রবিবার ● ২৭ আগস্ট ২০২৩
প্রথম পাতা » বিশেষ সংবাদ » পাইকগাছায় কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গনে জেলেপল্লীর বাসিন্দা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে
পাইকগাছায় কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গনে জেলেপল্লীর বাসিন্দা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে
কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গনে পাইকগাছার রাড়ুলীর জেলেপল্লী বাসিন্দা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গনকুলে নিন্ম চাপ ও প্রবল জোয়ারের পানিতে দিনে ও রাতে দুইবার ডুবছে পাইকগাছায় রাড়ুলী জেলেপল্লী। ভাঙ্গন কুলে ঝুঁকি নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে জেলে পল্লীর ১শ ৫০টি পরিবার। তাদের বাড়ি ঘর রক্ষায় নেই কোন টেকসই বেঁড়িবাঁধ।বর্ষা মৌসুমের শেষে আবারও নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
কপোতাক্ষ নদের ভয়াবহ ভাঙ্গনে পাইকগাছার রাড়ুলীর মালো পাড়ার ঘরবাড়ী, গাছপালা, রাস্তা ও জমি নদগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কপোতাক্ষ নদের তীব্র স্রোতের তোড়ে ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে পড়ে মালোপাড়া। এলাকার মানুষ চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছে। ভাঙ্গন এলাকার কিছু কিছু ঘরে নিচের অর্ধেক মাটি নদে ধ্বসে পড়েছে। ঘরগুলি নদের উপর ঝুলছে। যে কোন সময় নদগর্ভে ভেঙ্গে পড়তে পারে। এসব পরিবারের বসবাসরত মানুষগুলো নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। অতিসত্বর ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে রাস্তাসহ বাকী পরিবারের ঘরবাড়ী এবং ফসলী জমি নদেগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। নদী ভাঙ্গন রোধে দীর্ঘমেয়াদী টেকসই প্রকল্প ও পরিকল্পিত নদী শাসনের দাবী জানিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী।
তবে স্থানীয় ইউপি মেম্বার ইলিয়াস হোসেন ও কলেজ শিক্ষক মোমিন উদ্দিন জানান,পার্শ্ববর্তী মিনারুল ও ডালিম সরদারের ইটের ভাটার জন্য প্রতিবছর মেশিন দিয়ে এ নদ থেকে যাবতীয় মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে নদীতে জোয়ারের পানির চাপ বেড় কূল ভেঙে পড়েছে। গত ১০ বছর ধরে ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে।এ ব্যাপারে ইটভাটা মালিক মিনারুল ইসলাম বলেন, উপজেলার তালা থানার শাহজাতপুর গ্রামের ভুট্টুর কাছ থেকে লিজ নেওয়া যে জমি নদীতে চলে গেছে সেই জমি থেকে মাটি কাটছি।
কপোতাক্ষ নদের তীরে রাড়ুলী ইউনিয়নে জেলে পল্লী প্রায় অর্ধশত বছর ধরে ভাঙ্গন কবলে রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানায়। জেলে পল্লীর মনোরঞ্জন বিশ্বাস জানান, আমাদের পূর্বপুরুষ মিলে এখানে প্রায় ২শ বছর ধরে বসবাস করে আসছি। কপোতাক্ষ পাড়ে জেলে পল্লীতে আমরা প্রায় ৫শ পরিবার বসবাস করতাম। কিন্তু ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি হারিয়ে ৩শ ৫০ পরিবার অন্যতরে চলে গেছে। কেউ রাস্তার পাশে সরকারী জমিতে আবার কেউ সরকারের আবাসনে ঠাঁই মিলেছে। আমার ঘর ভেঙ্গে গেছে। আমি পার্শ্বে একটি সরকারী রাস্তার পাশে একটি টোঙ ঘরে বসবাস করছি। বর্তমানে ভাঙ্গন কুলে ১৫০ পরিবার বসবাস করছে। একই এলাকার বাবুরাম বিশ্বাস (৫৫) বলেন, কপোতাক্ষ নদ ভাঙ্গনে আমি তিনবার ঘর ভেঙ্গে ঘর তৈরী করেছি। বর্তমান ঘরটি ভেঙ্গে যাওয়ার পথে। নদীতে রান্না ঘর চলে গেছে থাকার ঘরটি টিকে থাকলেও ঘরটি নদের কিনারায় ঝুলছে। জোয়ারের পানিতে রাত দিন দুইবার ডুবছে আমাদের ঘরবাড়ি। জোয়ারের সময় ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ভয়ে রাত জেগে বসে থাকি।কখন নদীতে ঘরখানী নদীতে নিয়ে যায়। বর্তমানে পূর্ণিমার অতিরিক্ত পানি বাড়ায় আমাদের ঘরবাড়ির উঠানে থইথই পানি। ভাটায় পানি নেমে গেলে রান্না হবে। অনেক সময় আমরা রান্না করতে না পারায় শুকনা খাবার খেয়ে খেয়ে থাকতে হয়। নদের পাশে বাড়িঘর রক্ষার বাঁধ থাকলে জোয়ারের পানি উঠতো না। এরকম মালোপাড়ার মনোরঞ্জন বিশ্বাস, উত্তম বিশ্বাস, তপন বিশ্বাস, বাবু বিশ্বাস, পবন বিশ্বাস, রতন বিশ্বাস, অমল বিশ্বাস, সুকুমার বিশ্বাস তারা সবাই ১ থেকে ২ বার করে বাড়ী বদল করেছেন। নদের তীরে যে জায়গায় তারা বসবাস করছে এই জায়গা ভেঙ্গে তাদের নতুন করে ঘর বাঁধা কোন জায়গা থাকবে না। সূর্যকান্ত বিশ্বাস বলেন, বিগত বছরের ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় প্রায় ৩০/৪০ ফুট জায়গায় জিও ব্যাগে বালি ভরে ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু বাকী অংশের কাজ না করায় ভাঙ্গন অব্যহত রয়েছে। মান্দার বিশ্বাস (৬৭) বলেন, কপোতাক্ষের পাড়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা বসবাস করে আসছে। প্রায় ১ কিলোমিটার জায়গা কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গনে চলে গেছে। বিপরীত পারে চর জেগেছে। সেখানে যদি আমাদের জায়গা দিতো তাহলে আমরা বসবাস করতে পারতাম।
স্থানিয় সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবুর নির্দেশনায় উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মণ্টুু ও রাড়ুলী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ কপোতাক্ষ নদের ভয়াবহ ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন। ইউনিয়নের ৩ ও ৫ নং ওয়ার্ডের মালোপাড়ায় নদের ভাঙ্গন এলাকার জন্য উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিল থেকে ৫০হাজার টাকা তাৎক্ষণিক বরাদ্দ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু।
পাইকগাছা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাজু হাওলাদার বলেন,ভাঙ্গন রোধে অফিস থেকে জিও ব্যাগসহ আনুসাঙ্গিক জিনিস পত্র দেওয়া হচ্ছে।ভাঙ্গনের বিষয় নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলা হয়েছে্।জাইকার অর্থায়নে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ভাঙ্গন এলাকায় কাজ শুরু করা হবে।