শিরোনাম:
পাইকগাছা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

SW News24
রবিবার ● ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » কৃষি » ঘেরের আইল ও পতিত জমিতে বহুমুখী ফসল উৎপাদনে বদলে যাচ্ছে পাইকগাছার কৃষি অর্থনীতি
প্রথম পাতা » কৃষি » ঘেরের আইল ও পতিত জমিতে বহুমুখী ফসল উৎপাদনে বদলে যাচ্ছে পাইকগাছার কৃষি অর্থনীতি
৯৪ বার পঠিত
রবিবার ● ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ঘেরের আইল ও পতিত জমিতে বহুমুখী ফসল উৎপাদনে বদলে যাচ্ছে পাইকগাছার কৃষি অর্থনীতি

 ---

প্রকাশ ঘোষ বিধান;  প্রযুক্তি ও মাল্টিলেয়ার পদ্ধতিতে এক জমিতে একসঙ্গে একাধিক ফসল উৎপাদনে বদলে যাচ্ছে উপকূলীয় পাইকগাছার কৃষি অর্থনীতি। কৃষকের পুনর্বাসন ও প্রণোদনা, ফসল উৎপাদন এবং তদারকি বাড়ায় বর্তমানে চাহিদার অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদনে সক্ষম হয়েছেন পাইকগাছার কৃষকেরা।

সরকার উপকূলীয় অঞ্চলের ঘেরের আইল, পতিত ও লবণাক্ত জমিতে বহুমুখী ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করায় এর সুফল পাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। একফসলী জমিতে বহুমুখী ফসল উৎপাদন হচ্ছে। যার ফলে পাইকগাছা উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নে খালে-বিলে,পতিত জমি, কৃষকের ঘরের চাল, নেটের মাচা ও মৎস্য ঘেরের বেড়িতে শোভা পাচ্ছে লাউ, ঢেঁড়স, করলা, মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ, বরবটি, শিম, ঝিঙে, কুমড়া, পেঁপে, শসা, পুঁইশাক, লালশাকসহ নানা ধরনের সবজি।

কৃষি অফিসের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে মৌসুমভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও বিনা মূল্যে সার ও বীজ প্রদান করে কৃষকদের প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। ফলে রবি মৌসুমে গম, আলু, মিষ্টি আলু, সরিষা, ভুট্টা, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, ধনিয়া, মসুর, মুগ, খেসারি, মটর, মাষকলাই, তরমুজসহ শীতকালীন শাকসবজির উৎপাদন গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। পাইকগাছার কৃষকেরা এখন নিজেরাই নিজেদের পুষ্টি ও খাদ্য তৈরি করছেন।

উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের কৃষকরা কৃষিবিপ্লব ঘটিয়েছেন। উপজেলার রাড়ুলী ইউনিয়নের বাকার চরের প্রায় ৬০০ বিঘা ঘেরের আইলে বিভিন্ন প্রকার সবজি উৎপাদন হচ্ছে। কপিলমুনি ইউনিয়নের রেজাকপুর গ্রামের মহরম মোড়লের ছেলে সাঈদুর রহমান তরমুজ, নাবা গ্রামের অশোক মিস্ত্রি গ্রীষ্মকালীন তরমুজ, লাউ, করলা, শসা, সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি ঘেরে আইলে চাষ করেছেন। লতা, গড়ুইখালি ও দেলুটিতে ঘেরের আইলে তরমুজের ফলন খুব ভালো হয়েছে। তারা এক ফসলি জমিতে এখন বহু ফসলি জমিতে রূপান্তরিত করেছেন। চিংড়ি ঘেরের আইলে অফসিজন তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন কপিলমুনির রেজাকপুরের সৌখিন চিংড়ী চাষী সাঈদুর রহমান। মাত্র ৩ বিঘার ঘেরের আইলে নেটের মাচায় আবাদকৃত তরমুজ ইতোমধ্যে তিনি প্রায় দেড় লক্ষ টাকা বিক্রি করেছেন। ফলে কৃষকরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন । ---

পাইকগাছা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, খরিপ-১ মৌসুমে ৮৯৫ শত হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। এখন খরিপ-২ মৌসুমে ৪২০ হেক্টর জমিতে গ্রীস্ম কালিন সবজির আবাদ রয়েছে। গত পাঁচ বছরে উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে। বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপর্যয় কাটিয়েও কৃষকরা খাদ্যশস্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্যভাবে সফল হয়েছেন। দানা শস্যের পাশাপাশি শাকসবজি উৎপাদনেও রেকর্ড সৃষ্টি করেছে পাইকগাছার কৃষকরা।

উপকূলীয় উপজেলা হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা, সেচের পানির দুষ্প্রাপ্যতাসহ বিভিন্ন সমস্যা কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। ২০০৭ সালে সিডর ও ২০০৯ সালে আইলায় উপকূলীয় এলাকায় কৃষি মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়। এরপরে বুলবুল, আম্পান, ইয়াস, রেমাল, মিধিলি, সিত্রাং  ও করোনার প্রভাবে সামগ্রিক কৃষি খাতকে বিপর্যস্ত করে তোলে।

দুই যুগ আগেও উপকূলীয় এলাকার জমিতে একটি বা দুটি ফসল হতো। বছরের অধিকাংশ সময় কৃষিজমি পতিত অবস্থায় থাকত। এখন সেসব জমিতে তিন থেকে চারটি ফসল উৎপাদন হচ্ছে। আবার একই জমিতে মাল্টিলেয়ার পদ্ধতিতে একসঙ্গে একাধিক ফসলও চাষ হচ্ছে। এভাবে জমির বহুমুখী ব্যবহারে বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য।

পাইকগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অসিম কুমার দাশ বলেন, আমাদের বৈজ্ঞানিকরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করছেন এ অঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য। উদ্ভাবিত কার্যকরী প্রযুক্তিগুলো মাঠ পর্যায়ে দ্রুত জনপ্রিয় করতে প্রকল্পের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতা উচ্চফলনশীল জাতগুলোর উপযোগিতা যাচাইয়ের পর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হচ্ছে। ফসল নিবিড়তায় কৃষিতে বৈচিত্রতা অর্জন করা সম্ভাব হয়েছে। দেশের দক্ষিণঞ্চলের লবণাক্ত উপজেলা পাইকগাছায় চাষ উপযোগী সবজি, ফল, ডাল, আলু, তরমুজ, গম, ভুট্টা উৎপাদন বাড়ানো ও কৃষকদের আয় বাড়ানোর পথ সহজ হবে। আগামীতে এ প্রকল্পের আওতায় জমির বহুমুখী ব্যবহারে আবাদ আরও সম্প্রসারিত হবে।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)