সোমবার ● ১৫ জুলাই ২০২৪
প্রথম পাতা » মুক্তমত » চিংড়ি চাষ কৃষিতে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনায় একটি খাত
চিংড়ি চাষ কৃষিতে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনায় একটি খাত
প্রকাশ ঘোষ বিধান
বাংলাদেশ একটি অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। এদেশে রয়েছে সামুদ্রিক খাবারজাত শিল্পের জন্য অসাধারণ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ৭১০ কি.মি উপকূলীয় অঞ্চল। লোনা পানির চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষের জন্য যথাযথ পরিবেশ। বাংলাদেশের আরোহিত মৎস্য সম্পদের প্রায় ৮০ভাগ উপকূলীয় অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে আছে ২৮ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৮৭ প্রজাতির মাছ।
বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি কৃষি। মৎস্যচাষ কৃষি খাতের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনায় একটি খাত। রপ্তানি খাতের মধ্যে চিংড়ি বাংলাদেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী রপ্তানি পণ্য। দেশের মোট উৎপাদিত চিংড়ির বেশিরভাগই উৎপাদিত হয় দেশের উপকূলীয় অঞ্চল বিশেষ করে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং কক্সবাজার এলাকায়। হিমায়িত চিংড়ি বাংলাদেশের একটি শতভাগ কৃষিভিত্তিক ও রপ্তানীমুখী শিল্পখাত। সারাদেশের গ্রামগঞ্জের প্রায় দেড় কোটি লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চিংড়ি ও মাছ উৎপাদন, বিপনন, প্রক্রিয়াকরণ ও রপ্তানীতে নিয়োজিত রয়েছে। হিমায়িত খাদ্য দেশের রপ্তানী বাণিজ্যে অত্যন্ত পুরোনো একটি খাত। নানা চড়াই উৎরাই অতিক্রম করে দীর্ঘ প্রায় পাঁচদশক ধরে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানী করে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করে আসছে। বর্তমানে চিংড়ি রপ্তানি করে যে আয় তার পরিমাণ জাতীয় আয়ের শতকরা প্রায় ৭.৮ ভাগ। রপ্তানি আয়ে চিংড়ির অবদান প্রায় ৮.৫ভাগ।
খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন পাইকগাছায় নোনা পানির চিংড়ি চাষ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। মৎস্য চাষি ঘের মালিক ও জমি মালিকরা অবস্থান নিয়েছেন লবণ পানিতে চিংড়ি চাষের পক্ষে। অন্যদিকে মিষ্টি পানিতে ধান ও মাছ চাষের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে অপর একটি পক্ষ্। এ মতবিরোধে চিংড়ি চাষি সমিতি লবণ পানিতে চিংড়ি চাষের করার পক্ষে সভা-সমাবেশ করেছে। অপর পক্ষ্ মিষ্টিপানিতে ধান চাষ ও মাছ চাষের পক্ষে সভা-সমাবেশ করেছে। বড় একটি অংশ চায় নোনা পানি তুলে চিংড়ি চাষ অব্যাহত থাকুক। অন্যদিকে কিছু লোক নোনা পানির চিংড়ি চাষ চাচ্ছে না, তারা নোনামুক্ত কৃষিকাজের পরিবেশ চায়। তবে তারা উল্লেখযোগ্য কোন চাষাবাদের সাথে জড়িত নহে।তারাই চাচ্ছে নোনামুক্ত মিস্টি পানিতে ধান ও মাছ চাষ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাইকগাছায় প্রায় চার দশক লবন পানিতে চিংড়িসহ মৎস্য চাষ করা হচ্ছে। এ এলাকা লবন পানি অধ্যাশিত। তাই নিচু এলাকাকে চিংড়ি চাষের জোন তৈরি করতে হবে। আর যে বিলের জমি মিস্টি পানিতে ধান চাষ করার উপযোগী সে সকল জমিতে পর্যায়ক্রমে লবন পানি উঠানো বন্ধ করে ধান ও মাছ চাষের আওতায় আনতে হবে। তার আগে টেকসই বেড়ীবাধ নির্মাণ, স্লুইস গেট ও পানি নিস্কাশনের খাল খনন করে ধান চাষের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
