বুধবার ● ২৪ জানুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » সুন্দরবন » সুন্দরবনের গোলপাতা সংগ্রহে প্রস্তুত হচ্ছে পেটকাটা বড় নৌকা
সুন্দরবনের গোলপাতা সংগ্রহে প্রস্তুত হচ্ছে পেটকাটা বড় নৌকা
সুন্দরবন এলাকার পাশজুড়ে পেটাকাটা নৌকা মেরামতের ধুম শুরু হয়েছে। গোলপাতা সংগ্রহ করতে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের নৌকাকে স্থানীয়রা পেটকাটা নৌকা বলেন। এটি আকারে অনেক বড় এবং পেটের দিকে চওড়া থাকে।নৌকার মাধখানে কিছু অংশ কাটা থাকে গোলপাতা লোড-আনলোড করার জন্য। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে চলতি মাসের শেষের দিকে এই নৌকাগুলোতে করে সুন্দরবন থেকে গোলপাতা সংগ্রহ করা হবে।
সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের নলিয়ান রেঞ্জের পাঁচটি স্টেশন এলাকার বিভিন্ন গ্রামে এ নৌকা মেরামতের দৃশ্য চোখে পড়ে। নলিয়ান রেঞ্জের সুতারখালী, কালাবগী, বানীয়াখালী,পাইকগাছা হড্ডা, মৌখালী, বাশাখালী, গড়ইখালী, মহেশ্বরীপুর, মহারাজপুর, জোড়শিং, কাশিয়াবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় পেটকাটা নৌকা মেরামত ও তৈরির দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।গোলপাতা মৌসুম সামনে রেখে শুরু হয়েছে পেটকাটা নৌকা মেরামত।পাকগাছার শিববাড়িতে নদীর চরে নৌকা মেরামত করা হচ্ছে।
আগামী ২৮ জানুয়ারি থেকে বাওয়ালিদের গোলপাতা সংগ্রহে সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে বলে বন বিভাগ সুত্রে জানা যায়। এর আগে নৌকা মেরামতে করছে বাওয়ালিরা। সুন্দরবন থেকে যারা গোলপাতা সংগ্রহ করেন, তাদের বলা হয় বাওয়ালি। বাওয়ালিদের গোলপাতা সংগ্রহের বিশেষ ধরনের নৌকাগুলো আকৃতিতে অনেক বড় হওয়ায় অনেকে বড় নৌকা বা পেটকাটা নৌকা বলে। অনুমতিপ্রাপ্ত ৫০০ মণ ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একেকটি নৌকা ২৮ দিন করে সুন্দরবনে থেকে গোলপাতা আহরণ করতে পারবে। আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত চলবে গোলপাতা আহরণের মৌসুম চলবে।
পাইকগাছা উপজেলা শীববাটি গ্রামের গোলপাতা ব্যাবসাহী ও বাওয়ালি বলেন, আমার বড় নৌকাটি ১০ বছর আগে তৈরি করা। এখন প্রতিবছর গোলপাতা আহরণের আগে মেরামত করা লাগে। এতে খরচ হয় প্রায় এক লাথ টাকা। আর নতুন একটি নৌকা নির্মাণে খরচ প্রায় ১০ লাখ টাকা। তিনি আরও বলেন, গোলপাতা আহরণের নৌকাগুলো অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যায় না। এ কারণে গোলপাতার মৌসুম শেষ হলে নৌকাগুলো নদীর চরে ফেলে রাখতে হয়। যার কারণে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশির ভাগ।
দেখা যায়,শিবসা নদীর চরে পুরোনো বড় দুটি নৌকা মেরামতে ব্যস্ত মিস্ত্রি। একটি আতিয়ার রহমানের ও আরেকটি মাহাবুব রহমানের। বড় নৌকাগুলো কাত করে শক্ত কাঠ দিয়ে বেঁধে নিচের পাটাতনে তক্তা বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার কোনো কোনো নৌকায় দেওয়া হচ্ছে আলকাতরার প্রলেপ।
নৌকা সংস্কারের কাঠ মিস্ত্রী আছাবুর বলেন, সারা বছরই নৌকা তৈরি ও মেরামতের কাজ করেন। গোলপাতা আহরণের সময় এলে বড় নৌকাগুলো মেরামতের কাজ হয় বেশি। বছরের অন্য সময় সুন্দরবনে জেলেদের নৌকা তৈরি ও মেরামতে ব্যস্ত থাকতে হয়। তিনি একটি বড় নৌকা মেরামতের ৩০ হাজার টাকা মুজুরি নিচ্ছেন।
বাওয়ালি আতিয়ার রহমার বলেন, এ বছর নৌকা মেরামতে খরচ বেশি হচ্ছে। ১৪ কেজির একটিন আলকাতরার দাম ৩ হাজার ৩০০ টাকা। একটি নৌকায় আলকাতরা লাগে প্রায ১০টিন আলকাতরার পাত্র। সে হিসাবে শুধু আলকাতরা কেনায় খরচ হয় ৩৩ হাজার টাকা। এরপর আবার মিস্ত্রি, শ্রমিক, কাঠ ও লোহা কেনা খরচ তো আছে।
বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জ গোলপাতা আহরণ কূপ (জোন) কর্মকর্তা মো. তানজিলুর রহমান। তিনি বলেন, ২৮ জানুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত বাওয়ালিরা সুন্দরবনে নির্ধারিত স্পট থেকে গোলপাতা আহরণ করবেন। একটি নৌকায় সর্বোচ্চ ২০০ কুইন্টাল (৫০০ মণ) গোলপাতা বহন করা যাবে। অতিরিক্ত বহন করলে দ্বিগুণ টাকা জরিমানা করা হবে। গোলপাতা ছাড়া বাওয়ালিরা সুন্দরবন থেকে অন্য কোনো কাঠ সংগ্রহ করতে পারবেন না।
খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে বন বিভাগের পক্ষ থেকে গোলপাতা পারমিট দেওয়ার সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। পারমিট গ্রহণ করার পর বাওয়ালিদের সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়া হবে। যাতে তারা নিবিঘ্নে গোলপাতা কাটতে পারে।