মঙ্গলবার ● ২৫ জুলাই ২০২৩
প্রথম পাতা » মিডিয়া » পাইকগাছায় হলুদ সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য বেড়ে চলেছে
পাইকগাছায় হলুদ সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য বেড়ে চলেছে
প্রকাশ ঘোষ বিধান : পাইকগাছায় দিন দিন বেড়েই চলেছে ভুয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য। আর এইসব সাংবাদিকের ফাঁদে পড়ে হয়রানি শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের অভিযোগ, সাংবাদিক পরিচয়ে সংবাদ প্রকাশের কথা বলে অর্থ আদায়, দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি, মোটরসাইকেলে প্রেস বা সাংবাদিক লিখে মাদকের ব্যবসাও চালিয়ে যাচ্ছে অনেকে। আর প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে মূলধারার পেশাদার সাংবাদিকরা।
তবে স্থানীয়রা এই ভুয়া সাংবাদিকদের বিষয়ে মুখ খুললেও প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। কেননা প্রশাসনের কোন কোন কর্তাব্যক্তিরাই দুর্নীতির সাথে জড়িত আছে। প্রশাসনের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে উপজেলায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই ভুয়া সাংবাদিকরা। আর এতে বিপাকে পড়ছেন পেশাদার সাংবাদিকরা।
স্থানীয় প্রশাসনে ও প্রেসক্লাবের নেতৃবেন্দ হলুদ সাংবাদিকের বিরুদ্বে কোন পদক্ষেপ নেয় না। এতে করে পাইকগাছা উপজেলায় হলুদ সাংবাদিকের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। উপজেলায় মূলধারার পেশাদার সাংবাদিকের সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ জন হতে পারে। তবে বিভিন্ন অনলাইন, ফেইসবুক পেইজ, স্বঘোষিত নামধারী সাংবাদিক পরিচয়দানকারীর সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন পেশাদার সাংবাদিকেরা। এসব হলুদ সাংবাদিকদের কবলে পড়ে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
জানাযায়, উপজেলায় নামধারী এসব হলুদ সাংবাদিক পরিচয়দানকারীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে অনেকেই। সাংবাদিকতার নামে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণির প্রতারক চক্র। এমনকি পেশাদার সাংবাদিকেরাও এসব প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে নিজেদের ঐতিহ্য, সুনাম ও ব্যক্তিত্ব হারাতে বসেছে।
উপজেলার আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো জেগে উঠছে নামধারী হলুদ সাংবাদিক। যা নিয়ে সচেতন মহল এবং উপজেলার সুশীল সমাজ নানাভাবে সমালোচনা করছেন। সাংবাদিকতার মান নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার মূলধারার পেশাদার সাংবাদিকেরা।
উপজেলার একাধিক ভুক্তভোগীরা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, উপজেলায় একাধিক যুবক নিজেদের বিভিন্ন অনলাইন, ফেইজবুক পেইজ ও (আন্ডারগ্রাউন্ড) পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে রীতিমতো প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।তারা ঘোষণা দেয় ফেসবুকে পত্রিকায় চোখ রাখুন,অমুকের তমুকের নামে সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে।তবে এসব হুমকির সংবাদ আলোর মুখ দেখে না কোন দিন। বিভিন্ন মাধ্যমে চাঁদা বাজি সহ সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে অপকর্মও করে আসছে। এসব হলুদ সাংবাদিকরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করা সহ প্রকাশ্যে দল ও নেতাদের পরিচয় ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে বলেও জানান ভুক্তভোগীরা।
একটি চক্র প্রেস কার্ড গলায় ঝুলিয়ে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয়ে সঙ্গবদ্ধভাবে গ্যাং সৃষ্টি করে চাঁদাবাজি ও মানুষকে জিম্মি করে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে প্রশাসন থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ চরমভাবে বিভ্রান্তিতে পড়ছে।
এছাড়াও স্থানীয় একাধিক গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, সাংবাদিক পরিচয়ে একটি চক্র প্রতিনিয়ত প্রেসকার্ড ব্যবহার করে ও গাড়িতে স্টিকার লাগিয়ে ঘোরাঘুরি করছে।তারা দল বেধে কোন ব্যক্তি,প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিসে গিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিভ্রান্ত ও কাজ হাসিল করছে। এতে সাধারণ মানুষ, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, পেশাদার সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সচেতন নাগরিকগণ বিভ্রান্ত হচ্ছে। পেশাদার সাংবাদিকদের লেখা প্রকাশিত নিউজ কপি করে অনলাইন বা নামমাত্র পেইজে নিজের নামে প্রচার করছে। সাংবাদিক পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি, মোবাইল ফোনে হুমকি, অবৈধ ব্যবসা ও বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছে।
প্রকৃত সাংবাদিকরা ঐক্যজোট না থাকায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন জ্যেষ্ঠ সংবাদিকরা। প্রকৃত সাংবাদিকরা একত্রিত না থাকায় রাজনীতিবিদরা এই সুযোগ নিচ্ছে। দলীয় লোকদের সাংবাদিক বানিয়ে পেশাদার সাংবাদিকদের বিপাকে ফেলানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে রাজনীতিবিদরা। অনেকে বেশ কয়েকটি সাংবাদিক সংগঠন খুলে পদও দখল করে রেখেছেন। সাংবাদিক পরিচয়কে ব্যবহার করে তারা সুবিধা নিচ্ছেন।
আইনের অপ্রতুলতা ও প্রয়োগের ব্যর্থতার কারণে দেশের সাংবাদিকতা ও সংবাদ মাধ্যমগুলোর মান দিনে দিনে নিম্নমুখী হচ্ছে। অনেক সুশীল ও সচেতন পাঠক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন সংবাদ মাধ্যম থেকে। অন্যদিকে এর প্রভাব পড়ছে আদর্শ সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যমের উপর। এই অবয়ের কারণেই শ্রেণী বিভক্তি দেখা দিয়েছে সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যমে।
পাইকগাছা উপজেলার প্রকৃত ও পেশাদার গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হচ্ছে। এসব হলুদ ও অপ-সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে এখনই সাংবাদিক নেতারা যদি কোনো ব্যবস্থা না নেন তাহলে স্বীকৃত এ পেশার স্থায়ীত্ব বেশিদিন থাকবে না বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।