রবিবার ● ২৫ জুন ২০২৩
প্রথম পাতা » মুক্তমত » পথশিশুদের ঈদ আনন্দ
পথশিশুদের ঈদ আনন্দ
প্রকাশ ঘোষ বিধান
শিশুদের কাছে নতুন জামার মাঝেই লুকিয়ে থাকে ঈদের মূল আনন্দ। ছোট শিশুরা ঈদের দিন নতুন পোশাক পড়ে মনের আনন্দে ঘুরাঘুরি করে। মা-বাবা বা বড়রা ছোটদের ঈদে নতুন পোশাক দিয়ে থাকেন। কিন্তু সব শিশুর ভাগ্যে জোটে না ঈদের নতুন কাপড়। যাদের মা-বাবা নেই। পথের ধারেই ধুলো-বালিতে পড়ে মানুষ হচ্ছে তাদের ঈদ কেমন কাটে। তাদের নতুন পোশাকের জন্য বায়না ধরার কেউ নেই। তারা হয়তো পথ পানে চেয়ে থাকেন যদি কেউ একটা পোশাক দেন। অনেক সময় হৃদয়বান মানুষ এগিয়ে আসেন তাদের হাসি ফুটানোর জন্য। পথশিশুদের ঈদ নিয়ে কারো না করো মাথা ব্যথা আছে। অনেকেই তাদের কথা হয়তো ভাবেন।
পথশিশু হল সেইসব শিশু যারা দারিদ্র্য, গৃহহীনতা বা উভয়ের কারণে শহর, নগর বা গ্রামের রাস্তায় বসবাস করছে তারা। দেশে প্রায় ৯ লাখের মত পথশিশু রয়েছে। যাদের অনেকের মা-বাবা নেই। কারো আবার মা থাকলে বাবা নেই, বাবা থাকলে মা নেই। এদের অনেকেই আবার তাদের ঠিকানাও জানেনা যারা জন্মের পর থেকে পথেই বসবাস করে আসছে। এদের জীবনে আনন্দময় মুহুর্ত কখনই আসেনা। এদের চাহিদা অল্প হলেও সেটুকু জোগাড় করে জীবিকা নির্বাহ করতেই তাদের জীবন চলে যায়। পথশিশুদের বেশিরভাগই ঢাকা শহরকেন্দ্রিক। এদের বসবাস কমলাপুর রেল স্টেশন এবং তার আশেপাশে। আবার কোনকোন সময় এদেরকে কোন সরকারি পরিত্যক্ত জায়গায় পলিথিন টাকিয়ে বসবাস করতে দেখা যায়। এই ঈদে এসব পথশিশুদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য সহযাগিতা করে তাদেরও ঈদ আনন্দে সামিল করা খুবই জরুরী।প্রত্যোকে যদি একটু আন্তরিক হই তাহলে দেশের অসংখ্য পথশিশুর মুখে এ ঈদে হাসি ফুটবে।
প্রকৃতপক্ষে এদেশে পথশিশুদের সঠিক পরিসংখ্যান জানা বেশ মুশকিল। সরকাররিভাবে পথশিশুদের পরিসংখ্যান না হওয়ায় পথশিশুদের সাহায্য সহযোগিতাও অবহেলিত রয়ে গেছে। আমাদের দেশে ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৮ জন পথশিশুর কথা বলা হয়েছে। এদের মধ্যে উক্ত সংস্থা দু’টির পরিসংখ্যান মতে কেবল ঢাকা শহরে রয়েছে সাত লাখ পথশিশু।
পথশিশুদের কথা ভাবা হয় খুবই কম কারণ এসব পথশিশুদের বেশিরভাগই শহরে বসবাস করে বলে গ্রামের মানুষদের মধ্যে অনেকেই পথশিশুদের সম্পর্কে জানেনা। কত কষ্ট কত লাঞ্ছনা এবং অসহায়ত্ব সহ্য করে এদের পথের পাশে বেঁচে থাকতে হয়। তাদের জীবন যাপন কাছ থেকে না দেখলে বোঝা বেশ কষ্টকর। একটা শার্ট, গেঞ্জি, কিছু আর্থিক সাহায্য পেলে এসব পথশিশুরা ঈদ আনন্দে শামিল হতে পারে। তাই এই ঈদে শেকড়হীন এসব পথশিশুদের পাশে দাঁড়িয়ে ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করতে বৃত্তবানদের হাত বাড়ানো প্রয়োজন।
