শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
সোমবার ● ১৯ জুন ২০২৩
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বিশ্ব সঙ্গীত দিবস
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বিশ্ব সঙ্গীত দিবস
২৯৯ বার পঠিত
সোমবার ● ১৯ জুন ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বিশ্ব সঙ্গীত দিবস

প্রকাশ ঘোষ বিধান  ---

২১ জুন  বিশ্ব সঙ্গীত দিবস৷ ফরাসী ভাষায় ফেট ডে লা মিউজিক-আর বাংলায় বিশ্ব সঙ্গীত দিবস । বহু বছর ধরেই এই দিনে ঐতিহ্যবাহী মিউজিক ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করছে ফ্রান্স। এভাবে, ১৯৮২ সালে এসে এ ফেস্টিভ্যাল ‘ওয়ার্ল্ড মিউজিক ডে -তে রূপ নেয়।  গান হতে হবে মুক্ত; সংশয়হীন- এই স্লোগানকে সামনে রেখেই বিশ্বের ১১০টি দেশ যোগ দেয় এই আন্দোলনে। ১৯ বছরের পথপরিক্রমায় আন্তর্জাতিক মাত্রা পায় এটি। আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, স্থানীয়ভাবে অথবা ফরাসি দূতাবাসের সহায়তায় জুনের ২১ তারিখে পালন করা হয় ওয়ার্ল্ড মিউজিক ডে। ১৯৮২ সালে ফরাসি মন্ত্রী জ্যাক ল্যাং সর্বপ্রথম বিশ্ব সঙ্গীত দিবস পালনের প্রস্তাব করেন। ১৯৮৫ সালের ২১ জুন প্রথম গোটা ইউরোপ এবং পরে সারা বিশ্ব এই সঙ্গীত দিবস পালন করে। এরপর থেকে দিনটি বিশ্ব সঙ্গীত দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আর প্রথম থেকেই আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দিবসটি পালন করে আসছে।

সঙ্গীত দিবসের শুরুটা হয়েছিল আশির দশকে। ১৯৭৬ সালে ফ্রান্সের একটি রেডিও স্টেশনে কর্মরত আমেরিকান সঙ্গীতজ্ঞ জোয়েল কোয়েন প্রথম সত্তরের দশকে ফরাসি সরকারের কাছে দিনব্যাপী বিশ্ব সঙ্গীত দিবস পালনের প্রস্তাব করেন। ফ্রান্সের সংস্কৃতিমন্ত্রী জ্যাক ল্যাং ১৯৮১ সালে ভাবতে শুরু করেন বিষয়টি নিয়ে। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসি সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের একটি সমীক্ষায় দেখতে পায় যে, সে দেশের কমপক্ষে দু’টি সন্তানের মধ্যে একজন কোনো না কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারদর্শী। এই বিষয়টি চমকে দেয় তখনকার সংস্কৃতিমন্ত্রী জ্যাক ল্যাংকে। ১৯৮২ সালে ফ্রান্সে ফেত দ্য লা মিউজিক বা মেক মিউজিক ডে নামে  দিনের উদ্যাপন শুরু করা হয়। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জুন প্রথম সমগ্র ইউরোপ এবং পরবর্তীকালে সারা বিশ্বে সঙ্গীত দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়। তবে প্রথম থেকেই আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দিবসটি পালন করে আসছে। ২১ জুন উত্তর গোলার্ধের সব থেকে বড় দিন হওয়ায় দিনটিকে সঙ্গীত দিবস হিসেবে পালন করার জন্য বেছে নেয়া হয়।

সারা বিশ্বেই নানা ভাষায় সমান তালেই চলছে সংগীতের চর্চা। বিশ্বের সকল সংগীত প্রেমীদের জন্যই বিশেষ একটি দিন  সংগীত দিবস। বহু বছর ধরেই এই দিনে ঐতিহ্যবাহী মিউজিক ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করছে ফ্রান্স। বিশ্ব সঙ্গীত দিবস উপলক্ষে প্রতি বছরই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদসহ সঙ্গীতের বিভিন্ন সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় বর্ণিল আয়োজনে দিবসটি পালন করে।

বাংলা লোকসংস্কৃতির সবচেয়ে সমৃদ্ধ বাংলা সঙ্গীত পার করেছে হাজার বছর। বাংলা সঙ্গীত আবহমানকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সঙ্গীতের সুর ও তাল, বাদ্যযন্ত্রের প্রয়োগ, সঙ্গীতের সার্বজনীনতা ও আধ্যাত্মবাদসহ আরো নানামুখী সঙ্গীতসংক্রান্ত বিষয় মানুষের কাছে প্রবল আকর্ষণীয় হয়ে বিচরণ করেছে। সময়ের  সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্ব সঙ্গীতের জগতে বাংলা গান এক বিশেষ স্থানে আসীন হয়েছে। বিশেষ করে বাংলা সঙ্গীতের মৌলিক ধারাগুলো পৃথিবীর নানা প্রান্তে সমাদৃত হয়ে চর্চিত হচ্ছে। হাজার বছরের পুরোনো বাংলা সঙ্গীত আজ স্থানীয় চর্চার গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সোচ্চার হয়ে পথ চলছে।

