রবিবার ● ১৪ জানুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » কৃষি » পাইকগাছায় মৎস্য ঘেরে বিনা চাষে সরিষার আবাদে সফলতা পেয়েছে কৃষক হারুণ
পাইকগাছায় মৎস্য ঘেরে বিনা চাষে সরিষার আবাদে সফলতা পেয়েছে কৃষক হারুণ
উপকূলের লবনাক্ত পাইকগাছার মৎস্য ঘেরে বিনা চাষে সরিষার আবাদ করে সাফাল্য পেয়ে সাড়া ফেলেছেন কৃষক হারুণ। মৎস্য ঘেরের লবনাক্ত মাটিতে সরিষা ভালো হয়েছে। এই প্রথম উপজেলায় তার মৎস্য ঘেরের ৭০ বিঘা জমিতে বিনা চাষে বিনা-১০ নামে সরিষার বুনে আবাদ করেছেন। মৎস্য ঘেরে এখন দৃষ্টিনন্দন হলুদ সরিষা ফুলে ছেয়ে গেছে।ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল আমিন ও উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অসীম কুমার দাশ সরিষার ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন।
পাইকগাছার অধিকাংশ জমি আমন ধান কাটার পর বোরো আবাদের আগে দুই মাসের বেশি সময় পড়ে থাকে। আর এই সময়ের মধ্যে একটি বাড়তি ফসল উৎপাদনের জন্য ধান কাটার পর অল্প কিছু জমিতে বিনা চাষে সরিষার আবাদ করা হয়। ধান কাটার পর শূন্য চাষে জমিতে শুধু বীজ ও সার ছিটিয়ে দিলে চলে। পরবর্তী সময়ে আর কোনো সেচ বা সারের প্রয়োজন হয় না। বীজ বপনের মাত্র ৮০ থেকে ৮৫ দিনে মধ্যে এ সরিষা কৃষকের ঘরে ওঠে। বিনা উদ্ভাবন করেছে স্বল্প জীবনকাল ও উচ্চ ফলশীল সরিষার একটি অসাধারণ জাত। আর বিনা-১০ নামে এই সরিষার জাতটি চাষ করতে জমিতে কোনো চাষ দিতে হয় না।
ষোল চাষে মুলা, তার অর্ধেক তুলা, তার অর্ধেক ধান, বিনা চাষে পান। প্রচলিত এই খনার বচনের সঙ্গে নতুন যুক্ত হলো সরিষার নাম। চলতি বছর জমিতে কোনো চাষ ছাড়াই আবাদ হয়েছে বিনা সরিষা-১০। স্বল্প জীবনকালীন ও উচ্চ ফলনশীল এই সরিষার আবাদে কৃষরা একটি বাড়তি ফসল ঘরে তুলে অধিক লাভবান হচ্ছেন।
পাইকগাছা উপজেলার মালথ গ্রামের মৃত শাহজদ্দীন গাজীর ছেলে কৃষক হারুন গাজী। গদাইপুর ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদের তীরে হিতামপুর মৌজায় ৮০ বিঘা মৎস্য ঘের আছে। তিনি ঘেরে লবন পানিতে চিংড়িসহ বিভিন্ন মাছের চাষ করেন। এই প্রথম তার ঘেরের লবণাক্ত জমিতে বিনা চাষে বিনা-৯ জাতের সরিষার আবাদ করেছে। প্রথম বছরেই ভালো ফলন হবে বলে আশা করছেন কৃষক হারুন গাজী। বর্তমানে তার সমস্ত ক্ষেত হলুদ সরিষা ফুলে ভরে গেছে, কিছু কিছু গাছে ফলও ধরেছে। কৃষক হারুন গাজী বলেন, আমি প্রায় ১০ বছর যাবৎ কপোতাক্ষ নদের তীরে হিতামপুর মৌজায় ৮০ বিঘা জমিতে মৎস্য লিজ ঘের করে আসছি। অক্টোবর নভেম্বরের দিকে মাছ আহরণের পর চিংড়ি ঘেরের জমি ২ থেকে ৩ মাস পতিত পড়ে থাকে। এ জন্য অনেকের পরামর্শ নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বীজ সংগ্রহ করে ৭০ বিঘা জমিতে বিনা-৯ ও বিনা-১০ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। এখানে কোন চাষ করা লাগেনি।২৯ কেজি বীজ নরম মাটিতে বীজ বপন করেছি।সবকিছু মিলে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।বিনা চাষে সরিষার ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অসীম কুমার দাশ বলেন, দেশের মোট চাহিদার ৯০ ভাগ তেল আমদানী করতে হয়। আমদানী নির্ভরতা কমাতে বর্তমান সরকার এবং কৃষি বিভাগ তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এ লক্ষে কৃষি প্রনোদনা সহ কৃষককে বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে। বিনা চাষ পদ্ধতিতে সরিষার আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কৃষকরা দিন দিন বিনা চাষে সরিষা আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। উপজেলায় সরিষার আবাদও বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে লবণাক্ত জমিতে বিনা চাষের সরিষা আবাদ, তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আশা করছি কৃষক হারুন গাজীকে অনুসরণ করে অন্যান্য মৎস্য চাষীরাও তাদের চিংড়ি ঘেরে বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষার আবাদ করতে এগিয়ে আসবে। বিনা চাষে সরিষা ফসল উৎপাদনের যে সম্ভবনা তৈরী হয়েছে এটি কাজে লাগাতে পারলে এলাকার কৃষকরা অনেক লাভবান হবেন।আগামীতে আমন ধান কাটার পর উপজেলার ফসলি ধানি জমি বিনা চাষে সরিষা আবাদের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।