শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
মঙ্গলবার ● ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » মুক্তমত » ভালোবাসার চকলেট ডে
প্রথম পাতা » মুক্তমত » ভালোবাসার চকলেট ডে
২০৯ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ভালোবাসার চকলেট ডে

---  প্রকাশ ঘোষ বিধান

৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব চকলেট দিবস।  একাধিক দেশে আজকের দিনটি অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয়।  শিশু থেকে বৃদ্ধ- চকলেট ভালবাসেন না এমন মানুষ পাওয়া  দুষ্কর। চকলেটের গুণে যেমন সম্পর্কও মধুর হয়ে ওঠে তেমন শরীর ভাল রাখে এক টুকরো চকলেট।

চকলেট পৃথিবীর জনপ্রিয়তম ফ্লেভারগুলোর একটি।সবার কাছে অত্যন্ত প্রিয় এই খাদ্যটি। চকলেট নানা প্রকার প্রাকৃতিক ও প্রক্রিয়াজাতে তৈরি খাবারকে বোঝায় হয়।যা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় কোকো  গাছের বীজ  থেকে উৎপাদন করা হয়। বিজ্ঞানীরা এক বিশেষ ধরনের উদ্ভিদ এর নাম দিয়েছিলেন ক্যাক্যাও। মূলত উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে জন্মানো এই উদ্ভিদের বাসস্থান ছিল আমাজন এর ঘন জঙ্গলে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দক্ষিণ আমেরিকার নিম্নভূমির স্থানীয় উদ্ভিদ কোকো অন্তত তিন’শত বছর মধ্য আমেরিকা  ও মেক্সিকোতে চাষ করা হচ্ছে। এই ফলের পাকা বীজ প্রাথমিক অবস্থায় তেতো হয়। ফারমেনট করা ওই বীজগুলি কে শুকিয়ে নেওয়া হয়। তারপর  রোলারের সাহায্যে পেষা হয়। বীজের ভেতরে যে স্নেহজাতীয পদার্থ আলাদা করে সেখান থেকে কোকা পাউডার আলাদা করে নেওয়া হয়। যা থেকে পড়ে তরল চকলেট পাওয়া যায়। কোকোয়া গাছের বীজের তীব্র তেতো স্বাদ আছে, তাই চকলেটের স্বাদগন্ধ  তৈরি করবার জন্যে অবশ্যই একে গাঁজিয়ে  নিতে হয়।

ভ্যালেন্টাইনস উইকের তৃতীয় দিন হলো চকলেট ডে। প্রথমে রোজ ডে তারপর প্রোপোজ ডে আর ৯ ফেব্রুয়ারি  চকলেট ডে। ভালো কাজ শুরু করার আগে মিষ্টিমুখ না করলে নয়।আর চকলেট দিয়ে দিয়ে মিষ্টিমুখ করার গুরুত্ব অনেক দিনের। এ দিনটি ভ্যালেন্টাইন স সপ্তাহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। চকলেট যেমন অভিমান ভাঙতে পারে, তেমনই দেয়া-নেয়ার সম্পর্কও আরও মধুর করতে পারে।

৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব চকোলেট দিবসটি নিয়ে নানা তর্ক বিতর্ক রয়েছে। ২০০৯ সালে সর্বপ্রথম বিশ্ব চকোলেট দিবস পালন করা হয়েছিল।  ৯ ফেব্রুয়ারি, চকলেট দিবস পালন করা হলেও বিশ্বের কিছু ক্যালেন্ডার ভিন্ন কথা বলছে। বছরে প্রায় ১১ বার সারা বিশ্ব জুড়ে কোথাও না কোথাও চকোলেট দিবস পালন করা হয়। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৯ ফেব্রুয়ারি ছাড়া ৭ জুলাই বিশ্ব চকলেট দিবস পালন করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৩ সেপ্টেম্বরকে ইন্টারন্যাশনাল চকলেট ডে-এর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ব্রিটেনে ২৮ অক্টোবর দেশটির বাসিন্দারা জাতীয় চকলেট দিবস পালন করে। হালকা তেতো-মিষ্টি চকলেটের দিবস ১০ জানুয়ারি, দুধের স্বাদের চকলেট ডের জন্য ২৮ জুলাই, সাদা রঙের চকলেট ডের জন্য ২০ সেপ্টেম্বর, টুকরো টুকরো চকলেটের জন্য ১৫ মে, আইসক্রিম চকলেটের জন্য ৭ জুন, চকলেট মিল্ক সেকের জন্য ১২ সেপ্টেম্বর দেখা যায় বিশ্বের বিভিন্ন ক্যালেন্ডারে। এছাড়াও যেকোনো উপকরণ দিয়ে সাজানো চকলেট ডের জন্য ১৬ ডিসেম্বর।

