মঙ্গলবার ● ২৩ এপ্রিল ২০২৪
প্রথম পাতা » কৃষি » পাইকগাছায় পানির অভাবে হাজার বিঘা জমি পতিত
পাইকগাছায় পানির অভাবে হাজার বিঘা জমি পতিত
পাইকগাছায় পানির অভাবে চিংড়ি ও ধান চাষের আবাদযোগ্য প্রায় এক হাজার বিঘা জমি পতিত পড়ে আছে। পানির অভাবে ক্ষেত ফেটে চৌচির। চিংড়ি চাষী ও জমির মালিক হতাশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবেনা।দেশের আবাদযোগ্য কোনো জমি অনাবাদি বা পতিত রাখা যাবে না, দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে হবে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন নির্দেশের পর অনাবাদি ও পতিত পড়ে রয়েছে পাইকগাছার পুরাইকাটি বিলের প্রায় এক হাজার বিঘা জমি।
পাইকগাছার পুরাইকাটি বিলে লবণ পানি তুলতে না দেওয়ায চিংড়ি চাষের আবাদযোগ্য প্রায় এক হাজার বিঘা জমি পতিত পড়ে আছে। আবার বিলে মিস্টি পানির খাল বা পানির ব্যাবস্থা নেই। দুই বছর ধরে লবন পানি আর মিস্টি পানির সঠিক কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় বিলে মৎস্য বা ধান আবাদ হচ্ছে না।এর ফলে চিংড়ি চাষি, ঘের মালিক ও জমির মালিকরা অথনির্তিকভাবে চরম বিপযায় মুখে পড়েছে।অনেকে ব্যাংক লোন শোধ করতে পারছে না,কোন ফসল না পাওয়ায় ধার দেনা করে চলছে।এমতো অবস্থায় চাষিও জমির মালিকরা সঠিক সিদ্ধান্ত চায়, যদি লবন পানি বন্ধ করা হয তবে মিস্টি পানির ব্যবস্থা ও ধান চাষের অনুকুল পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে কতৃপক্ষদের।তানা হলে চিংড়ি চাষি ও জমির মালিকদের দাবি বিলে বোরো মৌসুমে লবন পানি উঠিয়ে চিংড়ি চাষ ও আমন মৌসুমে তারা ধান চাষ করবে সে সুযোগ দিতে হবে কতৃপক্ষকে।উপকূল লবন পানির এলাকা, লবন পানিতে বসবাস। উপযুক্ত পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও পার্শ্ববর্তী কপোতাক্ষ নদ থেকে লবণাক্ত পানি তুলতে না দেওয়ায় চিংড়ি ব্যবসায় ধস নেমেছে। লবণাক্ত পানির অভাবে সম্ভাবনাময় শিল্পটি এখন বিলুপ্ত হতে চলেছে।
উপজেলার পুরাইকাটি, আওড়, কাজির বিল ও ধোড়ামারি বিল মিলে প্রায় ১৩শত বিঘা জমির মধ্যে ১২শত বিঘা জমি পতিত পড়ে আছে। লবণ পানি তুলতে না দেওয়ায চিংড়ি চাষ বন্ধ রয়েছে আর মিস্টি পানি না পাওয়ায় কৃষকরা এসব জমিতে বোরো আবাদ করতে পারছেন না। অন্যদিকে কৃষি বিভাগ,মৎস্য বিভাগ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশাল এ জমির দিকে নজর দিচ্ছে না। বিলে মিস্টি পানির আধার কোন খাল নেই।মিস্টি পানির অভাবে বিল পতিত পড়ে আছে।
ক্ষেতে বোরো চারা রোপণের পর এখন পানির অভাবে কৃষকের মাথায় হাত । আবার ফাঁকা জমিতে গরু-ছাগল চরানোর সময় সেগুলো আশপাশের ক্ষেতের ফসল খেয়ে নষ্ট করে করছে। সেচের পানি না পাওয়ায় চলতি বোরো ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। রোদে শুকিয়ে যাচ্ছে জমি। রোদে পুড়ে বিবর্ণ হয়েছে বোরো ধানের চারা। জমি চাষ, শ্রমিকের মজুরি, তেলের দাম বৃদ্ধি, সার ও কীটনাশকের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়ে গেছে উৎপাদন খরচ। লাগানো জমিতে ধান বাঁচাতে মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক।
