বুধবার ● ১২ এপ্রিল ২০২৩
প্রথম পাতা » ব্যবসা-বাণিজ্য » চৈত্র সংক্রান্তি মেলা ও বৈশাখী উৎসব উপলক্ষে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা
চৈত্র সংক্রান্তি মেলা ও বৈশাখী উৎসব উপলক্ষে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা
চৈত্র সংক্রান্তির মেলা ও বৈশাখকে কেন্দ্র করে পাইকগাছার মৃৎশিল্পীরা রং তুলিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাঙালীর প্রানের উৎসব পহেলা বৈশাখ। আর মাত্র এক দিন পরেই পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে মৃৎশিল্পীদের মধ্যে। মৃৎশিল্পীদের দম ফেলার ফুসরত নেই। হরেক রকমের মাটির বিভিন্ন রকম খেলনা পুড়ানো শেষ করে এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন রঙের আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলতে। চৈত্র সংক্রান্তির মেলা ও পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে মৃৎশিল্পীদের কয়েকগুণ কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়।
চৈত্র সংক্রান্তি বা চৈত্র মাসের শেষদিন। বাংলা মাসের সর্বশেষ দিনটিকে সংক্রান্তির দিন বলা হয়। একসময় বাংলায় প্রতিটি ঋতুরই সংক্রান্তির দিনটি উৎসবের আমেজে পালন করতো বাঙালি। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে সে উৎসব। চৈত্রের শেষ আর বৈশাখের শুরু। বাঙালির সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব পালিত হয় এই দুই দিনে। তবে দুয়ের মধ্যে উৎসবের তালিকায় চৈত্র সংক্রান্তির পাল্লা ভারী। বাংলা বর্ষের সর্বাধিক উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে চৈত্র সংক্রান্তির দিনটি।
সারা বছর তেমন আয় না হলেও বৈশাখী মেলায় মাটির তৈজসপত্র বিক্রি করে আয়ের মুখ দেখেন মৃৎশিল্পীরা। মৃৎশিল্পীদের ঐতিহ্য যে একে বারে ফুরিয়ে যায়নি তা চৈত্র মাসের শেষ দিন পর্যন্ত থাকতে বুঝা যায়। এই মাসে মৃৎশিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করেন।বিভিন্ন তৈজসপত্র ও শিশুদের খেলনা তৈরি করেন।মৃৎশিল্পীদের হাতের কারুকাজ তৈজসপত্র গ্রামীণ মেলাতে মুগ্ধতা ছড়ায়। যা ছোট বড় সব বয়সীদেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
পাইকগাছার বোয়ালিয়া পাল পাড়ায় প্রায় ১৫টি পরিবার মৃৎশিল্পের কাজ করেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,বাড়ির উঠান জুড়ে মাটির জিনিস পত্র। ভোর থেকে শুরু করে মধ্যে রাত পর্যন্ত চলছে তাদের এ ব্যস্ততা। নারী-পুরুষ সকলে মিলে বিভিন্ন রকমের শিশুদের খেলনা রং করেছেন। হাড়ি-পাতিল,মশার কয়েলদানি, সানকি, কলসি, ফুলের টপ থেকে শুরু করে শিশুদের খেলনা পুতুল, হাতি, ঘোড়া, ময়ূরপাখি, নৌকা,পাতিল, জগ, কলসি, চুলা বিভিন্ন খেলনা রং করতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। মৃৎশিল্পী তারক পাল বলেন, প্লাস্টিকের জন্য মাটির খেলনা আগের মতো বিক্রি হয় না। কিন্তু গদাইপুর মাঠে চৈত্র সংক্রান্তির মেলা ও পহেলা বৈশাখের গ্রামীণ মেলাতে মাটির বিভিন্ন তৈজসপত্র ও ছোটদের খেলনা চাহিদা প্রচুর। বেঁচাকেনা ভালো হয়। চৈত্র মাসের পুরো সময়টাতে কুমার পাড়ায় ব্যস্ত থাকে। একদিন পর পহেলা বৈশাখ। ছোটদের খেলনা রং করছি এই খেলনা মেলাতে বিক্রি করবো। মেলাকে কেন্দ্র করে প্রায এক শতটি খেলনা বানিয়েছি। মেলার আগে রংয়ের কাজ শেষ হয়ে যাবে।
মৃৎশিল্পী সাধনা রানী পাল বলেন, চৈত্র মাসের শুরু থেকে ১০ রকমের খেলনা তৈরি করেছি। পুতুল হাড়ি,পাতিল,চুলা,পাটা,পাখি,ঘোড়া বিভিন্ন মাটির তৈরি তৈজসপত্র ও খেলনা কাজ শেষ করে এখন রং করছি। আমি আর আমার স্বামী মিলেই খেলনা তৈরি করেছি। ভোর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত খেলনা রং করার কাজ করতে হচ্ছে। প্লাস্টিকের জিনিস বের হওয়াতে মাটির জিনিসের কদর কমে গেছে। শুধু গ্রামীণ মেলায় মাটির জিনিসের কদর থাকে। চৈত্র সংক্রান্তির মেলা ও পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ৫০০ খেলনা তৈরি করেছি। ছোটদের খেলনা রং করতে ব্যস্ত হয়ে পরেছি। প্রতিটি ছোটদের খেলনা ১০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে।
মৃৎশিল্পী রামপদ পাল বলেন, আগের মতো মাটির জিনিস আর বিক্রি হয় না।তবে মাটির কিছু কিছু তৈজসপত্রের চাহিদা রয়েছে। আগে মাটির জিনিসের তৈজসপত্রের ভালোই চলতো,ভালো দাম পেতাম। এখন আর আগের মতো দাম পাই না।প্লাস্টিকের জিনিস বের হয়েছে তাই মাটির জিনিস চলে না। মেলায় মাটির জিনিসের কদর থাকে, ভালোই বিক্রি করা যায়। চৈত্র সংক্রান্তির মেলা ও পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ছোটদের খেলনা তৈরি করেছি। সেই খেলনা পুড়ানো শেষ করে রং তুলিতে ফুটিয়ে তুলছি। চৈত্র মাসে কুমাররা ব্যস্ত সময় পার করে।বলতে গেলে সারা বছরের কাজ এই মাসে করে থাকি। গ্রামীণ মেলার জন্য টিয়া, ময়ূরপাখি, হাতি, ঘোড়া পুরানো শেষ করে রং করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছি। প্রায় তিন শতটি ছোটদের খেলনা তৈরি করেছি। প্রত্যেকটি খেলনা ২৫-৪০ টাকা দরে মেলায় বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন।
চৈত্র এলেই মনটা কেমন যেন হয়৷ মনে পড়ে সেইসব ধূলিধুসর, রৌদ্রমাখা দিনগুলোর কথা৷ চারদিকে কেমন উৎসবের আমেজ৷ সব বয়সি মানুষ অপেক্ষা করে মেলার জন্য৷ মেলা আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটা অংশ। মেলাকেন্দ্রিক কিছু সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠান গড়ে উঠেছে৷ এগুলো আমাদের বিনোদনধারাকে উর্বর করেছে৷