শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
মঙ্গলবার ● ২১ মে ২০২৪
প্রথম পাতা » পরিবেশ » নিশাচর পাখি পেঁচা
প্রথম পাতা » পরিবেশ » নিশাচর পাখি পেঁচা
১৮৭ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ২১ মে ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

নিশাচর পাখি পেঁচা

 ---  প্যাঁচার  নাম শুনলেই একটা ভৌতিক অনুভুতি, সঙ্গে কিছু কুসংস্কারাচ্ছন্ন কৌতুহল জেগে উঠে।বাংলাদেশে প্যাঁচা চেনে না এমন মানুষ নেই বললেই চলে। শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষেরা প্যাঁচার ডাকের সাথে বেশ পরিচিত।খানিকটা ভিন্ন রকমের ডাক এবং নিশাচর স্বভাবের কারণে প্যাঁচাকে অনেকেই কুসংস্কার বশত অশুভ পাখি বলে মনে করে থাকে। নিশাচর পাখি প্যাঁচাকে নিয়ে মানুষের মাঝে নানা কুসংস্কার এবং অলৌকিক চিন্তা-ভাবনা কাজ করে। পেঁচার হুদ-হুদ, বুম - বুম-বউ; দিবি না ঝি দিবি ডাক রহস্যময় ও নানা কুসংস্কারের জন্ম দেয়। তবে উপকারী পাখি  হিসেবে পৃথিবীজুড়েই এর সুনাম আছে। প্যাঁচা প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।লক্ষ্মীর বাহন হিসাবে পেঁচাকে ভাবার কারণ হল যে, পেঁচা শস্যক্ষেত্রে বিভিন্ন পোকামাকড়, ইঁদুর, ব্যাঙ ও বিভিন্ন শস্য নস্টকারী প্রাণীদের খেয়ে ধ্বংস করে বলে । একজোড়া পেঁচা পাঁচ বছরে প্রায় তিন হাজার ইঁদুর হত্যা করতে পারে।পেঁচা  এক জীবনে কৃষকের ২৫ লক্ষ টাকার ফসল রক্ষা করে।

পৃথিবীজুড়ে প্রায় ২০০ প্রজাতির প্যাঁচা দেখা গেলেও বাংলাদেশে রয়েছে ১৬ প্রজাতির প্যাঁচা। এরমাঝে লক্ষ্মীপ্যাঁচা, কোটরে প্যাঁচা, নিম প্যাঁচা, কুপোখ বা কালো প্যাঁচা, ভুতম প্যাঁচা, পাহাড়ি প্যাঁচা, ঘাসবনের প্যাঁচা, ভুমা প্যাঁচা, বন্ধনিযুক্ত নিমপোখ প্যাঁচা, বনের বড় প্যাঁচা উল্লেখযোগ্য।প্যাঁচার মাথা বড়, মুখমন্ডল চ্যাপ্টা এবং মাথার সম্মুখদিকে চোখ। প্যাঁচার চোখের চারিদিকে সাধারণত বৃত্তাকারে পালক সাজানো থাকে যাকে ফেসিয়াল ডিস্ক বলে।

পেঁচা কথাটি শুনলে আপনার মনে ভাল ও মন্দ দুই ধরণের কথা মনে পড়ে যায় । কিছু পেঁচাকে সৌভাগ্যের চিহ্ন হিসাবে আবার কিছু পেঁচাকে দুঃখের কারণ বলে মানুষ মনে করে । লক্ষ্মী পেঁচাকে আমরা সবাই সৌভাগ্যের প্রতীক ও হুতুম পেঁচাকে অলক্ষ্মী বলে ভেবে থাকি । আদিম যুগে মানুষ পেঁচাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেছেন ও তাঁর পুজো করেছেন । বাঙালিদের লক্ষ্মীর বাহন হিসাবে পেঁচাকে স্থান দেওয়া হয়েছে । মা লক্ষ্মীর বাহন হওয়ার আগে থেকেও পেঁচার পুজো করা হত।

