রবিবার ● ৬ আগস্ট ২০২৩
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বিশ্ব আদিবাসী দিবস ও বাংলাদেশ প্র্রসঙ্গ
বিশ্ব আদিবাসী দিবস ও বাংলাদেশ প্র্রসঙ্গ
প্র্রকাশ ঘোষ বিধান :
প্রতি বছর ৯ অগাস্ট পালিত হয় বিশ্ব আদিবাসী দিবস। বিশ্বে বিভিন্ন ইস্যুতে অবদান রয়েছে আদিবাসীদের। তা সে পরিবেশ সংরক্ষণ হোক বা অন্য কিছু। সব ক্ষেত্রেই অবদান রয়েছে তাঁদের। এছাড়া সচেতনতা এবং আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষিত করতেও দিনটি উদযাপন করা হয়। বিশ্বের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকা এবং তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ ও চর্চাকে অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী দিবস উদযাপনের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয়।
বিশ্বের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও তাদের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ার জন্য জাতিসংঘ ও আদিবাসী জাতি এক নতুন অংশীদারিত্ব শিরোনামে ১৯৯৩ সালকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী বর্ষ ঘোষণা করে। আদিবাসীদের অধিকার, মানবাধিকার ও স্বাধীনতাসংক্রান্ত বিষয়সমূহ নিয়ে ১৯৮২ সালের ৯ আগস্ট জাতিসংঘের আদিবাসী জনগোষ্ঠীবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনটিকে স্মরণ করার জন্য জাতিসংঘ ১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর ৯ আগস্টকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অবহেলিত, সুযোগবঞ্চিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসমূহের সমস্যাগুলোর ওপর মনোযোগ আকর্ষণ করা এবং তাদের অধিকার রক্ষা ও উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করা। দিবসটি উদযাপনের মূল লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জীবনধারা, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার ও তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি তথা আত্ম-নিয়ন্ত্রণাধিকার সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন করে তোলা।
বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও অগ্রগতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধকোটি মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে প্রতি বছর বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন আয়োজনে উদযাপিত হয়ে থাকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে। বিশ্বের ৯০টি দেশের ৩০ থেকে ৩৫ কোটি আদিবাসী উদযাপন করে থাকেন দিবসটি।
বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে প্রধানত চারটি ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা হয়। এক, উত্তরবঙ্গের (দিনাজপুর, রংপুর, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাইবান্ধা প্রভৃতি) আদিবাসী যার অন্যতম হচ্ছে সাঁওতাল, মুণ্ডা, ওরাং, মাহাতো, কোড়া, কাদর প্রভৃতি। দুই, বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা অঞ্চলের গারো, কোচ, খাড়িয়া, বর্মণ এবং ডালু প্রভৃতি আদিবাসী। তিন, সিলেট-মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জের আদিবাসী জৈয়ন্তা, মণিপুরি, খাসিয়া, হাজং, লালেং, পাত্র প্রভৃতি। চার, পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তনচংঙ্গ্যা, বম, খুমি, খেয়াং, ম্রো, চাক, পাংখোয়া প্রভৃতি। নির্দিষ্ট কিছু আদিবাসী জনগোষ্ঠী আবার পটুয়াখালী এবং কক্সবাজার জেলায় বসবাস করেন।
আদিবাসী জনগণকে প্রাথমিক দিকে প্রথম জাতি, পাহাড়ি জনগোষ্ঠী, আদিম মানুষ, উপজাতি প্রভৃতি নামে চিহ্নিত করা হত। আদিবাসী শব্দটির প্রকৃত সংজ্ঞা ও তাদের অধিকার নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিতর্ক প্রচুর। জাতিসংঘের বিভিন্ন পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার পরেও আদিবাসীদের ব্যাপারে সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য কোন সংজ্ঞায় উপনীত হওয়া সম্ভব হয়নি।
