শুক্রবার ● ৭ জুলাই ২০২৩
প্রথম পাতা » বিশেষ সংবাদ » ইউপি চেয়ারম্যান কাজল কান্তি বিশ্বাসের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঘটনায় উত্তাপ্ত হচ্ছে পাইকগাছার জনপদ
ইউপি চেয়ারম্যান কাজল কান্তি বিশ্বাসের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঘটনায় উত্তাপ্ত হচ্ছে পাইকগাছার জনপদ
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার লতার ইউপি চেয়ারম্যান কাজল কান্তি বিশ্বাস ইস্যুতে পক্ষে-বিপক্ষে নেয়া নানা কর্মসূচীতে তার অনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয়টি ফের টক অব দ্য উপজেলায় পরিণত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে জনৈক মহিলার সাথে তার ফোন সেক্সের একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হওয়ার ঘটনায় এলাকাময় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে তাকে অপসারণসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবিতে এলাকাবাসী দফায় দফায় মানববন্ধন কর্মসূচী, স্মারকলিপি পেশ ও গণস্বাক্ষরিত অভিযোগপত্র উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তর ওস্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ে জমা দেওয়া হয়।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ জুন মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন প্রধান স্বাক্ষরিত এক পত্রে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান কাজল কান্তি বিশ্বাসকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। যার স্মারক নং-৪৬.০০.৪৭০০.০১৭.২৭.০০২.২০-৫৭৬। পত্রে বলা হয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাইকগাছা, খুলনার প্রতিবেদন ও অফিসার ইনচার্জ, পাইকগাছা থানার প্রেরিত বার্তায় দেখা যায় যে, কে বা কারা উক্ত চেয়ারম্যানের একটি ভিডিও কল বিচ্ছিন্নভাবে ডিজিটাল মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন থেকে এ ধরনের কর্মকান্ডে জড়িত হওয়া নৈতিকতা ও উক্ত পদের জন্য অবমাননাকর প্রতীয়মান হওয়ায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৩৪ (৪) (খ) (ঘ) ধারা অনুযায়ী জেলা প্রশাসক খুলনা, ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারীশ করেন।
এরপর ২ জুলাই সকালে পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের সামনে সাময়িক বরখাস্তকৃত লতা ইউপি চেয়ারম্যান কাজল কান্তি বিশ্বাসকে স্থায়ীভাবে বরখাস্তের দাবিতে এক মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন লতা ইউনিয়নবাসী।
এদিকে ২০ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি-১ শাখার বরাদ দিয়ে একই সাথে জেলা প্রশাসক ঐদিন ৪৬০০.৪৭০০.০১৭.২৭.০০২.২০-৫৭৭ নং স্মারকে এবিষয়ে তাকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য এক পত্র প্রেরণ করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে কাজল কান্তি বিশ্বাস জেলা প্রশাসক খুলনা বরাবর গত ২ জুলাই কারণ দর্শানোর জবাবের একটি কপি ফের সামাজিক যোযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
যেখানে তিনি গত ২০১১ থেকে ১৬ পর্যন্ত ৫ বছর সুনামের সাথে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ফের ২০২১ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন বলে উল্লেখ করে তার কৃতকর্ম ঢাকতে মেডিকেল সাইন্সের উদ্বৃতি দিয়েছেন। যা নিয়ে নিজ ইউনিয়ন লতার পাশাপাশি উপজেলায় নতুন সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। যেখানে তিনি ৭৫ শতকরা পুরুষ ও ৪২ শতকরা নারীকে হস্তমৈথুনকারী হিসেবে উল্লেখ করে যা, মানব জীবনযাপন প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ বিশেষ। এটা কোন বেআইনি বা অনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্যে পড়েনা এবং প্রাকৃতিক কর্মকান্ডের অন্তর্ভূক্ত বলে উল্লেখপূর্বক তার কৃতকর্মকান্ডটি বাংলাদেশ দন্ডবিধির ১৪ ২৯৪ ধারায় অনৈতিক অশ্লীলতার বর্ণনায় পড়েনা। এমনকি দন্ডবিধির অন্য কোন ধারায় অনৈতিক অশ্লীলতার কোন বর্ণনা নেই। জবাবে তিনি আরো বলেন, তিনি তার ঘরের মধ্যে বসে একান্ত পরিবেশে কর্মটি করেন। যা কতিপয় নষ্ট চরিত্রের মানুষ ও তার শত্রুরা গোপনে ছবি তুলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছেড়ে অপরাধ করেছে দাবি করেন। ফলে তার সম্মান সুখ্যাতি নষ্ট হয়েছে। এহেন কাজের জন্য তিনি দু:খ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তবে আগামীতে তিনি এমন কর্মকান্ড করবেননা বলে প্রতিশ্রুতিপূর্বক তার উপর সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেন।
সর্বশেষ তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে ৬ জুলাই বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচী ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় বক্তারা বলেন, একটি কুচক্রি মহল চেয়ারম্যানের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার লক্ষে বিভিন্ন সময় নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় তারা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা ধরনের কুৎস্যা ছড়িয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে অনতিবিলম্বে তার বিরুদ্ধে সাময়িক বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান।
ইউনিয়ন আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক ও ইউপি সদস্য মঙ্গল চন্দ্র মন্ডল এর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ইউপি সদস্য পুলকেশ রায়, আজিজুল বিশ্বাস, বিজন হালদার, কুমারেশ মন্ডল, বিনেতা বিশ্বাস ও রিনা পারভিন, সাবেক ইউপি সদস্য সুষমা রায় ও মতলেব সানা, আওয়ামীলীগ নেতা অমলেন্দু তরফদার, দিনেশ তরফদার, অনিল সরকার, দীলিপ রায়, দিনেশ মন্ডল, মদন মোহন মন্ডল, রাধিকা গোলদার, মহিলা নেত্রী শিউলী রায়, গীতা মন্ডল,আয়শা, সাজুতা বেগম, আন্না বেগম, রেবেকা খাতুন, যুবনেতা গৌতম রায়, মৃগাঙ্গ বিশ্বাস, হিরামন মন্ডল, স্বেচ্ছাসেবকলীগের বিদ্যুৎ মন্ডল, পলাশ বাছাড়. নুর ইসলাম গাইন, বিপুল বিশ্বাস, অরন্য ঢালী, দীপংকর মল্লিক, সুজন রায়, জয় খান. তাপস, বিচিত্র, বিশ্বজিত প্রমুখ।
সর্বশেষ কাজল কান্তি বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবে হস্তমৈথুনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখা ও তার আলোকে নারী-পুরুষের জৈবিক চাহিদা পূরণে শতকরা হার ণির্নয়, তার কৃতকর্মের ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের বিষয়টি অপরাধ এবং কৃতকর্মের জন্য দু:খ ও ক্ষমা প্রার্থনার বিষয় আর সর্বশেষ তার পক্ষে মানববন্ধন ও সমাবেশে তাকে ধুয়া তুলশীর পাতা সাজাতে এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষদের ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আখ্যা দেওয়ার বিষয়গুলি সামাজিক অবস্থানগত দৃষ্টিকোণে উপজেলাবাসীকে ভিন্নভাবে নাড়া দিয়েছে।
এব্যাপারে তারা কাজল কান্তি বিশ্বাসের স্থায়ী বহিষ্কার দাবি করে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।