শিরোনাম:
পাইকগাছা, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
বৃহস্পতিবার ● ১০ আগস্ট ২০২৩
প্রথম পাতা » পরিবেশ » পাইকগাছায় নিড়ে ফেরা গামারি গাছে চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখর বিকেল বেলা
প্রথম পাতা » পরিবেশ » পাইকগাছায় নিড়ে ফেরা গামারি গাছে চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখর বিকেল বেলা
৩৩৬ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ১০ আগস্ট ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

পাইকগাছায় নিড়ে ফেরা গামারি গাছে চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখর বিকেল বেলা

 --- প্র্রকাশ ঘোষ বিধান ; পাইকগাছা : বিকেল হলেই শুরু হয় পাইকগাছায় গামারি গাছে নিড়ে ফেরা চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ। ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় বিকেল বেলা।দলবেধে উড়ে এসে বসে গাছের ডালপালায়। গাছের প্রতিটি শাখা-প্রশাখা ভরে ওঠে চড়ুই পাখিতে।দেখলে মনে হয় চড়ুই পাখির মেলা বসেছে। আর তাদের কিচিরমিচির শব্দে মুখর থাকে পাইকগাছার নতুন বাজার এলাকা।

চড়ুই সুলভ দর্শন আবাসিক পাখি। বলা যায় পারিবারিক পাখিও। লম্বায় ১৪-১৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে খানিকটা তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা ধূসর। ঘাড় গাঢ় বাদামি। ঘাড়ের দু’পাশ ময়লা সাদা। পিঠ বাদামি। ডানায় বাদামি-কালো রেখার সংমিশ্রণ। ডানার গোড়ার দিকে সাদা পট্টি দেহতলের ময়লা সাদার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। লেজ কালচে। গলা ও থুতনি কালো। ঠোঁট কালো। স্ত্রী পাখির মাথায় আঁকিবুকি দাগ। পিঠ ঝাপসা বাদামির ওপর খাড়া ডোরা। ডানায় সাদা পট্টি। দেহতল ফ্যাকাসে। ঠোঁট ত্বক বর্ণ। উভয়ের চোখ বাদামি।   বাংলাদেশের এমন কোনো স্থান নেই যেখানে ওদের দেখা পাওয়া যায় না। এরা স্বভাবে ভারি চঞ্চল। ভয়ডর তেমন একটা নেই। একেবারে মানুষের কাছাকাছি চলে আসে যে কোনো মুহূর্তে। আস্কারা পেলে আপনার মাথার ওপর দিয়ে উড়ে খড়কুটো নিয়ে আপনার ঘরের ফাঁকফোকরে ইয়া বড় এক বাসা বানিয়ে ফেলবে। তার পর যথারীতি ঘর-সংসার। একদিন-দু’দিন নয়, বছরের পর বছর কাটিয়ে দেবে একই বাসায়। এ হচ্ছে চড়ইদের কীর্তি।

গ্রাম-বাংলার চিরচেনা চড়ুই পাখি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। আগের মতো বাড়ির উঠান, জানালা বা ছাদে এখন আর চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শোনা যায় না। তবে পাইকগাছা মেইন সড়ক সংলগ্ন নতুন বাজারের পাশে গামারি গাছে দেখা মিলেছে চড়ুই পাখির এক অপরূপ দৃশ্য। সূর্য ডোবার  আগে আগে সেখানে বসে চড়ুই পাখির মেলা। আলো-আঁধারে গাছে গাছে খেলায় মেতে ওঠে পাখির দল। কিচিরমিচির শব্দে চারপাশকে জাগিয়ে তোলে হাজারো পাখি। মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকেন পথচারিরা।