প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় শাস্ত্র ও ধর্মীয় সঙ্গীতকে আশ্রয় করে বাংলা সঙ্গীত আজ প্রসারিত হচ্ছে।জারি, সারি, বাউলগান, রবীন্দ্র বা নজরুলগীতি বাংলা সঙ্গীতকে  সমৃদ্ধ করে তুলেছে। আধুনিক গানের ব্যাপক চর্চা সেই সঙ্গীতের ধারাকে অব্যাহত রেখেছে। বৈচিত্র্যময় সুরের ধারার সঙ্গীত এগিয়ে চলেছে বিশ্বচরাচরে।

সঙ্গীত দ্বারা গীত, বাদ্য, নৃত্য এই তিনটি বিষয়ের সমাবেশকে উল্লেখ করা হয়। গীত এক ধরনের শ্রবণযোগ্য কলা যা সুসংবদ্ধ শব্দ ও নৈশব্দের সমন্বয়ে মানব চিত্তে বিনোদন সৃষ্টি করতে সক্ষম। স্বর ও ধ্বনির সমন্বয়ে গীতের সৃষ্টি। এই ধ্বনি হতে পারে মানুষের কণ্ঠ নিঃসৃত ধ্বনি, হতে পারে যন্ত্রোৎপাদিত শব্দ অথবা উভয়ের সংমিশ্রণ। সুর, তাল, ছন্দ সব এক সুতোয় মিলে তৈরি হয় একটি গান। তার কত রকমভেদ, কত বৈশিষ্ট্য। মন খারাপ কিংবা ভাল যে কোনও আবেগ নিমেষে পরিবর্তন করার ক্ষমতা শুধু সঙ্গীতের আছে।গান আত্নার শান্তি যোগায়। সুর-সঙ্গীত কার না ভালো লাগে। শুধু মানুষ নয়, সকল প্রাণী তথা জীবজগৎ কোনো না কোনোভাবে প্রতিনিয়ত সঙ্গীতের আরাধনা করে। আমরা জন্মের পর থেকেই যেকোনো সুরের স্রোতে অবগাহন করি। যা আমাদের মনকে প্রশান্তি দেয়, উদ্যোমতায় আকৃষ্ট করে।

সংগীতের  নিজস্বতা আর স্বকীয়তা এতটাই প্রবল যে সেটা কোনো বিশেষ ভাষার কাছেও সীমাবদ্ধ হয়ে থাকেনি।  কোনো  কিছু দিয়ে সঙ্গীতকে আড়াল করা যায় না। তাই বিদেশের সঙ্গীতজ্ঞ বব ডিলান কিংবা জিম মরিসনের সঙ্গীত যেমন এদেশের মানুষের মন ছুঁয়েছে, তেমনি আমাদের লালনের গানও পৌঁছে গেছে বিশ্বের দরবারে। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় শাস্ত্র ও ধর্মীয় সঙ্গীতকে আশ্রয় করে বাংলা সঙ্গীত প্রসারিত হচ্ছে। সংগীতের হাত ধরে মনের মেলবন্ধন ঘটে ।

সংগীত মানুষের নিত্যদিনের সংগী। সে আনন্দের সময় হোক কিংবা মন খারাপের সময়ই হোক সংগীত মানুষের মনে নাড়া দেয়। দৈনন্দিন জীবনের একঘেঁয়েমি কাটাতে গানের চেয়ে ভালো দাওয়াই আর নেই। সংগীতের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে চিকিৎসাও করা হয় এখন। আর সে জন্য বিশেষজ্ঞরাও এই মিউজিক থেরাপিকে মান্যতা দিয়েছেন। মানসিক চাপ, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা কমাতে গান দারুণ উপকারী। গান শুনলে ঘুমও ভালো হয়। মানসিক রোগ সারানোর জন্য চিকিৎসকেরা গানের সাহায্য নেন। অনেক সময় এমন হয় যে কোনও গান পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। গান সব সময়ই ভালো বন্ধুর মতো পাশে থাকতে পারে। গান  বাচ্চাদের স্মৃতিশক্তিও শক্ত করে, মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। সংগীতপ্রেমীদের কাছে অবশ্য গানের জন্য আলাদা কোন দিন বা সময় নেই। তবে গানের জন্য  বিশেষ ভাবে উদযাপনের জন্য নির্দিষ্ট একটি দিন হলো এই বিশ্ব সংগীত দিবস ৷গান সবাই গায় তা সুরে হোক বা বেসুরে হোক।চলতে চলতে গুন গুন করে কে না গান গায় ।

বিশ্ব সংগীত দিবস আমাদের আরও এক বার মনে করায়, সুরের দুনিয়ায় কোনও বৈষম্য নেই। সঙ্গীতই সবার আগে দেশ-কালের গণ্ডি পেরোয়। তাই তো লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের আগেই সেখানকার সঙ্গীত আমাদের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। যে সঙ্গীত মানুষকে স্পর্শ করে, যে সুর কানে গেলে ভুলে যাই ভৌগোলিক সীমানার কথা, সেই সঙ্গীতই বিশ্ব সঙ্গীত। তাই একই সঙ্গে ঘুরে ফেরে কীর্তন আর সুফির সুর। পাশ্চাত্য সঙ্গীতের গণ্ডি পেরিয়ে ভারতীয় শাস্ত্রীয় এবং দক্ষিণ আমেরিকান সঙ্গীত অথবা অন্য কোনও সঙ্গীতের মেলবন্ধনে লোকসঙ্গীত, পপ, জ্যাজ সব কিছুকে এক সাথে সাজিয়ে পরিবেশন করার স্বাধীনতা  দেয় এই দিনটি  ।

লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)