শিরোনাম:
পাইকগাছা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
শনিবার ● ১৮ নভেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » মুক্তমত » স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে চাই ভালো টয়লেট
প্রথম পাতা » মুক্তমত » স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে চাই ভালো টয়লেট
২২৫ বার পঠিত
শনিবার ● ১৮ নভেম্বর ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে চাই ভালো টয়লেট

 ---প্রকাশ ঘোষ বিধান


প্রতি বছর ১৯ নভেম্বর বিশ্ব টয়লেট দিবস পালন করা হয়। টয়লেট ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে মানুষকে সচেতন করতেই এমন দিন পালন করা হয়। বিশ্বের অনেক দেশই এখন পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে পিছিয়ে আছে। প্রতি বছর এই দিনে জাতিসংঘ নতুন অঙ্গীকার নিয়ে থাকে। শতভাগ টয়লেট সুবিধা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি মাথায় রেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালন করে থাকে। বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে।সবার জন্য পরিছন্ন ও নিরাপদ শৌচাগারের ব্যবস্থা করাও এই দিনটির উদ্দেশ্য।

বিশ্ব শৌচালয় দিবস বা টয়লেট দিবস মানুষকে এই লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য পদক্ষেপ নিতে অবহিত, জড়িত এবং অনুপ্রাণিত করার জন্য কাজ করে। সিঙ্গাপুর প্রস্তাবটি উপস্থাপন করার পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০১৩ সালে বিশ্ব শৌচালয় দিবসকে জাতিসংঘের একটি দাপ্রিক দিন হিসেবে ঘোষণা করে। এর আগে, ২০০১ সালে বিশ্ব শৌচালয় সংস্থা (সিঙ্গাপুর ভিত্তিক একটি বেসরকারি সংস্থা) অনানুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব শৌচালয় দিবস প্রতিষ্ঠা করেছিল। ২০০১ সালে বিশ্বে টয়লেট ব্যবহার ও স্যানিটাইজেশন সম্পর্কে ক্যাম্পেইন শুরু করে ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশন (ডাব্লিউটিও)। এরপর থেকে প্রতি বছর ১৯ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে প্রতিটি মানুষেরই চাই ভালো টয়লেট। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, টয়লেটকে এড়িয়ে চলার কোনো সুযোগ কারোরই নেই। মানুষের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে শৌচাগারের ভূমিকা অনেকটাই। খোলা জায়গায় শৌচ করলে রোগ ছড়াতে পারে। এছাড়াও সঠিক পদ্ধতি মেনে শৌচ না করলে নানারকম রোগ ছড়ায়। কিছু কিছু রোগে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশই শৌচাগারের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে পিছিয়ে রয়েছে। সারা বিশ্বে প্রায় ৩.৬ মিলিয়ন মানুষ এই অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন। অল্প আয়ের দেশগুলোতে এই সমস্যা বেশি। এছাড়া দুর্গম অঞ্চলগুলোতে মানুষ এখনও শৌচের সমস্যায় ভুগছেন। জাতিসংঘের তরফে নিরাপদ পৃথিবীর তৈরির উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল। এগুলোকে বলা হয় সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল। এই লক্ষ্যেরই একটি হল নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন শৌচাগার। ২০৩০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে সবার জন্য পরিছন্ন শৌচাগার থাকবে, এটাই জাতিসংঘের লক্ষ্য।

সারা বিশ্বে ৪.২ বিলিয়ন মানুষ নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ছাড়াই বাস করে এবং বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করে। খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করা বিশেষভাবে নারী এবং মেয়েদের পক্ষে কঠিন। নারীরা অধিক গোপনীয়তার জন্য অন্ধকারকে বেছে নেয়, কিন্তু তারপরেও রাতে একা থাকলে আক্রমণের ঝুঁকি থেকে যায়।

ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউটিও) সর্বশেষ তথ্যমতে, বিশ্বে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মানুষ বর্তমানে সঠিক ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। অর্থাৎ বিশ্বের ৪০ ভাগ মানুষ স্যানিটেশন সুবিধার বাইরে রয়ে গেছে। আর যারা নিয়মিত টয়লেট ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছেন এখনও তাদের অনেকের মধ্যে টয়লেট ব্যবহারের নিয়ম ও স্যানিটাইজেশন সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে।

রাস্তাঘাটে টয়লেটের অভাবে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় নারীদের। পুরুষদেরও ভোগান্তি কম নয়। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে পর্যাপ্ত টয়লেট পাওয়া যায় না। ওয়াটার এইড এবং সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের জরিপের তথ্যমতে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন গড়ে ৫৫ লাখ ভাসমান মানুষ চলাফেরা করে। এছাড়া ১২ থেকে ১৫ লাখ মানুষ প্রতিদিন আসা যাওয়া করলেও তাদের জন্য সঠিক টয়লেটের ব্যবস্থা অপ্রতুল।