খাবার নিয়ে প্যাঁচার তেমন কোন বাছবিচার নেই। ছোট ইঁদুর, শুঁয়োপোকা, ছোট পাখি, টিকটিকি, ঢোঁড়া সাপ, ব্যাঙ ইত্যাদি খেয়ে প্যাঁচা জীবনধারণ করে থাকে। প্যাঁচা পাখিদের দলের হলেও এরা অন্যান্য পাখির সাথে একত্রে না থেকে একাকী নির্জনে বড় গাছের কোটর, বন-জঙ্গল, দালানের ফাঁক-ফোকর কিংবা গাছ-গাছালির ঘনপাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে। দিনের বেলা সহজে চোখে পড়ে না। কারণ দিনের বেলা গাছের পাতার আড়ালে বা গর্তে লুকিয়ে এরা বিশ্রাম নেয়। অনেকে মনে করে প্যাঁচা দিনের বেলা দেখতে পায় না। এটি একধরনের ভুল ধারণা। আসলে প্যাঁচা দিনের বেলা দেখতে পায়। তবে এদের বড় আইরিশযুক্ত চোখের কারণে রাতে এদের দেখতে বেশি সুবিধা হয়।

লক্ষ্মীর বাহন হিসাবে পেঁচা এসেছে আলেকজান্ডারের পরে পশ্চিম সীমান্তবর্তী গ্রিক রাজাদের মুদ্রা থেকে। প্রাচীন রোমের দেবী ‘মিনার্ভা’র হাতে পেঁচা থাকে । তাঁকে জ্ঞানের ও জাদুর প্রতীক হিসাবে মনে করা হয় । আবার পেঁচা গ্রিসের শান্তি ও জ্ঞানের দেবী এথেনার বাহন হিসাবে দেখা যায় । খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ সালে ইজিপ্টে একটি কাঠের কফিনে একটি অদ্ভুত দেখতে পেঁচার ছবি পাওয়া গিয়েছে । আবার মধ্য-পশ্চিম আমেরিকায় একটি পাহারের গুহায় প্যালিওসিন যুগের পেঁচার ফসিল পাওয়া গিয়েছে ।

গবেষকদের মতে পেঁচা ডাইনোসরদের থেকে ৩৫০০ বছর আগে পৃথিবীতে জন্ম হয়েছিল । পেঁচা নাকি ডাইনোসরদের থেকেও পুরনো । প্রত্নতাত্ত্বিকরা পেঁচার জীবাশ্ম বিচার করে দাবি করেন যে, পেঁচার বয়স ৬ কোটি বা তাঁর থেকে বেশি হবে । বিশেষজ্ঞদের মতে পেঁচার বয়স আরও বেশি হতে পারে বলে তাঁর মনে করেন ।

প্রচলিত বিশ্বাসে প্যাঁকে মন্দ ভাগ্য, শারীরিক অসুস্থতা অথবা মৃত্যুর প্রতিচ্ছবি হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই এ বিশ্বাস প্রচলিত। এখনো অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে বিশ্বাস আছে, রাতে প্যাঁচা ডাকলে না কি গৃহস্থের অমঙ্গল হয়। কিন্তু স্বাভাবিক নিয়মেই রাতে প্যাঁচা ডাকে। ইঁদুর ধরতে প্যাঁচা মাটিতে নেমে আসে এবং ডাকে। তাই গভীর রাতে প্যাঁচার ডাক শুনতে পাওয়াটা অতি সাধারণ ও স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। আর এভাবেই প্যাঁচা বিভিন্ন কুসংস্কার এবং অলৌকিক চিন্তা-ভাবনা নিজের সাথে নিয়েই প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে।

একসময় বাংলাদেশের শহর ও গ্রামে অনেক প্যাঁচা দেখা গেলেও এখন আর তেমন দেখা মেলে না। নির্বিচারে বন উজাড়, ফসল আবাদ করতে জমিতে বিভিন্ন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, শিকারিদের দৌরাত্ম্য, খাদ্যের অভাব, অশুভ পাখি বলে মেরে ফেলাসহ নানা কারণে প্রকৃতি থেকে দিনদিন প্যাঁচার সংখ্যা কমে যাচ্ছে।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)