সর্বাধিক স্বীকৃত আদিবাসী সংজ্ঞা হলো, আদিবাসী শব্দের মূল বক্তব্য প্রান্তিকতায় যারা ঐতিহাসিকভাবে শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে এবং এখনো প্রান্তিক অবস্থানে আছে। যারা আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময়ে এবং এখনো নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদের শিকার হচ্ছে। যাদের ভাষা, সংস্কৃতি বিলুপ্তপ্রায় এবং যারা সাধারণত রাজনৈতিকভাবে অন্যের অধীনস্থ। আদিবাসীদের অন্য বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে যাদের সমাজ ব্যবস্থা, ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য দেশের মূল স্রোতধারার জনগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি হতে পৃথক। যারা রাষ্ট্রীয় আইনের চেয়ে প্রথাগত আইনের ভিত্তিতে সমাজ পরিচালনা ও অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তি করে। ভূমির সঙ্গে যাদের নিবিড় সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অধ্যাত্মিক স¤পর্ক রয়েছে এবং যারা সাধারণভাবে মূল স্রোতধারার জনগোষ্ঠীর চেয়ে প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছে তারাই আদিবাসী। আবার সাধারণত কোন একটি নির্দিষ্ট এলাকায় অণুপ্রবেশকারী বা দখলদার জনগোষ্ঠীর আগমনের পূর্বে যারা বসবাস করত এবং এখনও করে; যাদের নিজস্ব আলাদা সংস্কৃতি, রীতিনীতি ও মূল্যবোধ রয়েছে; যারা নিজেদের আলাদা সামষ্টিক সমাজ-সংস্কৃতির অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা সমাজে সংখ্যালঘু হিসেবে পরিগণিত, তারাই আদিবাসী। আদিবাসীদের উপজাতি হিসেবে সম্বোধন করা একেবারেই অনুচিত, কারণ তারা কোন জাতির অংশ নয় যে তাদের উপজাতি বলা যাবে। বরং তারা নিজেরাই এক একটি আলাদা জাতি।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের ৭০টি দেশে ৩০ কোটির অধিক আদিবাসী বাস করে। তাদের অধিকাংশই এখনো মানবিক অধিকারবঞ্চিত। অনেক দেশে আদিবাসীরা এখনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিই পায়নি। আদিবাসীদের কোনো কোনো দেশে উপজাতি, কোনো কোনো দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলে অভিহিত করা হয়।
বাংলাদেশে প্রায় ৪৫টির মত আদিবাসী জাতিসত্তার উপস্থিতির তথ্য জানা যায়। যার মধ্যে রয়েছে অহমিয়া, খিয়াং, খুমী, গুর্খা, চাক, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, পাংখো, বম, মারমা, ম্রো, লুসাই, কোচ, খাড়িয়া, গারো, ডালু, বানাই, হাজং, খাসিয়া, পাত্র, মণিপুরি, রাখাইন ওরাওঁ, কন্দ, কোল, গণ্ড, তুরি, পাহান, পাহাড়িয়া, বাগদি, বেদিয়া, ভূমিজ, মাহাতো, মাহালি, মালো, মুণ্ডা, মুরারী, মুষহর, রাই, রাউতিয়া, রাজোয়াড় ও সাঁওতাল। এই ৪৫টি বর্ণাঢ্য আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর বসবাস আমাদের বাংলাদেশকে দিয়েছে বিশেষ মাত্রা, সংস্কৃতিকে করেছে সমৃদ্ধ। জনসংখ্যার দিক থেকে দেশের মোট জনসংখ্যার সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ শতাংশ হতে পারেন আদিবাসী মোট জনগোষ্ঠীরা। যাদের অধিকাংশেরই জীবন-জীবিকার মূল উৎস পাহাড়ের প্রাকৃতিক সম্পদ।
আদিবাসী দিবস বা আদিবাসী নিয়ে বিতর্ক রযেছে। দেশে আদিবাসী দিবস পালন করা হলেও বিগত কয়েক বছর থেকে তা সরকারীভাবে পালন বন্ধ রয়েছে। সংবিধানে আদিবাসী শব্দটি না থাকায় দেশ-বিদেশে বিতর্ক শুরু হয়েছে । ২০০৬ সালের ১৯ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠির মাধ্যমে আদিবাসী শব্দটির পরিবর্তে উপজাতি শব্দটি লেখার নির্দেশ দেয়া হয়। ২০০৮ সালের ১৯ আগস্ট পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চিঠিতে আদিবাসী বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় একই বছর ৯ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়, দেশে কিছু ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী আছে। কোনো আদিবাসী (ইনডিজেনাস পিপলস) নেই। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। যেখানে অফিস-আদালতে আদিবাসী শব্দটি বাদ দিয়ে উপজাতি ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়া হয়।
মূলত ২০০৮ সাল থেকেই এ দেশের আদিবাসীদের আদিবাসী’হিসেবে অস্বীকার করার প্রবণতা দেখা দেয়। ২০১০ সালে আদিবাসীদের মতামতের তোয়াক্কা না করে ১২ এপ্রিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, ২০১০ আইনটি প্রণয়ন করা হয়। এই আইনের ধারা ২(২) এ বলা হয়েছে, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ অর্থ তফসিলে উল্লিখিত বিভিন্ন আদিবাসী তথা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও শ্রেণীর জনগণ’। একদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে কোন আদিবাসী নেই আবার একই আইনে বলা হচ্ছে, আদিবাসীরাই ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’।
