বৃহস্পতিবার ● ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » কৃষি » পাইকগাছায় সূর্যমুখী ফুল চাষে কৃষকদের মুখে হাসি
পাইকগাছায় সূর্যমুখী ফুল চাষে কৃষকদের মুখে হাসি
পাইকগাছায় সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছ।সূর্যমুখী ফুলের চাষ ভালো হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন সূর্যমুখী চাষ করা জমিতে গিয়ে দেখা যায়, ফুটে থাকা হলুদ সূর্যমুখী ফুলের সমাহারে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। চারদিকে হলুদ রঙের ফুলের মনমাতানো ঘ্রাণ আর মৌমাছিরা ছুটছেন মুখরিত হয়ে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে। এটি যেন ফসলি জমি নয়, এ এক দৃষ্টিনন্দন বাগান।এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকনে শুধু প্রকৃতিপ্রেমীই নয় বরং যে কারো হৃদয় কাড়বে। তবে সূর্যমুখী ফুল চাষের লক্ষ্য নিছক বিনোদন নয়। মূলত ভোজ্যতেল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটাতে এ চাষ করা হচ্ছে।
সাধারণ কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে উদ্যমী কৃষকদের উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার ও বীজ প্রণোদনার মাধ্যমে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হচ্ছে।মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী। কম সময় ও অর্থ ব্যয় করে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমানে সূর্যমুখী ফুলের সমারোহে মেতে উঠেছে উপজেলার মাঠগুলো। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন। তেল জাতীয় অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখীর চাষ অনেক সহজলভ্য ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকেরা এতে উৎসাহিত হয়ে উঠবেন বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ২৯৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। সূর্যমুখীর চাষাবাদ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে উপজেলারে কৃষকরা এফ-১ (হাইব্রিড) জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা শুরু করেছেন। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে খামারে আসছেন দর্শনার্থীরা।অনেকে এটি চাষ করার পরামর্শও নিচ্ছেন। বর্তমানে একঘেয়েমি ধান চাষ করে কৃষকরা তেমন একটা লাভবান হচ্ছেন না। ধান চাষ করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয় সেই টাকার ধান পাওয়া যায় না।
অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে বেশি লাভের প্রত্যাশা অনেক বেশি। সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে ৭ মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উৎপাদন হবে প্রতি বিঘায় ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ২৫০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে ভোজ্যতেলের আকাশছোঁয়া দাম হওয়ার কারণে চাহিদা বেড়েছে সরিষা ও সূর্যমুখী তেলের। এছাড়া সূর্যমুখী ফুলের তেল অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। তাই ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য এই তেল অন্যান্য তেলের চেয়ে অনেক উপকারী ও স্বাস্থ্যসম্মত।
উপজেলার দেলুটি ইউনিয়ানে ৮০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। দেলুটি কৃষক শিবপদ মন্ডল বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমি এই প্রথম ২বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। আমার সূর্যমুখী ফুল ভালো হয়েছ। প্রতিটি গাছেই ফুল ধরেছে। আশা করি সূর্যমুখী চাষে সফলতা আসবে ও লাভবান হতে পারব। আমাকে দেখে এলাকার অনেক কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
পৌর সভার শিববাটিতে প্রায় পাচশতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন পুরাকাঠি গ্রামের কৃষক আকবর মোড়ল (৭০)। তিনি বলেন, সূর্যমুখীর ফুল ও ফল ভালো হয়েছে। বিকেল বেলায় অনেকে লোকজন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেখতে আসেন সূর্যমুখী ফুল, জমির পাশে ছবি তুলেন সময় কাটান অনেকেই। তা দেখে আমার খুবই আনন্দ লাগে। শুনছি এটি খুবই লাভজনক একটি ফসল।
উপজেলার দেলুটি ইউনিয়ানের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার কুণ্ড বলেন, সূর্যমুখী এক দিকে মনোমুগ্ধকর ফুল অন্যদিকে লাভজনক ফসল। কৃষকদের বিস্তারিত জানিয়ে সূর্যমুখী আবাদ করার পরিকল্পনা করি। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯০-১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুবার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। প্রতি একর জমিতে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ৬০-৬৫ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অসিম কুমার দাশ বলেন, উপকূলের লবনাক্ত এ উপজেলায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ ভালো হয়েছে। সূর্যমুখীর বীজ থেকে যে তেল উৎপন্ন হয় তা স্বাস্থ্যসম্মত ও মানসম্পন্ন। অলিভ ওয়েলের পরেই সূর্যমুখী তেলের অবস্থান। সয়াবিন ও সরিষা ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণ করবে সূর্যমুখী তেল। বেশি লাভজনক ফসল সূর্যমুখী। তিনি বলেন, আশা করছি ভালো ফলন হবে। আগামীতে এই উপজেলায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ ব্যাপক হারে সম্প্রসারিত হবে। কৃষকেরা সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হবেন বলে তিনি আশাবাদী।