শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
মঙ্গলবার ● ৫ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » চিত্রবিচিত্র » বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী শাবনুরের সংগ্রামী জীবনের গল্প
প্রথম পাতা » চিত্রবিচিত্র » বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী শাবনুরের সংগ্রামী জীবনের গল্প
২৩০ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ৫ ডিসেম্বর ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী শাবনুরের সংগ্রামী জীবনের গল্প

শাহীন আলম তুহিন,মাগুরা : ---বাক এবং শ্রবন প্রতিবন্ধী শাবনুর খাতুন (২৩) । শিশুকাল থেকেই জীবনের প্রতিটি ধাপে ধাপে সংগ্রাম করে তাকে বাঁচতে হয়েছে । এই সমাজে কথা বলতে না পারলে তার জীবনই অনেকটা বৃথা কিন্তু শাবনুর তার প্রতিবন্ধী জীবনকে জয় করে এখন স্বাবলস্বী । সে এখন সমাজ-সংসারের কোন বোঝা নয় । সে তার প্রতিবন্ধী জীবনকে জয় করে গার্মেন্টেস এর কাজ প্রতি মাসে ১৪  হাজার টাকারও বেশি মুজুরি আয় করছেন ।

শাবনুরের  বাবা মো: আবুবক্কর (৫৫) জানান, আমি গ্রামের বাজারের ছোট ফল ব্যবসায়ী । তার মা মারীনা বেগম (৪৭) গৃহিনী । আমাদের অভাবের সংসারে চাঁদের কনার মত ফুটফুটে ছোট শাবনুরের যখন জম্ম হয় তখন পরিবারের সবাই আনন্দে আপ্লুত ছিল কিন্তু সেই আনন্দ খুব বেশি দিন পরিবারকে আনন্দিত রাখতে পারেনি। ছোট শাবনুর একটু একটু করে যতই বড় হতে থাকল তার ভিতর একটা সমস্যা পরিলক্ষিত হতে থাকে। কেউ কথা বললে সেটা শাবনুরকে স্পশর্ করে না। এই শিশুর বয়স দুই বছর হলেও যখন সে কোন কথা শিখতে বা বলতে পারে না তখন বোঝা গেল শাবনুর বাক এবং শ্রবন প্রতিবন্ধী শিশু। এরপর থেকে শুরু হয় তার জীবনে পারিপার্শ্বিক অবজ্ঞা আর অবহেলা। তবে ছোট থেকেই তার লেখাপড়ার প্রতি একটা বিশেষ ঝোকছিল,এলাকায় কোন বধির স্কুল না থাকার পরেও শাবনুর প্রাথমিক বিদ্যালয় পেরিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেনি পর্যন্ত লেখাপড়া করে। স্কুলের পরিবেশ বাক ও শ্রবন প্রতিবান্ধী শিশুর অনুকুল না হওয়ায় পড়ালেখা আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। অনেক প্রতিবন্ধকতা  থাকা সত্বেও সে থেমে থাকার পাত্রী ছিলেন না। তাই নিজে বিভিন্ন ভাবে কাজ শেখার চেষ্টা করেছেন এমন কি গার্মেন্টেসেও কিছুদিন হেলপারের কাজ করেছে।

তিনি আরো বলেন, বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী হওয়ায় কর্মক্ষেত্রে তাকে কেউ সেভাবে মূল্যায়ন করেনি। তাই গার্মেন্টেস এর কাজ ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে এসে বেকার হয়ে যায়। এমন সময় আমরা  প্রতিবেশি একজনের কাছে  জানতে পারলাম যে,আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনে কাজের সুযোগ আছে  । তাই তাকে  এ এই প্রতিষ্ঠানের টেইলারিং সেকশনে  ভর্তি করি। আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনে কর্মীদের মাসিক কোন বেতন নেই এখানে কাজ হয় প্রডাশনের উপর ভিত্তি করে অর্থাৎ যত কাজ তত টাকা।  কাজে হাতে খড়ি থাকলেও এখানে এসে তাকে নতুন করে কাজ শিখতে হয়। তাই প্রথম মাসে তার আয় হয় মাত্র ৫২০ টাকা কিন্তু সে দমে যাননি। আফিসের কর্ম পরিবেশ,নিজের প্রতি বিশ্বাস আর এষানকার সহকর্মী এবং সুপারভাইজারদেও সহযোগিতায় শাবনুর  দ্রুতই কাজ টাকে নিজের আয়ত্বে আনেন।এখন তার প্রতিমাসে গড়ে আয় ১৪০০০ টাকার অধিক। মনের প্রবল ইচ্ছা শক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের কর্ম পরিবেশের কারণে সম্ভব হয়েছে।

এ প্রতিষ্ঠানে অনেকের  সাথে কথা বলে জানা গেল,যদিও শাবনুর  কথা শুনতে এবং বলতে পারেন না কিন্তু আকার ইঙ্গিতে অথবা লিখে দিলে তিনি বুঝতে এবং বোঝাতে পারেন। তার সবচেয়ে ভাল দিক হলো সে যে কাজ গুলো করেন সেটা এতটাই নিখুঁত যে তার কাজে কোন অল্টার হয়না।

উল্লেখ্য,উদ্দমী ও সাহসী শাবনুর বর্তমানে স্বাবলম্বী । সমাজ এবং পরিবারে তার গ্রহন যোগ্যতা বেড়েছে। তিনি তার আয়ের টাকা দিয়ে একটা ডিপিএস চালাচ্ছেন বাকি টাকা সংসারের প্রয়োজনে ব্যয় করছেন। জীবন চলার পথে যেতে চান অনেক দূর। ভবিষ্যতে নিজেই একটি দোকান দিয়ে টেইলারিং এর কাজ করতে চান ,এটাই তার জীবনের প্রত্যাশা।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)