শিরোনাম:
পাইকগাছা, মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১

SW News24
বুধবার ● ১২ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » মুক্তমত » শরণার্থী
প্রথম পাতা » মুক্তমত » শরণার্থী
৪১ বার পঠিত
বুধবার ● ১২ জুন ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

শরণার্থী

---    গৃহযুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে প্রতিবছর ঘর ছাড়া হচ্ছে বিশ্বের কোটি মানুষ। নিজ দেশ ছেড়ে পাড়ি জমাচ্ছে ভিনদেশে। নিজ দেশে বসবাস বিপজ্জনক হয়ে উঠলে জীবন রক্ষার তাগিদেই কোন দেশের জনগোষ্ঠী ভিন্নদেশে শরণ নিতে বাধ্য হয়। জাতিগত সহিংসতা, ধর্মীয় উগ্রতা, রাজনৈতিক আদর্শগত কারণে সমাজবদ্ধ জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তাহীনতা এসবই শরণার্থী হওয়ার প্রধান কারণ।

শরণার্থীদের প্রতি ক্রমবর্ধমান প্রতিকূল সময়ে, যুদ্ধ, নিপীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য ভয়াবহতা কারণে তাদের বাড়িঘর থেকে জোরপূর্বক উৎখাত করা মানুষের সাহস এবং সমাজে অবদানকে সম্মান জানাতে জাতিসংঘ বিশ্ব শরণার্থী দিবস পালন করছে।

প্রতি বছর ২০ জুন বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি দেশ বিশ্ব শরণার্থী দিবস পালন করে থাকে। ১৯৫১ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক শরণার্থীদের মর্যাদা বিষয়ক সম্মেলনে অনুচ্ছেদ ১এ-তে সংক্ষিপ্ত আকারে শরণার্থীর সংজ্ঞা তুলে ধরা হয়। একজন ব্যক্তি যদি গভীরভাবে উপলব্ধি করেন ও দেখতে পান যে, তিনি জাতিগত সহিংসতা, ধর্মীয় উন্মাদনা, জাতীয়তাবোধ, রাজনৈতিক আদর্শ, সমাজবদ্ধ জনগোষ্ঠীর সদস্য হওয়ায় তাঁকে ওই দেশের নাগরিকের অধিকার থেকে দূরে সরানো হচ্ছে; সেখানে ব্যাপক ভয়-ভীতিকর পরিবেশ বিদ্যমান এবং রাষ্ট্র তাঁকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে; তখনই তিনি শরণার্থী হিসেবে বিবেচিত হন।

১৯৬৭ সালের সম্মেলনের খসড়া দলিলে উদ্বাস্তুর সংজ্ঞাকে বিস্তৃত করা হয়। আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকায় অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক সম্মেলনে যুদ্ধ এবং অন্যান্য সহিংসতায় আক্রান্ত ব্যক্তি কর্তৃক নিজ দেশত্যাগ করাকেও এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই সংজ্ঞায় শরণার্থীকে প্রায়ই ভাসমান ব্যক্তিরূপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সম্মেলনে গৃহীত সংজ্ঞার বাইরে থেকে যদি যুদ্ধের কারণে নির্যাতন-নিপীড়নে আক্রান্ত না হয়েও মাতৃভূমি পরিত্যাগ করে অথবা, জোরপূর্বক নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত হয়- তাহলে তারা শরণার্থী হিসেবে বিবেচিত হবে। ১৯৫১ সালের শরণার্থী বিষয়ক কনভেনশনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০০১ সাল থেকে বিশ্ব শরণার্থী দিবস পালিত হয়ে আসছে। ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৫৫/৭৬ ভোটে অনুমোদিত হয় যে, ২০০১ সাল থেকে জুন মাসের ২০ তারিখ আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবস হিসেবে পালন করা হবে। যদিও ২০০০ সাল পর্যন্ত ‘আফ্রিকান শরণার্থী’ দিবস নামে একটি দিবস বিভিন্ন দেশে পালিত হয়ে আসছিল। জাতিসংঘ পরবর্তীকালে নিশ্চিত করে যে, অর্গাইজেশন অব আফ্রিকান ইউনিটি ২০ জুনকে ‘আফ্রিকান শরণার্থী’ দিবসের পরিবর্তে আন্তর্জাতিকভাবে শরণার্থী দিবস হিসেবে পালন করতে সম্মত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে শরণার্থীদের অমানবিক অবস্থানের প্রতি আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দের সচেতনতা সৃষ্টির জন্য দিবসটি পালন করা হয়।

