঠ ভেদ করে বেরিয়ে আসে। একেই আগ্নেয়গিরির উদগিরণ বলে।
উদগীরণের সময় বেরিয়ে আসা গলিত তরল পদার্থ ম্যাগমা নামে পরিচিত। একইভাবে প্লেটগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে ধাক্কা খেলে পৃথিবী কেঁপে ওঠে। একেই ভূমিকম্প বলে।এই প্লেটগুলোর একে অপরের থেকে সরে যাবার কারণেই একটি বিশাল ভুখণ্ড ভেঙ্গে তৈরী হয়েছিল ৭ টি আলাদা মহাদেশের,আজ থেকে প্রায় ১৮ কোটি বছর আগে।
না এমনটি মনে করার কোন কারণ নেই যে এটা রাতারাতি আলাদা হয়ে গেছে,এই আলাদা হবার গতি এতই ধীর ছিল যে এটি হতে লেগেছিল প্রায় ১৩ কোটি বছর!মজার বিষয় হল অতীতে এরকম আরও ৪ বার পৃথিবীর সব মহাদেশ একসাথে একটা ভুখণ্ড ছিল,প্রতিবার ই তারা আবার ভেঙে আলাদা হয়ে গিয়েছে,ভবিষ্যতেও হয়তো অনেক কোটি বছর পরে আমরা আবার এক হব!
যাই হোক আমরা কিন্তু আমাদের মূল গল্প হতে সরে গিয়েছি। আমাদের আদিপুরুষদের সামনে এই প্লেট টেকটোনিকের চলাফেরার কারণে আরেকটা বিপদ এসে উপস্থিত হল।আজ থেকে প্রায় ২.৫ কোটি বছর আগে আফ্রিকান আর ইন্ডিয়ান প্লেট দুটো একে অপরের থেকে সরে গেল কিছুটা,
ফলে মাঝখানের অংশে ভূখণ্ড নিচু হয়ে উৎপন্ন হল বিখ্যাত একটি উপত্যকার,The Great East African Rift Valley বলে যাকে আমরা চিনি আর সেখানে উদ্ভব হল নতুন পর্বতসারির। এই African Rift Valley নামক ৩০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফাটল দিন দিন বড় হচ্ছে।বিশেষজ্ঞদের মতে আগামী আরও ১ কোটি বছর পর এই ফাটল সম্পূর্ণ হয়ে আফ্রিকা ২ ভাগে ভাগ হয়ে যাবে এবং মাঝখানে এক নতুন সমূদ্রের সৃষ্টি হবে।
এতে যে সমস্যাটা হলো তা হচ্ছে আগে ভারত সাগরের মৌসুমী বায়ু বিনাবাধায় আফ্রিকা অঞ্চলে প্রবাহিত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটাত। কিন্তু এখন দুই মহাদেশের মাঝে এই নতুন পর্বতসারির কারণে সেই বায়ু বাঁধা পেল।পর্বতসারির জন্য এক পাশের বনাঞ্চলও হয়ে গেল আলাদা,আবার বৃষ্টিপাত কমে যাবার কারণে ফল,বৃক্ষ এদের সংখ্যাও কমে গেল।
এভাবেই প্রায় ২.৫ কোটি বছর আগে বিশাল বিপদে পড়ে গেল আমাদের পূর্বপুরুষরা যখন তারা Catarrhine থেকে Proconsul নামক মধ্যবর্তী পর্যায়ের মধ্য দিয়ে Ape নামক আলাদা একটি শাখায় ভাগ হয়ে যাচ্ছিল।
সেই ফলভোজী,লাফিয়ে লাফিয়ে বা ডিঙ্গিয়ে গাছে চড়া,লেজযুক্ত প্রাণীদের জীবনে এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কী কী পরিবর্তন হলো? তারা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে গাছ থেকে গাছে সোজা হয়ে লাফিয়ে এবং অনেকটা সময় গাছে না চড়ে ২ পায়ে ভর দিয়ে মাটিতে বিচরণ করে খাবার সংগ্রহ করার অভ্যেস গড়ে তুলতে লাগল জীবনের তাগিদে কারণ গাছে খাবার কমে গেছে,টিকে থাকতে হলে এখন মাটিতে খাপ খাইয়ে নেয়া এবং অধিক সংখ্যক গাছে সোজা হয়ে Brachiation Movement এর মাধ্যমে চলাচল করে খাবার জোগাড় আবশ্যক।
