বৃহস্পতিবার ● ২২ জুন ২০২৩
প্রথম পাতা » অপরাধ » পাইকগাছার চাঁদখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও মহিলা সদস্যের বিভিন্ন দপ্তরে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ
পাইকগাছার চাঁদখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও মহিলা সদস্যের বিভিন্ন দপ্তরে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ
পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলে তাদের দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা ও ইউপি সদস্যদের লাঞ্ছিত করা সহ সরকারি মালামাল টাকার বিনিময়ে বণ্টনের অভিযোগ এনে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন সংরক্ষিত (৪, ৫, ৬নং ওয়ার্ডের) নারী সদস্য ফাতিমা তুজ জোহুরা (রুপা)। অপরদিকে, ওই মহিলা সদস্যের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার পাল্টা অভিযোগ এনে ইউএনও দপ্তরে অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান। পাল্টা-পাল্টি এই অভিযোগের ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং এ ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বস্তরে মানুষের মধ্যে চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। গত ১৪ জুন বুধবার সংরক্ষিত ইউপি সদস্য ফাতিমা তুজ জোহুরা (রুপা) স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ পত্র প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে দাখিল করেছেন। লিখিত অভিযোগে ওই সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য উল্লেখ করেন- ‘ইউপি চেয়ারম্যান শাহাজাদা মো. আবু ইলিয়াস আমেরিকা প্রবাসী। বেশির ভাগ সময় ছুটি নিয়ে বিদেশে থাকেন। তিনি নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন এবং নৌকা প্রতীক পোড়ানো মামলার চার্জশীটভুক্ত এক নম্বর আসামি। যার নং- জিআর ২৫০/২১। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নানা অনিয়ম, অনাচার ও স্বেচ্ছাচারিতা করে আসছেন। তিনি ওয়ার্ড সদস্যদের মূল্যায়ন না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। পরিষদের নির্ধারিত বাজেটের চিঠিপত্র দেখান না। প্রতি মাসে মাসিক মিটিং করার কথা থাকলেও তিনি তা না করে ৩-৪ মাস পরে হঠাৎ করে সদস্যদের ডেকে মাসিক সভা করে সদস্যদের কাছ থেকে স্বাক্ষর করে নেন। এতে কখন কি পরিমাণ বরাদ্দ আসে তা সদস্যদের জানানো হয় না।’ অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯ এর নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পরিষদের সদস্যদের মধ্যে তার মনোনীত ৭নং ও ৯নং ইউপি সদস্য আর ইউপি সচিবকে সম্পৃক্ত করে নিজের ইচ্ছামাফিক বিভিন্ন কার্যক্রম করে থাকেন। প্রায় ২ বছর ধরে চেয়ারম্যান শাহাজাদা আবু ইলিয়াস স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯ এর ৪৭ এর উপধারা (৩) নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন টিআর, কাবিখা ও থোক সহ অন্য সব প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ বণ্টন এবং পরিষদের সিংহভাগ কাজ একক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়ন করে আসছেন। ইউপি সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা না করে ইচ্ছামতো প্রকল্পের অর্থ বণ্টন করেন।’ এ ছাড়া স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯ অনুযায়ী সংরক্ষিত ইউপি সদস্য হিসেবে রেশিও অনুযায়ী ভাগের স্লীপের মাল, রেশন কার্ড, গর্ভকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, ভিজিডি কার্ড, ভিজিএফ কার্ড সহ অন্য সরকারি সব বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত করে চেয়ারম্যানের গড়ে তোলা নিজস্ব বাহিনী ও একান্ত লোকদের দেওয়ার কারণে প্রকৃত দাবিদাররা বঞ্চিত হচ্ছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চেয়ারম্যান, ৭ ও ৯ নং ইউপি সদস্য আর সচিবকে দিয়ে অফিস মেইনটেইন করেন এবং রেশন কার্ড, ভিজিডি কার্ড, ভিজিএফ কার্ড, গর্ভকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা ও পানির ট্যাংকির জন্য টাকা নেন। টাকার বিনিময়ে সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে একই ব্যক্তিকে বারবার সরকারি সুবিধা দেওয়া সহ ইতিপূর্বে কোনো ইউপি সদস্যকে না জানিয়ে চেয়ারম্যানের মনমতো করা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকা, টিসিবি বিতরণে চেয়ারম্যানের সাঙ্গপাঙ্গের খবরদারির নানা অনিয়মের প্রতিবাদ করায় চেয়ারম্যান তার গঠিত বাহিনী দিয়ে প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে ১,২, ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্যকে লাঞ্ছিত করে এবং চাঁদখালী বাজারে প্রকাশ্যে ৬নং ইউপি সদস্যকে মারধর করে জখম করে। এ ঘটনায় পাইকগাছা থানায় পৃথক জিডি ও মামলা হয় (জিডি নং-৭২০, তাং-১৫/১১/২২; মামলা নং-১৮, তাং- ১৮/১১/২২)। অপরদিকে, গত ২০ মে ওই সংরক্ষিত নারী সদস্যের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিশেষ সুবিধা না পাওয়ায় পরিষদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারের অভিযোগ এনে ইউএনও বরাবর অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান সহ কয়েক জন সদস্য। এ ছাড়াও এই নারী সদস্যের নামে সরকারি সুবিধা ভোগীর কার্ড থাকার কথা জানিয়েছেন চেয়ারম্যান। এছাড়া চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর ছাড়া যেখানে কোনো কার্ড হয় না সেখানে ইউপি সদস্যের নামে কার্ড প্রদানে তিনি কেন স্বাক্ষর করলেন এই নিয়ে চলছে এলাকাজুড়ে নানা গুঞ্জন। এব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান শাহাজাদা মো. আবু ইলিয়াস বলেন, কোন সদস্যকে মুল্যায়ন না করে আমি একক ভাবে পরিষদের সরকারী বরাদ্দ দিয়ে থাকি। কিন্তু ওই অভিযোগ সত্য না। সেগুলি মিথ্যা ও বানোয়াট। যা নিরোপক্ষ তদন্ত করলে সত্যতা পাওয়া যাবে। এবিষয়ে অন্যান্য ইউপি সদস্যদের কাছে মন্তব্য নিলে জানতে পারবেন। সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য ফাতেমাতুজ জোহরা রুপা জানান, চেয়ারম্যানের নামে যে অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলো সত্য। তদন্ত করলে প্রমানিত হবে।এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম জানান, উভয় পক্ষের অভিযোগ পেয়েছি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।