শিরোনাম:
পাইকগাছা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
রবিবার ● ১০ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » দেশের উন্নয়নে ক্রমবর্ধমান জন্মহার নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » দেশের উন্নয়নে ক্রমবর্ধমান জন্মহার নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ
৫৩৭ বার পঠিত
রবিবার ● ১০ জুলাই ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

দেশের উন্নয়নে ক্রমবর্ধমান জন্মহার নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান

১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। ১৯৮৭ সালে ১১ জুলাই বিশ্বের জনসংখ্যা ৫০০ কোটিতে পূর্ণ হয়। এর পরই জাতিসংঘ, জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যা সম্পর্কে সার্বিক সচেতনতা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং প্রতিবছর ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিবছর জুলাই মাস এলেই বিশ্ব জুড়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালিত হচ্ছে। দেশের উন্নয়নে ক্রমবর্ধমান জন্মহার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিশাল জনসংখ্যার সঠিক ব্যবস্থাপনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, দেশে প্রতি মিনিটে গড়ে ৮টি শিশু জন্ম নিচ্ছে। সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৫ কোটি ৭২ লাখ। প্রতি বছর ২০ লাখ মানুষ বাড়ছে। গত বছর বিশ্বের জনসংখ্যা ৭০০ কোটিতে পৌঁছিয়েছে। আগামী ২০৫০ সালে জনসংখ্যা ৯০০ কোটিতে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পৃৃথিবীতে জনসংখ্যা খুব দ্রুত বাড়ছে। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল বা ইউএনএফপিএ’র এক জরিপে দেখানো হয়েছে, ১৮০৪ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ১০০ কোটি। এই জনসংখ্যা দ্বিগুণ হতে সময় লেগেছিল ১২৩ বছর। ১৯২৭ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা দাঁড়ায় ২০০ কোটিতে। ৬০ বছর পর ১৯৮৭ সালে বিশ্ব জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৫০০ কোটিতে। এরপর প্রতি ১২ বছরে পৃথিবীর জনসংখ্যা বেড়েছে ১০০ কোটি করে। চলতি শতাব্দীর শেষের দিকে পৃথিবীর জনসংখ্যা ১ হাজার কোটি স্পর্শ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে জনসংখ্যা ৭০০ কোটি স্পর্শ করলেও মানুষের বেশকিছু ইতিবাচক অর্জন হয়েছে। ১৯৫০ সালে পৃথিবীর মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৮ বছর। তা এখন ৬৮ বছরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭০ বছর উত্তীর্ণ হয়েছে। আগামী ২০৫০ সালে মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭৭ বছর দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। সে সময় বিশ্বে ৬০ বছরের মানুষের সংখ্যা হবে ২০ শতাংশ।

বর্তমান বিশ্বে ২৫ বছরের কম বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৩ শতাংশ। এ কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও বেশি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আবাসন গড়ে তোলার জন্য কৃষি জমি ও বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে। পরিবেশের দূষণের মাত্রাও বাড়ছে। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে না পারলে দেখা দিবে খাদ্যাভাব। ফলে পুষ্টি ঘটতি দেখা দেয়ার পাশাপাশি সংক্রমাক রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে ইউএনএফপিএ’র মতে বর্তমান বিশ্বের ৭শত কোটি মানুষ ৭শত কোটি সম্ভাবনা হিসাবে কাজ করবে, সবাই এ প্রত্যাশা করছে। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা সম্ভব হলে জনসংখ্যার ভারে পৃথিবীর ভারসাম্য হারাবে না। জনসংখ্যা বোঝা না হয়ে সম্পদ হিসাবে গণ্য হবে। তাদের মতে, নারীর পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতায়ন ঘটলে সমাজের সব পর্যায়ের অগ্রগতি হবে এবং এ ক্ষেত্রে জনসংখ্যা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।

বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ, সুযোগ ও উপকরণ নেই। এ কারণে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমিয়ে আনতে হবে। পরিসংখ্যান মতে, বর্তমানে দেশে ৫৪ ভাগ পুরুষ ও মহিলা পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এরমধ্যে মাত্র পুরুষ ৬ ভাগ। সূত্র মতে, দেশের বিবাহিত নারীদের ৫৬ ভাগ পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তাদের মধ্যে ৪৭ ভাগ আধুনিক ও ৯ ভাগ সনাতন পদ্ধতি ব্যবহার করেন। চাহিদা থাকার পরও দেশের ১৮ ভাগ নারী পরিবার পরিকল্পনার কোন পদ্ধতি হাতের কাছে পান না। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পরিবার পরিকল্পনা শুরু হয় স্বাধীনতার পূর্ব থেকে। প্রথম পর্যায়ে এনজিও কার্যক্রম শুরু করলেও পরবর্তী সময় তা সরকারী নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্মীয় গোঁড়ামি বাঁধা সৃষ্টি করলেও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে খুববেশি বাঁধা হয়ে দেখা দেয়নি। বর্তমানে দেশের শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বেড়েছে। সচেতন দম্পত্তির সংখ্যাও বেড়েছে। রাষ্ট্রও ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে। তবুও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের তেমন সচল কার্যক্রম চোখে পড়েনা। মাঠ পর্যায়ে সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বর্তমানে তেমন সচেতনা নেই বললেই চলে।

নিত্যদিনের জিনিসপত্রের আকাশ ছোঁয়া দামের বাজারে জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কেনার সামর্থ্য অনেকের নেই। বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির বাস্তবায়ন স্তিমিত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

আমাদের দেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকারকে আরো সোচ্চার হতে হবে। এর পাশাপাশি জনসংখ্যার ভবিষ্যৎ আকার, বিন্যাস, এর গতি এবং পরিবর্তনের গতিশীলতাকে বিবেচনায় রেখে সব ধরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি দেশের জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করার কর্মসূচিকে ব্যাপক মাত্রায় গুরুত্ব দিতে হবে।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)