দিবসটি পালনের দুটি উদ্দেশ্য  একটি হচ্ছে,শরণার্থী বা উদ্বাস্তুদের অধিকার, তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা, তাদের নিপীড়ন, অত্যাচার ও দুর্দশার কাহিনি ইত্যাদি সম্পর্কে আলোকপাত করা। অন্যটি হচ্ছে;শরণার্থীদের প্রতি প্রতিটি দেশের জনসাধারণের দায়িত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সচেতন করে গড়ে তোলা, বিশেষ করে ওই বাস্তু হারানো মানুষদের দুঃখ-কষ্ট উপশমে এগিয়ে আসতে সবাইকে উৎসাহিত করা।

একজন উদ্বাস্তু হল এমন একজন ব্যক্তি যিনি যুদ্ধ, সংঘাত নিপীড়ন এবং সহিংসতার কারণে তাদের দেশ ছেড়ে চলে যান যা তারা তাদের দেশের মধ্যে সম্মুখীন হয়েছে । আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করার প্রক্রিয়া হাতে নেওয়ার মাধ্যমে , কিছু শরণার্থীকে প্রায়ই দেখা যায় যে তারা কেবলমাত্র ন্যূনতম পোশাক এবং জিনিসপত্র বহন করে সবকিছু ছেড়ে চলে যায়; একটি ভিন্ন দেশে নিরাপত্তা এবং আশ্রয় খুঁজে বের করার পরিকল্পনা নিয়ে।

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক শতাংশ আজ শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে, যার সংখ্যা হবে প্রায় আট কোটি। সবচেয়ে বেশি শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনের নাগরিকরা। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ সিরীয় নাগরিক বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসাবে অবস্থান করছেন। এদিকে আমাদের পাশের দেশ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরাট একটা অংশ আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে বর্তমানে শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয়ে নিয়েছে।জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বে উদ্বাস্তু বা শরণার্থীর সংখ্যা ৮ কোটি ৯৩ লাখ, যা ভবিষ্যতে আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উদ্বাস্তুদের মধ্যে ২ কোটি ৭১ লাখ  শরণার্থী। বাকিদের কেউ রাষ্ট্রহীন, কেউ আশ্রয়প্রার্থী, কেউ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষ। আর এই অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। শরণার্থীদের মধ্যে সিরিয়া ২৭ শতাংশ, ভেনিজুয়েলা ১৮ শতাংশ, আফগানিস্তান ১১ শতাংশ, দক্ষিণ সুদান ৯ শতাংশ এবং মিয়ানমার থেকে ৫ শতাংশ থেকে আগত। এছাড়া ৩০ শতাংশ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আগত শরণার্থী।

শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশ মাত্র ১৭ শতাংশ, মধ্যম আয়ের ৪০ শতাংশ, নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ ২১ শতাংশ এবং নিম্ন আয়ের দেশ ২২ শতাংশ। তবে বেশিরভাগ শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে (৭২ শতাংশ)। বর্তমানে বাংলাদেশে বাস্তচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক বা রোহিঙ্গা রয়েছে প্রায় ১২ লাখ।

বর্তমান বিশ্বের একটি অন্যতম সমস্যা শরণার্থী সংকট। শরণার্থী সমস্যা থেকে উত্তরণের ভালো কোনো খবর পাওয়া যায়নি। নিকট ভবিষ্যতেও শরণার্থীদের জন্য ভালো কোনো খবর আসবে বলে মনে হয় না।কারণ বিশ্বে প্রতিনিয়ত শরণার্থী সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে।জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক কনভেনশনে স্বাক্ষর না করায় শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে এসব দেশের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।তবে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দ্রুত শরণার্থী সংকটের সমাধান প্রয়োজন।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)