জানা যায়, রাজধানীসহ সারাদেশে কয়েক লাখ পথশিশু রয়েছে যাদের ৮০ ভাগেরই জন্ম ফুটপাথে। অবহেলা-অযতনে বেড়ে ওঠা এই শিশুদের টোকাই, পথকলি, ছিন্নমূল বা পথশিশু বলা হয়ে থাকে। সমাজসেবা অধিদফতরের তথ্য মতে, বাংলাদেশের ৭৫ ভাগ পথশিশুই রয়েছে রাজধানীতে। তাদের মধ্যে শতকরা ৫৩ ভাগ ছেলে আর ৪৭ ভাগ মেয়ে। নোংরা পরিবেশ আর অপুষ্টিতে বেড়ে ওঠা এসব শিশুর ৮৫ ভাগই রোগাক্রান্ত। পথশিশুদের জীবনযাপন অত্যন্ত দুর্বিষহ। অধিকাংশ সময়ই রাস্তা, পার্ক, ট্রেন-বাস স্টেশনে, লঞ্চঘাটে, সরকারি ভবনের নিচে ঘুমায় এবং প্রতিনিয়তই নাইটগার্ড কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়। এই পথশিশুদের একটি বড় অংশ শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পৌঁছার আগেই চুরি, ছিনতাই, মাদক বিক্রি, পিকেটিংসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।
বিআইডিএস ও ইউনিসেফের এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশে ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৮ জন পথশিশু রয়েছে। কেবল ঢাকা শহরে রয়েছে সাত লাখ পথশিশু। তবে এ সংখ্যা বাড়ছে। আর ২০২৪ সাল নাগাদ সংখ্যাটা হবে ১৬ লাখ ১৫ হাজার ৩৩০ জন। পথশিশুদের ৮৫ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে মাদক সেবন করে। ১৯ শতাংশ হেরোইন, ৪৪ শতাংশ ধূমপান, ২৮ শতাংশ বিভিন্ন ট্যাবলেট এবং ৮ শতাংশ ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা করে থাকে। ঢাকায় এদের কমপক্ষে ২২৯টি মাদকের স্পট রয়েছে। অন্য এক জরিপে মাদকাসক্ত শিশুদের মাদক গ্রহণ ও বিক্রয়ে ৪৪ শতাংশ, পিকেটিংয়ে ৩৫ শতাংশ, ছিনতাই, নেশাদ্রব্য বিক্রয়কারী এবং অন্যান্য অপরাধে জড়িত ২১ শতাংশ পথশিশুর যুক্ত থাকার তথ্য উঠে এসেছে।
এই পথশিশুদের সুপথে ফিরিয়ে আনতে পারলে রাষ্ট্র, সমাজ সবারই উপকার হবে বলে মনে হয়। এ নিয়ে কারো সন্দেহ থাকার কথা নেই। সময় এসেছে এই পথশিশুদের নিয়ে আরও ভাবা। যাতে তারা সমাজের মুল ধারার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। যারা সামজকে নিয়ে চিন্তা করেন, সমাজের উন্নয়নে ভাবেন তাদের নতুন করে ভাবতে হবে এই শিশুদের নিয়ে। যাতে তারা মৌলিক অধিকারগুলো পায়। তারা যাতে অধিকার বঞ্চিত না হয়।
ঈদের আনন্দে সবাই এগিয়ে আসালে পথশিশিুরা একটু সহানুভূতি পেতে পারে। তাদের ঈদের আগে বেশি দামের না হলেও একটু কম দামের নতুন পোশাকের ব্যবস্থা করে দিতে পারলে তাদের ঈদ হবে আনন্দময়। তাই আপনার একটু সহানুভূতিতে ফুটতে পারে ওই শিশুদের মুখে হাসি। তাদের মুখের হাসি ফুটানোর জন্য একটু সহানুভূতির হাত প্রসারিত করলেম তাদের শত কষ্টের মধ্যেও একটি নতুন পোশাক এনে দিতে পারে সুখানুভূতি।দেশে ধনী শ্রেণির মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। পথশিশুদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য তাদের সহযোগীতা কাম্য। যেন কোনো পথশিশু উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়।
লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট