শুক্রবার ● ১৯ মে ২০২৩
প্রথম পাতা » ইতিহাস ও ঐতিহ্য » মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক পাইকগাছার মধুমিতা পার্কটির অবৈধ স্হাপনা উচ্ছেদ করে পূর্বাস্হায় ফেরানোর নির্দেশ
মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক পাইকগাছার মধুমিতা পার্কটির অবৈধ স্হাপনা উচ্ছেদ করে পূর্বাস্হায় ফেরানোর নির্দেশ
খুলনা জেলা পরিষদের মালিকানাধীন পাইকগাছা পৌরসভার মধুমিতা পার্কের তফশীল জমি থেকে ১৮মে’২৩ এর মধ্যে সকল প্রকার অবৈধ স্হাপনা অপসারন করার জন্য জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম,এম মাহমুদুর রহমান(উপ-সচিব) স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানা যায়, উক্ত বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রীট মামলা নং ৩৫৯০/২০০৫ ও কন্টেম পিটিশন নং ১০২/২২ এবং জেলা প্রশাসক খুলনার ১১মে’২৩ মোতাবেক গত ১৫মে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা প্রতিপালনার্থে পার্কের অবৈধ স্হাপনা উচ্ছেদ করে উক্ত জায়গা খালি করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। অন্যথায় আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবৈধ স্হাপনা উচ্ছেদ করা হবে বলে উল্লেখ করেছেন। পত্রটি পাইকগাছা পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর কে প্রদান করা হয়েছে যার অনুলিপি জ্ঞাতার্থে ও কার্যার্থে প্রেরন করেছেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার,জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পরিচালক স্হানীয় সরকার খুলনা,জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার খুলনা,ডেপুটি এর্টনী জেনারেল হাইকোর্ট ঢাকা,উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাইকগাছা,এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট খুলনা ও অফিসার ইনচার্জ পাইকগাছা থানাকে। উল্লেখ্য যে,খুলনার পাইকগাছা পৌরসভার প্রানকেন্দ্রে অবস্হিত মধুমিতা পার্ক। যা জনৈক মাদার মন্ডল তার স্বত্ব দখলীয় বাতিখালি মৌজার সাবেক ৯১ খতিয়ানের ১৭১,১৭২ দাগের ১.০৭ একর জমি ভারত সরকারের নামে দান করেন। দানীয় জমিতে পুকুর খননের মাধ্যমে এলাকার মানুষের মিষ্টি পানির অভাব দূর হতে থাকে।ঐ পুকুরের পানি মিষ্টি হওয়ায় এলাকার লোকজন পুকুরটির নাম দেন মিষ্টি পুকুর। এরপর ১৯৮০ সালে তৎকালিন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মিষ্টি পানির পুকুরটির সংরক্ষনের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মান করেন। পরবর্তীতে খুলনার জেলা প্রশাসক নূরুল ইসলাম পুকুরটির প্রাচীরের মধ্যে চলাচলের জন্য চারিপাশে রাস্তা নির্মান, লোকজনের বসার জন্য পাকা বেঞ্চ, পাকা ঘাট সহ চারিপাশে বিভিন্ন ফল ও ফুলের গাছ রোপনের মাধ্যমে মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করেন। এরপর স্হানটির নাম হয় মধুমিতা পার্ক। যা উদ্বোধন করেন তৎকালিন খুলনার জেলা প্রশাসক নূরুল ইসলাম। ঐ সময় থেকে পৌরবাসির একমাত্র চিত্তবিনোদন কেন্দ্র হয় মধুমিতা পার্ক এবং পার্কের অভ্যান্তরে থাকা মিষ্টি পানির পুকুরটি পৌরবাসির মিষ্টি পানির অভাব দূরীকরনের একমাত্র আধার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।এ অবস্হায় মধুমিতা পার্ক ও মিষ্টি পুকুরের উপর কু-নজর পড়ে একশ্রেনির প্রভাবশালী, ভূমিখেকো,রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ীদের।তারা খুলনা জেলা পরিষদের অসৎ কর্মচারীদের সাথে যোগাযোগে করে পার্কের প্রাচীর ও রাস্তা ভেঙ্গে পাকা দোকানঘর নির্মান করে। তখন পৌরসভায় সচেতন মহল মধুমিতা পার্ক সংরক্ষন কমিটি গঠন করে প্রতিবাদ সভা,মানববন্ধন সহ সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে পার্কটি সংরক্ষনের জন্য আবেদন-নিবেদন করতে থাকেন। ব্যর্থ হয়ে সহাকারি জর্জ আদালত পাইকগাছায় অবৈধ বন্দোবস্ত ও দখলকারিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে একটি মামলা করেন ও নিষেধাজ্ঞা পান।অপরদিকে পাইকগাছার অবৈধ দখলকাররা তা অমান্য করে দোকানঘর নির্মান করে ব্যবসা করতে থাকেন। পরবর্তীতে পার্ক সংরক্ষন কমিটি তৎকালিন জাতীয় সংসদের স্পীকারের সরানাপন্ন হন এবং তার পরামর্শে বিগত ২০০৫ সালে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। যার নং- ৩৫৯০/০৫।মহামান্য হাইকোর্ট মামলাটির শুনানি অন্তে বিগত ২০০৫সালের ২৪মে মধুমিতা পার্কের অভ্যান্তরে অবৈধ নির্মান কাজ বন্ধ করার আদেশ দেন। দীর্ঘদিনেও সরকারি কর্মকর্তা এবং অবৈধ দখলদাররা মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে অবৈধ স্হাপনা রেখে কেউ কেউ নিজে দোকান দিয়ে ব্যবসা করেছেন। আবার কেউ কেউ অগ্রিম মোটা অংকের টাকা ভাড়া নিয়ে দোকানঘর ভাড়া দিয়ে তাদের অবৈধ স্হাপনা সহ দখল বজায় রেখেছেন। যা মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের অবমাননা ও গুরুতর অপরাধ। উক্ত বিষয় উল্লেখ করে মধুমিতা পার্ক সংরক্ষন কমিটি মহামান্য হাইকোর্ট কোর্ট অব কন্টেম পিটিশন দাখিল করেন। যার নং ১০২/২২। উক্ত পিটিশন কয়েক দফায় সুনানি অন্তে গত ১৩ মার্চ’২৩ মহামান্য হাইকোর্ট মামলার বিবাদিদের কে আগামী ২০দিনের মধ্যে মধুমিতা পার্কের সকল অবৈধ স্হাপনা উচ্ছেদ করে মধুমিতা পার্কটিকে পূর্বের অবস্হায় ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দেন।