মঙ্গলবার ● ৪ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » বিশেষ সংবাদ » রেমালে তাষ্ডবে পাইকগাছায় গ্রামীণ অবকাঠামোর ৩৫ কি.মি.রাস্তা ক্ষতবিক্ষত
রেমালে তাষ্ডবে পাইকগাছায় গ্রামীণ অবকাঠামোর ৩৫ কি.মি.রাস্তা ক্ষতবিক্ষত
ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গ্রামীণ অবকাঠামোর ক্ষতবিক্ষত হয়েছে । ভেঙে গেছে অসংখ্য কাঁচা , আধা ও পাকা রাস্তা। কোথাও ভাঙা রাস্তার পানি মাড়িয়ে, কোথাও মাটি-বালি দিয়ে চলাচল করছে স্থানীয়রা। জলোচ্ছ্বাসে কাঁচা-পাকা রাস্তা ভেঙে এ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এতে উপজেলার ৩০ থেকে ৩৫ কি. মি. সড়ক সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি দপ্তর) জানিয়েছে। সরেজমিন ও সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ও জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন সহ ১টি পৌরসভায় প্রত্যন্ত গ্রামের কার্পেটিং, এসবিবি ও কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট ভেঙে ভাসিয়ে নিয়েছে। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নদীর তীরবর্তী ৬টি ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিভিন্ন স্পটের ২১ থেকে ২৫টি স্থানে অনেক জায়গাজুড়ে বড় বড় খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। উপজেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেলুটি ইউনিয়নে। এ অঞ্চলটি এখনো জলমগ্ন। চারটি দ্বীপ বেষ্টিত এই ইউনিয়নে ১০/১২ জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে কমপক্ষে ২২ গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ কি.মি. সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে তেলিখালী, কালিনগর, দারুণমল্লিক, বেড়িবাঁধ ভেঙে ১৫ টি গ্রাম প্লাবিত, দেলুটি পূর্ব ও পশ্চিম পাড়া, জিরবুনিয়া, পারমধুখালী, চাকরিবাকরি সহ অন্যান্য গ্রামের মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সোলাদানা থেকে গড়ইখালী ৯.৬ কিলোমিটার প্রধান সড়কের ২/৩ স্থানে ২০ মিটার সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত এবং একাধিক স্থানে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া নুনিয়াপাড়া ওয়াপদা থেকে আমুরকাটা অভিমুখি সড়কে ৫ মিটার জায়গা ভাঙন সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। লতা ইউনিয়নে হানি বাজার হয়ে আসাননগর- লো কাস্ট স্কুল থেকে সুন্দরমহল খেয়াঘাট পর্যন্ত ৬ কি.মি. সড়কে দু’টি জায়গা ২০ মিটার বিচ্ছিন্ন এবং একাধিক স্থানে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া লতা বাজার সংলগ্ন সড়কে ১৫ মিটার সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাড়ুলী ইউনিয়নের ষষ্ঠীতলা বাজার থেকে রাড়ুলী ইউনিয়ন পরিষদ অভিমুখে দুই জায়গায় ৩০ মিটার ও ৪০ মিটার করে ৭০ মিটার সড়ক বিচ্ছিন্ন। এছাড়া জেলেপাড়ায় নদী ভাঙনে আধা কি. মি. কার্পেটিং এর রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন। লস্কর ইউনিয়নের আলমতলা চর মসজিদ থেকে গড়ইখালী পর্যন্ত প্রায় ১৫ কি.মি. সড়কে একাধিক স্থানে ৪০ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত। উপজেলা এলজিইডি দপ্তরের তথ্যমতে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ৩৫ কিলোমিটার কার্পেটিং রাস্তা, এসবিবি পাকা ও কাঁচা বিধ্বস্ত হয়েছে। গত শনিবার খুলনা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম আনিছুজ্জামান এবং উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাফিন শোয়েব সরজমিনে এসকল ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পরিদর্শন করেন এবং রাস্তাগুলো দ্রুত সংস্কার করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাফিন শোয়েব বলেন, রেমালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে উপজেলার ৩০ থেকে ৩৫ কি.মি. এইচবিবি এবং পাকা রাস্তা সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত। যার আর্থিক ক্ষতির মূল্য আনুমানিক প্রায় ২০ কোটি টাকা। তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকটি ইউনিয়নের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করে এলজিইডির সদর দপ্তরে জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও ছোটখাটো সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাস্তাগুলো দ্রুত মেরামত করা হবে। বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোতে কাজ করতে সময় লাগবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন, রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন পর্যায়ের সকল রাস্তাঘাট গুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেরামত করে চলাচল উপযোগী করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা প্রকৌশলী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া জেলা প্রশাসক স্যারের দপ্তরে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির একটি তথ্য বিবরণী প্রেরণ করা হয়েছে।