গত ২-৩ মাস ধরে নতুন বাজারের পাশে গাছটিতে অন্তত সহস্রাধিক পাখি নিরাপদে রাত্রীযাপন করে। স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠণ বরবিবি পাখি রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পরিবেশবাদী সংগঠণের সদস্যরা পাখিদের বিরক্ত না করতে স্থানীয় ও দর্শনার্থীদের পরামর্শ দিয়ে দেন ও তদারকি করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন সূর্যাস্তের আগে থেকে দলবেঁধে ছুটে আসে  চড়ুই পাখি। সন্ধ্যা থেকে তাদের কিচিরমিচিরে মুখর থাকে বাজার এলাকা। গাছটিতে পাতার চেয়ে যেন চড়ুই পাখি বেশি।পাতার বোটায় বোটায় বসে আছে চড়ুই পাখি। একেকটি ডালে বসে আছে শত শত পাখি। তাদের কিচিরমিচির শব্দ আর লাফালাফিতে বাড়তি আনন্দ উপভোগ করেন দূর গন্তব্যের যাত্রী ও স্থানীয়রা। গত ২-৩ মাস ধরে হঠাৎ গামারি গাছে রাতের বেলা পাখিদের বসতি গড়তে দেখা যায়। প্রথম দিকে এর সংখ্যা কম থাকলেও ক্রমেই বাড়তে থাকে এই সংখ্যা। তাদের ধারণা সব মিলিয়ে এখানে রাত্রি যাপন করে অন্তত হাজারের অধিক চড়ুই পাখি। মানুষের দ্বারা কোনো প্রকার ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ায় দিন দিন এর সংখ্যা বাড়ছে।

নতুন বাজারের দোকানদার উত্তম ঘোষ বলেন, কয়েক মাস আগে হঠাৎ করেই একদিন গামারি গাছে চড়ুই পাখিরা ভিড় করে। তারপর থেকে দৈনিক পাখি এসে গাছে বসে। তবে শুধু রাতের বেলায় তারা থাকে, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে  চলে যায়।

প্রতিদিন যখন পূর্ব আকাশে সূর্য ওঠে দিনের আলো ফোটে, ঠিক তখনই চড়ুই পাখিগুলো কিচিরমিচির শব্দে  খাবারের সন্ধানে দিকবিদিক উড়ে যায়। চড়ুই পাখিগুলো সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় উড়ে উড়ে হাজারো বিপদকে অতিক্রান্ত করে খাবার সংগ্রহ করতে থাকে। চড়ুই পাখিগুলোকে সারাদিন নানা বিপদ ও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তাদের আহার খুঁজতে হয়। চড়ুই পাখি খাবারের সন্ধানে এলাকায় উড়ে বেড়ায়। সারাদিন খাবার সন্ধানের এই জীবন যুদ্ধের পরে আবারও সবাই একে একে ফিরে আসতে শুরু করে তাদের নিরাপদ আশ্রয় ছোট গাছটিতে। পরিবেশবাদী সংগঠণ বরবিবির সভাপতি সাংবাদিক প্র্রকাশ ঘোষ বলেন, চড়ুই পাখি মানুষের কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসে।বাড়ি-ঘরে বাসা  বেধে থাকে।এরা ফসলের পোকা মাকড় খেয়ে কৃষকের উপকার ও পরিবেশের ভারসম্য রক্ষা করে। তবে চিরচেনা চড়ুই পাখি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। আগের মতো বাড়ির উঠান, ছাদে এখন আর চড়ুই পাখি তেমন দেখা যায় না।  একসঙ্গে সহস্রাধিক চড়ুই পাখি আগে দেখা গেলেও এখন সাধারণত দেখা মেলে না। তবে এ স্থানটিতে তারা নিরাপদে থাকতে পারছে। কেউ পাখিদের বিরক্ত করে না। তাই দীর্ঘদিন ধরে এসব পাখি এখানে অবস্থান নিয়ে রাত্রিযাপন করে।

পাইকগাছা উপজেলা বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ  রায় জানান,উপজেরায় কয়েকটি স্থানে ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ু্ই পাখি আসার বিষয়ে আমরা অবগত রয়েছি। এরই মধ্যে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি পাখিদের আশ্রয়স্থল চিহ্নিত করে বেশি করে গাছ লাগানোর। পাখিদের যেন কোনো প্রকার ক্ষতি করা না হয় সে বিষয়ে স্থানীয়দের আবগত করার পরিকল্পনা রয়েছে।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)