বুধবার ● ৮ মে ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » প্রকৃতিতে শোভা ছড়াচ্ছে সোনালু ফুল
প্রকৃতিতে শোভা ছড়াচ্ছে সোনালু ফুল
হলুদ রঙের ঝুলন্ত ফুল সোনালু। গ্রীষ্মে গাছজুড়ে ঝুলন্ত মঞ্জুরিতে এই ফুল ফোটে। সবুজ পাতা ছাপিয়ে সোনালি রঙের ফুলে সেজেছে সোনালু গাছ। প্রতিটি গাছের গা থেকে যেনো হলুদ ঝরনা নেমে এসেছে। কিশোরীর কানের দুলের মতো দুলতে থাকে এ ফুল। ফুলের ফাঁকে দেখা যায় লম্বা ফল। এর হলুদ বরণ সৌন্দর্য মাতোয়ারা করে রাখে চারপাশ। খরতাপে চলতি পথে পথিকের নজর কাড়বেই।
গ্রীষ্মকালে প্রকৃতিতে প্রাণের সজীবতা নিয়ে যেসব ফুল ফোটে, তার মধ্যে সোনালু উল্লেখযোগ্য। প্রকৃতিকে নয়নাভিরাম রূপে সাজাতে এবং প্রকৃতি পরিবেশের শোভা বর্ধনে সোনালু গাছ সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো হয়। গ্রীষ্মকালে যখন সব গাছে একসাথে সোনালী ফুল ফোটে, তখন মনে হয় সোনালী আলোকচ্ছটায় চারপাশ আলোকিত হয়ে গেছে। সোনালু ফুলের দৃষ্টিনন্দন রূপ দারুণভাবে মোহিত করে যাত্রী ও নিসর্গপ্রেমীদের। পাইকগাছার পথের ধারে ও বাড়ির আঙিনায় এমন দৃশ্য সহজেই চোখে পড়ছে।
জানা গেছে, সোনালু পাতাঝরা মাঝারি আকৃতির বৃক্ষ। এটি ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচু হয়। হলুদ বরণ এ ফুল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি আছে তার বাহারি নামও। পরিচিত নামগুলো হলো সোনালু বা সোনারু বা বান্দর লাঠি বা বাঁদরলাঠি বা বানরনড়ী বা রাখালনড়ী বা সোদাল বা সোনাইল ইত্যাদি।এর সংস্কৃত নামগুলো হলো আরগ্বধ, অমলতাস, আরোগ্যশিম্বী, কুণ্ডল, কৃতমালক, কর্ণিকার, কর্ণী, কলিঘাত, চতুরঙ্গুল, দীর্ঘফল, নৃপদ্রুম, প্রগ্রহ, ব্যাধিঘাত, রাজবৃক্ষ, শম্পাক, স্বর্ণাঙ্গ, হেমপুষ্প। এটি তার আকর্ষণীয় সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত এবং একটি শোভাময় গাছ হিসাবে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়, যার উজ্জ্বল হলুদ ফুল বাগান, পার্ক এবং পথগুলিকে শোভিত করে। এ গাছের বৈশিষ্ট্য হলো ঝাড় লণ্ঠনের মতো দীর্ঘ মঞ্জরি এবং উজ্জ্বল হলুদ ফুল।
ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় একটি দুর্দান্ত ফুলের উদ্ভিদ। এ গাছের আদি নিবাস হলো ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ।উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু ভূমি সোনালু গাছ উৎপাদনের জন্য উপযোগী স্থান। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সমস্ত পাতা ঝরে গিয়ে গাছ থাকে পত্র শুন্য এবং বসন্তের শেষে ফুল কলি ধরার পূর্বে গাছে নতুন পাতা গজায়। গ্রীষ্মে গাছের শাখা-প্রশাখা জুড়ে ঝুলন্ত মঞ্জুরিতে সোনালী হলুদ রঙের ফুল ফুটে এবং এর ব্যাপ্তি থাকে গ্রীষ্ম কাল পুরো সময় জুড়ে। ফুলের পাঁপড়ি পাঁচটি, মাঝে পরাগ দ- অবস্থিত। পাতা হাল্কা সবুজাভ, মধ্য শিরা স্পষ্ট। গাছের শাখা-প্রশাখা কম,কা- সোজা ভাবে উপরের দিকে বাড়তে থাকে, বাকল সবুজাব থেকে ধূসর রঙের, কাঠ মাঝারি শক্ত মানের হয়। সোনালু কাঠের রং ইটের মতো লাল। ঢেঁকি, সাঁকো বানানোর কাজেও এ গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়।
সোনালু গাছের বাকল এবং পাতায় ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। ব্লাডপ্রেসারে নাক দিয়ে রক্ত পরলে সোনালুর ফলমজ্জা আধা কাপ পানিতে মিশিয়ে তা ছেঁকে চিনি বা মধু দিয়ে পান করলে এই সমস্যার সমাধান হয়। অন্ত্রের সমস্যায় চার-পাঁচ গ্রাম ফলমজ্জা চার কাপ পানিতে সেদ্ধ করে ছেঁকে সকালে ও বিকালে পান করলে সুবিধা পাওয়া যায়। কোষ্ঠ্যকাঠিন্যও দূর হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অসিম কুমার দশি বলেন, সোনালু গাছের সুন্দর হলুদ ফুল সৌন্দর্য পিপাসু মানুষের মন ভরিয়ে দেয়। এটি খুবই ঔষধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ।ইউনানী চিকিৎসায় এখনো এই গাছের ব্যবহার রয়েছে।
উপজেলা বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ রায় বলেন, সোনালু গাছ শোভাবর্ধনকারী বৃক্ষ, পাখিদের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। গাছের উজ্জ্বল হলুদ ফুল মৌমাছি ও প্রজাপতিদের আকর্ষণ করে পরাগায়নের সহযোগিতা করে।
শোভা বর্ধনকারী সোনালু দেশের গ্রামীণ জনপদের পাশাপাশি শহরের মানুষের কাছেও সমান গুরুত্ব বহন করে। এর কাঠ তুলনামূলক সস্তা ও কম ব্যবহারের কারণে বাণিজ্যিকভাবে এ গাছ লাগাতে আগ্রহ কম। তবে প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়াতে এ ফুলটিকে বাঁচিয়ে রাখতে গাছ লাগানো উচিত বলে মনে করেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।