যেহেতু এখন আর আগের মতো চারপায়ে চলার অভ্যেস নেই তাই মাথার ভার সামঞ্জস্য করার জন্য লেজের দরকারও নেই। অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ লালন করা অর্থ হলো অপ্রয়োজনীয় ক্যালরি সেই অঙ্গ বহনের জন্য ব্যয় করা। আবার শিকারী প্রাণীদের সেই অঙ্গের মাধ্যমে আপনাকে ধরা তুলনামূলক সহজতর। আর যখন ই আপনি সোজা হয়ে দুই পায়ে হাঁটবেন তখন লেজ থাকলে তা বারবার আপনার পায়ের মাঝে এসে পড়বে। অর্থাৎ এটি সবদিকেই অযোগ্য এসময় আর টিকে থাকার।
প্রায় ২-২.২ কোটি বছর আগে Proconsul পর্যায়ে থাকা অবস্থাতেই তাই তখন অনেক লক্ষ বছরের বিবর্তনের ফলে তাদের লেজ আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে গেল কিন্তু রয়ে গেল তার অবশিষ্ট যাকে আমরা বলি Coccyx (পুচ্ছদেশ,কোমড়ের নিচের হাঁড়ের অংশ)। এখনো যদি গর্ভাবস্থায় ৮ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভবতী মায়ের আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করান তাহলে দেখতে পাবেন এখনো সেই লেজ আমাদের রয়ে গেছে যা কয়েক কোটি বছরের বিবর্তনের ফলে এখন গর্ভাবস্থাতেই সেই ছোট অবস্থাতেই রয়ে যায় এবং Coccyx নামক হাড় হিসেবে ধ্বংসাবশেষের মতো করে তার প্রাচীন অস্তিত্বের সাক্ষী বহন করে চলেছে।
এখনো আমাদের শরীরে। এই Coccyx হাড়টির অপর নাম তাই Tail Bone. আর তাই দেখবেন মানুষ, শিম্পাঞ্জি,বোনোবো,ওরাংওটাং এবং গরিলা এই Ape দের কারোই লেজ নেই কারণ Ape হবার ঠিক আগের পর্যায়ে (Proconsul) তারা লেজ হারিয়ে ফেলেছিল।
আগে লাফিয়ে লাফিয়ে গাছে চড়ার বদলে কম শক্তি খরচ করে গাছে উঠার জন্য আমাদের হাত পা আরও বড় ও পেশীবহুল হল,জলবায়ুর পরিবর্তন চিরতরে পরিবর্তন করে দিল আমাদের আদিপুরুষদের।কি,আপনি ভাবছেন এই পরিবর্তনগুলো এভাবেই ধুমধাম হয়ে গেল! এ কিভাবে সম্ভব! এটা কি ব্ল্যাকম্যাজিক নাকি? না,বাস্তবতা হল লক্ষ লক্ষ প্রজন্ম ধরে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবর্তনের ফসল এই পরিবর্তনগুলো, আর এগুলো হতে সময় লেগেছিল প্রায় ৩০ লক্ষ বছর। আর এভাবেই আজ থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষদের আর রইলনা লেজ,রোমশ এক ফলভোজী নরবানর তখন তারা।
তাহলে আমরা দেখলাম আপাতত ইস্ট আফ্রিকান উপত্যকার কারণে সৃষ্ট সমস্যায় তৈরী চরম খাদ্যসংকট থেকে তো বাঁচার তাগিদে অনেক লক্ষ বছর ধরে ধীরে ধীরে হলো পরিবর্তন। Ape থেকে হলো কয়েকটি শাখা ভাগ(Hominin,শিম্পাঞ্জি-বোনোবো,ওরাংওটাং,গরিলা)।