পাইকগাছায় মৎস্য চাষি ঘের মালিকরা লবণ পানিতে চিংড়ি চাষ করতে চায়। অন্যদিকে একটি পক্ষ্য লবন পানি তোলার বিপক্ষে তারা মিস্টি পানিতে ধান চাষের পক্ষে। তবে যারা লবন পানির বিপক্ষে আন্দেলন করছে বিলে তাদের অনেকেই জমি নেই। চিংড়ি খাত থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বড় অংশ চিংড়ি থেকেই আসছে। তাছাড়া চিংড়ি চাষ বন্ধ হলে এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাঁকড়া, মৎস্য ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়বে ।
উপকূলীয় জেলাগুলোর আর্থসামাজিক অবস্থার যে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, তা বিশ্বখ্যাত ব্লাক টাইগার বাগদা, কাঁকড়াসহ রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন করে টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে রপ্তানি বাণিজ্যে যার ব্যাপক অবদান রয়েছে।
পুরাইকাটি গ্রামের চাষী হাজী আব্দুস সামাদ মোড়ল বলেন, গত বছর ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করে ৫ মন ধান পাই।চাষ করতে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয্। খরচের টাকা উঠেনি। এখনো বোরো ধান আবাদ করার পরিবেশ তৈরি হয়নি।উপকূলের লবন পানির প্রভাব ও লবন হাওয়ায় ধান ভালো হচ্ছে না। ধান চাষ করে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছি। বোরো মৌসুমে লবন পানি তুলে চিংড়ি চাষ করতে চাই আর আমন মৌসুমে মিস্টি পানিতে ধান ও মাছ চাষ করতে চাই। এলাকার কৃষক জাহিদ হোসেন বলেন, বেশিভাগ জমি অনাবাদি পড়ে আছে।আবাদকৃত বোরো ধান ভালে হয়নি।কৃষক নবজান সরদার ও তোরাফ আলী গাজী বলেন, বোরো মৌসুমে ধান ভালো হয না।আবাদ করা খরচ ওঠে না। বোরো মৌসুমে লবন পানি তুলে চিংড়ি চাষ করতে চাই আর আমন মৌসুমে মিস্টি পানিতে ধান ও মাছ চাষ করতে চাই।
বিলের প্রায ১২শত বিঘা জমির মধ্যে একশত বিঘাও কম জমিতে বোরো আবাদ করা হলেও বিস্তীর্ণ জমি খালি পড়ে আছে।ধান লাগানো জমিতে ঠিকমত পানি দিতে পারছেনা। বিলে কয়েকটি বোরিং আছে তাতে পানি প্রয়োজন মত সব ধান ক্ষেতে সরবরাহ করা যাচ্ছে না।ফলে ধান উৎপাদনে কৃষকের স্বপ্ন পূরণ হবে সে আশা এখন গুঁড়েবালি।
এ ব্যাপারে পাইকগাছা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত মল্লিক বলেন,পাইকগাছায় প্রায় চার দশক লবন পানিতে চিংড়িসহ মৎস্য চাষ করা হচ্ছে।এ এলাকা লবন পানি অধ্যাশিত।তা নিচু এলাকাকে চিংড়ি চাষের জোন তৈরি করতে হবে।আর যে বিলের জমি মিস্টি পানিতে ধান চাষ করার উপযোগী সে সকল জমিতে পর্যায়ক্রমে লবন পানি উঠানো বন্ধ করে ধান ও মাছ চাষ করতে হবে।আর আধুনিক পদ্ধতি ও পরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষ করলে জমিতে লবণ পানি ঢোকানোর প্রয়োজন হবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অসিম কুমার দাশ জানান, উপজেলা আশির দশক থেকে লবণ পানিতে চিংড়ি চাষ হয়ে আসছে। এ এলাকায় চিংড়ি ঘেরের মাটি দীর্ঘদিন লবণ পানিতে ডুবে থাকায় মাটির অনুজ ও উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। লবণ পানিতে মৎস্য চাষের জমি পর্যায়ক্রমে মিস্টি পানিতে ধান, মাছ ও সবজি চাষের আওতায় আনলে সব দিক দিয়ে ভাল হবে।
এবিষয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন, বোরো মৌসুমে আবাদী জমি পতিত থাকার বিষয় খোজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।