শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
সোমবার ● ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » সুন্দরবন » সুন্দরবনে বাঘ রক্ষায় বানানো হচ্ছে টিলা
প্রথম পাতা » সুন্দরবন » সুন্দরবনে বাঘ রক্ষায় বানানো হচ্ছে টিলা
১৪৯ বার পঠিত
সোমবার ● ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সুন্দরবনে বাঘ রক্ষায় বানানো হচ্ছে টিলা

---

অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনা ঃ বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনের ১২টি স্থানে উঁচু টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২২ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।
বৈরী আবহাওয়া ও পূর্ণিমার প্রভাবে নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক ফুট বেড়ে প্রায়ই তলিয়ে যায় সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা। এতে আমাদের জাতীয় পশু ও বিশ্বখ্যাত বেঙ্গল টাইগার বা বাঘ হুমকির মুখে আছে। এবার বাঘ ও বাঘের খাবার বন্য প্রাণী রক্ষায় সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে বানানো হচ্ছে উঁচু ‘বাঘের টিলা’।

সুন্দরবনের যেসব স্থানে বাঘের আনাগোনা বেশি, এমন ১২টি স্থানে মাটি দিয়ে উঁচু করে টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে টিলার পাশে খনন করা হচ্ছে পুকুর। জলোচ্ছ্বাস বা বন্যার সময় যাতে বন্য প্রাণীগুলো উঁচু টিলায় আশ্রয় নিয়ে মিঠাপানি পান করতে পারে, সে জন্য এই পুকুর নির্মাণ করা হচ্ছে।

বন বিভাগ সূত্র আরও জানায়, ২০২২ সালের এপ্রিলে ৩৫ কোটি ৯০ লাখ ৮০ হাজার টাকার সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এই প্রকল্পের দু’টি অংশের একটি বাঘ জরিপ ও অন্যটি বাঘ সংরক্ষণ। ২০২৫ সালের মার্চে শেষ হওয়ার কথা। এই প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

প্রকল্পের বাঘ জরিপ অংশের অনেক কাজ শেষ হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জ ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে জরিপের কাজ করে ফেলেছে। বর্তমানে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে জরিপ চলছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হবে। এর জন্য ব্যায় হবে ৩ কোটি ২৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। বাকি টাকা ব্যায় হবে বাঘ সংরক্ষণের জন্য।

প্রকল্পের বাঘ সংরক্ষণ অংশে ১২টি টিলা নির্মাণ, ৫ কিলোমিটার এলাকায় বেড়া, ২টি বাঘের শরীরে স্যাটেলাইট ট্র্যাকার লাগানো, জিপিএস, বাঘ অজ্ঞানের জন্য ট্রাঙ্কুলাইজিং গান, ক্যামেরা, ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যদের জন্য পোশাক ক্রয় ও প্রশিক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু কার্যক্রম রয়েছে।

সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা নির্মল কুমার মণ্ডল বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে বৃষ্টিপাত এবং উঁচু জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের ভেতরে কোথাও তিন ফুট, কোথাও এর কম-বেশি তলিয়ে যায়। এতে বনের মধ্যে প্রাণীদের অসুবিধা হয়। উঁচু টিলার নির্মাণ কাজ শেষ হলে বনে পানি বাড়লে প্রাণীরা আশ্রয় নিতে পারবে। খুব বেশি অসুবিধা হবে না।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ খুব ভালোভাবে চলছে। সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জের বাঘ জরিপের জন্য ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। আমরা জরিপের জন্য যেসব ক্যামেরা স্থাপন করেছিলাম, তার অধিকাংশে বাঘের ছবি পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে বনে বাঘের খাদ্য হরিণের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি মাথায় রেখেই বনের অভ্যন্তরের বিভিন্ন জায়গায় উঁচু টিলা তৈরি করা হচ্ছে। যাতে বনে পানি বাড়লে বন্য প্রাণীগুলো সেসব উঁচু টিলায় আশ্রয় নিতে পারে।’

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের চাঁদপাই, শরণখোলা, খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের প্রতিটিতে ৩টি করে মোট ১২টি বাঘের টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে খুলনা রেঞ্জের কয়রা উপজেলার আওতাধীন নীলকমল অভয়ারণ্য কেন্দ্রে একটি বাঘের টিলার নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়েছে। নীলকমল ছাড়াও সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের পাটকোস্টা, ভোমরখালী, সাতক্ষীরা রেঞ্জের পুষ্পাকাটি, মান্দারবাড়িয়া ও নোটাবেকী, চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের কটকা, কচিখালী, কোকিলমুনি, সুপতি, টিয়ারচর ও দুধমুদিতে টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে।


কয়রা উপজেলার সুন্দরবনের নীলকমল অভয়ারণ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আবু সাঈদ বলেন, বনের মধ্যে মাটি তুলে উঁচু টিলা বানানো হয়েছে। পাশেই মিঠাপানির পুকুর খনন করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগের বিষয়টি মাথায় রেখে পুকুরের চারপাশে উঁচু পাড় দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এখন টিলার ওপর তারা ঘাস লাগানোর চেষ্টা করছেন।

বন কর্মকর্তারা জানান, বনে থাকার জন্য বাঘেরা সব সময় উঁচু স্থান বেছে নেয়। বিশেষ করে তাদের প্রজননের সময়ে শুষ্ক ও উঁচু স্থানের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া মা বাঘেরা শাবকের কাছ থেকে দূরে যেতে চায় না। টিলা নির্মিত হলে বাঘের প্রজননের সুবিধা হবে। একই সঙ্গে প্রজনন স্থানের পাশেই মিঠাপানি পান করতে পারবে।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)