চিংড়ি চাষ বলতে প্রধানত উপকূলীয় এলাকায় বাগদা চিংড়ির চাষকেই বোঝায়। যেখানে জোয়ার ভাটার প্রভাব রয়েছে সে এলাকা একক চিংড়ি চাষের জন্য উপযোগী। খুলনা জেলার চিংড়ি খামার গুলোর অধিকাংশই উপকূলীয় বাঁধের ভিতরে অবস্থিত। এগুলি এককভাবে চিংড়ি চাষের জন্য ব্যবহৃত হয়। খামারকে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে বেষ্টনী বাঁধের ব্যবস্থা রাখা। বেষ্টনী বাঁধ সাধারণত ২-৩ মিটার উঁচু হয় , যেন সর্বোচ্চ জোয়ারের সময়ও বাঁধের ওপর দিয়ে পুকুরে পানি ঢুকতে না পারে। এছাড়া খামারে পানি ও চিংড়ির পোনা ঢুকানোর জন্য হেড ক্যানেল ব্যবস্থা থাকে। প্রকল্প থেকে প্রয়োজনে পানি নিষ্কাশনের জন্য ফিডার ক্যানেল থাকে। অনেক সময় অভ্যন্তরীণ বাঁধ নির্মাণ করে খামারে পোনা প্রতিপালনের জন্য ছোট ছোট নার্সারি পুকুর তৈরি করা হয়। খামারের প্রতিটি পুকুরে সঠিক মাত্রায় পানির গভীরতা বহাল রাখতে স্লুইস গেট এর ব্যবস্থা থাকে। স্লুইস গেট চিংড়ি খামারের অন্যতম প্রধান অবকাঠামো। বড় আকৃতির প্রধান স্লুইস গেট ফিডার ক্যানেলের মুখে বসাতে হয়। অল্প ব্যয় এবং রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধার জন্য সাধারণত কাঠের গেট ব্যাবহার করা হয়। শীতকালে ঘেরের ভিতর জোয়ারে লোনা পানি ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষ করা হয়।জোয়ারের পানির সঙ্গে চিংড়ির লার্ভা ও অন্যান্য লোনা পানির মাছের পোনা প্রবেশ করে। বর্ষার শুরুতে জুন-জুলাই মাসে চিংড়ি ধরে নেওয়া হয়। বর্ষার আগে চিংড়ি আহরণ করে একই ঘেরে মিস্টি পানিতে ধান ও অন্য মাছ চাষ করা হয়। উপকূলীয় এলাকার নদ- নদীতে বছরের প্রায় সাড়ে ৬ মাস মিস্টি পানির প্রবাহ ও বাকী প্রায় সাড়ে ৫ মাস লোনা পানির জোয়ার ভাটার প্রবাহ থাকে।
১৯৮০’র দশক থেকে উপকূলীয় এলাকার মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণের উপায় হিসেবে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। আবার ৮০’র দশক থেকেই বাড়তে শুরু করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও জলোচ্ছ্বাস। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘন ঘন শক্তিশালী সাইক্লোনের আঘাত হানা, প্রচণ্ড জলোচ্ছ্বাস ও চরম তাপমাত্রার মতো নানান জলবায়ু বিপদ কবলিত হয় দেশর উপকূল। এতে প্রতিনিয়ত নদীর কূল উপচে ফসলি জমিতে অনুপ্রবেশ শুরু করে নোনা পানি। নষ্ট হতে থাকে ক্ষেতের ফসল। উপকূলের লাখো চাষি ধান ক্ষেত লোনাপানিতে প্লাবিত করে।বিকল্প হিসাবে এসব ছোটবড় পুকুর বা ঘেরে ব্ল্যাক টাইগার প্রন প্রজাতির চিংড়ি চাষ শুরু করেন। এতে সমর্থন দিয়েছিল তৎকালীন সরকারও। কৃষকেরা যেহেতু লোনা পানি ঠেকাতে পারছেন না, ফসলের ক্ষতি মাঝেমধ্যেই হচ্ছে- তাহলে লোনা পানিতে ক্ষেত ডুবিয়ে তাতে চিংড়ি চাষ করলে বরং বাড়তি দুই পয়সা রোজগার হবে। এই কৌশল একটা পর্যায় পর্যন্ত কাজেও এসেছিল। এসময় রপ্তানি বাজারে সফল হয়ে বাংলাদেশে ‘সাদা সোনা’ খ্যাতিলাভ করে চিংড়ি চাষ। সরকারিভাবে চিংড়িকে রপ্তানির সম্ভাবনায় ভরপুর এক পণ্য হিসেবেও দেখা হয়। বেসরকারি সহায়তা সংস্থাগুলো ধান চাষ থেকে চিংড়ি চাষের রুপান্তরকে জলবায়ু সহনশীলতা তৈরির বুদ্ধিদীপ্ত সমাধান হিসেবে প্রশংসা করে। এভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৬ লাখ ৮০ হাজার একর জমিকে চিংড়ি চাষের আওতায় আনা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে স্বাধীনতার পর মাত্র ২.৩৮ কোটি টাকার হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ রপ্তানি শুরুহয়। তার ধারাবাহিকতায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে শুধুমাত্র হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করে ৩,৭৬৮ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে।২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত ৫,০০০ কোটি টাকার উপরে রপ্তানি আয় উন্নীত করে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে হিমায়িত মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মূল্যবান বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করে আসছে। আমদানিকারক দেশসমূহের মধ্যে- ইউনাইটেড কিংডম (গ্রেট ব্রিটেন), নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, জার্মানি, ফ্রান্স,ইতালি, ডেনমার্ক, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ষ্পেন, গ্রিস, সাইপ্রাস, পর্তুগাল, রাশিয়া, ইউএসএ, জাপান, চায়না, সৌদি-আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারত অন্যতম।
বিশ্বের সর্বত্র বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সকল প্রকার প্রাকৃতিক আমিষ জাতীয় উপাদানের মধ্যে চিংড়ি হচ্ছ একটি অত্যন্ত মূল্যবান উপাদেয় খাদ্য। বিশ্বের চিংড়ি উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদেশ চিংড়ি সম্পদে খুবই সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে চিংড়ি একটি অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং স্থানীয় সম্পদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা অতি উজ্জ্বল। বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পোশাক শিল্পের পরেই চিংড়ির স্থান। চিংড়ি চাষে কাঁচামাল, চিংড়ির পোনা এ দেশের প্রাকৃতিক উৎস হতে সহজেই পাওয়া যায়। চিংড়ি চাষ বর্তমানে একটি শিল্প হিসেবে চিহ্নিত। এ শিল্পে স্বল্প ব্যয়ে অধিক মুনাফা অর্জনের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, দিঘি এবং দেশের দক্ষিণে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের ৪৮০ কি.মি. তটরেখা বরাবর ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অর্থনৈতিক এলাকাসমূহে চিংড়ি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে স্থানীয় কৌশলে প্রায় অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চিংড়ি চাষ হয়ে আসছে। উৎপাদনের উপকরণ খরচ, জমির ইজারা মূল্য, শ্রমিকের মজুরি এবং পোনার কম মূল্য, অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশে মাটি ও পানির গুণগত মান, বাজারে আকর্ষণীয় মূল্য, আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভজনক বিধায় বাংলাদেশের চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল।
বর্তমানে বাংলাদেশে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ১,৪০,০০০ হেক্টর জমিতে চিংড়ির চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে খুলনা অঞ্চলে ১,১০,০০০ হেক্টর ও কক্সবাজার অঞ্চলে ৩০,০০০ হেক্টর। এছাড়াও দেশের ১৬টি জেলায় প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমি গলদা চিংড়ি চাষের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের মিঠা পানিতে বিশেষ করে ধানক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এদেশের শুধুমাত্র চিংড়ির পোনা ধরার কাজেই জড়িত আছে ২-৫ লাখ লোক। তাছাড়া চিংড়ি উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কাজে প্রায় দেড় থেকে ২ লাখ লোক জড়িত রয়েছে। বাংলাদেশে চিংড়ি চাষ প্রধানতঃ প্রচলিত ও আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে হচ্ছে। যার শতকরা ৭৫ শতাংশ জমিতে প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে এবং উৎপাদন হার হলো প্রতি হেক্টরে ২০০-২৫০ কেজি। বাংলাদেশের বিশাল চিংড়ি চাষ এলাকায় আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ, সুষ্ঠু পরিকল্পনা, চাষ পদ্ধতির সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক চাষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চিংড়ি উৎপাদন অনেকগুণ বাড়ানো সম্ভব।
