শিরোনাম:
পাইকগাছা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
রবিবার ● ২ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » মুক্তমত » জলবায়ু পরিবর্তনে হুমকির মুখে উপকূল
প্রথম পাতা » মুক্তমত » জলবায়ু পরিবর্তনে হুমকির মুখে উপকূল
১৫০ বার পঠিত
রবিবার ● ২ জুন ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

জলবায়ু পরিবর্তনে হুমকির মুখে উপকূল

---

 প্রকাশ ঘোষ বিধান

বর্তমানে সারা বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ বিপর্যয়ের মুখে। বায়ু মন্ডলে পূঞ্জিভূত গ্রিনহাউস গ্যাস উৎসারণের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগের সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্য ও কৃষি কাজে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার আশংকা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ভূমিকা নেই বললেই চলে। তবে বিশ্বে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশের নাম।

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ১৯৭২ সালের জুন মাসে সুইডেনের স্টকহোমে জাতিসংঘের মানব পরিবেশের ওপর প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের ২৭ তম অধিবেশনের প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ঐ সম্মেলনের পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিবেশ দিবস উদযাপিত হচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভুমি বাংলাদেশ। সবুজ বন, নদী, নালা ও জলপ্রপাত এদেশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য আরো মনোরম করেছে। কিন্তু বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনে দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মানুষও বিভিন্ন ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির উৎস হুমকির মুখে পড়ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ঝুঁকিপূর্ন স্থানে রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নানা কারনে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলি আক্রান্ত হয়েছে জনজীবনে নেমে এসেছে নানা বিপর্যয়। বিশ্বে মানুষের যত রকম ঝুকি রয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণতা তার মধ্যে অন্যতম। বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য মুলত কার্বন ডাই অক্সাইড কে দায়ী করা হয়। কিন্তু এর সাথে মিথেন, নাইট্রস অক্সাইড, ক্লোরো ফ্লরো ইত্যাদি গ্যাস বিশেষ ভুমিকা রাখে। গ্রীন হাউস গ্যাসের প্রভাবে পৃথিবী ক্রমাগত উষ্ণ হচ্ছে। মানব সভ্যতার অগ্রগতি, প্রযুক্তি ও শিল্প উন্নয়নে নির্মানকারী কারখানা, শিল্প কারখানা থেকে বায়ু মন্ডলে সিএফসি গ্যাস যুক্ত হচ্ছে। মানুষের অসচেতন কর্মকান্ডের ফলে বায়ু মন্ডলে এসব গ্যাস যুক্ত হয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতায় ভুমিকা রাখছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সময় এবং অবস্থানে পরিবর্তিত হয়। এখন পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ার কারণে আর্কটিক অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দ্রুত উষ্ণ হয়েছে । স্থলভাগের উপরিভাগের বায়ুর তাপমাত্রাও সমুদ্রের উপরে প্রায় দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে তীব্র তাপপ্রবাহের সৃষ্টি হয়েছে।একারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুর্নিঝড়, বন্যা, খরা, ভুমি কম্পন, জলোচ্ছাস, পাহাড় ধস, লবনাক্ততা বৃদ্ধি, নদী ভাঙ্গন, পানিরস্থর নিচে নেমে যাওয়া, অসময়ে অধিক বৃষ্টি ও অধিক খরা সহ বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারনে হিমালয়ের বরফ, উত্তর মেরু ও এ্যান্টাকটিকার বরফ গলতে শুরু করেছে। সমুদ্রের পানি বৃদ্ধি ও সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। গত ১০০ বছরে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে ১৫ সেঃ মিঃ থেকে ২৫ সেঃ মিঃ। বছরে বৃদ্ধির হার ১.৫ সেঃ মিঃ থেকে ২.৫ সেঃ মিঃ। যা গত ৩০০ বছরের ১০ গুন। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের আশংকা তাপমাত্রা এভাবে বাড়তে থাকলে আগামী শতকে সমুদ্রের উচ্চতা বছরে বৃদ্ধি পাবে ৩০ সেঃ মিঃ থেকে ৪০ সেঃ মিঃ। এর ফলে পৃথিবীর অনেক নিম্ন অঞ্চল তলিয়ে যাবে। সূত্র মতে বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি বছর ৫ লক্ষ মানুষ মৃত্যু বরণ করবে। পৃথিবীর ১০ভাগ মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। বছরে প্রায় ৩৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম পরিমান ক্ষতি হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে বায়ূ মন্ডলের পুঞ্জিভুত গ্রীন হাউস গ্যাস উৎসারণে বিশ্ব উষ্ণায়নে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশে দক্ষিন পশ্চিম উপকুলীয় এলাকায় ক্রমাগত ঝুকি বাড়ছে। সাগরে প্রতিনিয়ত নিম্নচাপ, বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, খরা, কৃষিকে বাধাগ্রস্থ করছে। পানি, প্রানী সম্পদ ও নগর উন্নয়ন হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন বড় চালেজ্ঞ হয়ে দাড়িয়েছে। জীববৈচিত্র বিপন্ন হচ্ছে এবং ভুমি, বনাঞ্চল, শিল্প, বাসস্থান, পশু সমস্যা প্রকট হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন মারাক্তক ঝুকিপুর্ণ। বৃষ্টিপাত ও মাটির লবনাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। বঙ্গোপসাগরে ঘুর্নিঝড়ের সংখ্যা বেড়েছে। বিজ্ঞানীরা আশাংকা করছে আগামী ৫০ বছরে বিশ্বরে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রী থেকে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সমুদ্র পৃষ্ঠ ১ মিটার বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে সুন্দরবন সহ উপকুলীয় এলাকা তলিয়ে যাবে।

বাংলাদেশে ৭১০ কিলোমিটার উপকূলীয় সমুদ্র তটরেখা রয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরবন উপকূল ঘিরে রয়েছে ১২৫ কিলোমিটার এবং কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত ৮৫ কিলোমিটার। সমুদ্র উপকূল বরাবর রয়েছে গঙ্গা ও মেঘনা অববাহিকায় অবস্থিত প্রশস্ত জোয়ারভাটা সমভূমি এবং অসংখ্য নদী মোহনার ব-দ্বীপ। নদী সঙ্গমের ব-দ্বীপগুলো ও সমুদ্রে তটরেখা বরাবর ভূ-খণ্ড প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। উপকুলীয় ১৩ জেলার ৬৩ উপজেলার ৫৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৮ শত ৭৬ একর জমি তলিয়ে যাবে। যা দেশের মোট জমির ১৫.৮ ভাগ। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে আংশিক তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন বিজ্ঞানীরা। এতে বাংলাদেশের  প্রায় ৩ কোটি মানুষ বাস্তু হারা হবে। মানুষের জীবন ও জীবিকায় নেমে আসবে বিপর্যয়। বিপন্ন হবে উপকুলীয় অঞ্চল।

মানব সভ্যতার উন্নয়ন কাযক্রমে মানুষের অসচেতন কর্মকান্ডে আমাদের কৃষি, বনজ, পানি, মৎস্য সম্পদ সমুহ ও জীব বৈচিত্র ঝুঁকিতে পড়েছে। আরো অনিশ্চয়তায় পড়বে যদি দ্রুত জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে। তাই আর চুপ করে বসে থাকলে হবে না। সবাইকে সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। বিশ্ব উষ্ণায়নে যে সমস্ত গ্যাস দায়ী আমাদের অসেচতন কর্মকান্ডে সে সমস্ত গ্যাস সম্মেলিত উদ্যোগের মাধ্যমে পরিহার করতে হবে। উন্নত বিশ্ব দীর্ঘদিন ধরে গ্রীন হাউস গ্যাস উৎসারণ করে বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। বিশ্ব বাসিকে সুস্থভাবে বাচার জন্য আবহাওয়া, জলবায়ু ও বিশুদ্ধ বায়ু নিশ্চিত করতে হবে। তাই দায়ী উন্নত দেশগুলিকে এর সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। পৃথিবীতে সুস্থভাবে বাঁচার জন্য আবহাওয়া ও জলবায়ু নিশ্চিত করতে হবে বিশ্ববাসীকে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে বাংলাদেশের জনগণকে সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে।


লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)