Hominin এর সবচেয়ে প্রাচীন প্রজাতি Sahelanthropus Tchadensis,আজ থেকে প্রায় ৭০-৭৫ লক্ষ বছর আগের।এরপর এলো Ardipithecus Ramidus এবং Ardipithecus Kadabba যাদের প্রথম অস্তিত্ব পাওয়া যায় প্রায় ৫৬ লক্ষ বছর আগে,যারা মাত্র গড়ে ৪ ফুট লম্বা, ৩৫ কেজি ওজনের, কমলার আকৃতির মস্তিস্কযুক্ত।এদের ফসিল পাওয়া গিয়েছিল ইথিওপিয়ায়।আজ থেকে প্রায় ৪৪ লক্ষ বছর আগে এই Ardipithecus প্রজাতি ইতিহাসের এক অনন্য অসামান্য কর্মের প্রথম সাধন করল।
১৯৯৪ সালে ইথিওপিয়ায় প্রাপ্ত এদের ফসিল থেকে বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করলেন যে তারাই Hominin দের মধ্যে প্রথম প্রজাতি যারা পুরোপুরি Arboreal( গাছে চড়ে জীবন নির্বাহ) বৈশিষ্ট্য থেকে সরে এসে সম্পূর্ণ Bipedal বা দুই পায়ে চলাফেরার অভ্যেস গড়ে তুলেছিল।অপরদিকে বাকী Ape রা(গরিলা,শিম্পাঞ্জি ইত্যাদি) পুরোপুরি Arboreal স্বভাব ত্যাগ করতে পারেনি।
প্রথমবারের মত ইতিহাসে কোন একটি প্রাইমেট স্তন্যপায়ীর সম্পূর্ণ দুই পায়ে ভর করে হাঁটার অভ্যেস শুরু হলো। খুব সামান্য বিষয় মনে হচ্ছে? মোটেও তা নয় আসলে। এই দুই পায়ে হাঁটতে শেখাটাই সূচনা করেছিল এক নতুন ইতিহাসের,মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল পৃথিবীর। একটি প্রাণী চলাফেরার জন্য চার হাত পা ব্যবহারের পরিবর্তে কেবল ২ পায়ে হাঁটার কারণে অন্যান্য সকল প্রজাতির চেয়ে সে অসংখ্য দিকে এগিয়ে গেছে।যেমন-
- দৃষ্টিসীমা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেল।এতদিন জীবন ছিল গাছে,এখন ঘাসের মাটিতে জীবন।চার হাতপায়ে ভর দিয়ে চললে দূরের শিকার ও শিকারী দৃষ্টিগোচর করতে অনেক অসুবিধা হতো যা দুই পায়ে চলাফেরা শুরু করার কারণে অনেকটাই দূর হয়ে গেল দৃষ্টিসীমা বৃদ্ধির ফলে।
- দুই হাতকেও এতদিন চলাফেরার সময় শরীর ভর দেবার কাজে ব্যবহার করতে হতো যা এখন আর হচ্ছেনা।ফলে সেই দুই হাতে পাথরের তৈরী অস্ত্র বহন করা,খাদ্য বহন করা,শত্রুর সাথে লড়াইয়ে ব্যবহার করা গেল। স্বাভাবিকভাবেই আপনি চার হাত পায়ে ভর দিয়ে চললে যতদূর পর্যন্ত দেখতে পাবেন কেবল দুই পায়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালে তারচেয়ে অনেক বেশীদূর পর্যন্ত দেখতে পাবেন।
- শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়ে গেল কারণ সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ফলে সূূর্যালোক শরীরের ৬০ শতাংশ কম ক্ষেত্রফলে পতিত হতে লাগল,অধিক বাতাস সরবরাহ হতে লাগল শরীরের বহির্ভাগে।
- তুলনামূলক বেশী দূরত্বের পথ তুলনামূলক কম শক্তি ও সময় খরচের মাধ্যমে পার হওয়া সহজ হলো চার হাত পা এর বদলে দুই পায়ে হাঁটার ফলে।
আর এই সুবিধাগুলো Hominin দের অন্য সব প্রজাতির উপর শ্রেষ্ঠত্ব বিস্তারে অভুতপূর্ব সাহায্যকর বলে পরিগণিত হলো অদূর ভবিষ্যতে।
