শনিবার ● ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » সুন্দরবন » নির্দিষ্ট খালে মাছ ধরার শর্তে সুন্দরবনে যাচ্ছে জেলেরা
নির্দিষ্ট খালে মাছ ধরার শর্তে সুন্দরবনে যাচ্ছে জেলেরা
তিন মাস নিষেধাজ্ঞার পর সুন্দরবনের দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। ১ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে বনজীবী ও দর্শনার্থীরা সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন। ইতোমধ্যে জেলে, ট্যুর অপারেটর, লঞ্চ ও বোটচালকরা বনে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। বনের আশপাশের এলাকার ইকো কটেজগুলোও প্রস্তুতি নিচ্ছে পর্যটক বরণে।
এদিকে টানা তিন মাস প্রবেশাধিকার বন্ধ থাকায় প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরে উঠেছে সুন্দরবন। দর্শনার্থী, মৎস্যজীবী ও বনজীবীরা প্রবেশ না করায় প্রাণিকুল তাদের নিজেদের ইচ্ছামতো বিচরণ করেছে। গাছগাছালিও শাখা মেলেছে নিজেদের মতো করে। এর আগে বন্যপ্রাণীর প্রজনন মৌসুম থাকায় ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট সুন্দরবনে সব ধরনের বনজীবী ও দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
তিন মাস নিষেধাজ্ঞা শেষে সুন্দরবনে মাছ ধরতে যাচ্ছেন জেলেরা। সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরা, অভয়ারণ্যে প্রবেশ করে বন্যপ্রাণী শিকার বন্ধের জন্য পাশ ইস্যু করার ক্ষেত্রে এবার নির্দিষ্ট খালের নাম উল্লেখসহ বেশ কয়েকটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। শর্তের কারণে ভালো মাছ পাওয়া নিয়ে জেলেদের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে।
জানা যায়, সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের খুলনা রেঞ্জের আওতাধীন কাশিয়াবাদ ফরেস্ট অফিস প্রাঙ্গনে যেয়ে দেখা যায় কেউ নৌকায় জাল, কাঠ ও বরফ উঠাচ্ছেন, কেউ নৌকার পাটা সংস্কার করছেন। কেউ পাশ না পেয়ে অফিসের আশপাশে ঘুরাঘুরি করছেন। আবার কেউ পাশ নিয়ে সুন্দরবনে মাছ ধরার উদ্যেশ্যে রওনা দিচ্ছেন।
কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের আওতায় শাকবাড়িয়া, বজবজা, খাসিটানা, আন্ধারমানিক এই চারটি ফাঁড়ি রয়েছে। এবার এখান থেকে পাশ নেয়া জেলেরা ওই স্টেশনের আওতাধীন সুন্দরবনের বাইরের খালে মাছ ধরতে পারবে না। জেলেদের পাশপারমিটে এবারই প্রথম নির্দিষ্ট করে খালের নাম উল্লেখ করে দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে গত ২৮ আগস্ট সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন একটি লিখিত নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দিষ্ট খালে মাছ ধরার এই নির্দেশনায় জেলেদের মুখের হাসি বিলীন হয়েছে। ভালো মাছ পাওয়া নিয়ে তারা শঙ্কায় রয়েছেন।
মৎস্য শিকারি শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। অন্য কোন কাজ করতে পারি না। তিনটি মাস পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কেটেছে। সরকার যে চাল দেয় তাতে কিছু হয়না। ধার দেনা ও সমিতি থেকে লোন করে সংসার চালাতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সুন্দরবন খুলে দিয়েছে তবে আগে একটি খালে মাছ না পড়লে অন্য খালে যেতে পারতাম। এবার সে সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এজন্য মাছ পাওয়া নিয়ে আমরা চিন্তিত।
কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায় বলেন, এ স্টেশনের আওতায় ৯৪৩ বিএলসি রয়েছে। তবে পাশ দেওয়ার সময় খাল নির্দিষ্ট করতে যেয়ে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিএলসির তুলনায় জায়গা কম হওয়ায় জেলেরা এ স্টেশন থেকে পাশ নিতে চাচ্ছেন না। প্রথমদিনে ৯৫ জন বিএলসিধারী পাশ নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আগে কোম্পানীর আওতাধীন জেলেরা এক স্টেশন থেকে পাশ নিয়ে অন্য স্টেশনের আওতাধীন বনের নিষিদ্ধ এলাকা অভয়ারণ্যে চলে যেত। খাল নির্দিষ্ট করে দেওয়ায় তারা আর এ সুযোগ পাবেন না। কোম্পানীগুলো বিনিয়োগ করে বসে আছে। খালে মাছ না পেলে তাদের ক্ষতি হবে। এসব নিয়ে কোম্পানীর জেলেরা বেশি জটিলতা সৃষ্টি করছে।