শিরোনাম:
পাইকগাছা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
শুক্রবার ● ১২ এপ্রিল ২০২৪
প্রথম পাতা » সংস্কৃতি ও বিনোদন » চড়ক পূজায় খেজুর গাছের উপর সন্ন্যাস নৃত্য
প্রথম পাতা » সংস্কৃতি ও বিনোদন » চড়ক পূজায় খেজুর গাছের উপর সন্ন্যাস নৃত্য
৩৩৮ বার পঠিত
শুক্রবার ● ১২ এপ্রিল ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

চড়ক পূজায় খেজুর গাছের উপর সন্ন্যাস নৃত্য

 --- চড়ক পূজায় খেজুর গাছের উপর সন্ন্যাস নৃত্য উল্লেখযোগ্য একটি পর্ব।এই পুজোর কিছু বিশেষ প্রথা রয়েছে,যা আজও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হয়। যেমন, জ্বলন্ত কয়লার ওপর দিয়ে হাঁটা, ছুরি এবং কাঁটার ওপর লাফানো, কুমিরের পুজো, শিবঠাকুরের বিয়ে, আগুনের উপর নাচ, শরীর বাণবিদ্ধ করে চড়কগাছে দোলা ইত্যাদি।এই পুজোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল দৈহিক যন্ত্রণা।একে এই পুজোর এক বিশেষ অঙ্গ বলে মনে করা হয়।সর্বোপরি এই পুজোর মূলে রয়েছে ভূত-প্রেত এবং পূনর্জন্মের গাঁথা। এই পুজোর অঙ্গ হিসাবে ভক্ত, সন্ন্যাসী এবং সাধুসন্তরা হুড়কো দিয়ে নিজেদের চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুত বেগে ঘুরতে থাকেন।আবার লোহার শলাকা তাঁদের পায়ে ,হাতে, গায়ে, পিঠে, এমনকী জিহ্বাতেও প্রবেশ করানো হয়।

বাংলা বছরের শেষ দিন চৈত্র সংক্রান্তি।বাঙালির এই দিনটা কেটে যায় নানা উৎসব-অনুষ্ঠানে, পুজো-পার্বণে। গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতিতে বছরের এই শেষ দিনটার আলাদা ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। গ্রামের মানুষ  গাজন, চড়ক, শরবত উৎসব, খেজুর ভাঙা, শাকান্ন, শাক কুড়োনো, নীল উৎসব, নীল পুজো, গম্ভীরা পুজোর মতো নানা পর্ব। এর  মধ্যে চড়ক আর গাজনের জনপ্রিয়তা সব থেকে বেশি।বাকি উৎসবগুলো  কয়েকটা জেলাতেই সীমাবদ্ধ।

আধুনিক সংস্কৃতির প্রভাবে অনেক জায়গাতেই এই প্রাচীন উৎসবগুলো বিলুপ্তির পথে। খুব অল্প জায়গাতে কিছু মানুষ টিকিয়ে রেখেছে তাদের ঐতিহ্য।খেজুর ভাঙা উৎসব যশোর,খুলনা, সাতক্ষিরা,বাগেরহাট অঞ্চলেই এখনো  টিকে রয়েছে।চৈত্র সংক্রান্তির অন্যান্য সব উৎসবের মতোই এই খেজুর ভাঙার প্রথাও মহাদেব শিবের সঙ্গে যুক্ত। ---


ব্রহ্মবৈবর্তপূরাণে চৈত্র মাসে শিব ঠাকুরের আরাধনা,নাচ-গানের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। গ্রাম বাংলার লোককথায় প্রচলিত আছে, দ্বারকাধীশ কৃষ্ণের সঙ্গে শিবের একনিষ্ঠ উপাসক বাণরাজার যুদ্ধ হয়।যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পর তিনি অমরত্ব পাওয়ার আশায় চৈত্র মাসের শেষ দিনে তাঁর অনুচরদের নিয়ে নাচে গানে আত্মহারা হয়ে মহাদেবের থেকে অমরত্ব লাভ করার জন্য বাণরাজা নিজের শরীরের রক্ত দিয়ে মহাদেবকে তুষ্ট করেন এবং ভক্তিমূলক নাচগান করেন।১৪৮৫ সালে রাজা সুন্দরানন্দ ঠাকুর প্রথম এই পুজোর প্রচলন করেন বলে মনে করেন অনেকে।সেই থেকে শৈব সম্প্রদায়ের মানুষ এই উৎসব পালন করছেন।

    চড়ক পুজো পর্যন্ত তাঁরা সন্ন্যাস ব্রত পালন করেন এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিবের নাম মাহাত্ম্য শুনিয়ে নুত্য করেন। এ সময়ে তাঁরা নিরামিশ খাবার খেয়ে থাকেন।চড়ক পুজোর সারাদিন উপোস করার পর যশোর, খুলনা সাতক্ষীরা জেলাতে খেজুর ভাঙা উৎসবের খেজুর খেয়ে উপবাস ভাঙেন এই ভক্তরা।চৈত্র সংক্রান্তির  আগের দিন এইসব জেলার গ্রামে গ্রামে দেখা যায়, শিবভক্তরা  একটা নির্দিষ্ট খেজুর গাছের তলায় দুধ আর ডাবের জল ঢেলে পুজো করেন। তারপর সন্ন্যাসী দলের নেতা একটা নতুন গামছা শরীরে জড়িয়ে খেজুর গাছটাকে প্রণাম করে সেই গাছে উঠে পড়েন খালি পায়ে। তারপর আরও কয়েকজন সন্ন্যাসী সেই খেজুর গাছে উঠেন। কাঁটাওয়ালা খেজুর গাছের উপর শুরু হয় নৃত্য,যাকে খেজুর নৃত্য বলা হয়ে থাকে। সন্ন্যাসীরা বিশ্বাস করেন, খেজুর গাছের কাঁটাতে তাঁদের পা অক্ষত রাখেন স্বয়ং শিব। গাছের খেজুর নিচে ভক্তদের বিলোতে থাকেন। গাছের নিচে কয়েকশো মানুষের ভিড় জমে যায়। গাছ থেকে ছুঁড়ে দেওয়া খেজুর  খেয়েই তাঁদের উপোস ভাঙবে। আরও কিছু আনুষ্ঠানিকতার পর খেজুর ভাঙা উৎসব শেষ হয়।  





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)