চকলেটের ইতিহাস বহু পুরোনো, আড়াই হাজার বছর পুরোনো। তখন থেকে এটি মানুষের কাছে সমাদৃত হয়ে আসছে। প্রাচীন ওলমেক (১২০০–৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ও মায়া সভ্যতার (খ্রিস্টপূর্ব ২৫০–১৬৯৭ খ্রিষ্টাব্দ) মানুষদের হাত ধরে এর জন্ম। আমাজন জঙ্গলের কোকোগাছের বীজ থেকে তৈরি হয় প্রথম চকলেট। তখন অবশ্য চকলেট ছিল তরল। পানীয় হিসেবে পান করা হতো। প্রাচীন আজটেক সভ্যতায় (১৩০০–১৫২১ খ্রিষ্টাব্দ) চকলেটকে রীতিমতো স্রষ্টার উপহার বা স্রষ্টার খাবার বলে মনে করা হতো। সম্ভবত এ জন্যই শ্রেণিবিন্যাসের জনক ক্যারোলাস লিনিয়াস চকলেটের নাম দিয়েছিলেন থিওব্রোমা কোকো, যার অর্থ করা হয়েছিল দেবতাদের খাবার। এমনকি সে সময় আজটেকরা কোকো বীজকে তাদের কারেন্সি তথা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করত।

চকলেট মূলত মায়া ও অজটেক সভ্যতার অবদান। মায়া ও অজটেক সভ্যতার সময়কালে চকলেট পানীয় হিসেবে পান করা হতো। যা কোকোর বীজ থেকে তৈরি করা হতো।  ধারণা করা হয়, ইউরোপে ১৫৫০ সাল থেকে এ দিনে চকলেট দিবস পালিত হয়ে আসছে। চকেলেট এর স্বাদ প্রথম পেয়েছিল লাতিন আমেরিকার মায়া সভ্যতা। নামটিও এসেছে তাদের ভাষার ‘স্কোকোলেট’ থেকে। যার অর্থ অম্ল পানীয়। কোকো গাছের বীজ থেকে প্রস্তুত এই চকোলেট গোড়ার দিকে মূলত পানীয় হিসাবেই ব্যবহার করা হত। সে আমলে আবার অনেকে তা রান্নার মশলা হিসাবেও ব্যবহার করতেন। তখন কেবল মায়া রাজ পরিবারের সদস্য, প্রশাসক, ধর্মগুরু, সৈনিক এবং সম্মানীয় বণিক সম্প্রদায়ই একমাত্র এর স্বাদ আস্বাদন করতে পারত।

