মঙ্গলবার ● ২ এপ্রিল ২০২৪
প্রথম পাতা » খেলা » সাফজয়ী ফুটবল কন্যা অর্পিতা বাংলাদেশের স্বপ্ন
সাফজয়ী ফুটবল কন্যা অর্পিতা বাংলাদেশের স্বপ্ন
শাহীন আলম তুহিন,মাগুরা থেকে : ছোট্ট একটি মাটির ঘরে দরিদ্রের সাথে বেড়ে ওঠা অর্পিতা এখন বাংলাদেশের স্বপ্ন ।সম্প্রতি নেপালে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সাফ নারী অনুর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশীফ ফুটবলে অর্পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে । বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে আরো এক ধার এগিয়ে নিয়ে গেল অর্পিতার দল । মাগুরা শ্রীপুর উপজেলার গোয়ালদাহ গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম অর্পিতা বিশ্বাসের । ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলাধুলার প্রতি ছিল তার অপরিসীম মনোযোগ । গোয়ালদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে তার ফুটবল খেলার হাতে খড়ি শেখান এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাস চন্দ্র দেব জ্যোতি ও সহকারি শিক্ষক শহিদুল ইসলাম । তাদের নেতৃতেই¡ এ বিদ্যালয় থেকে গড়ে উঠেছে একটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফুটবল দল । বিদ্যালয়ের ক্লাস রুটিন শেষ করে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনেরই প্রতিদিন শুরু হতো অর্পিতাদের ফুটবল প্রশিক্ষণ । এ মাঠ থেকে অর্পিতা ফুটবলের নানা কলাকৌশল রপ্ত করে । একে উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন খেলায় অংশ নিয়ে অর্পিতা সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার অর্জন করে । পাশাপশি ২০১৭ সালে খুলনা বিভাগীয় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুনেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল খেলায় অর্পিতা সবেবার্চ গোলদাতার পুরস্কার অর্জন করে ।
অর্পিতার মা গায়েত্রী বিশ্বাস জানান,আমার মেয়ে অর্পিতা একটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান । অনেক কষ্ট করে আমি তাকে মানুষ করেছি । ছোটবেলা থেকে তার ফুটবল খেলাধুলার প্রতি প্রচন্ড ঝোক ছিল । সেই থেকে তার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেন তার শিক্ষক প্রভাস চন্দ্র দেব জ্যোতি ও সহকারি শিক্ষক শহিদুল ইসলাম । তারাই তাকে ফুটবল খেলার নানা কলা কৌশল রপ্ত করতে শেখান । বিকেএসপিতে যাওয়ার ব্যাপারেও তাদের অনেক ভূমিকা রয়েছে । অর্পিতার বাবা একটি দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তার একটি পা অকেজ হয়ে যাওয়ায় আমাদের পরিবার বিপাকে পড়ে যায় । অর্পিতার বাবার চিকিৎসা বাবদ আমার অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে । কিন্তু তার পা ভালো হয়নি । পরিবারের একটি মাত্র ছেলে সে এখন অটো চালক । পরিবারের খরচ চালাতে আমিও একটি গার্মেন্ট কর্মী হিসেবে কাজ করছি । আজ আমার মেয়ের সাফল্যে আমি খুবই খুশি । আমরা চাই অর্পিতা যেন বাংলাদেশের মুখকে আরো বিশ্বেও দরবারে ভালো ভাবে তুলে ধরুক । তার সাফল্যে আজ আমাদের পরিবারসহ এলাকার সকল মানুষ খুশি ।
অর্পিতার বাবা মনোরঞ্জন বিশ্বাস বলেন,আমি একজন সাধারণ সবজি বিক্রেতা । দুর্ঘটনায় পায়ে সমস্যা থাকার কারণে পরিবারের আর্থিক সংকট দূর হয় না । এরই মধ্যে আমার মেয়ে অর্পিতা বড় হয়েছে । তার এ সাফল্যে আমার পরিবারের সবাই খুবই খুশি । অর্পিতা এখন অনুর্ধ্ব-১৬ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে । বর্তমানে সে বিকেএসপিতে রয়েছে । প্রতিদিন আমরা মেয়ের সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষায় থাকি কখন সে ফোন দেবে । এখন ক্যাম্প চলাকালিন সময়ে দুপুর ১২টার পর তাকে পরিবারের সাথে কথা বলার জন্য বলা হয় । আমরা তার ফোন পেলেই সুখ-দু:খের কথা বলি । অর্পিতার স্বপ্ন অনেক বড় ফুটবল তারকা হওয়া । সেই স্বপ্ন তার বাস্তবে পরিণত হোক এই চাওয়া আমাদের ।
বিকেএসপিতে ক্যাম্প চলাকালীন সময়ের পর অর্পিতা মুঠোফোনে জানান, আমরা সাফ ফুটবলে ভালো সাফল্য অর্জন করাতে খুবই খুশি । ভালো ফুটবল খেলে আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে ভালো পর্যায়ে নিতে পেতে ভালো লাগছে । আগামীতে আরো ভালো করতে চাই । আমি এখন অনুধ্ব-১৬ দলের নেতৃত্ব পেয়েছি । তাই আগামীতে ভালো ফুটবল খেলা উপহার দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চাই ।
অর্পিতার শৈশবকালীনফুটবল কোচ প্রভাস চন্দ্র দেব জ্যোতি বলেন,অর্পিতা একজন চৌকশ ফুটবল খেলোয়াড় । আমার বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে অর্পিতার ফুটবল প্রশিক্ষণ শুরু করি । খেলার প্রতি গভীর মনোযোগ আর দৃঢ়তার সাথে ফুটবল রপ্ত করার ফলে অর্পিতার খুব সহজেই এগিয়ে গিয়েছে সামনে । আমরা সব সময় তার জন্য আর্শিবাদ করি সে যেন বাংলাদেশকে ভালো কিছু দিতে পারে । আজ সে অনুর্ধ্ব-১৬ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে । আগামীতে সে জাতীয় দলের নেতৃত্বে দিবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা ।