শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
শুক্রবার ● ৩ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » ফিচার » সুন্দরবনের অমিত মৎস্য সম্পদ সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষনের অভাব
প্রথম পাতা » ফিচার » সুন্দরবনের অমিত মৎস্য সম্পদ সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষনের অভাব
৭০১ বার পঠিত
শুক্রবার ● ৩ জুন ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সুন্দরবনের অমিত মৎস্য সম্পদ সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষনের অভাব

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান ঃ

সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের অভাবে সম্ভাবনাময় মৎস্য সম্পদ নানা সমস্যার সম্মুখীন। মৎস্য সম্পদের বিশাল ভান্ডার বিনষ্ট হওয়ার ফলে বিশ্বের একক সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

সুন্দরবনের অর্থনৈতিক সম্পদের বিশাল আধার। উপকুল এলাকায় প্রায় ৫/৬ লাখ মানুষ সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর জীবিকা নির্বাহ করে। ১২ মাসই তারা সুন্দরবনের উপর জীবন জীবিকার খোঁজে কর্মতৎপরতা চালায়। শীত মৌসুমের শুরু থেকে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল কর্মজীবিদের আগমন বাড়তে থাকে।  জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল পেশাজীবির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অক্টোবর মাস থেকে ফেব্র“য়ারি মাস পর্যন্ত সুন্দরবনের নদী, খাল, মোহনা ও গভীর সমুদ্রে সর্র্বাধিক সংখ্যক মৎস্যজীবি মৎস্য আহরণে নিয়োজিত থাকে। শীত মৌসুম শুরুতে উপকুল এলাকার জেলে ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার জেলেরা সুন্দরবনে আসতে শুরু করে। তারা বসতি স্থাপন ও মাছ ধরার আনুষাঙ্গিক সরজ্ঞাম নিয়ে সুন্দরবনের দুবলার চর, আলোরকোলসহ বিভিন্ন চরে বসতি স্থাপন করে। ৪/৫ মাসের জন্য প্রায় ২ লাখ মৎস্যজীবি বিভিন্ন চরে খুপড়িঘর, মৎস্য আড়ৎ ও মাছ শুকানোর চালা স্থাপন করে। মৎস্যজীবিদের সারিবদ্ধ খুপড়ি ঘরগুলি জেলে পল্লীতে রূপ নেয়। এখানে জেলেরা প্রায় ৫ মাস ধরে মৎস্য আহরণ করে।

সুন্দরবনের জলাশয় ইনশোর মৎস্য ও অফশোর মৎস্য এ ২ ভাগে বিভক্ত। ইনশোর মৎস্য জলাশয় সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রায় ৮শ’ ১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা বিস্তত। এ এলাকায় ১৫/২০ রকমের জাল দিয়ে জেলেরা মৎস্য আহরণ করে। অপশর মৎস্য এলাকা সমুদ্রতীরের প্রায় ৩ হাজার ২শ’ ১০ বর্গ কিঃ মিঃ বিস্তৃত। জেলেরা এ গভীর সমুদ্রে বিশাল আকারের বেন্দীজাল দিয়ে মৎস্য আহরণ করে। যে সকল জেলে গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণে যায় তারা ৪/৫ দিনের খাবার সংগে নিয়ে যায়। এসব জেলেরা বিশাল জাল ফেলে মৎস্য আহরণ করে। আহারণকৃত মৎস্য, খাবার ও যোগযোগের জন্য ১টি ট্রলার প্রতিদিন দুর্বলার চর থেকে আসা যাওয়া করে। গভীর সমুদ্রে যেখানে জেলের জাল ফেলে। মাছ ধরে সেখানে দুর্বলার চর থেকে ট্রলারে যেতে প্রায় ৪/৫ ঘন্টা সময় লাগে।

