সোমবার ● ১১ মার্চ ২০২৪
প্রথম পাতা » মুক্তমত » সুস্থ্য শরীরের জন্য ঘুম অত্যাবশ্যক
সুস্থ্য শরীরের জন্য ঘুম অত্যাবশ্যক
প্রকাশ ঘোষ বিধান
ভাল ঘুম মন আর শরীরকে টনিকের মতো চাঙ্গা রাখে।ঘুম ছোটো একটি শব্দ। তবে মানব শরীর ও মনের জন্য অত্যন্ত জরুরি ঘুম। মন মেজাজ ফুরফুরে রাখতে পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত আবশ্যিক। ঘুম সুস্বাস্থ্যের জন্য অনেক জরুরী। ক্রমাগত কম ঘুম হলে স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমানো দরকার একজন মানুষের। সেক্ষেত্রে বয়সভেদে ঘুমের অনুপাত ভিন্ন হবে। তবে স্বাভাবিক জীবনযাপন সঠিকভাবে চালাতে হলে অবশ্যই নিয়ম মেনে ঘুমাতে হবে।
আপাতদৃষ্টিতে ঘুমকে মনে হতে পারে জীবনের অতি সাধারণ বিষয়। সুনিদ্রা মন, মেজাজ ও শরীর ভালো রাখে। ঘুম দিবস উদযাপনকে অনেকের কাছেই বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। তবে, যারা ঘুমের সমস্যায় ভোগেন তারাই কেবল বুঝতে পারেন ঘুমের যেকি মর্ম। ঠিকমতো ঘুম না হলে কোনো কিছুই ঠিকঠাক চলে না।
গবেষকরা বলছে, বিশ্বের অন্তত ১০০ মিলিয়ন মানুষের পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। এছাড়া ২২ মিলিয়ন আমেরিকান নিদ্রাহীনতায় ভোগেন। গবেষণায় আরও দেখা যায়, ছুটির দিনে দুই ঘণ্টা বেশি ঘুমালে দেহঘড়ি ৪৫ মিনিট বিলম্বিত করে। এর ফলে ছুটির দিনগত রাতে ঘুম কম হয়, এতে পরের দিনের কাজে পরিশ্রান্ত মনে হয়, শরীর ও মন কাজের উপযোগী থাকে না। এজন্য সুস্থ থাকার জন্য ঘুমের বিকল্প নেই। প্রতিদিন অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে।
প্রতি বছর মার্চ মাসের তৃতীয় শুক্রবার ঘুম দিবস পালিত হয়। ২০০৮ সালে প্রথমবার দিবসটি পালন করে ‘ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব স্লিপ মেডিসিন’-এর ওয়ার্ল্ড স্লিপ ডে কমিটি। ঘুমের অভাবে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির বিষয়ে মানুষকে জানানোই ছিল এই কমিটির মূল উদ্দেশ্য। মারাত্মক ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন এমন মানুষকে সহায়তা এবং বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বব্যাপী ৭০টিরও বেশি দেশে পালন পালন করা হয়। ঘুমের ওষুধ এবং অনিদ্রার সামাজিক প্রভাব নিয়ে কাজ করে। হালকা থেকে গুরুতর ঘুমের সমস্যা বর্তমান সমাজে অনেকের মাঝেই দেখা যায়। গুরুত্ব না দিলে এটি পুরো জীবনকে এলোমেলো করে দিতে পারে।
নান রকম ঘুম আছে। ভাত ঘুম, রাত ঘুম, ঘন ঘুম, আলগা ঘুম, সময়ে এবং অসময়ের ঘুম কতই না তার রকম ফের। সাসপেন্স থ্রিলারের মতো টানটান ঘুমও রয়েছে। সব ঘুমের আলাদা আমেজ। আড্ডা, ভুরিভোজ-এর আগে যদি বাঙালিকে কিছু বেছে নিতে বলা হয়, নিঃসন্দেহে তা হবে ঘুম। শুধু বাঙালি নয় গোটা মনুষ্যজাতির সংস্কৃতিতেই একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে ঘুম।
আধুনিক গবেষণা বলছে বিশ্ব জুড়েই পর্যাপ্ত ঘুমের সংকটে শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা গুরুতর আকার ধারণ করছে। হৃদরোগ জনিত সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা, অবসাদ, মাত্রাতিরিক্ত উদ্বেগ ক্রমশ বেড়েই চলছে সমাজে। চিকিৎসক এবং গবেষকরা এর পেছনে অনেকাংশেই দায়ী করছেন ঘুমের অভাবকে।