বাংলাদেশে স্বাদু পানি, হালকা লবণাক্ত ও সামুদ্রিক লোনা পানিতে প্রায় ৬৭ প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায়। তবে গলদা চিংড়ি স্বাদু পানিতে চাষযোগ্য। যেহেতু মিঠা পানির চিংড়ি বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ জলাশয় যেমন- পুকুর, ডোবা, দিঘি, খাল, বিল, নদ-নদীতে এবং লোনা পানির চিংড়ি সাগরের লোনা পানি, ম্যানগ্রোভ এলাকা ও উপকূলীয় জলাশয়ের লবণাক্ত পানিতে পাওয়া যায়। পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন যা বাংলাদেশে বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এটি চিংড়ির একটি প্রাকৃতিক বিরাট আবাসস্থল।
১৯৮০’র দশক থেকে উন্নয়ন সংস্থাগুলো উপকূলীয় এলাকার মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণের উপায় হিসেবে চিংড়ি চাষকে উৎসাহিত করেছে। অথচ বিগত বহুবছর যাবৎ চিংড়ি চাষযোগ্য এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়নি। ভরাটকৃত খাল-বিল পুনঃখনন, বেড়ী বাঁধ নির্মাণে কোন কাজ হয়নি।বেড়ী বাঁধ ভাঙ্গলে মেরামত করা হয়। এর সামাজিক উদ্বেগগুলিকে তারা পরোয়া করেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শিল্প থেকে সিংহভাগ আয়ের সুবিধা পাচ্ছে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মধ্যস্বত্বভোগী ও ধনী জমি মালিকেরা। দারিদ্র্য দূরীকরণে খুব সামান্যই অবদান যোগ হয়েছে।
বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়নশীল একটি দেশ। লোনাপানিতে মৎস সম্পদ চাষ অর্থনীতিতে অবদানও রাখছে। চিংড়ি বাংলাদেশের একটি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। আমাদের দেশের অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর এবং বিশাল উপকূলীয় এলাকায় রয়েছে চিংড়ি চাষের বিপুল সম্ভাবনা। এদেশের জলাশয়ে রয়েছে ৬৭টি প্রজাতির চিংড়ি। তবে প্রধানত গলদা ও বাগদা এই দুইটি প্রজাতির চিংড়িই চাষ হয়ে থাকে। গলদা মিঠাপানির পুকুর-দিঘীতে আর বাগদা উপকূলীয় এলাকায় চাষ হয়ে থাকে। চিংড়ি বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য। তাই চিংড়ি চাষে এদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
দেশের শতভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী প্রক্রিয়াজাতকৃত হিমায়িত চিংড়ি ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি শিল্প খাত আজ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। বর্তমানে এ খাতের অন্যতম কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত বাগদা ও গলদা চিংড়ি দেশের স্থানীয় বাজারের সাথে অসম প্রতিযোগীতায় পড়েছে। বর্তমানে হ্যাচারিগুলোতে যে বাগদা চিংড়ির পোনা পাওয়া যায় তার অধিকাংশই সংক্রামক যুক্ত, ফলশ্রুতিতে চাষাবাদের সময় অধিকাংশ পোনা মারা যায়। বিগত বহুবছর যাবৎ চিংড়ি চাষযোগ্য এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন যথাঃ ভরাটকৃত খাল-বিল পুনঃখনন, বাঁধ নির্মাণ, চিংড়ি চাষের ঘের খনন, বিদ্যুৎ সংযোগ ইত্যাদি তেমন কাজ পরিকল্পিত ও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হয়নি। যা চিংড়ি চাষ বৃদ্ধি করার জন্য একান্ত আবশ্যক।
লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট