শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১

SW News24
বুধবার ● ২৯ মে ২০২৪
প্রথম পাতা » মুক্তমত » সমাজের ওপর তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব ব্যাপক
প্রথম পাতা » মুক্তমত » সমাজের ওপর তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব ব্যাপক
১১০ বার পঠিত
বুধবার ● ২৯ মে ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সমাজের ওপর তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব ব্যাপক

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান

বিশ্বজুড়ে বহু মানুষের মৃত্যু ও বিভিন্ন রোগের কারণ হলো তামাক। সিগারেট মানুষকে বয়সের আগেই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। তামাক গ্রহণের ফলে ক্যানসার, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের সমস্যা, স্ট্রোক, বন্ধ্যাত্ব, অন্ধত্ব, ওরাল ক্যাভিটির মতো রোগ দেখা দিতে পারে। ধূমপানের ফলে হার্ট অকেজো হয়ে যেতে পারে। ধূমপান হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান দাঁত এবং মাড়ির স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, দাগযুক্ত দাঁত, মাড়ির রোগ, দাঁতের চিকিৎসার পরে সেরে উঠতে দেরি হওয়া এবং মুখের ক্যানসারের উচ্চ ঝুঁকির কারণ এই ধূমপানের অভ্যাস।ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটি সর্বজন স্বীকৃত। ধুমপান মৃত্যুর জন্য দায়ী, তবু কেন ধুমপান।

প্রতি বছর ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালন করা হয়। বিশ্বজুড়ে ২৪ ঘণ্টা সময়সীমা ধরে তামাক সেবনের সমস্ত প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকাতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে দিবসটি প্রচলিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সদস্য রাষ্ট্রসমূহ ১৯৮৭ সালে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস চালু করে। এছাড়াও দিবসটির উদ্দেশ্য তামাক ব্যবহারের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব এবং স্বাস্থ্যের উপর এর নেতিবাচক প্রভাবের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করানো।

বর্তমানে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিবেচিত তামাক এবং ধুমপানের পরোক্ষ ধোঁয়ার প্রভাবের কারণে প্রায় ৬ লক্ষ অধূমপায়ী ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা রয়েছে।এছাড়া দিবসটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো মানুষকে তামাক ব্যবহারে ব্যাপক নিরুৎসাহিতকরণ এবং স্বাস্থ্যের ওপর তামকের নেতিবাচক প্রভাবের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করানো।

বিশ্বের মোট তামাকের ১ দশমিক ৩ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে।উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিশ্বের ৯০ ভাগ তামাক উৎপাদন হয়। এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের পরিবেশ, অর্থনীতি এবং সমাজের ওপর তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব ব্যাপক। আমাদের দেশে আবাদযোগ্য জমিতে তামাক চাষের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে। কারণ যে জমিতে তামাক উৎপাদন করা হয় সেখানে অন্য কোনো ফসল ভালো উৎপাদন হয় না।

তামাক চাষ কৃষকের স্বাস্থ্য, মাটির স্বাস্থ্য এবং সার্বিকভাবে গোটা জনস্বাস্থ্য ও পৃথিবীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধন করে। দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক প্রতিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্য সংকট সৃষ্টিতেও ভুমিকা রাখে তামাক। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান খাদ্য সংকটের পিছনে সংঘাত-যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবের পাশাপাশি তামাক চাষের একটি প্রভাব রয়েছে।সিগারেটের ফেলে দেয়া ফিল্টার পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিগারেটের ফেলে দেয়া ফিল্টার প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে প্রায় এক দশক সময় নেয়, আর মিশে যাওয়ার সময় এ থেকে সাত হাজারেরও বেশি রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। কেবল সিগারেটই নয়, জর্দা, গুলের মতো ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যগুলোও প্লাস্টিক কৌটা ও পলিথিন প্যাকেটে ভরে বিক্রি করা হয়, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

তামাকের পরিবেশগত ক্ষতির আরেকটি বড় কারণ পরোক্ষ ধূমপান। বাংলাদেশের ৪ কোটিরও অধিক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়, যার সিংহভাগই নারী। কর্মস্থলে এবং গণ-পরিবহণে যাতায়াতের সময় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়, এমন ব্যক্তির সংখ্যা যথাক্রমে ৮১ লক্ষ এবং ২.৫ কোটি। পরোক্ষ ধূমপান মৃত্যু ঘটায় এবং এটা হৃদরোগ ও ফুসফুসের ক্যানসারের মত মারাত্মক রোগের অন্যতম কারণ।

টোব্যাকো অ্যাটলাসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৩১ শতাংশ বননিধনের জন্য তামাক দায়ী। এছাড়া তামাক চাষে ব্যবহৃত অতিরিক্ত কীটনাশক ও সার বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে জলাশয়ে মিশে ক্ষতিগ্রস্ত করছে দেশের পানি সম্পদ ও মৎস্য উৎপাদন। এ কারণে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদী ইতোমধ্যে হুমকির মুখে পড়েছে।
বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ মাত্র ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৭ হাজার একর। অথচ তামাক চাষে ব্যবহৃত মোট জমির পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। বিশ্বের মোট তামাকের ১.৩ শতাংশই উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। তামাকচাষের কারণে খাদ্য ফসলের জমি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশে রবি মৌসুমের প্রধান খাদ্য ফসলগুলোর মধ্যে বোরো, গম এবং আলু অন্যতম এবং এ মৌসুমেই তামাক চাষ হয়ে থাকে। বর্তমানে, পৃথিবীর ১২৫টিরও বেশি দেশের প্রায় ৪ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয় এবং শীর্ষ তামাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ভুক্ত দেশ।

বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৫.৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার করছে। তামাকজনিত রোগে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি, ২০১৯-এর তথ্য অনুযায়ী দেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক। তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেছেন, জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অংশীজনদের প্রায়োগিক ভূমিকার মাধ্যমে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তামাক জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য হুমকি। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করণের মাধ্যমেই এসব ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের ঘোষণা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং জন সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আসবে। তাহলে বিপুল পরিমাণ টাকা অপচয় থেকে বাঁচানো যেত। আর সেই সাথে দেশের মৃত্যুর হার কমবে। সব থেকে কল্যাণ কর, ধুমপান বর্জনের জন্য ধুমপায়ীদের দৃঢ় ইচ্ছা শক্তিই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)