সুন্দরবনের নদ, নদী, খাল, থেকে আহরিত এসব মাছ চরে আনার পর তা বাছাই করা হয়। সাগর বা বনের নদ, খাল থেকে আহরিত চিংড়িসহ কিছু সাদা মাছ চরের মৎস্য ডিপোতে সাথে সাথে বিক্রি হয়ে যায়। বাকি চিংড়ি বিভিন্ন প্রকারের সাদা মাছ কেটে চরের তৈরির করা মাছ শুকানো মাচায় শুকানো হয়। চরে শুকানো এসব শুটকি মাছ বস্তা বা হোগলার চটে ভরে গুদামজাত করে রাখা হয়। সুন্দরবনের অধিকাংশ মাছ ও চিংড়ি রোদে শুকিয়ে বা লবণ মিশিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বাজারজাত করা হয়। অনেক মাছ খুলনা অঞ্চলের মৎস্য কারখানায় বিক্রি করা হয়। শুটকি বা লবণ মিশ্রিত বেশির ভাগ মাছ এখান থেকে কার্গো বা ট্রলারযোগে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে বাজারজাত করা হয়। সুন্দরবনের চরগুলোতে এভাবে ৪/৫ মাছ যাবত চলে সুন্দরবন সংলগ্ন সাগর নদী খাল মোহনা থেকে আহরণ করা মৎস্য সম্পদের বিশাল অর্থনৈতিক কার্মকান্ড। প্রতি শীত মৌসুমে দুর্বলার চর এলাকায় আগত প্রায় ২ লাখ জেলেরা ১শ’ থেকে দেড়শ’ কোটি টাকার মাছ আহরণ করে থাকে। সুন্দরবন বাংলাদেশ ও ভারতের ভূখন্ড জুড়ে বিস্তত। বাংলাদেশ ভূখন্ডে এ বনের আয়তন ৫৫ লাখ ৭ হাজার ২ শ’ ৮৫ হেক্টরের মধ্যে ১৫ লাখ ৫ হাজার ৬শ’ হেক্টর নদী, নালা, খাল ও মোহনা অঞ্চল। বাংলাদেশের জল সম্পদের বৃহৎ অংশ সুন্দরবনের জনসম্পদ। সুন্দরবনের বিশালজলরাশি নদী, নালা, ও খাল দ্বারা বিস্তত।

সমুদ্র ও উপকূল এলাকায় নদ নদীতে জোয়ার ভাটার ফলে সুন্দরবনের নদী, নালা ও জলশয়ে পাওয়া যায় নানা জাতের জলজপ্রাণী ও মাছ। সাগর মোহনায় লবণাক্ত পানি ও নদ নদীর প্রবাহিত মিষ্টি পানির সংমিশ্রণে সুন্দরবনের জলাভূমির পানি অত্যন্ত উর্বর। সুন্দরবনের জলাশয়ে সমুদ্রের লোনাপানি এবং নদ নদীর জোয়ার ভাটার মিষ্টি পানির বিস্তততে বিভিন্ন প্রজাতি মাছ ও জলজপ্রাণীর প্রজনন ও লালনভূমি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সুন্দরবনের বি¯তৃত জলাশয় নদী, খাল, মোহনা ও গভীর সমুদ্রে নানা প্রজাতির মাছ ও জলজপ্রাণীর বিশাল আধার। বনের জলভূমিতে ১২৪ প্রজাতির গভীর পানির মাছ, ৫৩ প্রজাতির অগভীর পানির মাছ,৭ প্রজাতির কাঁকড়া, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, কচ্ছপ, হাঙ্গর, সাপ, কুমিরসহ বিভিন্ন মাছ ও জলজপ্রাণী রয়েছে।

সুন্দরবন ও সাগর মোহনায় মাছ ধরার জন্য প্রতি নৌকার পাশ ও কত জন জেলে মাছ ধরনে তার পারমিট প্রদান করা হয়। মাছ ধরার পর বিভিন্ন জাতের মাছের পরিমানের উপর কর আরোপ করা হয়। এই নিয়মে মাছ ধরলে সুন্দরবনের মৎস্যসম্পদের কোন ক্ষতি হবার কথা নয়। কিন্তু জেলেরা তাদের ইচ্ছামত ও নির্বিচারে মৎস্য আহরণ করে। এব্যাপারে সুন্দরবনের বন বিভাগ কোন নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছেনা। এ বিশাল জলরাশি পাহারা দেয়ার মত জনবল ও জলযান বনবিভাগের নেই। তাহাছাড়া বন বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীর পাস পারমিট প্রদানে ও কর আরোপে রয়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতি। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন ও উপকূল সাগর মোহনায় নানা জাতের সামুদ্রিক এবং লোনা পানির মাছের লালন ও চারণ ক্ষেত্র। সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ দেশের জলজ সম্ভাবনাময় মৎস্য সম্পদ। এ সম্ভাবনাময় মৎস্যদের সুষ্ঠুব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণের অভাবে একক ম্যানগ্রেভ সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদের অনাকাক্ষিত ক্ষতি হচ্ছে।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)