মঙ্গলবার ● ১ আগস্ট ২০২৩
প্রথম পাতা » সংস্কৃতি ও বিনোদন » বিজ্ঞানী পিসি রায়ের ১৬২ তম জন্মবার্ষিকী
বিজ্ঞানী পিসি রায়ের ১৬২ তম জন্মবার্ষিকী
২ আগস্ট জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও সরকারিভাবে পালিত হচ্ছে বিজ্ঞানীর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান।জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানকে ঘিরে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয়ভাবে আয়োজন করা হয়েছে নানান কর্মসূচি। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ১৬২ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বুধবার সকালে খুলনা জেলার পাইকগাছায় আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের জন্মস্থান পরিদর্শন, তাঁর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা, পিসি রায়ের জীবন ও কর্মেরর ওপর তথ্যচিত্র প্রদর্শন, শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিষয়ক উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এমপি। সভাপতিত্বে করবেন খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান পিপিএম (সেবা), উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার ইকবাল মন্টু, পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম।
বাঙালির গৌরব প্রথিতযশা বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র রায়। যিনি পিসি রায় নামেই সর্বাধিক পরিচিত। খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাডুলি গ্রামে ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট তিনি জন্মগ্রহণ করেন। রাড়ুলীর জমিদার হরিশচন্দ্র রায়ও ভুবনমোহিনী দেবীর তৃতীয় পুত্র। তিনি ছিলেন একাধারে একজন প্রখ্যাত বাঙালি রসায়নবিদ, শিক্ষক, দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তা, দার্শনিক, কবি ও দানবীর।
১৮৭৮ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন পি সি রায়। এরপর ভর্তি হন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন কলেজে (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ)। ১৮৮১ সালে সেখান থেকে এফএ পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে বিএ ক্লাসে ভর্তি হন। সেখান থেকে গিলক্রিস্ট বৃত্তি নিয়ে তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বিএসসি পাশ করেন।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে ১৮৮৮ সালে প্রফুল্লচন্দ্র রায় স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরে প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রায় ২৭ বছর অধ্যাপনা করেছিলেন। অধ্যাপনাকালে তাঁর প্রিয় বিষয় রসায়ন নিয়ে নিত্য নতুন অনেক গবেষণাও চালিয়ে যান। ১৮৯৫ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মারকিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার করেন। তাঁর ওই আবিষ্কার বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলে। এটি তাঁর অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। তিনি মোট ১২টি যৌগিক লবণ এবং ৫টি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন।পিসি রায় বেঙ্গল কেমিক্যালের প্রতিষ্ঠাতা। বেঙ্গল কেমিক্যাল ১৯০১ সালে কলকাতার মানিকতলায় ৪৫ একর জমিতে স্থানান্তরিত হয়। তখন এর নতুন নাম রাখা হয় বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড। তনি ছিলেন সমবায়ের পুরোধা্, ১৯০৯ সালে নিজ জন্মভূমিতে একটি কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। পিসি রায় দেশের সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনায় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কাপড়ের মিল প্রতিষ্ঠা করেন। বিজ্ঞানীর পিতা হরিশ্চন্দ্র রায় জন্মস্থান রাড়ুলীতে ১৮৫০ সালে স্ত্রী ভূবনমোহিনীর নামে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। যেটি দেশের প্রথম বালিকা বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পিতার নামে আর কে বি কে হরিশ্চন্দ্র স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।১৯৩১ সালে খুলনার নিউ মার্কেটের পশ্চিম পার্শ্বে ২০৫.৯৯ একর জমিতে এপিসি কটন মিল স্থাপন করেন। মিলটির নাম বিভিন্ন সময় পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে খুলনা টেক্সটাইল পল্লী নামকরণ করা হয়েছে।বাগেরহাটে ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পি সি রায় কলেজ। দেশে শিক্ষা বিস্তারে আজ বিশাল ভূমিকা রাখছে প্রতিষ্ঠানটি।বৃটিশ সরকার তাকে ১৯৩০ সালে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন। এছাড়া একই বছর লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৩৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের মহিশুর ও বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মান সূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে। ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন অবিবাহিত। ১৯৪৪ সালে ১৬ জুন ফাদার অব নাইট্রাইট খ্যাত বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞনী আজীবনের নির্মোহ কর্মসাধক, বিদ্যাব্রতী, জনদরদী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ৮৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। এই বিজ্ঞানী তার জীবনের অর্জিত সমস্ত সম্পত্তি মানব কল্যাণে দান করে গেছেন।