অধিকাংশ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসায় অধিক সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য অল্প কিছু সংখ্যক টয়লেটের ব্যবস্থা থাকে, যা ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যার তুলনায় অত্যন্ত নগন্য। তাছাড়া প্রধান সড়কের পাশে, লঞ্চ-রেল-বাস টার্মিনাল, হাসপাতাল ইত্যাদি জনসমাগমপূর্ন জায়গা, সভাস্থল, পাবলিক হল, খেলার মাঠ, বাজার, ঐতিহ্যবাহী স্থানেও পর্যাপ্ত টয়লেটের অভাবে ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকায় অধিকাংশ মানুষ রাস্তার আশেপাশে যত্রতত্র মলমুত্র ত্যাগ করতে বাধ্য  হচ্ছে। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় কম টয়লেট থাকায় এবং অপরিচ্ছন্নতার কারণে মেয়েরা টয়লেট ব্যবহার করছে না এবং  ঘরের বাইরে অবস্থাকালীন সময়ে টয়লেট ব্যবহার করতে হবে ভেবে মেয়েরা কম পরিমাণে পানি পান করছে এবং দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকিয়ে রাখছে। দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে বা ধরে রাখলে মূত্র থলিতে ব্যথা ও কষ্ট অনুভূত হতে পারে এবং ঘন ঘন প্রদাহ (ইনফেকশন) হতে পারে। পুরুষের তুলনায় মহিলাদের মূত্র নালী-থলিতে, কিডনীতে প্রদাহ ও এনাল ফিশার এর প্রকোপ বেশি। অল্প বয়স থেকেই পানি কম পান করার কারণে মেয়েরা বড় হয়েও পেটের নানান রোগে ভুগছে।

সবার জন্য নিরাপদ শৌচাগার করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রাম প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের মাত্র ৩৯ শতাংশ জনগণ নিরাপদ ব্যবস্থাপনার স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় আছে। অর্থাৎ ১০০ জনের মধ্যে দেশের ৬১ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের বাইরে। অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থা মানব বর্জ্য নদী, হ্রদ এবং মাটিতে ছড়িয়ে দেয় এবং ভূগর্ভস্থ জলের সম্পদকে দূষিত করে।

অধিকাংশ মানুষ কর্মস্থলে অফিস আদালতে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এবং শিশু ও ছেলে-মেয়েরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সময় অবস্থান করছে। এসমস্ত প্রতিষ্ঠানের প্রায় অধিকাংশগুলোতেই যে টয়লেট রয়েছে তা ব্যবহার অনুপযোগী ও অপর্যাপ্ত। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যর উপর। তাই অবিলম্বে জনসমাগমস্থল ও প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত এবং মানসম্মত টয়লেট স্থাপনসহ টয়লেট ব্যবহারে নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব রোধে পাবলিক টয়লেট বিষয়ে আলোচনা সভা থেকে নিন্মোক্ত দাবী জানানো হয়।

পাবলিক টয়লেট বিষয়ক সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা, প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, ঐতিহ্যবাহী স্থান, বাস-রেল-লঞ্চ টার্মিনাল, হাসপাতাল খেলার মাঠ,  সভাস্থল, অস্থায়ী বাজার ইত্যাদি স্থানে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা করা। রেল, নৌ ও অন্যান্য পরিবহনের পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করা, সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে গণসচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে পাবলিক টয়লেট ব্যবহার বিষয়ে প্রচারণা বৃদ্ধি ও প্রতিটি জেলা শহরের জনসংখ্যা অনুপাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাবলিক টয়লেট উপযুক্ত স্থানে স্থাপন করা। প্রতিটি টয়লেটে পানি, সাবান, তোয়ালে, টয়লেট পেপার ইত্যাদির পর্যাপ্ত পরিমান নিশ্চিত করা। পাবলিক টয়লেট নোংরা, অপরিচ্ছন্ন এবং অন্যান্য সুবিধা না থাকার প্রেক্ষিতে ইজারা বাতিল বা শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহন করা।

টয়লেট মানেই সেখানে জীবাণুর কারখানা। তাই টয়লেট পরিচ্ছন্নভাবে ব্যবহার করা খুবই জরুরি। পরিচ্ছন্ন থাকলে অনেক সংক্রমণই এড়ানো সম্ভব। টয়লেট অপরিষ্কার থাকলে বেশ কিছু ছোঁয়াচে রোগ ছড়াতে পারে। টয়লেট ব্যবহারের পর টিস্যু ব্যবহার করা। অ্যান্টিসেপটিক সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুয়া। টিস্যু ব্যবহারের পর নির্ধারিত ঝুড়ি বা বাস্কেটে ফেল্। কমোড  ও টয়লেট ব্যবহার করার পর ফ্ল্যাশ ব্যবহার করা। এ ছাড়া টয়লেটে কমোড না থাকলে বসার আগে খানিকটা পানি ঢেলে দিয়ে তারপর ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি জলের ব্যবহার নিয়েও সচেতন হওয়া জরুরি। সারা বিশ্বে স্বাদু বা পানীয় জলের পরিমাণ কমে আসছে। তাই শৌচাগারে জলের ব্যবহার পরিমাণ বুঝে করা উচিত।

আমরা নিজের বাড়িতে টয়লেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকলেও পাবলিক টয়লেট যেমন, অফিস, মলে ব্যবহারের সময় আমরা অনেক কিছুই খেয়াল রাখি না। যে শৌচালয় আমরা ব্যবহার করছি তা পরিষ্কার রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)