রাতের ঘুম ঠিক না হলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, বাচ্চারা স্মৃতি হারায়, মেধা কমে যায়। বড়রা হৃৎপিন্ডের এবং স্নায়ুর সমস্যায় পড়েন। ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, অ্যালঝাইমারের আশঙ্কা বাড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাই এ স্লিপ লস-এর সমস্যাকে এখন এপিডেমিক ঘোষণা করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও বলছে ক্রনিক স্লিপ ডিপ্রাইভেশন ক্যান্সারের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে কম ঘুম। নিদ্রাহীনতার ফলে স্বাস্থ্যহানীর হুমকিতে আছে বিশ্বের জনসংখ্যার ৪৫শতাংশ মানুষ।
চিকিৎসকরা বলেন, ভালো ঘুমের সঙ্গে স্মৃতিশক্তির বেশ নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। সাধারণত বৃদ্ধ বয়সে স্বাভাবিকভাবেই স্মৃতিশক্তি লোপ পায়, মানসিক দুর্বলতাও তৈরি হয়। তাই শেষ বয়সে অনেকেরই অনিদ্রা সমস্যা দেখা দেয়। মধ্যবয়সে একজন মানুষ নিয়ম মেনে ঘুমালে তার সুফল বৃদ্ধ বয়সেও পেতে পারেন।
এছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে ও নিয়ন্ত্রণে রাখে ওজন। অতিরিক্ত অথবা খুব কম ঘুমোলে তার প্রভাব পড়বে আপনার আয়ুষ্কালের উপর। ২০১০-এর একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ৫০-৭৯ বছর বয়সে মৃত মহিলাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই মৃত্যু হয়েছে কম বা বেশি ঘুমনোর জন্য। হার্টের অসুখ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিজ, অকাল বার্ধক্যের থেকে শরীরে জ্বলুনি অনুভূতি হয়। গবেষণা বলছে, যাঁরা রাতে ৬ ঘণ্টা বা তার কম ঘুমোন, তাঁরাই বেশিরভাগ এ ধরনের সমস্যায় ভোগেন। কারণ তাঁদের রক্তে ইনফ্লামেটরি প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ২০১০-এর গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা কম ঘুমোন, তাঁদের শরীরে বেশি পরিমাণে দেখা দেয় সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন, যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
সুনিদ্রার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে প্রতি বছর মার্চ মাসে মহাবিষুবের আগের শুক্রবার এ দিনটি পালন করা হয়। সুস্থ্যতার জন্য সুনিদ্রার প্রয়োজনীয়তা এবং নিদ্রাহীনতা ও এর চিকিৎসা, নিবারণ ও জনগনের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা।ঘুম মানুষের একটি অত্যাবশ্যকীয় শরীরতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। পরিমিত ঘুম সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। হৃদ্রোগসহ নানা রোগের ঝুঁকিও কমায়। প্রতিদিন ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। নির্দিষ্ট এই ঘুম হলে প্রতিদিন সকালে আমরা সুস্থ অনুভূতি দিয়ে দিন শুরু করতে পারি। নয়তো অনিদ্রায় শরীরে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। মেজাজ খারাপ থাকে। বিশ্ব ঘুম দিবসের মাধ্যমে প্রতি বছর ঘুমের প্রয়োজনীয়তা এবং সমাজে এর প্রভাবের ব্যাপারে জনসচেনতা সৃষ্টি করে।
লেখক; সাংবাদিক ও কলামিস্ট