শনিবার ● ৪ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » সরকারের উন্নয়ন ভাবনা ও বিভাগীয় তথ্য অফিসের প্রচার-প্রচারণা
সরকারের উন্নয়ন ভাবনা ও বিভাগীয় তথ্য অফিসের প্রচার-প্রচারণা
মোঃ আব্দুল আজিজ
২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। কারণ জনগণের দেওয়া সরকারের এটি একটি অন্যতম প্রতিশ্রতি। ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেন। দেশবাসীর প্রত্যশা অনুযায়ী সরকার একটি সুখী সমৃদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিগত পাঁচ (২০০৯-২০১৩) বছরে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এ সময়ে অর্থনীতি, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, পরিবেশ উন্নয়ন, টেলিযোগাযোগ, অবকাঠামো নির্মাণ সহ বিভিন্ন খাতে গ্রহণ করা হয়েছে কার্যকরী পদক্ষেপ। যার ফলে বাংলাদেশ পরিণত হতে যাচ্ছে একটি মধ্যম আয়ের দেশে। অন্যদিকে সর্বত্র তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও এর উপকারিতার জন্য বাংলাদেশকে এখন বলা হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ।
একটি দেশের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে দেশের জনগণ। জন সম্পৃক্ততা ছাড়া দেশের সার্বিক অগ্রগতি ও উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই সরকারের অব্যহত এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় জন স¤পৃক্ততা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছেন বিভাগীয় জেলা তথ্য অফিস। গত দুই বছর আগেও তথ্য অফিসের কার্যক্রমের পরিধি ছিল সিমিত। সিনেমা প্রদর্শন ও সড়ক প্রচার (মাইকিং) ছাড়া আর তেমন কোন কার্যক্রম চোখে পড়তো না। তাও আবার জেলা সদরেই সিমাবদ্ধ ছিল কার্যক্রম। তথ্য অফিসের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি দপ্তর সরকারের রয়েছে এটা গ্রাম অঞ্চলের মানুষ জানতো না। বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে তথ্য অফিসের সরাসরি কোন কার্যক্রম না থাকায় তথ্য অফিসের সুফল থেকে বঞ্চিত ছিল দেশের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠি। সরকারের নানামূখী পদক্ষেপে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের উন্নয়নের চিত্র যেমন বেড়েছে, তেমনি অনেক রকম কাজের পরিধি বেড়েছে বিভাগীয় তথ্য অফিসের। বিশেষ করে সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় জন সম্পৃক্তা বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তথ্য অফিসের পক্ষথেকে। আর এ সুবাদে জনগণের কাছা-কাছি যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। জেলা সদরে সিমাবদ্ধ থাকা কার্যক্রমকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তৃণমূল পর্যায়ে। বিশেষ করে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে গত দু’বছরে উপজেলা পর্যায়ে বেশ কিছু কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে জেলা তথ্য অফিস। উন্নয়নের চিত্র প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত করে পৌঁছে দেয়া হয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে।
বিভাগীয় জেলা তথ্য অফিসের প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ১ হাজার মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। যা ২০১৬ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ দাড়াবে ১ হাজার ২৩৫ মার্কিন ডলার। এছাড়া দারিদ্র বিমোচন, জেন্ডার সমতা এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সংক্রান্ত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাফল্য এসেছে। সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম জোরদার করার মাধ্যমে বয়স্ক, দরিদ্র, নির্যাতিত, পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠি ও শিশুদের অবস্থান উন্নত করা হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ খাতসমূহে অন্তর্ভুক্ত করে খাদ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণ এবং কৃষি খাতে দেয়া হয়েছে অগ্রাধিকার। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে তৃণমূল পর্যায়ে যেমন ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র, জেলা ই-সেবা কেন্দ্র, জাতীয় তথ্যকোষ, ইত্যাদি যুগান্তাকারী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে টেলিডেনসিটি বেড়ে দাড়িয়েছে ৭৩ শতাংশে এবং মোবাইল ফোন গ্রহকের সংখ্যা ১১ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। উন্নয়নের সাথে সাথে এক টেকসই ভবিষ্যৎও সরকারের পরিকল্পনা থেকে বাদ যায়নি। তাইতো গুরুত্ব পেয়েছে পরিবেশ সংরক্ষণ কৌশল এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে চলার কর্মকৌশল। এ সমস্ত পদক্ষেপের ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে, প্রযুক্তির ব্যবহারে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে এবং পরিবেশ ও বিশ্ব জলবায়ু সংরক্ষনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশসমূহের মধ্যে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনের জন্য বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বে পরিণত হয়েছে একটি মডেল রাষ্ট্রে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পাঁচ (২০০৯-২০১৩) বছরে মাথাপিছু আয় ১ হাজার মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। বেড়েছে রপ্তানি আয়, উন্নিত হয়েছে রেমিটেন্স ও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ। নেমেছে দারিদ্র ও অতিদারিদ্র হার। বাজেটের আকার বেড়েছে কয়েক গুণ। কৃষি ক্ষেত্রে প্রনয়ন করা হয়েছে জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৩। বেড়েছে খাদ্য শস্যের উৎপাদন। নিরাপদ খাদ্য মজুত গড়ে তোলার লক্ষে বাগেরহাট জেলায় নির্মাণ করা হয়েছে ৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার কংক্রিট গেইন সাইলো। সরকারি খাদ্য গুদামের ধারণক্ষমতা ১৪ লাখ মেট্রিক টন থেকে ১৯ লাখ মেট্রিক টনে উন্নিত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রাণালয়ের আওতায় ১৬ হাজার ২৫০ কিলোমিটার সড়ক ১,৩০,৭৬১ মিঃ ব্রিজ-কালভার্ট ১৬টি নতুন উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন ৭৬৫টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ১৩ কোটি শিক্ষার্থীর মাঝে প্রায় ১শ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। ১৩৩.৭০ লক্ষ শিক্ষার্থীকে ২,২৪৫.৬৫ কোটি টাকা উপবৃত্তি সহ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয় করণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে ২০০৯ সালের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি উন্নিত হয়েছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু, সুলতানা কামাল সেতু, শাহ্ আমানত (রহ) সেতু, শহিদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু, তিস্তা সেতু ও থানচি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যে আর্ন্তজাতিক ক্ষেত্রে ২০১০ সালে জাতিসংঘ পুরস্কার, ২০১১ সালে সাউথ সাউথ পুরস্কার, জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি, জাতীয় জনসংখ্যানীতি ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে ১২ হাজার ২৪৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ১৫ হাজার চিকিৎসক সহ নিয়োগ নেয়া হয়েছে ৬০ হাজার জনবল। দেশের জনগণের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭০ বছর হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে ১.৩৭ শতাংশে নেমেছে। পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণকারীর বৃদ্ধির হার ৬১ শতাংশে উন্নিত হয়েছে। শিশু মৃত্যুর হার অর্ধেক কমে প্রতি হাজারে ৩৩ হয়েছে। মাতৃমৃত্যু হার কমে প্রতি লাখে ২৯৪ দাড়িয়েছে। ৪৮২ হাসপাতালে, মোবাইল ফোন সেবা চালু করা হয়েছে। প্রণয়ন ও সংশোধন করা হয়েছে ১৯টি নতুন আইন। মোবাইল ফোনের থার্ড জেনারেশন (থ্রিজি) এর প্রবর্তন হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় ১ লাখ ৪২ হাজার ৭৩টি ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে কৃষি খাস জমি প্রদান করা হয়েছে। ১৯০ টি গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠা করে ভূমিহীন ৮ হাজার ২২২টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ পাস ও তথ্য কমিশন গঠিত হয়েছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ৩১টি রেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। ৬৪টি জেলায় ৬৮টি প্রতিবন্ধি সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র স্থাপিত করা হয়েছে। বিশ্বের ১৫৭টি দেশে ২৪ লাখ কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে। ৫ বছরে মৎস্য রপ্তনি করে আয় হয়েছে ২০,১৬০ কোটি টাকা। মাছের উৎপাদন ২৫,৬৩ লক্ষ মেট্রিক টন থেকে ৩৪,১০ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ভাতাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ থেকে ২ লাখ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। আল-কুরআন এর ডিজিটাল রূপ উদ্বোধন করা হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ-সুরক্ষা) বিধিমালা ২০১৩, জাতীয় নারী উন্নয়ননীতি ২০১১, জাতীয় শিশুনীতি ২০১১ প্রণয়ন করা হয়েছে। খুলনা বিভাগীয় তথ্য অফিসের উপ-পরিচালক মোঃ জাভেদ ইকবাল জানান, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে বিগত পাঁচ বছরে বর্তমান সরকার উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। সরকারের এ অর্জন তুলে ধরতে এবং সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় জন সম্পৃক্তা বাড়াতে বিভাগীয় জেলা তথ্য অফিসের পক্ষথেকে প্রচার-প্রচারণার জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যার ফলে তথ্য অফিসের কর্মের পরিধি কয়েকগুণ বেড়েছে। প্রচার-প্রচারণার অংশ হিসাবে ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা সদরে উঠান বৈঠক, র্যালী-শোভাযাত্রা, মহিলা সমাবেশ, মতবিনিময় সভা, সঙ্গীতানুষ্ঠান, কর্মশালা, প্রেস ব্রিফিং ও ভিডিও কনফারেন্স করা হয়েছে। বিভাগীয় তথ্য অফিসের প্রচার-প্রচারণা মূলক কার্যক্রম ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে ও সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে টেকসই এবং এর সাথে জন সম্পৃক্তা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
লেখকঃ
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
পাইকগাছা, খুলনা।
ই-মেইলঃ [email protected]