Ardipithecus রা প্রথমদিকে পুরোপুরি আমাদের পূর্বপুরুষের বৈশিষ্ট্য অর্জন করেনি,এর মানে হল Ardipithecus দের দুই পায়ে হাঁটার বৈশিষ্ট্য(Bipedality) যেমন ছিল আবার Arboreality অর্থাৎ গাছে চড়ে ফল খাবার বৈশিষ্ঠ্যও ছিল। এদের মানুষদের মত না ছিল দুই পায়ে ভর করে হাঁটার ক্ষেত্রেও খুব বেশী দক্ষতা,না ছিল বেশী এপদের মত গাছে উঠে উঠে ফল খাবার দক্ষতা,দুটোই মাঝারি পরিমাণে ছিল।সেখান থেকে প্রায় ১২ লক্ষ বছর ধরে বিবর্তিত হতে হতে তারা এই সম্পূর্ণ Bipedalism এর পর্যায়ে আসল।অর্থাৎ একটা আপাতদৃষ্টিতে ছোট পরিবর্তন হতেই সময় লেগেছিল ১২ লক্ষ বছর।
এর আগে দেখেছি লেজ বিলুপ্ত হতে সময় লেগেছে প্রায় ৫০ লক্ষ বছর! অর্থাৎ প্রতি ১ প্রজন্মে পরিবর্তন এতই অনু-পরমাণু আকৃতির হয় যে আমরা তা খালি চোখে কখনোই বুঝতে পারবনা যে আমাদের চোখের সামনেই ঘটে চলেছে বিবর্তন! Hominin দের দুই পায়ে হাঁটতে শিখিয়েছে জীবনের প্রয়োজন, খাদ্যের প্রয়োজন।বেঁচে থাকার স্পৃহা তাকে তার চিরাচরিত অভ্যেস থেকে বের করে নিয়ে এসে দুই পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে বাধ্য করেছে।আগামী পর্বে আমরা দেখব কীভাবে Ardipithecus থেকে Australopethicus হয়ে Homo Erectus ও আমাদের পরম পরিচিত Homo Sapiens এর উদ্ভব হলো।
বাতেবাজুর্যা নদ্যেব রীতিরক্ষী ইব চক্ষুষা যাতমর্বাক।
হস্তাবিব তন্বে শাম্ভবিষ্ঠা পাদেব নো নয়তং বস্যো অচ্ছ।।
(ঋগ্বেদ ২.৩৯.৫)
চিরতরুণ প্রাচীন সে বায়ুধারা বয়ে যায়,সতত সে নদীধারা স্রোতময়,এই উন্মীলিত চক্ষুদ্বয় তা অবলোকন করে চলেছে সর্বদা,এই হস্তদ্বয় সম্মুখে এসে আমাদের সুরক্ষা হোক,এই পদদ্বয় সম্মুখে গিয়ে আমাদের সম্মুখযাত্রা হোক।
এভাবেই যতকাল ধরে বায়ু বহমান,যতকাল ধরে জলধারা স্রোতময়,ততকাল ধরে চিরন্তন মানুষ ও তার পূর্বপুরুষরা,সকল প্রজাতিরা সংগ্রাম করেছে নিজ বাহুবলে,পদযোগে টিকে থাকার সম্মুখযুদ্ধে।এতদিন তো আমরা ছিলাম গন্তব্যের অনেক দূরে,এখন চলে এসেছি অতি নিকটে! আগামী পর্বেই আমরা পেয়ে যাব Hominin হতে আধুনিক মানুষ Homo Sapiens কী করে হলো আর সেই থেকে দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে পবিত্র বেদ পর্যন্ত আমরা কী করে এলাম।ততদিন পর্যন্ত বিদায়!
লেখটি উৎসহ এখানে
বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম
বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম
বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম
বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম
বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম
বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম বিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্মবিবর্তনবাদ ও সনাতন ধর্ম।