শনিবার ● ৩০ মার্চ ২০২৪
প্রথম পাতা » পরিবেশ » পাখির প্রজনন লড়াই
পাখির প্রজনন লড়াই
পাখি বাসা তৈরি থেকে বাচ্চা উড়তে শিখা পর্যন্ত বিপদসঙ্কুল পরিবেশের সাথে লড়াই করে করতে হয়। নানা প্রতিকুল পরিবেশে বিপদসঙ্কুল সময় পেরিয়ে বাচ্চাদের উড়াতে পারলে পাথিদের প্রজনন স্বপ্ন পূরণ হয়।
পাখির বাসা কথা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে গাছের ডালে খড়কুটোয় তৈরি এক ধরনের শিল্পকর্ম। এক একটা পাখির বাসা দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয়, পাখির বাসা তৈরিতে কতো বুদ্ধি খরচ করেছে, আর মেহনতই বা করেছে কতো। পাখির বাসা বানানো, খাবার, চারিত্রিক বৈশিষ্ট, প্রজনন কাল, প্রজনন শেষে অবস্থান, ডিমে তা’ দেয়ার পদ্ধতি, ছানাদের পরিচর্যা এবং প্রকৃতির বিরূপ আচরণ থেকে নিজেদের রক্ষা করার কৌশল শেখানো।
প্রজননের সময় পাখিদের জোড়া বাঁধার আকাঙ্খা, ঘর বাঁধার স্বপ্ন, প্রেম বিনিময় খুবই লক্ষ্যণীয় একটি ঘটনা। যারা পাখি নিয়ে কাজ করেন ও ছবি তুলেন একমাত্রই তারাই পাখিদের প্রেম বিনিময়ের কৌশলগুলি পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। বাহারি রঙের এসব পাখির খুনসুটি আর ছোটাছুটি যে কারো মনকে উদ্বেলিত করে তোলে।ডানা ঝাপটিয়ে আর মুখ দিয়ে নানা রকম শব্দ তৈরি করে। তবে সবচেয়ে বেশী যেটা করে সেটা হলো- নানা রকম ভংগী।
পাখি প্রজননের জন্য, তারা একটি বাসা বানাতে শুরু করবে, এতে ডিম পাড়বে, ডিম ফোটাবে, ছানাগুলিকে পালানোর জন্য যথেষ্ট বয়সে নিয়ে আসবে এবংবাচ্চা উড়তে শেখার পরে সবাই বাসা পরিত্যাগ করবে। বাচ্চা উড়তে শিখার আগ পর্যন্ত পাখি বাচ্চাকে আধার এনে খাওয়াবে। সুন্দরের অন্তঃপ্রাণে যে কোনো বেদনা থাকতে পারে, বেশির ভাগ সময়ই আমাদের চোখে পড়ে না। মানুষ যেমন মানুষের শক্র হয়, একইভাবে অন্যান্য জীব-জানোয়ার বা পাখির শত্রুও স্বগোত্রিয়রা।
পরিবেশ,প্রকৃতি ও পাখি নিয়ে কাজ করেন পাকইগাছায় পরিবেশবাদী সংগঠণের সভাপতি সাংবাদিক প্রকাশ ঘোষ বিধান। চলতি পাখির প্রজনন মৈৗসুমে তার বাড়ির পাশে একটি গাছের ডালে টুনটুনি পাখি দৃস্টিনন্দন বাসা তৈরি করে। বাসা তৈরির পর থেকে তিনি টুনটুনি পাখির গতিবিধি পর্যাবেক্ষণ করতে থাকেন। বাসা তৈরির পরে দুটি ডিম পাড়ে পাখি। মা পাখি তা দেওয়া থেকে উঠে খাবারের সন্ধানে বের হওয়ার সুযোগে একটি কানাকোয়া বাসায় হানা দিয়ে একটি ডিম খেয়ে ফেলতে দেখলে তিনি তাড়া দিলে কানাকোয়া পালিয়ে যায়। এরপর তিনি পর্যাবেক্ষণের সময় আরও বাড়িয়ে দেন।এরমধ্যে ডিম ফুঠে বাচ্চা বের হয়। দুটি টুনটুনি পাখি সারদিন পালাক্রমে বাচ্চাকে আধার খাওয়াতে থাকে। পাখির বাচ্চার গয়ে ছোট ছোট পালক গজাতে শুরু করেছে। আর কয়েক দিনের মধ্যে হয়তো উড়তে পারবে। বাচ্চাটি কিচ কিচ করে ডাকাডাকি করে। এর মধ্যে একদিন টুনটুনি খাবার নিয়ে বাসায় না বসে এদিক ওদিক ওড়াউড়ি করছে। আর বাচ্চার কোন ডাক শুনতে না পেয়ে তিনি গাছে উঠে দেখেন বাসাটি লাল পিপড়ায় ভরে গেছে আর বাচ্চার কঙ্কাল পড়ে আছে বাসায়। লাল পিপড়া বাচ্চাটি খেয়ে ফেলেছে। পাখির মা-বাবার আর্তনাদ এবং চিৎকারে হৃদয়-বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। চার-পাচ দিন টুনটুনি পাখি বাসা পাশে এসে উড়াউড়ি করে ও ডাকতে থাকে। শিকারী পাথিকে তাড়া করতে পারলেও পিপড়ার আক্রমন থেকে পাখি বাচ্চকে কোন রকমে বাচাতে পারেনা। এভাবে পাখির প্রজনন সপ্ন হারিয়ে যায়।
বাসা তৈরি থেকে বাচ্চা উড়তে শিখার আগ পর্যন্ত পাখিদের নানা বাধা ও বিপদসঙ্কুল সময় কাটাতে হয়। মাংশসী পেঁচা পাখি যে গাছে অবস্থান নেয় সেই গাছে অন্য পাখিরা ভয়ে বাসা বাধেনা। অনেক শিকারী পাখি খুব সহজে পাখির ডিম ও বাচ্চা খেয়ে ফেলে। তাই গাছের মগডালে বাসা করে সেখানে ডিম পেড়ে সন্তানের মুখ দেখার আশায় দিনের পর দিন তা দিয়ে যায় মা পাখি। পাখির বাসায় সুযোগ বুঝে হানা দিয়ে সাপ, মাংসাশী পাখি কাক,চিল,কানাকোয়া বা কুবো ডিম ও বাচ্চা খেয়ে ফেলে। ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার পর মাংসাশী পিপড়ারাও বাচ্চা খেয়ে ফেলে। আর শিকারীর উৎপাত তো আছে। মা পাখিটির সব পরিশ্রম ধুলোয় মিশে যায়। পড়ে থাকে শূন্য বাসা।