২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে আদিবাসী বিষয়ক যে ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়, সেখানে প্রস্তাবের পক্ষে ১৪৩টি দেশ ভোট দিলেও, বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত থাকে। ১১টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে এবং ৩৪টি দেশ ভোটাভুটিতে অনুপস্থিত থাকে। ৪টি দেশ যথা অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। আইএলও কনভেনশন-১৬৯ এর মূল প্রতিপাদ্য অনুযায়ী কোন অঞ্চলের উপজাতি জনগোষ্ঠীই ঐ অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠী । সকল ক্ষেত্রেই এই জনগোষ্ঠীকে দেশের মূল জনগোষ্ঠী হতে আলাদা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং রাষ্ট্র তা নিশ্চিত করবে। এছাড়াও আত্মপরিচয় নিরুপনের ক্ষেত্রে তারা ভিন্নতর বলে বিবেচিত হবে এবং নিজস্ব সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আর্থ-সামাজিক মানদন্ডে তাদেরকে বিবেচনা করতে হবে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি অধিকারের কিছু বিশেষ বিধান রয়েছে। ‘আদিবাসী’ শব্দটি সংবিধানে সংযোজিত হলে ২০০৭ সালের ‘আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র’ মেনে নিতে হবে; যা হবে বাংলাদেশের জন্য হুমকি স্বরুপ। আবার বাংলাদেশ সরকার যদি দেশকে একটি বৈচিত্রময় দেশ ও ভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব সংরক্ষণ নিয়ে ভাবতো তাহলে জাতিসংঘ ঘোষিত ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতো। বাংলাদেশ সরকার ২০১১সালের ৩০শে জুন পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এদেশের ভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীকে জাতি হিসেবে বাঙালি ও বাংলাদেশে কোন আদিবাসীর অস্তিত্বকে স্বীকার করেনি। বাংলাদেশের সংবিধানের নাগরিকত্ব আইনের ৬ নং ধারার ২ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে যে “বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালী এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন।“ জাতীয়তাবাদ আইনের ৯ এ উল্লেখ আছে যে, “ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালী জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।“ যেখানে বাঙালি ভিন্ন অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে। সংবিধানের ২৩ (ক) এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, “রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। “এখানেও বাঙালি ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীদের যারা আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকার রাখে তাদেরকে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বলে রাষ্ট্র আখ্যায়িত করেছে।দেশ স্বাধীনের পর জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এই চার মূল নীতির উপর ভিত্তি করে সংবিধান রচনা করা হয়।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির’র মধ্যে সম্পাদিত হয় ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তি। চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো আজো অবাস্তবায়িত। যা পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে দিন দিন অস্থিতিশীল করে তুলছে। ভূমি আদিবাসীদের প্রাণ, প্রকৃতির খুব কাছাকাছি থাকে বলেই তাদেরকে প্রকৃতির সন্তান বলতেও অসুবিধা নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যা ভূমি সমস্যা। জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সরকারের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের জাতিগতভাবে নির্মূলীকরণের উদ্দেশ্যে সমতল থেকে ৪-৫ লাখ ছিন্নমূল বাঙালিকে পাহাড়ে এনে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ও আদিবাসীদের ভূমিতে তাদের বসতি গড়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে।
তবে বাংলাদেশ সরকার দেশের নাগরিক হিসেবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জনগণ যাতে তাদের অধিকার পায় সেটি নিশ্চিত করছে। শিক্ষা এবং সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে তাদের বাড়তি সুবিধাও দিচ্ছে সরকার। পরিশেষে বিশ্বের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকা এবং তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও চর্চা অব্যাহত থাকুক।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট