শুক্রবার ● ১০ নভেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » বিশেষ সংবাদ » পাইকগাছার বোয়ালিয়া শ্মশানে যাওয়ার পাকা রাস্তাটির উপরে মাটি ফেলে কাঁচা রাস্তা তৈরী করেছে ইট ভাটার মালিক; এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ
পাইকগাছার বোয়ালিয়া শ্মশানে যাওয়ার পাকা রাস্তাটির উপরে মাটি ফেলে কাঁচা রাস্তা তৈরী করেছে ইট ভাটার মালিক; এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ
পাইকগাছায় বোয়লিয়া শ্মশানে যাওয়ার পাকা রাস্তাটি রাতের আধারে মাটি দিয়ে উচু করে কাঁচা রাস্তায় পরিণত করার অভিযোগ উঠেছে ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে। পাশে পুরাইকাটিতে অবস্থিত ফাইভ স্টার ব্রিকস্ ইটভাটার ট্রলিসহ যানবাহন চলাচলের স্বার্থে শ্মশানে যাওয়ার পাকা রাস্তাটিতে মাটি দিয়ে কাঁচা রাস্তা তৈরি করায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পাকা রাস্তার উপর মাটির কাঁচা রস্তা তৈরি করায় এবড়ো খেবড়ো মাটি ও বুস্টিতে কাদা মাটিতে চলাচল করতে ব্যাপক অসুবিধায় পড়েছে শ্মশানে যাওয়া শবযাত্রী ও নদের পাড়ের জেলে পরিবারগেুলো। পাকা রাস্তা মাটি দিয়ে কাঁচা করায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে। এর উপর বৃষ্টির পানিতে কাদায় পরিনত হয়। ফলে সড়কটির এমন বেহাল অবস্থার হয়েছে যে যান চলাচল তো দুরের কথা, পায়ে হেটে চলারও সম্পুর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এতে ক্ষোভে ফুসে উঠছে ভুক্তভোগিরা। পাকা রাস্তাটি নিরাপদ যাতায়াতের পরিবর্তে মাটির রাস্তা করায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তারা রাতের আধারে পাকা রাস্তা কাঁচা রাস্তা তৈরি করায় ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ রাস্তাটি পাকা করার দাবি জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসনের কাছে।
জানা গেছে, পাইকগাছার বোয়ালিয়া মহাশ্মশানটি কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত। কপোতাক্ষ নদের উপর ব্রীজ ও সংযোগ সড়ক তৈরি হওয়ার পরে শ্মশানে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। শ্মশানে যাওয়ার কোন পথ না থাকায় বাধ্য হয়ে শবযাত্রীরা বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারের ভিতর দিয়ে যাওযা আসা করতে থাকে। এ অবস্থায় স্থানীয় সনাতন ধর্মালম্বীরা ফার্মের শরণাপন্ন হলে ফার্ম কর্তৃপক্ষ মানবিক কারণে ব্রীজের পাশ দিয়ে শ্মশানে যাওয়া জন্য রাস্তা তৈরি করে দেয়। পরে সরকারি অর্থে রাস্তাটি আর সিসি ঢালাই করা হয়। রাস্তাটি ফার্ম কর্তৃপক্ষ ও শ্মশান কমিটির নিয়ন্ত্রণে দেখভাল করা হয়। পাকা রাস্তার উপর মাটি দেওয়ার বিষয়ে বোয়ালিয়া মহাশ্মশান কমিটির সভাপতি শ্যাম সুন্দর ভদ্র বলেন, পাকা রাস্তার উপর মাটি দিয়ে ভরাট করার বিষয় আমাকে কেউ কিছু জানাইনি। তবে জানতে পেরেছি পাশের ইটভাটা মালিক এ্যাড. মুজিবুর রহমান তার ভাটার ট্রলি চলাচলের জন্য একাজটি করেছে। বোয়ালিয়া মহাশ্মশান কমিটির উপদেষ্টা ও উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সমিরণ কুমার সাধু বলেন, পাশের ইটভাটা মালিক এ্যাড. মুজিবুর রহমান তার ভাটার ইটসহ বিভিন্ন সামগ্রী বহন করার জন্য ঢালাই রাস্তাটি নিচু হওয়ায় মাটি দিয়ে উচু করে পাকা ঢালাই করে দিবে বলেছিলো। কিন্তু সাত আট মাস পার হয়ে গেছে। কেন রাস্তাটি পাকা ঢালাই করছে না এ বিষয়ে তার সাথে কথা বলবো। রাস্তা পাকা করে না দিলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
ফার্মের দক্ষিণ পাশে পুরাইকাটি মৌজায় এফএফ ব্রিকস ও ফাইভ স্টার ব্রিকস্ অবস্থিত। গত বছর এমএসবি ব্রিকস্ এর মালিক মোঃ শাহিনুর রহমান দেনার দায়ে নিরুদ্দেশ হলে বিভিন্ন ঘটনার পর ফাইভ স্টার ব্রিকস্ নামে এ্যাড. মুজিবুর রহমান ও তার অংশীদাররা ইট ভাটাটি পরিচালনা করছেন। প্রায় ২০-২৫ বছর ২টি ইটভাটার যানবাহন পুরাইকাটীর ভিতর দিয়ে আসা যাওয়া করছে। তবে গত বছর থেকে ফাইভ স্টার ব্রিকস্ এর ট্রলিসহ বিভিন্ন যানবাহন কপোতাক্ষ নদের বেড়ী বাঁধ ও শ্মশানে যাওয়ার রাস্তাটি বিনা অনুমতিতে মাঝে মধ্যে ব্যবহার করছেন। এ বিষয়ে ফাইভ স্টার ব্রিকস্ এর মালিক এ্যাড. মুজিবুর রহমান বলেন, পুরাইকাটি গ্রামের ভিতরের রাস্তার চাপ কমানোর জন্য আমরা ২টি ভাটা মিলে শ্মশানের সড়কটিতে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা মাটি ফেলে উঁচু করেছি। তবে বেড়ি বাঁধ ও শ্মশানের যাওয়ার রাস্তার উপর দিয়ে যানবাহন চলাচলে ফার্মের ম্যানেজার বাঁধা সৃষ্টি করছেন। আমাদের যানযাবহন যাতে চলতে না পারে তার জন্য তিনি গাছ পুতে দিয়েছেন। তবে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন অনুমতি না নিয়ে পাকা রাস্তার উপরে মাটি ফেলে কাঁচা রাস্তা তৈরী করেছেন। তিনি আরও বলেন, রাস্তার ক্ষতি হলে আমরা মাটি দিয়ে ঠিক করে দেবো। আমাদের ট্রলি চলতে না দিলে শ্মশানে যাওয়া রাস্তা উপর যে মাটি ফেলেছি প্রয়োজন হলে তা আমরা কেটে তুলে নিয়ে আসবো।
এ ঘটনায় বীজ উৎপাদন খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক নাহিদুল ইসলাম জানান, ইট ভাটার মালিক এ্যাড. মুজিবুর রহমান কোন অনুমতি ছাড়াই রাতের আঁধারে ফার্মের দেওয়া পাকা রাস্তার উপর মাটি দিয়ে ভরাট করেছেন। গত ১৩ অক্টোবর শুক্রবার রাতের বেলা তিনটি ইট ভর্তি ট্রলি বেড়ি বাঁধের উপর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় একটি ট্রলি উল্টে ফার্মের ভিতরে পড়ে। এ সময় স্থানীয় ট্রলি চলাচলে বাঁধা দিলে ট্রলি চালকরা তাদেরকে হুমকি ধামকি দিলে উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনা জানতে পেরে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গদাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ জিয়াদুল ইসলাম জিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি অবগত করেন। এর মধ্যে ফার্মের পরিচালক ঘটনাস্থলে আসেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন ঐ রাতে ঘটনাস্থলে পৌছিয়ে ট্রলি তিনটি আটক করে ফার্মের ভিতরে রাখেন। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ভাটা মালিক, ফার্ম কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও কে নিয়ে ১৫ অক্টোবর তার কার্যালয়ে আলোচনায় বসেন। বেড়ি বাঁধ ও শ্মশানের রাস্তার উপর দিয়ে আর কখনও ইট ভাটার ট্রলি বা যানবাহন চলাচল করবে না এই শর্তে ট্রলি তিনটি ছেড়ে দেন। তাছাড়া আর কখনও ঐ বেড়ি বাঁধের উপর দিয়ে তাদের ট্রলি বা ভারী যানবাহন নিয়ে যাবে না মর্মে প্রতিশ্রুতি দেন ভাটা মালিক। কিন্তু তার কয়েক দিন পর আবারও ট্রলি চলাচল করলে ফার্ম কর্তৃপক্ষ উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেন।পাইকগাছছা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও শাহ জালাল বলেন, ফার্ম সংলগ্ন বেড়ি বাঁধে একটি পুরাতন স্লুইচ গেট রয়েছে। এই গেট দিয়ে ফার্মসহ এলাকার ৬/৭টি গ্রামের পানি নিষ্কাশন হয়। ইট ভারি ভর্তি ভারী ট্রলি চলাচল করলে যে কোন সময় স্লুইচ গেটটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেই সাথে বেড়ি বাঁধ ডেবে যাওয়ার আশঙ্খা থাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড যানযাহন চলাচলের কোন অনুমতি দেননি। ইউনিয়ন পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বোয়ালিয়া ফার্মের কর্তৃপক্ষের মতামতে ভিত্তিতে উপজেলা প্রশাসন নির্দেশনায় বেড়ি বাঁধের উপরে যাতে কোন ট্রলিসহ ভারী যানবাহন চলাচল করে বাঁধের ক্ষতি করতে না পারে তার জন্য গাছের খুঁটি পুঁতে দেওয়া হয়। তবে ভ্যানসহ ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করতে পারছে। এই ঘটনায় স্থানীয় জেলে পরিবার, সনাতন ধর্মাবলম্বিরা ও শ্মশান কমিটির নের্তৃবৃন্দ শ্মশানে যাওয়া পাকা রাস্তাটি মাটি দিয়ে কাঁচা করায় ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন।