মঙ্গলবার ● ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » কৃষি » পাইকগাছায় পান চাষে লাভবান হচ্ছে কৃষক
পাইকগাছায় পান চাষে লাভবান হচ্ছে কৃষক
পাইকগাছা উপজেলায় পান চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। অন্যান্য ফসলের তুলনায় পান চাষে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন পান চাষে ঝুঁকছেন। সারা বছরই পানের চাহিদা থাকায় ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকরা। পাইগাছায় উৎপাদিত পান স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করা হচ্ছে।
পান চাষের সুবিধা হল, বহুবর্ষজীবী হওয়ায় বারবার লাগানোর খরচ নেই। পাঁচ-ছ’দিন অন্তর পান পাতা তুলে বাজারে বিক্রি করা যায় বছরভর। ঠিক যেন পকেটের মানিব্যাগ- যখন দরকার, ঝাড়লেই পয়সা।
পান চাষীরা জানিয়েছেন, নতুন বরজে বিঘা প্রতি প্রায় ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। সুন্দরভাবে পরিচর্যা করলে নতুন বরজ থেকে ৪- ৬ মাসের মধ্যেই পান তোলা সম্ভব। অবহাওয়া ভালো থাকলে এবং সঠিক পরিচর্যা করলে একটি বরজ ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। পান বহুবর্ষজীবী হওয়ায় মাটি তৈরিতে সতর্কতা নিতে হয়। উঁচু জমিতে জল নিস্কাশনের সুবন্দোবস্ত যেন থাকে। জমিকে ভাল ভাবে চাষ দিয়ে রোদ্দুরে এক মাস ফেলে রাখতে হবে। এতে মাটিতে রোগজীবাণু ও আগাছার বীজ মরে যাবে। মাটি লাঙল দিয়ে বা পাওয়ার টিলারে চাষ দিয়ে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। পানের বরজ তৈরির সরঞ্জাম পাট কাঠি, হোগলার ডাঁটা পাতা, উলু ঘাস, খড়, গাছের ডাল, বাঁশ, খেজুর গাছের পাতা ইত্যাদি দিয়ে ছোট ছোট চাল বানিয়ে নিতে হয়। এর পর পান জমির চারদিকে বাঁশ দিয়ে খুঁটি পুঁতে চালগুলিকে দাঁড় করিয়ে দিতে হয়। বরজের উপরেও চালগুলি ঢেকে দিতে হয় যাতে হাওয়া, আলো না ঢুকতে পারে। না হলে পানে পোকার উপদ্রব হয়। বরজে পানের ডাঁটা হাতখানেক লম্বা হলেই বাঁশের খুঁটি দিয়ে পানের ডাঁটা বা লতাগুলিকে বেঁধে দিতে হয়। যে খুঁটি ধরে তরতরিয়ে উপরের দিকে উঠতে থাকে পান গাছ। এই খুঁটিগুলো বরজ তৈরির সময় বসিয়ে নিতে হবে। বরজের উচ্চতা ২ মিটার হলেই ভাল। এর কম উচ্চতা হলে বরজের ভিতর চলাফেরায় অসুবিধা হয়। একটু খরচা করে আধুনিক স্থায়ী কাঠামো বানিয়ে পান চাষ করতে পারলে ভাল হয়।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ২১০ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। ১৫ বছর আগেও পাইকগাছা উপজেলায় পানের চাষ তেমন হতো না। ধান ও সবজির আবাদ হতো বেশি। পান চাষ যে লাভজনক, তা বুঝে ও পান চাষের সাফল্য দেখে অনেকে এগিয়েে এসেছে। আগে যাঁরা জমিতে ধানসহ অন্য ফসলের চাষ করতেন, তাঁরা পান চাষে ঝুঁকে পড়েন।
মটবাটি গ্রামের পান চাষি মুক্ত দেবনাথ জানান, নতুন বরজে তিন থেকে চার মাসের মাথায় পান তোলা শুরু করা যেতে পারে। পাঁচ-ছয় দিন অন্তর পাতা বোঁটা সমেত তুলতে হবে। প্রথম বছরে একটি বরজ থেকে যে পান পাতা পাওয়া যাবে, দ্বিতীয়-পঞ্চম বছরে তার অনেক বেশি মিলবে। এই ভাবে বছর দশেক চলবে। এক বিঘা বরজে প্রতি বছর প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা লাভ থাকে।
রাড়ুলী গ্রামের পান চাষি মিঠু হরি জানান, প্রতিবিঘা জমির পানের বরজে মাটির আইল, বেড়া, ছাউনি, শ্রমিক, পানের লতাসহ থেকে দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা প্রাথমিক অবস্থায় খরচ হয়। পরের বছর থেকে খরচ খুবই সামান্য হয়। কারণ একটি পানের বরজ তৈরি করার পর মাটির আইল, বেড়া, ছাউনি সংস্কার ছাড়া ১৫-২০ বছর পর্যন্ত পানের বরজ অক্ষুণ্ণ থাকে। সেখান থেকে পান পাওয়া যায়। বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত পানের ভরা মৌসুম। ভাদ্র থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত পানের উৎপাদন কম হয়। ফাল্গুন মাসে বাড়ন্ত লতিকে নিচে নামিয়ে দেওয়াতে পানের উৎপাদন হয় না বললেই চলে। এক বিঘা বরজে প্রতি বছর পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার টাকা লাভ থাকে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অসিম কুমার দাশ বলেন, পান অর্থকরী ফসল। এটি চাষ করা বেশ লাভজনক। এই ফসল চাষের জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের উৎসাহ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।