মন ভালো করতে এক টুকরো চকলেট যথেষ্ট। কারণ চকলেটে রয়েছে ট্রিপটোফেন নামক উপাদান। যা মানুষের মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কেউ যদি প্রতিদিন প্রায় ৪০ গ্রাম করে ডার্ক চকোলেট খান তাহলে দুই সপ্তাহের মধ্যে ওই ব্যক্তির শরীরের স্ট্রেস হরমোন অনেকাংশ কমে যাবে। ডার্ক চকলেটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কিছু সক্রিয় জৈব উপাদান যা মানুষের শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এইসব উপাদানের তালিকায় রয়েছে পলিফেনলস, ফ্ল্যাভানল প্রভৃতি। এগুলি ক্যানসার রোধ করতে সাহায্য করে।চকোলেট হার্ট ভাল রাখতে সাহায্য করে। বিশেষত মহিলাদের। দুধ, চিনি ও মাখন থাকার জন্য চকোলেট খুব ভাল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এমনকী, আপেলের তুলনায় পাঁচ গুণ ফ্ল্যাভনয়েড রয়েছে চকলেটে। স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে চকলেটে রয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নেচার নিউরোসাইন্সের এক গবেষণা অনুযায়ী, ৫০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী সুস্থ ব্যক্তিরা প্রায় তিন মাস উচ্চ ফ্ল্যাভানল যুক্ত কোকোয়া পানীয় পান করেছিলে, তাদের অন্যান্যদের তুলনায় স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।চকলেটের ফ্লাভানলের মধ্যে সূর্যরশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করার ক্ষমতা রয়েছে। টানা তিন মাস চকোলেট খেলে ত্বক রোদে পোড়ার হাত থেকে রক্ষা পায়।চকোলেট যেহেতু মিষ্টি জাতীয় খাবার, তাই সব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিমাণে চকলেট খাওয়া ক্ষতিকর। তাই নিজেদের শরীর স্বাস্থ্য বজায় রেখে তবেই চকোলেট খাওয়া উচিত।

অতীতে চকলেট জনপ্রিয় পানীয় হিসেবেই বিখ্যাত ছিল। জে এস ফ্রাই অ্যান্ড সন্স সংস্থা প্রথম ১৮৪৭ সালে শক্ত চকলেট তৈরি শুরু করল। আধুনিক চকলেটের জনক হলেন জোসেফ ফ্রে। তিনি ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে ডাচ কোকোর সঙ্গে অপসারিত কোকো মাখন মিশিয়ে প্রথম চকলেট পেস্ট তৈরি করেন। ইউরোপের সাধারণ মানুষের কাছে চকলেট পৌঁছতে আর তেমন দেরি হয়নি। এরপর ১৮৪৯ সালে রিচার্ড ক্যাডবেরি শুরু করেন চকলেট তৈরি।  ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে ক্যাডভেরি নামে একটি ছোট কোম্পানি চকলেট ক্যান্ডির বক্স ইংল্যান্ডে বাজারজাত করতে শুরু করে। এর কয়েক বছর পরই নেসলে বাজারে নিয়ে আসে মিল্ক চকলেট। তারপর ক্রমান্বয়ে বর্তমানে চকলেট ব্যবসা এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। পৃথিবীর অনেক দেশই চকলেটের জন্য বিখ্যাত। এরমধ্যে বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত।

যুগ যুগ ধরে অশেষ প্রেমের চিহ্ন হিসেবে চকলেটের আদান-প্রদান প্রচলিত। তরুণ-তরুণীদের কাছে ফেব্রুয়ারিতে বিশেষ কিছু দিন রয়েছে। যা তারা ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে কাটিয়ে থাকেন, বিশেষ মুহূর্ত স্মৃতি করে রাখেন। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে এই বিশেষ দিনের। রোজ ডে ও প্রপোজ ডের পর চকলেট ডে।  ফুল হাতে যদি প্রিয় মানুষটিকে এখনো ভালোবাসার কথা বলা না হয়ে থাকে তাহলে এদিনে চকলেট হতে পারে সেরা উপহার। মিষ্টি সুস্বাদু এই ছোট্ট উপহারই প্রিয় মানুষের মুখে হাসি এনে দিতে পারবে। চকলেট ডে তে প্রিয় মানুষটিকে চকলেট দিয়ে মনের কথা না জানালেই যেন ভালোবাসার পূর্ণতা পায় না।

তবে পশ্চিমা দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইদানীং বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরাও দিনটি উদযাপন করছেন। ঐতিহাসিক ভাবে এ দিনটি পালনের যদিও কোনও প্রথার নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহে চকলেট ডে পালন একটু দুষ্টু-মিষ্টি ভালোবাসার খুনসুটির মতোই।আর চকলেট আনন্দ ও উদযাপনের প্রতীক হয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)