শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
রবিবার ● ১৮ জুন ২০২৩
প্রথম পাতা » মুক্তমত » যোগ সারায় রোগ
প্রথম পাতা » মুক্তমত » যোগ সারায় রোগ
২৫০ বার পঠিত
রবিবার ● ১৮ জুন ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

যোগ সারায় রোগ

প্রকাশ ঘোষ বিধান =---

যোগ সারায় রোগ । এই প্রবাদটি বহু শতাব্দী প্রাচীন। যোগ এক অমূল্য সম্পদ।নিয়মিত যোগ শরীরের নানাবিধ উপকার করে। শরীরের নমনীয়তা বাড়ায়, পেশির শক্তি বৃদ্ধি করে, শরীরের শ্বাসযন্ত্রকে সুস্থ রাখে, শরীরে বাড়তি এনার্জি ও শক্তি দেয়। মনে করা হয়, হাজার হাজার বছর আগে ভারতেই এই যোগের উৎপত্তি হয়েছিল। ঋগ্বেদে বা বিভিন্ন পুরাণে যোগের উল্লেখও আছে।

প্রতি বছর ২১ জুন পালিত হয় বিশ্ব যোগ দিবস। বিভিন্ন দেশে পালন করা হয় যোগ শিবির। সনাতনী ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত যোগ। বিভিন্ন রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার উপায় হিসেবে বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত। পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ ও সতেজ থাকারও উপায় যোগ।

যোগা হল প্রাচীন ভারতে উদ্ভূত শারীরিক ও মানসিক ব্যায়াম এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলন প্রথা। এর মধ্যে দিয়ে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় থাকে। ভারতে আজও এই প্রথা প্রচলিত আছে। ভারতের বাইরে যোগা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের ঋষিগণ  নিয়মিত যোগব্যায়াম করতেন এবং সুস্থ ভাবে দীর্ঘ জীবনযাপন করতেন।  যোগব্যায়াম আমাদের মন এবং শরীরের পাশাপাশি আমাদের দেহেকেও  সুস্থ  রাখে।  আজকের ব্যস্ত জীবনে, শরীর সুস্থ ও শক্তিশালী রাখতে যোগব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  যোগের গুরুত্ব কেবল আমদের দেশই নয়, গোটা বিশ্বজুড়েও আজ স্বীকৃত।  সে কারণেই গোটা বিশ্ব ২১ শে জুন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসাবে পালন করে।

২০১৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রসঙ্ঘে বক্তৃতা দানকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রথম এই যোগ দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। ওই বছরেই ডিসেম্বরে রাষ্ট্রসঙ্ঘ ঘোষণা করে ২১ জুন দিনটি প্রত্যেক বছরই আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে পালন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিশেষ প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক যোগ দিবস শুরু হয়েছিল।  আন্তর্জাতিক যোগ দিবস ২১ শে জুন ২০১৫ প্রথমবারের মতো উদযাপিত হয়েছিল, যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দ্বারা   ২৭ শে সেপ্টেম্বর ২০১৪-তে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন উত্থাপন  করেছিলেন।  প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই রেজুলেশন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হয়েছিল।  জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদযাপনের প্রস্তাব ১৭৭টি  সদস্য দেশ সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন দিয়েছিল ।  প্রধানমন্ত্রী মোদী, ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪-তে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ভাষণে বলেছিলেন, যোগ ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্যের এক অমূল্য উপহার ।এটি মন এবং দেহের একতার প্রতীক। এটি মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে একটি যোগসূত্র । যোগ আমাদের চিন্তা, সংযম এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্য একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে । যোগব্যায়াম কেবল একটি শারীরিক অনুশীলনই নয়, এটি আমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ঐক্যের অনুভূতিতে, বিশ্ব ও প্রকৃতির আবিষ্কারেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে ।

প্রথম আন্তর্জাতিক যোগ দিবসটি ২১ শে জুন, ২০১৫ বিশ্বজুড়ে পালিত হয়েছিল।  লক্ষ লক্ষ মানুষ এই দিনটিতে যোগব্যায়াম করেছিলেন, যা একটি রেকর্ড ছিল। প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষ  এবং ৮৪ টি দেশের প্রতিনিধিরা দিল্লির রাজপথে ২১ টি আসন  করেছিলেন।  নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ একসাথে যোগব্যায়াম করেছিলেন।  এই বিশেষ আনুষ্ঠান  দুটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্থাপন করেছিল। প্রথম রেকর্ড ৩৫,৯৮৫ জন যোগব্যায়াম করছে।এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন ৮৪ টি দেশের মনুষ।

২১ শে জুন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালনের পিছনে একটি বড় কারণ রয়েছে।  ভারতীয় সংস্কৃতি অনুসারে গ্রীষ্মের অবিচ্ছিন্নতার পরে সূর্য দক্ষিণায়ণে যায়। ২১শে জুন বছরের দীর্ঘতম দিন হিসাবে বিবেচনা করা হয়।  এই দিনে সূর্য খুব তাড়াতাড়ি উঠে এবং দেরি করে অস্ত যায়।  যোগও একজন ব্যক্তিকে দীর্ঘজীবন দেয়।  কথিত আছে যে সূর্যের দক্ষিণায়নের সময় আধ্যাত্মিক কৃতিত্ব অর্জনে খুব উপকারী।  এই কারণে, ২১শে  জুন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস  হিসাবে পালিত হয়।

যোগ শব্দটি সংস্কৃত থেকে এসেছে। যার অর্থ হল যোগ দেওয়া বা একত্রিত হওয়া। যোগ শব্দটি সংস্কৃত শব্দ যুজ থেকে এসেছে, যার অর্থ হল যুক্ত করা, ঐক্যবদ্ধ করা, সংযোগ । দেহ, মন, আত্মা - এই তিনের সমন্বয় ঘটিয়ে সাধনা করাই মূল যোগের উদ্দেশ্য। হিন্দুধর্মে এটি হিন্দু দর্শনের ছয়টি প্রাচীনতম  শাখার অন্যতম। হিন্দু দর্শনে যোগের প্রধান শাখাগুলি হল রাজযোগ, কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ, ভক্তিযোগ ও হঠযোগ।

যোগ হল ভারতে সৃষ্টি এক প্রাচীন তপস্বী অনুশীলন পদ্ধতি যাহা আমাদের শরীর এবং মনের শান্তি সুখ অর্জনের জন্য শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক সাধনাকে একত্রিত করে এগিয়ে নিয়ে চলে।  যোগ-ব্যায়াম হল দেহ এবং চেতনার মিলন। প্রতিদিনের জীবনে ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপন বজায় রাখতে সাহায্য করে। যোগাভ্যাসের ফলে দৈনন্দিন জীবনে ভারসাম্য বজায় থাকে এবং নিজের কাজের দক্ষতা বাড়ে। পাশাপাশি যে কোনও কাজে একাগ্রতাও বাড়ে। নিয়মিত যোগ অনুশীলন করার অনেক ধরণের সুবিধা রয়েছে। নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করলে মন ভালো ও শরীর সুস্থ থাকে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)